আওয়ামী থ্রেট ও সেনাপ্রধানের প্রস্তাবনা: একটি ব্যতিক্রমি পর্যালোচনা

post_img-1737023028546-633243425

দেশ এখন এক ক্রান্তিকালীন সময় পার করছে, নানা রকমের পেনিক ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে। বর্তমানে ফেসবুক হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় গণমাধ্যম। খুব সহজেই যে কোন বক্তব্য প্রকাশ করা যায়। এটা বাস্তবতা, এটা মেনে নিয়ে কাজ করতে হবে। যখন কেউ একটা মাধ্যমে কাজ করে, প্রযুক্তির বদলের কারণে সেই মাধ্যমটি হয়ে পরে অনুপযোগী। অনেক ডিমান্ডেবল পেশাও একেবারে গুরুত্বহীন হয়ে পরে ট্যাকনোলজির বদলের কারণে।

এক সময় আমি ব্লগে লেখালেখি করেছি। কিন্তু লেখালেখি ব্লগগুলি এখন আর লোকেরা তেমন পড়ে বলে মনে হয় না। তবু ব্লগের সেই যে এক ধরণের লেখা অভ্যস্থ হয়ে গেছি তার থেকে বের হয়ে ফেসবুকে লিখতে বাধ্য হচ্ছি। কখনও গুরুত্বপূর্ণ লেখক ছিলাম না। ব্লগের ব্যাপারটা এমন যে, সেখানে লেখকই পাঠক, আবার পাঠকই লেখক। সেই ক্ষেত্রে আমি যেমন অনেকের পাঠক ছিলাম, আমার পাঠকও বেশ অনেক পরিমানেই ছিল। কিন্তু ফেসবুক ব্যাপারটা এমন নয়, সত্যি কথা এখনও ফেসবুকে অভস্ত্যতা হয়ে উঠে নাই। তবু ফেসবুকে নজর থাকে। আর গত কয়েকদিন যাবৎ ফেসবুকে ঢুকে শংকিত হয়ে পরি। কোনটা যে গুজব আর কোনটা বাস্তব তা বুঝে উঠাই দায় হয়ে উঠেছে।

কয়েকদিন যাবৎ এক শ্রেণির পোস্টে দেখছি বারবার টাইম বলে দেয়া হচ্ছে কেউ যেন দেশ ছাড়তে না পারে। এয়ারপোর্টে পাহারা বসাতে বলা হইতাছে। বলা হইতাছে আওয়ামীলীগ ভীষণ শক্তি নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে, ফলে যারা এখনে এনসিপি, বিএনপি,জামায়াতের লোক আছে তারা যেন পলাইয়া যাইতে বাধ্য হয়। এই শ্রেণিটি কিন্তু নিজেরাই বিদেশে আছে, তবু হুমকি দিয়া যাইতাছে। নিঝুম মজুমদারের মত লোকেরা পর্যন্ত এমনভাবে কথা বলছে যেন এখানে একটা ক্যু হয়ে যাবে, কিম্বা ইন্ডিয়া এ্যাটাক করে বাংলাদেশকে তছনছ করে শেখ হাছিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাবে। এই ঘটনাগুলি খেয়াল করছিলাম।

এদিকে হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্টগুলি পড়ছিলাম। কয়েকদিন যাবৎ সে আওয়ামী রাজনৈতিক অবস্থা নিয়া পোস্ট দিতাছিল। অবশেষে এক বিস্ফোরণ পোস্ট দিল। সকল রাজনৈতিক আগ্রহের বিষয় পরিনত হলো সে স্ট্যাটাস। তার পোস্ট থেকে কোড করছি-

“আমাদেরকে আরো বলা হয়-রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।

আমাদেরকে এই প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন।

এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোন ধরণের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’। ”

এর মধ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইঁয়া আর এক তথ্য ফাঁস করলেন যে, সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ্জামানের সম্মতি ছিল না প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের দায়িত্ব দেবার ব্যাপারে। আসিফ মাহমুদ এর ভাষ্য মতে- তিনি বলেছেন তিনি বুকে পাথর বেঁধে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।

অনেক বড় বড় অনলাইন এক্টিভিস্টদের মাঝে পিনাকীসহ কয়েকজন দেখলাম সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ্জামানের উপর বিল্লা হয়ে আছে বেশ আগে থেকে। তারা ক্রডিাাট নিতাছে তারা এই দেশে ইন্ডিয়া বিরোধী মনোভাব তৈরি করেছে। সেনাপ্রধান ইন্ডিয়াপন্থী।

এইসব ফেসবুকের পোস্ট চিন্তা চেতনা আক্রান্ত হই বারবার। বের করতে চেষ্টা করি প্রকৃত ঘটনা। আমি আমার মত করে কিছু ভাবনা চিন্তা করি। এটা আমার একান্ত নিজের চিন্তা, কারোর সাথে মিল না হলেও এটা করার এবং প্রকাশ করার অধিকার আমার আছে।

আওয়ামী লীগের ইন্টারন্যাশনাল লবি, ভারতীয় গোয়ান্দা বিভাগ র সহ অনেকেই আওয়ামী লীগকে এখানে প্রতিষ্ঠিত করার নানামুখী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা নিজে চট করে ঢুকে পারবেন বলে অডিও ভাইরাল হয়, এমনকি তারা হরতাল ডাকেন। ঐদিকে অপি পিয়াল গং ব্যাপক প্রচারণা চালাইতে আছে যে, এই ঢুলে গেল তারা। এগুলি একেবারে এমনি এমনি বলছেন তা নয়।

সেনাপ্রধান অনেক বছর এই প্রফেশনে জড়িত। শুধু আওয়ামী আমলে নয় এই পর্যায়ে যেতে হলে অনেককিছু মেনেজ করেই যেতে হয়। ডিনিও তাই করেছেন। তিনি শেখ হাসিনার আত্মীয়ও বটে। তাই সব ধরনের যোগাযোগ তাকে রাখতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। ধারণা করি, তাকে বলা হয়েছে একটা কিছু করতে, তিনি বলছেন আচ্ছা দেখি। কেন এমন ধারণা হলো? তাকে যেমন পেয়েছি আমরা তাতে মনে হয়েছে তিনি হান্ড্রেড পার্সেন্ট প্রফেসনাল একজন মানুষ। নিজের ডিপার্টমেন্টের উপর যখন জাতিসংঘের শান্তি রক্ষীবাহিনীতে কাজ হারাবারের প্রশ্ন উঠেছে তখন তিনি রাজনীতি, আত্মীয়তার সম্পর্কে চেয়ে নিজের প্রফেসনকে তিনি বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন। তিনি অনেক রক্তপাত এড়াতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনাকে নিরাপদ এক্সিট দিয়েছেন। নিজে সামরিক শাসন জারি করতে পারতেন। তা না করে জাতীয় উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেন – তিনি সকলের জান মালের হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং তার পছন্দের বাইরে প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের দায়িত্ব দেবার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। এখানে তিনি যেই কমিটমেন্টটি দেখিয়েছেন তা সম্পূর্ণ রূপে একজন প্রফেশনাল দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। আর নিজের অজান্তেই গণতন্ত্রের একটা প্রয়োগ উদাহরণ হিসাবে দেখাইয়া দিলেন। নিজের মতের বিরুদ্ধে যখন অন্য মত প্রবল হয় তখন বুকে পাথর বেঁধে তা মেনে নেওয়ার নামই গণতন্ত্র।

এখন আসি যে প্রসঙ্গে বলছিলাম সেদিকে। এই যে থ্রেটগুলি দেয়া হচ্ছিল, আওয়ামী প্রতিষ্ঠা, শেখ হাসিনার ফেরত আসা, অনেকের উগ্র চিন্তানা ইত্যাদি সবই সেনাবাহিনীর প্রধানের নলেজে ছিল। আমরা ধারণা তিনি তাদের বলেছেন- আচ্ছা দেখি। এবং বাস্তবতা মিলিয়ে আবারও রক্তপাতের সম্ভবনা দেখে তিনি একটা নেগোসিয়েশনের কথা ভেবেছেন। তাই তিনি হাসনাত আবদুল্লাহদের এমন একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। হাসনাত আবদুল্লাহ তা প্রত্যাখান করেছে এবং দশ দিন পর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সকলের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন এবং এখনও প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এখানেও আমি গণতান্ত্রিক চর্চার সুমহান নিদর্শন দেখতে পাইছি। মত প্রকাশের স্বাধীনতার একটা উদাহরণ দেখতে পারছি। অনেকে অনেক কথা বলেন, আমি শুধু সেনাপ্রধানের ভাষনে ইউনুস বলে সম্বোধন করাকে একমাত্র নন-প্রফিজম হিসাবে পেয়েছি। এছাড়া এখন পর্যন্ত তার ভুমিকা এই দেশটিতে মানুষের রক্তপ্রবাহ কমাতে বিশাল ভুমিকা রেখে চলেছেন এবং কামনা করি তিনি নিজকে সংযত করে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হবেন।