জনগণের শক্তির সত্যিকারের উত্থান চাই, দেশের সুসম উন্নয়ন দেখতে চাই।
আমি কেউ নই। আমি এই স্বাধীন দেশের একজন মামুলি নাগরিক মাত্র। আমার রঙ নীল, গোলাপি বা সাদা নয়। আমার রঙ তামাটে গৌড় বর্ণ। আমার মন এদেশের মৃদুমন্দ বাতাসে যেমন দোলে, তেমন ঝড়ের বেগে তাণ্ডবে মাত্তেও অপেক্ষা করে না। গেঁয়ো ভুত, জানিনা সম্মান দিতে, যার সম্মান প্রাপ্য নয়। আবার গেঁয়ো বলেই ভাষা ব্যবহারে সচেতন হতে কখনো কখনো ব্যর্থ !
১৯৭১ সাল ডিসেম্বর ১৬, বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশের নাম যুক্ত হল। দীর্ঘ ৯ মাস স্বাধীকার আন্দোলন করে বাঙ্গালী জাতির এক অংশ স্বাধীন হল। কিন্তু যে আশা নিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধে নেমেছিল লক্ষকোটি তরুণ, সাথে ছিল তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান নামক প্রদেশের প্রায় সকল নাগরিক; সাধারণ লোকেদের অস্ত্র চালানোর সাহসেই কিনা, কি যেন হল তারা আবার গর্জে উঠল। মাত্র ৩ বৎসর পর স্বাধীনতার মুল নায়কের প্রায় গোটা পরিবার এক অভ্যুত্থানে মৃত্যুবরণ করলে, বিখ্যাত আওয়ামীলীগ পরিবারের কিছু নেতা সরকার গঠন করলেও পিছনে থাকল দেশের সেনাবাহিনী। এরপর স্বাধীনতার যুদ্ধের মাঠে দ্বিতীয় পুরুষ হিসাবে আলোচিত, যিনি কিনা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বাঙ্গালীর মনে স্থান করেছিলেন যুদ্ধকালীন সময়েই; সেই জিয়াউর রহমানের কাছে একসময় ক্ষমতা চলে এলো। সেনাশাসন থেকে জণগনের শাসনে দেশ রুপান্তরিত হল ১৯৭৯ সালের এক সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু জাতিকে আবার সেনাশাসনের নিগূঢ় জালে আবদ্ধ হতে হয় ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ।
এরশাদ সাহেব পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এলেন। এরপরের আলোচ্য নিয়েই আমার আজকের প্রতিপাদ্য। দেশ স্বাধীনের ১০ বৎসরের বেশী অতিক্রান্ত হয়েছে ইতিমধ্যে। দেশের বাস্তবতায় কিছু দালাল স্বার্থপর শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছে। যারা ক্ষমতাকে সামনে রেখে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তাদের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যবে সেই গ্রাম্য পরকীয়ার কাহিনীর মত। “দেখে যখন ফেলেছিস তুইও লাগা !” মানে আমার চুরি যখন ধরেই ফেলেছিস তো, তুইও চুরি কর। অথবা আমি যখন রাজনীতি করতে এলাম তুইও আয়।
সেনাশাসকদের সাথে গোপন আতাত করে কত বড়মাপের নেতা যে ডিগবাজি দিলেন বা খেলেন তার ইয়ত্তা নাই। কোরবান আলি, শাহ মোয়াজ্জেম, মিঃ মওদুদ আহমেদ, হুদা সাহেব, জাফর সাহেব, অধ্যাপক মতিন সাহেব … কে নাই! আছেন আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিক, হটাৎ গজানো রাজনীতিক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কর্মচারী, উকিল, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, শ্রমিকনেতা, কবি-সাহিত্যিক, গায়ক-শিল্পী, কে নাই ! সবাই নিজের আখের গোছাতে ‘রাষ্ট্রের উন্নয়নের মুলো’ জনগণের ঘাড়ের উপর ঝুলিয়ে দিয়ে, এরশাদ সাহেবকে সাহায্য করলেন। দীর্ঘ ৯ বৎসর কখনো সেনাশাসন, কখনো জনগণের পাঁচমিশালি গণতন্ত্র দিয়ে পার হল এই সময়। আর এই সময়ের মুল দর্শন হল ‘নিজে চুরি কর, ধরা খাইলে কিছুটা দান কর’।
মিথ্যার ছড়াছড়ি, চরিত্রহীনতার এক অলিখিত উৎসবে দেশ মেতে উঠল। বামপন্থিদের আন্দোলন হয়ে পড়ল চাঁদার উপর নির্ভরশীল। বিষয়ভিত্তিক এবং চাঁদা প্রাপ্তির উপর তার প্রবলতা এবং আয়ুষ্কাল নির্ধারিত হত। ফলে জনগণের ভিতর যে প্রতিবাদ করার সাহস, যা বরাবর বামদের নিকট থেকে সুচিত হত; তাও বিলীন হয়ে গেলো। এক কথায় রাজনীতি হয়ে গেলো চাটুকারিতার আর স্বার্থপরদের আখড়া। এরশাদ জনগণের এই চারিত্রিক অধঃপতনে ঘি ঢেলে গেলেন ক্রমান্বয়ে। নিজের দালালদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে উনি রাষ্ট্রের রূপরেখার কিছুটা বিকৃতভাবে চালু করলেন। যেমন ১৯ জেলা ভেঙ্গে ৬৪ জেলা করলেন। কেউ এর প্রতিবাদ করলেন না। কারণ নিজেদের নেতা হওয়া সহজ হবে ভেবে। হলোও তাই!
কিন্তু আমাদের স্বাধীন দেশের পরিপত্রে কি এইরকম কিছু ছিল? প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরন করার কথা ছিল। কিভাবে ছিল? জেলাগুলোকে ভেঙ্গে টুকরো করার কোন কথা বা পরিকল্পনা ছিল কি ? না ছিল না। যা ছিল তা হল, থানা এমন কি ইউনিয়নকে শক্তিশালি করার প্রস্তাবনা। ৪ স্তর শাসন ব্যবস্থা চালু করার কথা। ইউনিয়ন – থানা- জেলা-কেন্দ্র।
কিন্তু জেলাকে ভেঙ্গে এমন এক অবস্থা করা হল যে, থানাকে আর আলাদা করে কোন অবস্থান দেখানো যায় না; বা উলটো দিকে দেখলে জেলার স্বাধীন অস্তিত্ব হয়ে পড়ল দুর্বল। এমন জেলাও বর্তমানে আছে, যা আগে আসলে একটি থানা ছিল। তখন যদি ৩ স্তর বিশিষ্ট শাসন ব্যবস্থা করা হত ‘ ইউনিয়ন – জেলা – কেন্দ্র’; এতে কিছুটা হয়ত বাস্তব ভিত্তিক হতে পারত। কিন্তু এরশাদ সাহেব এর তখন ‘তৈলমর্দন’, পছন্দের এক নং তালিকায়। উনি নতুন মুখের বাণী আর নতুন হাতের তৈল মর্দন চান। সাথে উনার আশৈশব নারীর প্রতি দুর্বলতাতো আছেই। উনি চালু করলেন থানা গুলোকে উপজেলা নাম দিয়ে উপজেলা সরকার পদ্ধতি। “প্যাঁচের উপর প্যাঁচ। জিলাপি ই হয় না, বানালেন আমিত্তি”।
নির্বাচিত উপজেলা নেত্রীত্ব বানালেন। নেতা হল কিন্তু ক্ষমতা কই? ক্ষমতা রইল কেন্দ্রেই। ছোট্ট এই দেশে নেতার ছড়াছড়ি। এত নেতা, আর এত মত যে! কেউ কাউরে মানেনা, শুধুই বিতর্ক আর বিতর্ক। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশের ২০ বৎসরের মধ্যে রাষ্ট্রের কাঠামো এত জগাখিচুড়ি বানিয়ে দিয়ে গেলেন যে, এখন যারা দেশ চালাতে আসছেন; তারা দেশের কোন কাম করতে পারেন না। কোন্দল মিটাতেই ব্যস্ত। একটা টেন্ডার হলে তার নিষ্পত্তি করতে পারা যায় না… কে কাজ করবে। লাভের লাভ নেতা, পাতিনেতা, উপনেতা, সহনেতা, সহ উপনেতা, উপ উপনেতা কত বাহারি নেতার দেশে পরিনত হল এই দেশ !
অবশেষে সবকিছুর একটা শেষ আছে। এরশাদ সাহেবকে গদি থেকে নামালেন এদেশের কিছু তরুণ ছাত্রনেতা একজোট হয়ে। ডাকসু এর কিছু তরুণ নেতা এই কাজকে পরিণতি দিল। সাথে ছিল জনগণের সাবলীল সমর্থন। দেশে একটি গণতন্ত্রের বাতাসের প্রবাহ দেখা গেলো। সংবিধানকে সংশোধন করে জাতির পিতার শেষকৃত কর্মকে দুই পায়ে দলে রাষ্ট্রপতি থেকে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হল। যদিও এই শাসন ব্যবস্থা দিয়েই রাষ্ট্র তার শুরু করেছিল। কিন্তু বাকশাল করতে গিয়ে সেই ব্যবস্থা পালটে দেয়া হয়েছিল। দেয়া হয়েছিল স্বাধীন রাষ্ট্রের ১ম সংবিধানকেও। কিন্তু ৩য় বিশ্বের একটি দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত না সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা ভালো ফল দিবে তার উপর কোন গবেষণা চলল না। হুজুগে বাঙ্গালীর নেতারাও হুজুগে হবে, এতে আর আশ্চর্যের কি আছে? দেশে গণতন্ত্রের ২য় পর্যায় শুরু হলো জনগণের গণজাগরণ তথা অভ্যুত্থানের মাঝে দিয়ে।
সংবিধানে একটি পরিবর্তন এলো। সাময়িক শাসন ব্যবস্থায় একটি সুন্দর নির্বাচন হল। জনগণের রায় সুন্দর ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল। কিন্তু তাবেদার এক শক্তি যারা নিয়ন্ত্রণ করে পত্রিকা, শিল্প মাধ্যম তাদের প্রচারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত হল। ফলে নাখোশ হল একটি গ্রুপ, সাথে তাদের পিছনের চালিকাবৃন্দ। কিন্তু শাহাবুদ্দিনের সাময়িক সরকারের সাফল্য জনগণের মাঝে একটি ধারণাকে স্পষ্ট করে দিল যে, তত্ত্বাবধায়ক বা সাময়িক শাসন ব্যবস্থার মাঝে একটি নির্বাচন করলে, জনগণের মত সঠিক ভাবে প্রতিফলিত হয়। বরাবরের মত তৎকালীন বিএনপি সরকার জনগণের এই মনোভাব বুঝতে দেরি করল। একটি আন্দোলন আবার গড়ে উঠল। এইবারের আন্দোলনে সহিংস রুপ দিলো আওয়ামীলীগের জোট আর জামাতে ইসলামী দলের লোকেরা। গণঅভ্যুত্থানে ফেরত পাওয়া গণতন্ত্রে দেশের লোক ১৭৩ দিন হরতাল দেখল। সরকারকে বাধ্য করল তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুকে জায়েজ করে, এক নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠায়। একটি ক্ষণ্ডকালীন সংসদে তত্ত্বাবধায়ক বিল পাশ করা হল ১৯৯৬ সালে। সেই বিলে সাময়িক নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে ১ নং পছন্দ দেয়া হল মাত্র অবসরে যাওয়া বিচারপতিকে। আর এই বিষয়টি মাথায় নেয়া হল সম্ভবত বিচারপতি সাহাবুদ্দিন এর নিরপেক্ষতাকে সামনে রেখে। নইলে বিচারকদের এমন পদে দেওয়ার দুঃসাহস কারই করার কথা নয়। এরপর ঐ ক্ষনকালীন সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে দেশে আবার জাতীয় নির্বাচন দেয়া হল। ৩ টি নির্বাচন এই ভাবেই হল। জনগণ কিছুটা বিভ্রান্তিতে পরলেও সানন্দেই মেনে নিয়েছিল এই পদ্ধতি। কারন আমাদের মত বিপুল সংখ্যক নেতাদের দেশে এবং তাদের উত্থাপিত হাজারো মত পার্থক্যের এই দেশে, নির্বাচনকালীন শাসন ব্যবস্থা নিয়ে একটি যথাযোগ্য সমাধান জনগন পেয়েছিল; এবং জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাও ছিল। কোন আইন তখনই সুন্দর বলে বিবেচিত হয়, যখন আইনের গ্রহণযোগ্যতা জনসম্মুখে প্রস্ফুটিত হয়ে ধরা দেয়। সেই বিচারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই আইনটি বিশ্বে বিরল হলেও প্রতিষ্ঠিত একটি ভালো আইন বলেই বিবেচিত ছিল।
২০০৬ সালে আবারো সেই গুষ্টির(১৯৯১ সালের পরাজিত শক্তি) ক্ষমতা যাওয়ার পথ নিরঙ্কুশ করতে তৎপর হল দেশী বিদেশি এজেন্টগণ। তারা জনগণের ভোটকে মুল্য না দিয়ে, মুল্য দিলেন সরকার ব্যবস্থা কে। আবার তারাই জনগন সকল ক্ষমতার উৎস বলে চিৎকার দিয়ে দেশ মাতিয়ে বেড়াতে থাকলেন! ফলে সরকারের ক্ষমতা ছাড়ার দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রে আবারো রক্তপাত ঘটল। এরপর সেনাবাহিনীকে সামনে নিয়ে এক বীভৎস জগাখিচুড়ি মার্কা শাসন জনগন পেল। নামহীন এক সরকার অনেক জোড়া তালি দিয়ে দেশ শাসন করল ২ বৎসর। হয়ত আরও দীর্ঘ হতে পারত। কিন্তু একটি ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে যে জনরোষ ঢাকাসহ সারাদেশে শুরু হয়েছিল, তাতে সেনাবাহিনীর সমর্থনে দেশ চালানোর সাহস আর দেখায়নি সেই সরকার। তাদের বীভৎস জগাখিচুড়ি মার্কা শাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, তা করে একটি নির্বাচন দিলেন। জনগন একটি সরকার পেল। অনেক ক্ষমতাধর সরকার!!
এই সরকার ক্ষমতায় এসেই কিছু পথ নিজেদের করে নিলেন। প্রথমেই বিচার বিভাগকে নিজেদের তাবেদার করে ফেললেন। যা গত ৩৮ বৎসরে কেউ করেনি। দেশের সকল স্বাধীন বিভাগ গুলোতে নিজেদের তাবেদার লোক বসিয়ে একটি এমন অবস্থা তৈরি করেছে যে, দেশ চালানোর জন্য যে ন্যূনতম স্বাধীন মত প্রয়োজন, তাও বিলীন করে দিয়েছে। বিচার বিভাগ, পি এস সি, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন সহ এমন কোন বিভাগ নেই, যাদের নিজেদের কোন স্বাধীনসত্তা জনগণের কাছে এখন স্পষ্ট। এমন কি টিআইবি নামক আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাতেও নিজেদের লোক বসিয়ে এক হাস্যকর অবস্থা তৈরি করেছে; কি দেশে, কি বিদেশের মানুষদের কাছে। এই সকল তাবেদার লোকদের নিজেদের কোন মত নাই। তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া মতই তাদের মত বলে গোঁজামিল দিয়ে চালান। আর নির্বাহী ব্যবস্থায় এমন করেছেন যে, কারো যদি মামার শালার নানাও অন্য দল করে তার পদোন্নতি বা পদায়ন সব বাদ। হয় ওএসডি নয় বাধ্যতামূলক অবসর। আর নতুন চাকুরিতে ঢোকার সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন বলে যে গোপন তদন্ত হত, সেখানে ব্যক্তির আত্মীয় সজন যদি সরকারি দলের সাথে জড়িত না থাকেন; তার চাকুরি হয় না। সেনাবাহিনীও এর ব্যতিক্রম নয় ! ফলে জনগণের কাছে আজ বাকস্বাধীনতার সামান্যতম লেশমাত্র অবশিষ্ট নাই।
জনগন দেখছে স্বৈরাচারিতার নগ্ন শাসন, নির্বাচিত সরকারের দ্বারা।এই সরকারের আরও একটি মারাত্বক জন বিরোধী কাজ হল, মন্দের ভালো বলে জনগণের কাছে সানন্দে গৃহীত নির্বাচনকালীন শাসন ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করা। জনগন ভিতরে ভিতরে খুব কষ্টে থাকলেও, রাষ্ট্রের সকল অঙ্গে সুবিন্যস্তভাবে সাজানো তাবেদারকুল সরকারকে আসল অবস্থান তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে। জনরোষ তাই ভিতরে ভিতরে ফুঁসছে, সুযোগের অপেক্ষায়। হেফাজতের মত আধারাজনৈতিক জাগরণে এর লক্ষন দেখা গেছে খুব স্পষ্ট। হেফাজতের জমায়েতকে তাড়িয়ে দিয়ে যদি তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা হয়, তাহলে সেইটা হবে মারাত্বক ভুল। হেফাজতের কর্মকাণ্ডকে যদি কোন সিগন্যাল হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে সরকার ঠিক পথে চলবে বলেই আমার বিশ্বাস !
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? এর পরিত্রাণ কি? আসলেও এর থেকে জনগণের মুক্তি কি আসবে? এর উত্তর দেয়া খুব সহজ নয়। কিন্তু সব কিছুর একটা শেষ আছে। আমাদের শুরু করতে হবে আবারো প্রথম থেকে বা একেবারে গোরার নিকট থেকে। যেমন উপজেলা গুলোকে বন্ধ করে দিয়ে ইউনিয়নকে রাষ্ট্রের পেরিফেরি ইউনিট করতে হবে। ইউনিয়ন- উপজেলা-জেলা-কেন্দ্র এর মাঝে সমন্বয় করতে হবে। নেতাদেরও গ্রেড করে দিতে হবে। ইউনিয়ন নেতারা কমপক্ষে ৫-১০ বৎসর ইউনিয়নে সেবা দিলেই কেবল উপজেলা লেভেলে নেতা হতে পারবে। প্রতিটি ধাপ উৎরাইতে এমন করে ৫-১০ বৎসর এর একটা সীমা দিয়ে দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৈরি নেতাদেরও গ্রেড পদ্ধতিতে আনতে হবে। এমন কি সরকারি বরাদ্দও এই গ্রেড পদ্ধতিতে ফেলে দেশের উন্নয়নকে সমন্বয় করার দিন এসেছে। যেমন একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারেঃ
• ৫ লাখ টাকার একটি জন উন্নয়ন মুলক কাজ হয়েছে কোন ইউনিয়ন লেভেলে। সেই কাজ করে উদ্বোধন করবেন সেই এলাকার চেয়ারম্যান। সাথে তার এলাকার অন্য প্রতিনিধি থাকবেন। উপরের অন্য কেউ সেখানে গিয়ে সেখানে বা তার পক্ষে কেউ গিয়ে মাতবরি করতে পারবে না। করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত করতে হবে।
• ৫০ লাখ টাকার কাজ উপজেলা লেভেলে হলে সেখানের উদ্বোধন করবে উপজেলা প্রতিনিধিরা। উপরের অন্য কেউ সেখানে গিয়ে সেখানে বা তার পক্ষে কেউ গিয়ে মাতবরি করতে পারবে না। করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত করতে হবে।
• ৫ কোটি টাকার কাজ জেলা লেভেলে হলে তার সকল দায়িত্ব থাকবে জেলা নেত্রীত্বের। উপরের অন্য কেউ সেখানে গিয়ে সেখানে বা তার পক্ষে কেউ গিয়ে মাতবরি করতে পারবে না। করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত করতে হবে।
• ৫০ কোটি টাকার কোন কাজ দেশের যেকোন এলাকায় হলে, তা সমন্বয় করবে একজন সংসদ। উপরের অন্য কেউ সেখানে গিয়ে সেখানে বা তার পক্ষে কেউ গিয়ে মাতবরি করতে পারবে না। করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত করতে হবে।
• জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ৫০ কোটি বা তার উপরের অংকের অর্থে চালিত কাজ উদ্বোধন করবেন সেই বিষয়ের মন্ত্রী বা অন্য যেকোন মাপের মন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সভার অনুমতি নিয়ে।
• কোন নির্বাহী কর্মকর্তা এই সকল উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করতে পারবেন না। তারা সকল কাজে তদারকি করতে পারবেন, সাহায্য করতে পারবেন।
• ফলে নেতাদের সম্মান রক্ষিত হবে। নিচের লেভেলে দলীয় পরিচয়ে কেউ ভোট করবে না। তবে ভোটে জেতার পর কেউ যদি কোন দলে যোগ দেয়, পরেরবার আর ঐ নির্বাচন করতে পারবে না। কিন্তু যেখানে দলীয় নির্বাচন করা যায় সেখানে প্রতিযোগিতা করতে কোন বাঁধা থাকবে না।
• অরাজনৈতিক নির্বাচন কোন লেভেল পর্যন্ত হবে তা সংসদে আলোচনায় ঠিক করে নেয়া যাবে। আমার মনে হয় শুধু মাত্র ইউনিয়ন লেভেল এই অরাজনৈতিক নির্বাচন করা যায়। উপজেলা লেভেলে নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করা যেতে পারে। ইউনিয়ন লেভেলের কোন নেতা যদি রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন, সেক্ষেত্রে সে উপজেলা লেভেল ছাড়া নির্বাচন করতে পারবে না।
• ভোট যেহেতু গোপন ব্যালটে হবে, তাই প্রান্তিক জনগন সরাসরি রাজনীতি না করেও সমর্থন দিতে পারবে। প্রান্তিক উন্নয়ন কাজকে ত্বরান্বিত করতে পারলে, দেশের সুসম বণ্টন নিশ্চিত করা সহজ হবে।
• রাজনীতির বর্তমান ধারাকে লাগাম টেনে ধরতেই হবে। এক নেতার সব খাওয়া সব করার চলমান এই বিধান, দ্রুত সমূলে উৎপাটন করে ফেলতেই হবে। এই কাজে আমরা যত দেরি করব, সকল ক্ষেত্রে সুসম উন্নয়নে দেশকে ততই পিছিয়ে দিবো।
• বর্তমান ধারায় অপকর্মে আমরা দ্রুত অনেক উন্নতি করেছি। সকল দলেই এর অবস্থান উপরের দিকে। কেউ কারো চেয়ে কম নয়,বরং প্রতিযোগিতায় সবাই একধাপ উপরে।
কিন্তু এদেশের জনগন স্বাধীনতার ৪৩ বৎসর পর এসে, আর এই চলমান অবস্থানকে সমর্থন দিতে চাচ্ছে না। গ্রাম-শহর ঘুরে ফিরে আমার অভিজ্ঞতায় বলে, মানুষ পরিবর্তন চায় এবং প্রাথমিক ধাপ ইতি মধ্যেই শুরু হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। স্বাধীনতার ৫০ বৎসর সামনে। অনেকদিন আমরা হেলায় পার করে ফেলেছি। এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না। চলা যায়ও না। তাই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমাদের কে সাহসের সাথে জাতিকে দিক নির্দেশনা দিতে হবে। ১৯৯০ থেকে ২০১৩ এই ২৩ বৎসরে দেশ এগিয়েছে যে হারে, দুর্নীতি, চালাকি, বাটপাড়ি, লুচ্চামি এই সকল বিষয়ও বেড়েছে সমান তালে। রাজনীতি এই সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দিয়েছে। বাঙ্গালী জাতির দুর্ভাগ্য এখানেই। পথ যারা দেখায়, তারাই অন্ধকারের সুড়ঙ্গে নিক্ষেপ করে নির্দ্বিধায় ! তাই আগামী নির্বাচনে –
• যে দল আমাদের এই সকল সুড়ঙ্গ পথ বন্ধ করার অঙ্গীকার করবে।
• রাজনীতির কালো থাবা থেকে জনগণকে সহজ সরল পথ করে দিবার অঙ্গীকার করবে।
• একটু ভালমন্দ সুন্দর নির্মোহভাবে দিন গুজরানের আলোকবর্তিকা সামনে তুলে ধরবে।
• সৎ চরিত্রবান পরবর্তী উত্তরসূরিদের জীবন গড়তে সাহায্য করবে।
জনগন তাদেরকেই দেশ শাসনের দায়িত্ব দিবে। বাঙ্গালী জাতি হিসাবে আসলেই খুব অল্পতেই তুষ্ট। এই পরীক্ষা তারা বারবার দিয়েছে, আরও একবার না হয় দিবে। কিন্তু তাবেদার-চাটুকার পরিবেষ্টিত বর্তমান ধারাকে আর সহ্য করা যাবে না, করা উচিত হবেনা। এর দ্বারা শুধু ৩য় শক্তি উত্থানের যারা স্বপ্ন দেখেন, তাদেরকে বলছি আসলে এই পথ সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ এই সকল সামান্য শর্ত মেনে নিয়ে দেশ শাসনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। তার জন্য ১ম-২য়–৩য় শক্তি কোন বাঁধা নয়।
জনগণের শক্তির সত্যিকারের উত্থান চাই। দেশের সুসম উন্নয়ন দেখতে চাই।
সূত্র : অন্তর্জাল। মূল লিখাটি এখানে। শেয়ারিং অর্থ আমি ব্লগিং বুঝি।
রাজনীতিতে আমার ধারণা কম। প্রশ্ন এলে আমি বিব্রত হই; অজ্ঞতায় লজ্জা পাই।