বাংলাদেশ জিয়াউর রহমানকে পেয়েছিল একবার, এবার ড. ইউনুস

দেশের সাধারণ মানুষ বিএনপির পক্ষে, এটা বহুদিন শুনে আসছি। দেখেও আসছি মানুষ বিএনপিকে কতটা পছন্দ করে। দেখে মনে হয়, সব মানুষ বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। বিএনপির নেতৃত্ব বোধ হয় এটা জানে না। তারা পেশিশক্তির উপর নির্ভর করছে, করছে বিদেশি শক্তির উপর। যেহেতু নির্বাচন হয় না বহুদিন তাই বলা যায় না বিএনপির সেই ভোট এখনও আছে কিন। তবে ধারণা করি- বিএনপির সেই স্বতঃস্ফূর্ত ভোটে ভাটা পরছে। বিএনপি ২৪ এর বিপ্লবকে ধারণ করেনি। তাই তরুনদের দল ভোটের রাজনীতিতে ভালো করুক এটা এখন অনেকের প্রত্যাশা। এরাই বাংলাদেশকে সেবা করার সুযোগ করে দিয়াছে ড. ইউনুসের মত কোয়ালিটি নেতার। আশা করা যায় জনগন নির্বাচনের মাধ্যমে এই তরুণদের সুযোগ করে দিলে ডক্টর ইউনুস স্যারকে আবার আমরা যথাযথ মর্যাদায় দেখতে পাব।
FB_IMG_1743206802817
ড. ইউনুস ধীরে ধীরে স্টেটসম্যান হওয়ার দিকে এগোচ্ছেন। তার চলার গতি ধীর এবং মাপা – তবে গন্তব্য এক প্রকার নিশ্চিত।

এমন না যে তিনি এরই মধ্যে খুব বড় কিছু করে ফেলেছেন – তবে পলিটিক্সে জনগণের পারসেপশন যতটা ম্যাটার করে, রিয়েলিটি ততটা করে না।

মার্চ মাসের রেমিট্যান্সের দিকে তাকালে এটার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ৩ বিলিয়ন ডলার মানে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ঈদ উপলক্ষে রেমিট্যান্স কিছুটা বাড়তে পারে – তবে এভাবে হাই জাম্প দিয়ে আকাশে উঠে যেতে পারে না।

জিনিসপত্রের দামের কথাই চিন্তা করুন। গত বছর ১৫ টাকা পিস দরে ডিম কিনতে হয়েছে। এবার প্রায় অর্ধেক! এত সস্তায় যে ইহজন্মে ডিম খেতে পারবো সেটা কি ৬ মাস আগেও ভেবেছিলাম?

ড. ইউনুসের প্রতি সরকারের আস্থা অনেকটা বাড়ছে। রেমিট্যান্স বেড়ে কোথায় পৌছেছে! রমাজেনে জিসিপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে, বিদ্যুতেনলোড শেডিং এক প্রকার নেই বললেই চলে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্তত এই রমজানে অনেকটা স্থিতিশীল ছিল অন্তত এটা বোঝা গেছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাইয়া যাইতাছেন,মানুষতো অবাক সময়মত ট্রেন আসছে আর যাত্রী নিয়ে সময়মত যাইতাছে, বাসগুলিতে কমছে হয়রানি, রাস্তায় রাস্তায় যে চাঁদার মহোৎসব বইত তা দেখা যাইতাছে কম। মনে হইতাছে, ডা. ইউনুসের দেশপ্রেম, সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা দ্বারা সকলে প্রভাবিত হইতাছে।

ড. ইউনুসের আগে এতটা দেশপ্রেম, সততা, নিষ্ঠা এবং দক্ষতা নিয়ে স্রেফ একজন মানুষই সরকার চালিয়েছিলেন – জিয়াউর রহমান। আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে তিনি বেশিদিন সময় পাননি, ইউনুসও সম্ভবত পাবেন না।

জিয়াউর রহমানের জন্ম বগুড়ায়, যৌবন কেটেছে পশ্চিম পাকিস্তানে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার মনে হলো যে ঢাকায় কিছু সম্পদ থাকা দরকার। সাভারে একটা বাড়ি পছন্দ হলো। বুকিং মানি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু পর পর দুটো কিস্তি মিস করলেন। চিঠি পাঠিয়ে সময় চাইলেন। তাকে সময় দেয়া হলো। তবে লাভ হয়নি – পরের কিস্তিটাও মিস হয়ে গেল। তিনি আবারও চিঠি দিলেন – বগুড়ায় তার পৈতৃক জমিটা বিক্রি করে টাকা দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু ওটা বিক্রি করতে পারেননি। ফলে সাভারের বাড়িটা আর কেনা সম্ভব হবে না। জরিমানা দিয়ে বুকিং মানি ফেরত নিয়ে গেলেন জিয়া।

তার মৃত্যুর পর দেখা গেল – স্ত্রী আর দুই ছেলের মাথা গোঁজার মতো একটা বাড়িও রেখে যেতে পারেননি তিনি।

জিয়া স্টেটসম্যান হতে পেরেছেন, কারণ তার মাথায় নিজের জন্য কিছু করার চিন্তা ছিল না। যা করেছেন, সবটাই দেশের জন্য।

ইউনুসেরও নিজের জন্য কিছু করার প্রয়োজন নেই। এই দুনিয়াতে একজন মানুষ যতভাবে সম্মানিত হতে পারে তার সবটুকুই তিনি এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। ফলে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করাটা তার জন্য সহজ।

যেখানে বাইডেনের সাথে সল্ফি তুলতে পাইরা অনেক দেশনেতাদের আনন্দের সীমা থাকে না সেখানে ইউনুস স্যারকে বাইডেন নিজে ডেকে নিয়ে গেলেন। জড়িয়ে ধরে ছবি তুললেন।

চীনেও সফলতা দেখাইছেন। শি জিনপিং এর থেকে শেখ হাছিন আদায় করেছিল ১৪ কোটি ডলার – সেটাও অনেক মুলোমুলির পর। ইউনুসকে জিনপিং দিচ্ছেন ২ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধান যে বিশ্বনেতাদের সামনে কাঁচুমাচু হয়ে না দাঁড়িয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াবেন, ছবি তুলবেন – এটাই তো আমরা কোনোদিন ভাবিনি। এর আগে জিয়াকে দেখেছিলাম জিমি কার্টারের পাশে পায়ের ওপর পা তুলে কথা বলতে। এবার দেখছি ইউনুসকে।

গরিব দেশের সরকারপ্রধানকে স্মার্ট হতে হয়। জিয়া স্মার্ট ছিলেন। সৌদি আরবে যাওয়ার সময় তিনি উপহার নিয়ে গেলেন ৫০০টা নিম গাছের চারা। বললেন, মহামান্য বাদশা! আমি গরিব দেশের প্রতিনিধি। কী আর দিতে পারি আপনাকে? এই কয়েকটা গাছ দিলাম শুধু।

বাদশা জড়িয়ে ধরেছিলেন জিয়াকে। জানতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশের জন্য উনি কী করতে পারেন। জবাবে জিয়া ভিক্ষা চাননি। বরং চাইলেন চাকরি। বাঙালি শ্রমিকদের যেন মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি দেয়া হয়।

শুরু হলো আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী খাতটা – প্রবাসী আয়।

ইউনুসও ভীষন স্মার্ট। এক লাখ রোহিঙ্গার সাথে জাতিসংঘ মহাসচিবকে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিয়ে ইফতার করালেন ইউনুস। মাতৃভাষায় বললেন, আগামী ঈদ আপনারা নিজের দেশে করবেন। প্রতিবেশী পরাশক্তিকে এভাবে থোড়াই কেয়ার করার সামর্থ্য সবার থাকে না। ইউনুসের আছে। রোহিঙ্গাদের সামনে তিনি খুব সহজ অথচ খুব ভয়ংকর একটা মেসেজ দিয়ে এসেছেন।

জিয়ারও ছিল। সুন্দরবনের কাছে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ। ভারত সেটাকে নিজেদের বলে দাবি করে ইন্ডিয়ান নেভির একটা জাহাজ পাঠিয়ে দখল করে নিয়েছিল।

জিয়া সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোস্টগার্ডের গানবোট পাঠিয়ে ভারতীয় সেনাচৌকিতে হামলা চালান তিনি। বিপদ বুঝতে পেরে ভারত চুপ করে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়।

এত বড় বুকের পাটা খুব বেশি লোকের থাকে না আসলে।

শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার সময় কী বলেছিল মনে আছে? বলেছিল যে, ১৬ কোটি মানুষকে আমি খাওয়াতে পারি, আর ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে পারবো না?

খোদাতালা অহংকারীকে পছন্দ করেন না!!!

জিয়াউর রহমান শহিদ হওয়ার পর গত ৪৪ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব একটা এগোতে পারেনি। জিয়া যেখানে রেখে গিয়েছিলেন, সেখানেই আছে। তেমন কোনো নতুন সেক্টর তৈরি হয়নি, তেমন কোনো ডাইভার্সিফিকেশন হয়নি। সবাই শুধু ক্ষমতা আর সম্পদ চেয়েছে, দেশের ভালো ছিল গৌণ ব্যাপার।

এই প্রথম একজন কেউ এসেছেন, যার কাছে ক্ষমতা মুখ্য না। যিনি বারবার বলছেন যে ডিসেম্বর অথবা জুন – এরপরে তাকে ধরেবেঁধেও বসিয়ে রাখা যাবে না। উনার কথা না শুনলে উনি আরো আগেই চলে যাবেন।

এই প্রথম কেউ একজন ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চাচ্ছে – তবু আমরা ভাবছি, ইশ! লোকটাকে যদি আরো কিছুদিন রেখে দিতে পারতাম!

প্রায় নব্বই ভাগ দূর্নীতিগ্রস্থ একটা দেশে জিয়াউর রহমানের মত দেশনায়ক বাংলাদেশ পেয়েছিল একবার, তারপর এবার ড. ইউনুস। জিয়া বেশিদিন সময় পান নাই, এবারও ভোট ভোট করে তাকে বিদায় করার জন্য উঠে পরেছে জিয়াউর রহমানের নিজের হাতে গঠন করা দল বিএনপি!!!

অনেক বছর পর আর একজন দেশপ্রেমিক নির্লোভী দক্ষ বিচক্ষণ একজন বিশ্বমানের নেতার কাছে এসেছে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব।৷ আমরা বড়ই অভাগা এক জাতি।

মন্তব্যের ঘরে লেখাটার রেফারেন্স লিংক দিয়ে দিলাম।
IMG_20210119_132651images

1 thought on “বাংলাদেশ জিয়াউর রহমানকে পেয়েছিল একবার, এবার ড. ইউনুস

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।