৭১ আর ২৪ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। জিগাইতে মন চায় তুলনা আসছে কেন? আইছা, তুলনাই হোক।
৭১ আর ২৪ দুইটা আলাদা সময়ের।
৭১ এর ঘটনা ঘটেছে ৪৭ এর স্বাধীন রাস্ট্র পাকিস্তানে। ভৌগোলিক , ভাষা, সংস্কৃতিতে একই রাস্ট্রের দুই প্রদেশের ভিতর বিস্তর ফারাক ছিল। কিন্তু এই ফারাকের কারণে নয় বরং শাসকদের বৈষম্যমূলক আচরনের কারণে প্রদেশ দুইটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যায়। জন্ম নেয় স্বাধীন রাস্ট্র বাংলাদেশ। ৭১এর ইতিহাস বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস। সেই সময় সারা পৃথিবীতে চলছিল কমিউনিস্ট মতাদর্শের বিজয় কাল। এই মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে ছিল সারা পৃথিবী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা তার ব্যতিক্রম ছিল না। মাওলানা ভাসানীর মহামানব সুলভ পোষাক, আচরণ, বাগ্মিতা, বাম ধারার চিন্তা চেতনা এই অঞ্চলের মানুষকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। মাওলানা ভাসানী ও তার সুযোগ্য শিষ্য বঙ্গবন্ধু উপাধি পাওয়া শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক নেতৃত্বে প্রভাবিত হয়ে একটি গোটা জাতি জুলুমের প্রতিবাদে সংগ্রাম মুখর হয়ে পরে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে জন্ম নেয় একটি স্বাধীন রাস্ট্র ভাগ হয়ে আর একটি স্বাধীন রাস্ট্র।
স্বাধীনতা যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও রক্তক্ষরণের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ অঞ্চলের মানুষের মননে তৈরি হয় শোষণ বঞ্চনাহীন এক বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের। কিন্তু হতাশার কথা তেমন সমাজতো পাওয়া যায়নি বরং রাজনৈতিক ও সামরিক বাহিনীর হানাহানির কারণে রাজনৈতিক খুনাখুনি অব্যাহত থাকে। মানুষের মাঝে জন্ম নেয় হতাশা আর ক্ষোভ। স্বাধীনতা এলো বটে, কিন্তু জনগন কিছুই অর্জন করতে না পাওয়ার বেদনায় মর্মাহত হয়।
একটা রক্তক্ষয়ী ও বিপুল নর নারীর ইজ্জত সম্ভ্রম আর জীবনের আত্মত্যাগের মাধ্যমে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের তরুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধারা প্রবীণদের অস্বীকার করে। সামাজিক, রাস্ট্রীয়ভাবে, সামরিক বাহিনীর ভিতরে তরুন মুক্তিযুদ্ধারা পরস্পর খুনাখুনিতে লিপ্ত হয়। এই ধারা অব্যাহত থাকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। এর পর হতে রাজনৈতিক নেতৃত্বে দেশ পরিচালিত হতে থাকে।
২৪ ঘটেছে ৭১ এর স্বাধীন রাস্ট্রের শাসকদের অর্ধশতকব্যাপী রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা ও শোষণের কারণে।
মুক্তিযুদ্ধে তরুনেরা অংশগ্রহণ করে কিন্তু নেতৃত্বে ছিল প্রবীন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা, প্রকাশ্য ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ভারত সরকারের সামরিক সহযোগিতায় ডরুনেরা একটি রাস্ট্রের সূচনা করে। এবং জড়িয়ে পরে নানা রকমের অনৈতিক ক্ষমতার চর্চায়। দেশ গঠনের অনন্য সুযোগ পাওয়ার পরও একটি প্রতিবন্ধী রাস্ট্র হিসাবে থেকে যায় কেবল মাত্র সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা ও অসাধুতার কারণে জনগন পরাধীন জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়।
২৪ এ প্রবীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের শোষন, ফ্যাসিবাদী জুলুম এবং বিরোধী দলের চরম ব্যর্থতার কারণে তরুনদের নেতৃত্বে এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে আর একবার দেশের জনগন মুক্তির স্বাদ উপভোগ করে। এক অনন্য সুযোগ হাতে চলে আসে দেশকে পুনর্গঠনের। এমন এক নেতৃত্ব চলে আসে রাস্ট্রীয় পর্যায়ে যারা কখনওই কলুষিত রাজনৈতিক চর্চায় নিজেদের নিয়োজিত করে নাই। মানুষের কাছে এ আরেক স্বাধীনতা। একে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলা যায়। যারা একে স্বাধীনতা বলতে দ্বিধাবোধ বা বিরোধিতা করছে তারা স্বাধীনতার এই সুযোগকে জনগনের দরজায় পৌছে দিতে চায় না। তারা পূর্বের মত হানাহানি ও জুলুম পীড়ন ফ্যাসিবাদী আচরণ অব্যাহত রেখে শোষন অব্যাহত রাখতে চায়।
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধাদের মত ২৪ এ নেতৃত্বদেয়া তরুণদের মাঝে দেখা যায় পারস্পরিক বিভিক্তি। শুধু তাই না ৭১ ও ২৪ সংগ্রামকারী তরুনেরা প্রবীণদের চোখে বেয়াদপ আখ্যা পাচ্ছে। যতটুকু বুঝা যাচ্ছে, এই তরুণরা করে যাচ্ছে সমাজ ও রাস্ট্রের নিয়ন্ত্রণ।
২৪ নিয়ে মুল্যায়ন করার সময় এখন হয় নাই। তবে ২৪ এর অর্জনকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসাবে স্বীকৃতি না দেয়ার কোন কারণ নেই। এটা ২য় স্বাধীনতা। কিন্তু এই স্বাধীনতাকে কতটুকু কাজে লাগাতে পারবে তা নির্ভর করবে এই দূর্নীতিতে সয়লাব হয়ে যাওয়া দেশে, দূর্ণীতির ফাদ থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে তরুনরা কতটুকু পজেটিভ ভূমিকা রাখতে পারবে তার উপর।
আপাতত তাদেরকে সমর্থন ও পরামর্শ দিয়ে সঠিক পথে পরিচালনা করার চেষ্টা করা ছাড়া কোন বিকল্প দেখছি না। এখানকার প্রভাবশালী প্রবীণ নেতৃত্ব পচে গেছে। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া লুটপাট দেখে তরুণদের উপহার দেয়া স্বাধীনতা পেয়ে নিজেরা সেই রেজিমের মত অবৈধ ভোগবিলাসের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে।
৭১ এর স্বাধীনতার ফসল জনগনের ঘরে উঠেনি। ২৪ এর স্বাধীনতাকেও কি হারিয়ে ফেলছি কিনা তারজন্য সতর্ক সাবধান হতে হবে। যে সুযোগ সঠিক নেতৃত্বের হাতে দেশ পরিচালনার সুযোগ এনে দিয়েছে তাকে কাজে লাগিয়ে এবং পরবর্তীতে তরুন প্রজন্মের হাত ধরে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ হয়ে উঠুক এক মর্যাদাবান কল্যান রাস্ট্র এই প্রত্যাশা রইল।