একা অবসরে কল্পনায় আমি বিশ্ব ভ্রমণ করি

ritt

একখানা পুরানো খাতার ছেঁড়া পাতা নজরে এলো। ভাঁজ খুলে দেখি ছেঁড়া কাগজে লেখা আছে, বাঁধা ধরা লেখাপড়ার প্রতি কোনকালেই আমার খুব বেশী আগ্রহ ছিল না। স্মৃতিশক্তি প্রখর হওয়ায় বাড়তি সুবিধা ছিল, স্কুলের পড়া একবার দু’বার পড়লেই মনে থাকতো। তাই স্কুলের পড়া নিয়ে কখনও টেনশান করিনি।

আমার ভালো লাগতো রূপকথার গল্প পড়তে। নতুন বছরে নতুন বই হাতে পাওয়া মাত্র ইংলিশ র‍্যাপিড রিডার বই থেকে সবগুলো গল্প পড়ে ফেলতাম। মায়ের ছিল গল্পের বই পড়ার প্রচন্ড নেশা। আমার মেজদাদা আর আমি, এই দু’ভাইবোন পেয়েছিলাম মায়ের চরিত্রের এই দিক। আমাদের ঘরে আসবাবপত্রের বাহুল্য ছিল না, যে ক’খানা কাঠের চেয়ার, তক্তপোশ, টেবিল ছিল, সেগুলোতে ছিল না কোনো নান্দনিক সৌন্দর্য্য, শোয়া-বসার প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট ছিল। এইসব সস্তা দামের আসবাবপত্রের মাঝে একটি সস্তা কিন্তু খুবই মূল্যবান ছোট বুকসেলফ ছিল।

সেই ছোট বুকসেলফে অনেক বড়ো বড়ো গল্পের বই সাজানো থাকতো। বেশীর ভাগ বই ছিল স্বদেশী আন্দোলনের উপর লেখা। আমার মা আর মেজদাদা পড়তো সেইসব স্বদেশী আন্দোলনের বইগুলো। আমার মা কেন স্বদেশী আন্দোলনের বইগুলো পড়তে এত ভালোবাসতেন তা আমার জানা নেই। ইদানিং মনে হয়, মা সাধারণ পরিবারে জন্মালেও মন মানসিকতায় উনি গৃহী ছিলেন না। তাঁর মাঝে প্রবল দেশাত্মবোধ ছিল, চলনে-বলনে প্রতিবাদী ছিলেন, ব্যক্তিত্ব ছিল কঠিন। রান্নায় পারদর্শী হলেও গৃহকর্মে সুনিপুন ছিলেন না। উনার ভালো লাগতো গল্পের বইয়ের মাঝে ডুবে থাকতে। পেশায় শিক্ষক ছিলেন তাই বইখাতা নিয়েই উনার সময় কেটে যেত।
আমাদের সাথে রাজা রাণী, ভূত পেত্নীর গল্প করেননি। সব সময় ক্ষুদিরাম, মাস্টার দা, প্রীতিলতা, বেগম রোকেয়া, বিনয়, বাঘা যতীন, বাদল, দীনেশ প্রমুখদের জীবনের গল্প করতেন, আমরা ভাইবোন মন্ত্রমুগ্ধের মত এঁদের গল্প শুনতাম।

আমার মেজদাদা বয়সে আমার চেয়ে তিন বছরের বড় হলেও সে ছোটবেলা থেকেই মায়ের সঞ্চিত বইগুলো অনায়াসে পড়তো। মা কিছুই বলতো না, আর আমি মায়ের মুখের গল্প শুনেই সন্তুষ্ট থাকতাম, অত মোটা বইগুলো পড়ে দেখার ইচ্ছে হতো না। ঐ যে বললাম, আমার ভালো লাগতো রূপকথার গল্প। ঠাকুরমার ঝুলি থেকে রাক্ষস ক্ষোকসের গল্প গোগ্রাসে গিলতাম। আমার সংগ্রহে একটামাত্র বিদেশী রূপকথার গল্পের বই ছিল, ‘সোভিয়েত দেশের নানাজাতির রূপকথা’।

আমাদের ছোটকাকা এই বইটি উপহার দিয়েছিলেন মেজদাকে। মেজদা বইটা দিয়েছে আমাকে। আমার উপর মায়ের কড়া শাসন ছিল, ঘরে থাকতে হবে, পাড়া বেড়ানো যাবে না। তাই ঘরে থেকে সোভিয়েত দেশের নানাজাতির রূপকথা বইটিই বার বার পড়তাম। রূপকথার গল্প পড়ে আমার একটা উপকার হয়েছে, আমি কল্পনা করতে শিখেছি।

যখনই একা থাকতাম, চলে যেতাম রূপকথার রাজ্যে। রূপকথার চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে উঠতো। দিনে দুপুরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি, কোনো একদিন চলে যাব চাষীর ছেলে ইভানের বাড়িতে, নয়তো দেখে আসবো পগাতিক গরোশেককে। এভাবেই কল্পনায় বিদেশ যাওয়ার জন্য স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করি।

আজও সেই অভ্যাস রয়ে গেছে। একা অবসরে কল্পনায় আমি বিশ্ব ভ্রমণ করি।

rit

1 thought on “একা অবসরে কল্পনায় আমি বিশ্ব ভ্রমণ করি

  1. নিমগ্ন পাঠ প্রিয় লেখক।

    শুভকামনা রইলো প্রিয়। সম্ভবত এই পোস্টের মাধ্যমেই আপনার সাথে শব্দনীড়ের সম্পর্ক …. আমাদের সবার মতো শেষ হয়ে যাবে। ভালো থাকবেন এই প্রত্যাশা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।