কৈশোরের ঘ্রাণ আর নূপুরের নিক্কণ,
শতবর্ষী ফ্যানের ব্লেডে মরিচায় বুড়ো হওয়া পাখি,
এখনো অমর হয়ে মস্তিষ্কে করে ডাকাডাকি,
হয়তো সে ছিল কিশোরী! হয়তো ডানাকাটা পরী,
এখনো বয়সে স্থির!
বাদামী আইরিশে সামান্য আকাশের নীল,
কখনো দেখিনি তাকে চোখে চোখ রেখে সরাসরি!
প্রাচীন মন্ত্রের জপে পশম উড়ানো সেই উচ্চারণ,
সে জানেনি কখনো!
বসন্তবৌরি আসেনা এখন নায়রে মধ্যবয়সী শহরে,
কালো হ্রদে ডুবে গিয়ে মৎসকন্যা ভুলেছে জোছনা,
তীব্র নেশার মতো অনুচ্চারিত সত্য শ্লোকগুলি,
মেয়েটি কখনোই জানবেনা!
কলমি ফুলের ঝোপে গাঁজায় দিচ্ছিল ধীরে দম,
সর্বস্বান্ত চাঁদ সওদাগর!
সদা সংশয়ে পাহারায় ছিলো জননী সনকা,
তবু মায়ার দুনিয়ায় নিস্তার পায় কি কিশোর!
রুণুঝুণু! রুণুঝুণু! বাদ্য ছিল দেয়ালে শৈবালে,
ঘোড়ায় লাগাম টেনে অশরীরীরা প্রায়ই করত ভর!
কখনো ভেবেছি তাকে আক্রান্ত হেলেন,
কখনো দুঃখিনী দ্রৌপদী!
না ছিল ধনুর্বাণ,
না ছিল স্বয়ংবর সভায় রাজসিক আহবান,
তাতে কি! ঘুমঘোরে তাকেই তো ভেবেছি!
আমি সেই হতচকিত কিশোর,
অপেক্ষায় ছিলাম বসে বহতা সময়ের ফ্রেমে,
উইপোকার মতো বিচূর্ণ ঝুরঝুরে কাঠে,
স্তব্ধ পতঙ্গ হয়ে অসময়ে জন্মানো প্রেমে!
তারপর বড় হলো বনসাই,
মেঘে মেঘে এলো কতো জল,
তবু আজো কাতরায় জালে উঠা মাছের মতোন কেঊ,
আমিই সেই স্তব্ধ কিশোর,
আপন শরীর নিংড়ে বৃদ্ধ হচ্ছি নিজেরই ভিতর!
সৌবর্ণ বাঁধন এর সকল পোস্ট
যুদ্ধক্লান্ত ডানা
লকলকে আগুনে পুড়ে ছারখার কুরুক্ষেত্র,
শেষ যোদ্ধা পড়ে আছে পরিপক্ক পরিখার খাদে,
রক্তের ছোপে ঢাকা ভাটফুলে অবনত কুসুমিত পত্র!
সেই অন্ধ শহরের শেষ নিঃশ্বাসে,
পেট মোটা চাদিয়াল ঘুড়িটার মতো ঘুরছি অবিশ্বাসে!
প্রতিবার ডাইনোসরের মতো গর্জন-
ফূটছে মাইন; বৃহস্পতির প্রলয়ের মতো ডাকছে এখন-
বেলাগাম হাইড্রোজেন বোম!
শিম্পাঞ্জির শেষ নিঃশ্বাসে; গরিলার শেষ নিঃশ্বাসে,
মানুষের নিহত বিশ্বাসে,
এখন তীব্র বিষ! পুড়ে যাচ্ছে আমাদের বৃক্কের নেফ্রন!
তবুও প্রেমের ফাঁদে প্রায়শই লটকে থাকি,
মরে যেতে গিয়ে জামা ধরে টান দাও কেন প্রণয়ী?
আমিও জালে আটকে পড়া হুতোম প্যাঁচা নাকি!
এখানে বাজার ছিল প্রেম ও গোলাপের,
এখানে বসতি ছিল রুপালী আলোয় খাবি খাওয়া,
আহ্লাদী যুগলের!
এখানে মানুষ আবাদ হতো! জংলা ফুলের মতো,
দু চারটি ভালোবাসা কুড়িয়ে পাওয়া যেত ইতস্তত!
দৈত্যের পঙ্গপাল নিয়ে গেলো জোর করে সব,
শস্যদানার সাথে খুটে খুটে খেয়ে নিল প্রেম,
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিউতি অবশিষ্ট লোভ!
মাঝে আয়নায় চোখ দিলে দেখি নিজেকে নিজেই,
আমিই তো সেই অন্ধ দানব!
অশ্বেরা হাসে দেখে অশ্বারোহীদের ব্যর্থ বিপ্লব!
অথচ বিড়ালের মতো গুটি গুটি পায়ে,
চোখ রেখে দেখি আধাডোবা নীল জলে,
প্রণয়ী সারসীর ঠোঁটে আরক্ত বিকালে,
আমি নিতান্ত সাধারণ সংখ্যার মতো এক লোক,
নেই কোন পুরাণের আগ্নেয় লোমশ পালক!
কে আমি? কে আমি?
কেউ কি পারবে দিতে পূর্ণাংগ সেই খবর?
এখনো শহর আছে! নিকোটিনে ধোঁয়া আছে,
আছে বৈকালিক শরাবের উদ্বায়ী শব!
শুধু তুমি নেই! বিজ্ঞাপনে নেই! মেগাসিরিয়ালে নেই,
আদমশুমারীর ছকে মেলেনা হিসাব মোটে!
প্রবল বর্ষণ আক্রান্ত যুদ্ধে হারিয়ে ফেলছি খেই,
শুধু তুমি নেই!
এই যুদ্ধক্লান্ত শহরের নিত্য বিধ্বংসী স্বভাব,
মূলত তোমারই অভাব!
প্রভাবতী
বাজে নিহিত গর্জন; মেঘহীনা বাতাস যেমন,
অকারণে মরে পড়ে থাকে মাকড়সার ফাঁদে!
নীচে ঊষ্ণ রাজপথ ডুকরে ডুকরে কাঁদে,
চিরঞ্জীব বনস্পতি ছুড়ে ফেলে অমরত্বের থলি,
মধ্যরাতে ছেড়ে গিয়েছে আমাদের প্রিয় গলি!
এখন অনির্বাণ শিখা তার দিচ্ছে অবশিষ্ট দহন,
তুমি নাকি ছেড়ে যাবে এই প্রাক্তন শহর!
একটা অদৃশ্য নদী এসেছিল ময়ূরাক্ষী চোখে,
বলেছে সে এইসব গোপন খবর!
পায়ের পাতায় মেখেছি তারই দেয়া জলকণা,
ঢলে পড়া ফার্ণের ডোরাকাটা পাতার মতোন!
পুড়বোনা আর যতই জ্বালাও দেশলাইয়ে ঝড়,
আগুনে জ্বলেনা কোন শূন্য বিবর!
একটা অশান্ত সমুদ্র তুমি দিয়েছিলে উপহার,
গাঁড় নীলে ভরা মোড়কের ভিতরে,
বিকালের স্নিগ্ধতার কাছাকাছি খুব শান্ত দুপুরে।
শুষে নিয়ে সবটুকু স্রোত নিলয়ে অলিন্দে,
এতোকাল ছিলাম তো বেশ! অভাব পাইনি টের-
কোন বিশল্যকরণী ওষুধের!
এখন ছড়ানো কংকাল, স্তব্ধতায় শামুক ঝিনুক,
কোথায় রাখব বলো এইসব প্রত্নতত্ত্বের ভার?
শহরে এতো বড় মিউজিয়ামের প্রচন্ড অভাব!
‘তুমি চলে যাবে’- আকাশে বাতাসে ভাসে-
শুধু একটি খবর!
মনে পড়ে সেইসব জ্যোৎস্নায় আক্রান্ত রাত,
তিস্তার বিস্মৃত স্রোতে যেন ভেসে যাওয়া বালিহাঁস,
পৌরাণিক নৈশভোজে টুপটাপ পেড়েছি কতো,
নক্ষত্র ও জোনাকের সালাদ!
এখনো কি সেই প্রভা ছুঁয়ে আছে শরীরে তোমার,
মহামূল্য হার্মিস পারফিউমের মতো?
আমিতো প্রায়ই মিশে যাই ধোঁয়া হয়ে স্বপ্ন ও বাস্তবে,
এখনো কিছুটা শরীর জলে কিছুটা হাওয়ায় ভাসে,
ঘনীভূত হওয়া হলোনা কঠিনে!
তুমি কি টের পাও আক্রান্ত নীলিমায় কতো শোক-
ঢেউ হয়ে ভাসে! নেই মেঘদূত আকাশে!
শুধু রাস্তায়, টাওয়ারে, সুউচ্চ ভবনে টাঙ্গানো খবর,
তুমি নাকি খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে যাবে এই শহর!
অপেক্ষায় আছি শেষ স্টেশনে বিলুপ্ত প্রাণীদের সাথে,
জানি পার হবে ট্রেন কোন একদিন,
কোন এক রাতে!
দেখা হবে পুনরায় জলস্নাত পূর্ণিমায়,
তুমি চোখ রেখো দ্রুতগামী আলোর মতো জানালায়!
প্রচেতা
(১)
এইতো সেদিন মাঘী পূর্ণিমার রাতে,
তখন বুদ্ধের মুখে মাখা ছিল হাসি,
জোয়ারের মতো রাশি রাশি!
নাফনদী ধরে ভাসছিল অবিশ্রান্ত
কয়েকশ ফানুস,
হালকা আলোয় মিশে ছিল অন্ধকারে
বেনামী মানুষ!
বলেছিলে ফানুসের মতো
বলেছিলে জোয়ারের মতো ভেসে যাবে ঠিক!
কোথায় ভাসবে বলোতো, প্রশান্ত সাগরে?
নাকি উত্তর সাগরে?
কোথায় ভাসবে?
যেখানে তাহিতি দ্বীপে পুরাতন চাঁদ স্নান করে একা,
তিমির চোখের মণির ভিতর?
কোথায় ভাসবে বলোতো,
অরোরার ছটা বরফ সাগরে মীনাক্ষী নারীর মতো,
আজো কাঁদে একা!
তুমি শুধু-
অবশিষ্ট লিকারের মতো হঠাত হারিয়ে গেলে।
দিলে নাতো দেখা!
কোথায় এখন আছ বুকে নিয়ে পুরাণের গাঁথা?
আমার পকেটে এখন সঞ্চিত থাকে জমাট সমুদ্র,
আর প্রত্যহ সকালের চিনচিনে ব্যাথা!
(২)
একদিন সমুদ্র রাত হয়ে গেলো,
ঢেউগুলো অন্ধকার! চেতনায় মশগুল বিচিত্র পাহাড়,
প্রচন্ড অচেনা লাগে কেন
উপসাগরের কোলের শহর?
তখন সে ছিল! অপরাহ্নের মিষ্টতা ছিল,
অপহৃত বাসনার মতো সব ছিল ভীষণ উজ্জ্বল!
নিছক খেয়ালের বশে,
নিমজ্জিত হয়ে আজ বিষাক্ত ঘাসের দেশে,
কি তার কাজ? মেয়েটি বোঝেনা তো আজ!
সুপ্ত সমাধি ছেড়ে
নেকড়ের প্রেম আসে মাঠে ফিরে,
না বুঝে তাদের দলে দিয়েছে বারংবার ঝাঁপ!
এখন তো কুড়ে কুড়ে খায় অসমাপ্ত প্রেম,
তার সমস্ত দিন, না ঘুমানো রাত!
দরোজায় বাজে অশরীরি কল্লোলিত আঘাত!
ভাবে খুলবে নাকি খুলবে না?
কে এলো মধ্যরাতে?
একি প্রেমিকের প্রেত? প্রেমিকার ছায়া!
‘প্রেমিক আমি তোমাকে চেয়েছি’- বলে কেঁদে দিলো
জানালায় মেয়েটি!
জানেনা সে কেন আসে?
প্রেমিকের ছায়া বারবার কেন আসে!
সেতো চেয়েছিল- জ্বলজ্যান্ত প্রেমিক!
চুল্লীর আগুনের মতো তীব্র হবে প্রেম!
এর চেয়ে তো ভালো ছিল
কয়েকশ বছর স্রেফ বসে থাকা একা!
দরোজায় আঘাত! মেয়েটি কি থাকবে বসে চুপচাপ?
ভয় হয়! মহাযুদ্ধের আগ্রাসী বোমার মতো ভয় হয়,
তবুও সে দেয় উঁকি,
সমুদ্র এসেছে রাতের বারান্দায় নিতে তার খোঁজ!
খ্যাপাটে যুবকের মতো প্রলম্বিত রাত
নাচছে নিখাদ! সমুদ্র এসেছে আজ নিতে তার খোঁজ!
প্রায়ই আসে! সমুদ্র অজান্তে হাতে রাখে হাত!
মেয়েটি এখন নাকি আকাশের শঙ্খচিল,
অথবা কোন কল্লোলিত পাখি,
বহুদূর শহরের পর! ছেলেটা সে খবর রাখে কি?
(৩)
কল্লোলিত পাখি তুমি সমুদ্র ছুঁয়ে যাও,
এখানে বিরহী বিকাল ডুবে যায়!
ডুবে যায়!
অভ্যাগত অতিথিরা ছেড়েছে বন্দর,
পাটাতনে স্তূপাকারে নিয়ে গেলো অনুভূতি সব,
হাতের মুঠোয় শুধু অচেনা নগর,
পড়ে আছে ফাঁকা,
উষ্ণ হাওয়ার মতো তপ্ত বেলুন ফাঁপা,
কারণে অকারণে উড়ছে নিয়ত আকাশে!
কে ডাকে? কে ডাকে?
অচিন নদীর বাঁকে,
আমি যাবোনা! যাবোনা আর!
ছায়ার মতো এসো নেমে কল্লোলিত পাখি,
সোনালী আলোয় শুয়ে প্রেমের প্রাচীন বিপ্লব,
ছুঁয়ে দাও সমাধি!
আমিও প্রেমিক হবো! নিয়ে যাও সাথে,
তিস্তার বিস্তৃত অববাহিকার রাতে,
পায়ের পাতায় ছুঁয়ে আছে নোনা জল,
প্রেমিকের চোখে যেই নদী সেইতো সাগর,
আরেকটু ঢেউ পেলে,
ভেসে যাবে নগরের বিরহী মাকড়!
ফিনিক্স
প্রতিদিন উষ্ণ রাজপথে হেঁটে পুরোটাই পুড়ে যাই,
শহরের বিস্মৃত অন্দরে!
ভিনগ্রহী দানবের মতো হেলানো ভবনে তীব্র ধার,
আয়েশে গড়াতে গেলেই মাংসল কেঁচোটার মতো,
তীক্ষ ফলায় কেটে যাই বারবার!
তারপর স্টোভের আগুন! বৈদ্যুতিক চুলার আগুন,
সবার অজ্ঞাতে ঘটায় বিস্ফোরণ!
দাউদাউ করে যেমন পুড়ে বিক্ষুব্ধ টায়ারের রাবার,
সেভাবেই পুড়ে যাই! অনন্ত মহাবিশ্বময় ছড়াচ্ছে-
অনাদি ছাই! মসৃণ ট্যালকম পাউডারের মতো ছাই!
তারপরও হুট করে চোখ মেলে দেখি বেঁচে আছি,
চর্যাপদের ছেড়া অক্ষরের মতো পুড়েও দিব্যি আছি!
কাবাবের মতো প্রতিদিন দাহ্য হওয়া রুটিনমাফিক,
তারপর একই বৃত্তে ঘোরা বারংবার! লক্ষ কোটি বার!
কে চায় এই পুনর্জন্ম আগ্নেয় চুল্লীতে?
মাঝে মাঝে পরিচিতার মুখে দানবীরা ভর করে এসে,
ছুটন্ত শতপদী সামান্য ঘষা খেলে রৌদ্রতপ্ত বাতাসে,
বিজলী রেখার মতো উষ্ণ পশমে লাগে দাবানল,
লালচে পালকের সোনালী উষ্মায় ঝলসায় নখ ঠোঁট,
দিনের শেষে জীবনের মানে- কয়েক টুকরো কয়লা,
আর নিভু নিভু আগুন!
পুনশ্চ ফিরব জানি! তবু কখনো কি পাব ফিরে-
আজকের জীবন? পোস্টারে হাসে অমরত্বের প্রহসন!
নিত্য রাতের ঘুমে স্বপ্নে হামলা করে ডোরাকাটা সাপ,
শরীরে টানা সাদা কালো জেব্রার মতো দগদগে দাগ,
দিনেও ছাড়েনা পিছু! তীব্র তাড়া খেয়ে হই দিশেহারা!
এভাবেই ছুটে অনিয়ন্ত্রিত আগুনের মতো পুড়ে মরা!
অনেকেই হাসে! অগণ্য উৎসুক মুখ দালানে ও বাসে,
প্রায়ই ভাবি কেন আমি মেতেছি এক নিষ্ঠূর সার্কাসে!
কখনো ধীরেই হাঁটি, কখনো প্রাণপণে দৌড়াই স্রেফ,
ছায়ার মতো পাশেই দাড়িয়ে গোঙায় মঞ্চের বিবেক!
নিরর্থক পোষা পশুর মতো!
আজকাল হইনা অবাক! পুড়ে যেয়ে ভীড়ের ঘর্ষণে,
মিশে যাই, দ্রবীভুত হয়ে যাই দ্রবণে,
সালফারে মিশ্রিত ধোয়ায়, পাইপের গাঁড় কার্বনে,
সূর্য্য মরার আগে বর্জ্য পুকুরে মিশে থাকে শুধু ছাই!
শোন বিগত প্রণয়ী প্রতিটি বর্ষণক্লান্ত সম্ভাব্য ভোরে,
জীবন্ত চিতায় চন্দনের সুবাসে জন্ম-যন্ত্রণা আমার,
দিলে অসহনীয় চীৎকার!
শুকনো পাতার মতো টুপটাপে ঝরে গেলে মেঘদল,
কক্ষ্যচ্যুতি হলে কিছু কিছু এতিম গ্রহের,
পুনরায় হবে কি আমার? এই রাজপথে অন্ধগলিতে-
পুড়ে যেতে যেতে হবে তো আবার মিলন?
নিঃশঙ্ক
অপেক্ষায় আছি নিঃশঙ্ক সময়ের,
জীবাণু হটবে পিছু প্রাণঘাতী সম্মুখ সমরে,
জনারণ্যের কল্লোল বাজবে নয়া হিল্লোলে,
অচিন পাখির ডাকে, বাউলের কাঁপা সুরে,
ঝাকড়া বাতাস ছুঁয়ে যাবে নগরে ও চত্বরে,
তখন আবার মুখোশ ছাড়া বসবো আমরা,
সবুজ গালিচার এক সান্ধ্য শহরে!
একদিন অনাহুত ভয় নিয়ে তার সব সঞ্চয়,
পালাবে পালাবে ঠিক বিরান তেপান্তরে!
দেখো মহামারী হটবেই পিছু এই মহাযুদ্ধে,
জ্বলবে ডিনারে তপ্ত ক্যান্ডেলে সূর্য্য হলদে,
ধোঁয়া ওঠা খাবারের গন্ধ পেয়ে স্মিত হাসি,
মৃদুস্বরে মাঝে মাঝে বলে দেয়া ভালোবাসি,
তরুণ ও তরুণী কন্ঠে উচ্ছল কিচির মিচির,
আসবে ফিরে নিঃস্তব্ধ শোকের বড় বন্দরে!
অজেয় এই মহামারী ফিরে যাবে তার ঘরে,
অপেক্ষায় আছি সেই নিঃশঙ্ক সময়ের!
দেখো সাদা সাদা বকপাখি নীলকালো মেঘে,
আনবে জয়তীর দিনে জীবনের তীব্র উল্লাস,
অকাল বৃষ্টিতে মুছে যাবে জীবাণুর যুদ্ধবহর,
অবরোধ মুক্ত হবে আমাদের রুদ্ধ নিঃশ্বাস!
ধুইয়ে মুছে সাফ হবে আক্রান্ত প্রেয়সী শহর,
হাতে হাত রেখে বলয়ে প্রদর্শিত হবে নির্ঝর!
প্ল্যাকার্ডে, পোস্টারে আর দেয়ালের লিখনে-
লেখা হবে- “মানুষই যুদ্ধ করে! মানুষই মরে!
তবু জীবনেরই কাঙ্গাল জয়ী হবেই এ সমরে!”
মহামারী! মহামারী! তুমি পিছুহটে যাও ফিরে!
ক্রমশ হচ্ছে বড় মৃতদের মশাল মিছিল,
আর কতো জীবনের রপ্তানি পেলে হবে স্থির-
এই মহামারী? বন্দরে জাহাজের ভীড়!
কতো শত পরিচিত প্রতিদিন যায় সমাবেশে,
কেউ যায় চিরতরে! কেউ কেউ ফিরে আসে!
তবু নীলজল বলে যায়, রাজহাঁস বলে যায়,
রাজপথ আওড়ায় বুলি- “অপেক্ষা সময়ের,
মানুষই বিজয়ী হবে পুনরায়!”
বুকের পাঁজরে আকড়ে ধরে অস্থির সময়,
সবাইতো আছি অপেক্ষায়!
একদিন দুন্দুভির স্লোগানে আমরা হটিয়ে দিব,
আমরা তাড়িয়ে দিব এই বিদ্ঘুটে প্রলয়!
প্রিয়ন্তী ততোদিন বেঁচে থেকো! ভালো থেকো!
থেকো অপেক্ষায়!
অধুনা সংবাদ
বুকের ভিতর ঝড় তোলা হৃদস্পন্দনে নিচ্ছে বিদায়
আলোকিত বিকাল! রাজপথে ধীরলয়ে হেঁটে যায় যমদুত!
ঠোঁটের কোণে অনন্তবিলাসী মৃদুহাসি,
মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হোমো সেপিয়েন্স বড় অসহায়!
অথচ তাদের নাতিশীতোষ্ণ ঘর ও ব্যাংকের স্টেটমেন্ট ছিল,
প্রবীণ মুঠোয় পদাবলী ভরা প্রেমে ছিল সহজিয়া অনুরাগ!
নদীর মতো একদিন বুকপকেটে বহমান ছিল লাল চাঁদ,
আয়েশী বিকালে মায়াময় উষ্ণ স্বপ্ন ছিল! হরিদ্রাভ জলে-
আনত বালিকার চোখে চঞ্চল ছিল রূপালী ডানার মাছ!
সেইসব পুরাতন কথা অচল পয়সার মতো গড়াচ্ছে ধুলায়,
অতিমারীর পরিসংখ্যানে এখন শুধু শোকসংবাদের সময়!
আজকাল খুব দ্রুতই চলে আসে! ভাইরাল সংবাদের মতো
অবিশ্বাস্য গতিতে আসে! প্রখর চিতার বেগ মেনেছে হার-
তার পাশে! নিউজ স্ক্রল, ফেসবুক সমস্ত কিছু ছেয়ে আছে,
বিষাক্ত মাশরুমের মতো আগ্রাসী প্যান্ডেমিকের সংবাদে!
অনতিক্রম্য প্যানিক এটাকেও পালানোর রাস্তা বন্ধ সব,
মৃত্যুদূত হাসছেন আর দেখছেন ঈশ্বর!
অবরুদ্ধ কোণায় যাচ্ছে শোনা হাঁসফাঁস শ্রেষ্ঠ জীবের,
ল্যাবরেটরির গিনিপিগের মতো অস্বস্তিতে ছোটাছুটি তার,
সময় নেই কারো দেখবার! অপেক্ষা মহাজাগতিক খেলার,
আর অন্তিমে অপেক্ষা লটারীর!
অন্যকে মরে যেতে দেখে উত্থিত নিজস্ব মৃত্যুর কল্পনা,
হয়তো এরই নাম প্রকৃত অসহনীয় যন্ত্রণা!
তবু অপেক্ষা লটারীর! ফোনের রিংটোন বাজছে ক্রিং ক্রিং,
অপেক্ষা কখন নামবে প্যারাট্রুপার সাথে নিয়ে বুলেটিন-
একটি শোকসংবাদ! একটি শোকসংবাদ! একটি শোকসংবাদ!