একজন চাকুরীজীবী

চাকরিটা আমার জন্য অভাবনীয় ছিল বলা চলে। তিনবেলা পেট পুরে খাবার ব্যবস্থা, দিন শেষে মাথা গোঁজার জন্য একটুখানি ঠাই, বিনোদনের জন্য মেয়ে মানুষ আনা যেতে পারে (খরচ অফিস বহন করবে)। ওদের তেমন কোন শর্ত নেই, শুধুমাত্র চাকরী ছেড়ে দিতে চাইলে আমার পরিবর্তে অন্য কাউকে বহাল করে যেতে হবে।

আমি যখন আমার একজন ঘনিষ্ট বন্ধুটিকে বললাম।
-লোকেদের জবেহ করে তাদের হাত, পা, চোখ, নাক, অন্ডকোষ ইত্যাদি আলাদা করে সাজিয়ে রাখাটা কি আমার দ্বারা সম্ভব?
-নিঃসন্দেহে। অনেকেই এটা করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
-আমি এটা করবো।
দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করলাম আমি।

বিশ্বস্ততার সাথে ছত্রিশ বছর চাকরি করার পর হঠাৎ আমার চুলে পাক ধরতে শুরু করলো। চোখের জ্যোতিও হ্রাস পাওয়া শুরু করেছে বুঝতে পারলাম। লোকেদের হাত পা আলাদ করতে কষ্ট হয় এখন। আগে যেখানে এক কোঁপেই অালাদা করতে পারতাম উরু কিংবা শক্ত মেরুদন্ড সেখানে এখন পোঁচিয়ে পোঁচিয়ে কাটতে হয়। উপর ওয়ালাদের আমার উপর থেকে আস্থা কমে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। আমি চাকরি ছাড়ার জন্য আবেদন করলাম। আমাকে নোটিশের মাধ্যমে মনে করিয়ে দেওয়া হলো পূর্বের শর্তটা। আমি হতাশ হলাম কেননা আমার কোন পৈত্রিক আত্মীয় ছিল না যাকে আমি আমার পরিবর্তে চাকরিতে বহাল করতে পারি।

এরপর কর্মদিবসের কোন একদিন আমাকে বেঁধে ফেলা হলো। শুনলাম অফিসে নতুন লোক এসেছে। আমার মনে পড়লো ট্রেনিং করার প্রথম দিনের কথা। একটা বুড়ো মতন লোক, চুলে পাক ধরেছে, চোখের দেখে না তেমন।একটা টেবিলের উপর শুয়ে আছে লোকটা। আমি কম্পনরত হাতে আলাদা করছি লোকটির গলা তারপর একে একে হাত, পা, গ্রীবা, মেরুদন্ড, গোড়ালি, পশ্চাৎদেশ, অন্ডকোষ……….।

11 thoughts on “একজন চাকুরীজীবী

  1. ভয়ঙ্কর হলেও গল্পের পরিবেশ বা চরিত্র কোনটাই অসম্ভব নয়।
    মি. রিয়াদ। আপনাকে স্বাগতম। লিখনি শক্তির উপর আমার মত পাঠকের আস্থা আছে।

    অণুগল্পের জন্য সাধুবাদ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. ধন্যবাদ দাদু। পরিবেশ বা চরিত্র সম্ভব/অসম্ভব কিনা বলতে পারি না। এটাকে রূপক গল্প ধরে নিন। একজন অপরাধী নিজের জন্য অনেক রকম হীন কাজই করে থাকে অবশেষে তার পরিমাণ এমনটাই হয়তো ঘটে। এটাই বোঝাতে চেয়েছি মাত্র। শুভ কামনা দাদু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

  2. অনেক গল্প, অনুগল্পের ভিড়ে আমার মনে হলো একটি স্বার্থক অনুগল্প পড়লাম। আচ্ছা, একটি অনুগল্প স্বার্থক হলো কিনা তা কি করে বুঝা যায়?

    1. মালেক ভাই স্ববিরোধী প্রশ্ন হয়ে গেল না? যেখানে আপনি নিজেই এই গল্পটাকে সার্থক বলে ঘোষণা দিলেন! সেখানে ২য় বার প্রশ্ন তুলে ধরছেন!https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_unsure.gif

    2. আমার কাছে মনে হলো স্বার্থক। পর মুহুর্তে মনে হলো অনুগল্প স্বার্থক হওয়ার কোন আদর্শ মানদন্ড আছে কি? তাই পরবর্তী প্রশ্নটি করেছিলাম। হ্যা, স্ব-বিরোধীই বটে।

  3. বুঝি নাই। সত্যি বলতে endowment পাইনি। আমারই বোঝার দোষ। মনে কিছু নেবেন না ভাই লেখক। আরও ভেবে দেখি।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_scratch.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।