সৌবর্ণ বাঁধন এর সকল পোস্ট

পিদিম

এক পা স্বর্গে আমার, আরেক পা নরকে!
একফালি বদ্বীপ গেয়েছিল শ্বাশত প্রেমের কীর্ত্তন,
অমৃতের জল ভেবে গিলে নিয়ে নিষিদ্ধ যৌবন,
পাথরের বালিহাঁস অনড় বারান্দায় স্তব্ধ মড়কে!
শুধু বিকালের বহ্নিমান চিতা দিল অচেতনে চেতন,
চুপিসারে চলে যায় রাধা! মহাকাল দিয়েছে শমন!
আহা! জীবন মশলায় মেখে পার হলো চেখে চেখে,
সেও তো ড্রেসিংটেবিলে পাড়ি দিল অর্ধেক জীবন!
মুক্তির চেয়েও মোহময় নিজস্ব সৌন্দর্যকে পান,
পরাবাস্তব পাউডারে আয়নায় মুখ ছিল অম্লান!
তবু আমি কি নরকে যাব একা একা?
শরীর শিউরানো তীব্র আগুনে পেতেও তো পারি,
একটি পলক স্বর্গীয় শিখায় তার সামান্য দেখা!

এক হাত স্বর্গে আমার, আরেক হাত নরকে,
মাঝপথে ছুটন্ত সরীসৃপ ব্যাকুল কন্ঠে শুধু ডাকে!
জানেনা সে নিজস্ব বিষের খন্ডিত দুঃসহ খবর,
দংশানো মানা! তবু ছোবলের ভুত দিচ্ছে আছর!
মেয়েটি মেঘের জন্য ছিল কৃষ্ণচূড়ার মতো আকুল,
আমার মেঘে আকাশ ছিল,
আরো ছিল মায়ার সিন্দুক, চোখে স্নেহময় জল!
সেদিন তার চোখে পড়েনি! মনটা বুঝি ছিল উতলা!
আমিও তাই পিছলে গেলাম, মেঘ হারালাম,
এখন ঘুরি এদিক ওদিক ঘুড়ির মতো আত্মভোলা!
হয়তো আমি স্বর্গ পাইনি! নরকলোকের পাশেই বাঁচি,
হয়তো আমি দুয়ের মাঝে খেলছি খেলা বউছি!

এখন অতো রাখিনা খবর, তবুও থামেনা দৌড়ঝাঁপ,
আমার জন্য স্বর্গ নরক কোনটারই নেই আশ্বাস!
লার্ভার জীবন টেনে নিয়ে স্পাইরাল গ্যালাক্সি,
বাড়াচ্ছে পরিধি তার প্রতিরাতে!
প্রতিদিন ঢুলে ঢুলে প্রেম পড়ে যায় একদিন খাদে,
পৃথিবীর পথে ঘুরে চিরতরে নিহত হয় যেসব ট্যাক্সি,
তুমি আমি সেই সব বাহনের সওয়ারী!
রাত্রি গভীর হলে পরিপক্ক লিচুর মতো আলিঙ্গনে,
দুইজন অবিরাম করি স্বর্গ ও নরকের ভাগাভাগি!

প্রলয়ঙ্করী

আমার তীব্র জলোচ্ছাসে তোমার বিতাড়িত উচ্ছ্বাসে,
এই রাগিণী সোহাগী ঘর ভয়ে কাঁপে থরথর!
নন্দিত অমৃতে প্রত্যয়ী পিতা বাঁচাতে চেয়েছিল মৃতে,
সেই দাপুটে ঘোড়ার বিশ্বাস কেন দিচ্ছেনা আশ্বাস?
যা ভাবতে চাইছ ভাব আমি না হয় মহাসমুদ্রই হবো,
রুপালী আইশে করাতের সাথে সূর্য্যকে গিলে খাবো!

আমার মিথ্যারা জড়সড়, তুমি যতোই জড়িয়ে ধরো,
প্রেমের হিংস্র শপথ, ঢেকে রাখে ফুল ফলের পর্বত!
ঘোলা জলে মায়া গোলাপ, সকাল বেলা ভ্রষ্ট প্রলাপ,
যতোই রাখি মিথ্যা ঢেকে, ফুরায় পাতারা চেকবুকে,
দুপুর রোদে মজনু সাজা অকারণে বাড়ায় মনস্তাপ!
চাইনা আর লাইলি, জৈব শরীর পুড়ায় আগুন-বালি,
তবু প্রেমিক হওয়ার খায়েশে ছটফট করি বারেবার!

পায়ের নীচে ফুটছে পাতাল, আসমানে ছায়ারা লাল,
সুক্ষ স্থূল নিয়ম কতো জড়িয়ে আছে জালের মতো!
চোখের লেন্সে ঘোলা কাঁচ, হয়েছি আজ আবদ্ধ মাছ,
পারলে কাটো হররোজ, আমি তাজা রক্তের তরমুজ!
পৌছালে দুমদাম অন্তিমে, চুপিসারে ডেকেছি পরমে,
অভিশাপ দিলেন প্রাজ্ঞ, মরণকালে সবাই হবে অজ্ঞ,
পৌরাণিক যুদ্ধ প্রেমে খলনায়কেরা চিরকাল নিঃসঙ্গ!

সকাল বেলা তুমিও সাকার, রাত্রি এলেই হও নিরাকার,
উছলে উঠে সুনামির ডাক, অতৃপ্ততায় নাচে দাঁড়কাক!
পুরো রাত প্রলয়ে সাঁতার, তবুও শরীরে বাঁধা কাঁটাতার,
তোমার শরীর ছুঁয়েই রমণী, জেনেছি তুমি নও হরিণী!
পদ্মফুলে জ্বলছে বারুদ, নাট্যমঞ্চে পুরূষই তীব্র পারদ,
যদি গিলে খেয়ে ফেলো, বিষক্রিয়া ছেয়ে দিবে মস্তিষ্ক!

আমার অন্ধকারের ঘরবাড়ি, তুমি এক নিঃসঙ্গ গ্রহচারী,
এই জনারণ্যে ফোটা বনফুল, তোমার অপছন্দের ভুল,
জমিনে করেছিলাম বপন, এখন প্রেমই চালায় দুঃশাসন!
তুমি পালালে কোথায়? অতন্দ্রীলা দাড়িয়েছে দরোজায়! 
আমি রাস্তার সারমেয়, ভিতরে গর্জাচ্ছে নাগিন কালীয়!
আনো অগ্নি নির্বাপক বহর, দেহের ভিতর পুড়ছে শহর,
সপ্ত ডিঙ্গার সাত নাবিকে হন্যে হয়ে খুঁজেই যাচ্ছে ঝড়!  

আমার ময়লা টেবিলে ক্ষোভ ও হাঙ্গরের হাসিতে লোভ,
এক থালা সাদা ভাত রাঁধতে বিস্ফোরণে চৌচির স্টোভ!
বাতাসে বাস্পে পেট্রোল ভাসে, পালাচ্ছ তুমি সেই ত্রাসে,
পড়ে আছে সব দাবার সৈন্য, গ্রাস করে প্রেম জন্তু বন্য,
শেষ করে এই নৈসর্গিক রাত শিম্পাঞ্জিও দেখাচ্ছে দাঁত,
এসো হাতে রেখে হাত, দুজন ভিনদেশী গ্রহে চলে যাই!     

অভিমান

অভিমানী মেয়ে,
দলছুট পাখিরা ক্লান্ত রাতের ডাকে,
একমনে দূরতম আলোর গন্ধ শুঁকে,
তুমি আজ তাড়াতাড়ি যেও ঘুমিয়ে!
আকাশে মেঘের লতা,
বিরান বনের ছাদে উষ্ণ নীরবতা,
তারই ফাঁকে বৃষ্টির সামান্য কথকতা,
ছুঁয়ে দিবে তোমাকে,
স্তব্ধ পালংকে পর্দার ফাঁকে!
দাবদাহে কাঁপছে শখের পোষা তোতা,
ব্যথাতুরা নীল শাখে!
কেউতো জানেনা শুধু আকাশ ছাড়া,
প্রেম ছুঁয়েছিল তোমাকে!
অভিমানী মেয়ে,
আজকের মতো তুমি পড় ঘুমিয়ে!
গ্রীষ্ম ঘনাচ্ছে মায়াবী দু চোখে,
মেঘমল্লার দিন সমাগত,
পলকে পাপড়ি বুজে ফেলো,
অকালে বর্ষা নামার আগে!

দ্যাখো রূপালী জোনাকি,
পদাতিক হয়ে দিচ্ছে এখন উঁকি,
প্রাসাদের গলির বাঁকে।
ওইখানে প্রাক্তন শোক,
মৌমাছির মতো ঘুমাচ্ছে ঝাঁকে!
এই পরাভূত অবেলায়,
ডেকে জাগিয়োনা তাকে!
কোন হেমলক থামাতে পারে বলো,
অশান্ত প্রশান্ত সমুদ্রকে?
আহা! অভিমানী মেয়ে,
তোমার মুখের দিকে চেয়ে,
থমকায় নগরের ঝাঁঝালো নিঃশ্বাস!
তোমার চোখেতে রেখে চোখ,
অন্তরে আহত বক,
ঠোঁটে নিল বেঁচে থাকার বিশ্বাস!
তবু করে ফিসফাস,
জানালায় আগন্তুক বিরহী বাতাস,
অভিমানী মেয়ে,
বেলা যাচ্ছে গড়িয়ে,
তুমি তাড়াতাড়ি পড় ঘুমিয়ে!

ওই যে ওখানে,
প্রবীণ কাছিম জোয়ারে জলের টানে,
এলো তোমার উঠানে,
তার শক্ত শরীরে কোমল শৈবাল,
ঘরে পোষা পুরাতন ঘ্রাণ!
কঠিন খোলস আলতো জড়িয়ে,
তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ মেয়ে,
কখন কে জানে!

পারদের মতো প্রেম

পুরুষের প্রেম হয় পারদের মতো,
তীব্র উজ্জ্বল তবু বিষভারে ফণা অবনত!
অকারণে গড়াতে গড়াতে,
পুড়ে মরে অন্তঃস্থিত দুর্মর বাসনাতে,
বিরহী পারদ তীব্র চঞ্চল! মেঝেতে ছড়ায়,
নিতান্ত স্বাভাবিক তাপমাত্রায়!
বলেছেন ফ্রয়েডের আগে প্রাজ্ঞ গুরুরা,
পুরুষের হাতে রক্ত গোলাপে,
লুকানো থাকে আততায়ী এক ছোরা!

পুরুষে প্রেম পোষে রূপালী পারদ হ্রদে,
মেয়ে তুমি নীল আঁচলে,
বিন্দু বিন্দু ফোঁটা নিজ বুকে আটকালে,
প্রেম ধরে রেখে দিতে থার্মোমিটারে,
অরুণোদয়ের ভোরে সুমসৃণ কাঁচ হলে!
তবুও পুরুষ পুড়ে প্রচন্ড জ্বরে,
যতো দৃড় হও তুমি, তাও তো ভঙ্গুর কাঁচ,
বিচূর্ণ হবে কোন একদিন ঝড়ে!
পুরূষালি মনে অকারণে অতৃপ্ত বজ্রপাত,
পুড়বে নিজেও আর ভাঙ্গবে তোমাকে,
গড়ায় পারদ! পুরুষ তো পরিযায়ী পাখি,
নতুন সৈকত খোঁজে!

ডুবছে নারী পারদ হ্রদে অতৃপ্ত প্রপাতে,
কোন মায়া ডেকেছিল তাকে?
বাষ্পের বিষ ধারালো নাক পায়নি কি টের!
এখন তো অসাড় তার পা আর হাত,
তীব্র যন্ত্রণা মস্তিষ্কে দিচ্ছে নরকের সাক্ষাৎ!
প্রতিটি সেলফিতে যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখ,
মনে হয় যেন আজ সমস্ত পৃথিবীর অসুখ!
পুরুষের প্রেম সেতো পারদের মতো,
তীব্র ঘনত্বে হৃদয় পুড়ায়!
তারপর ফেলে আক্রান্ত নীলিমাকে পিছে,
গোছানো গৃহের স্বাভাবিক তাপমাত্রায়,
থার্মোমিটার ভেঙ্গে নিজেই গড়ায়!
নারী শুধু ভাসে প্রাত্যাহিক ঢেউয়ের পাশে,
কুকড়ানো মন পুড়ছে এখন
অবশিষ্ট বিষে!

সাতসকাল

হেই! হেই! একটি বানর দিচ্ছে লাফ,
ছাদের কোণায় ঝুলছে ওই আতা ফলের মতো,
সাত সকালের বাসী চাঁদ!
অফিস মেয়েটার অনেক দূরে,
ঘুমের মাঝেই বিপ বিপ!
বহুকাল চাঁদ দেয়না টিপ! সময় হয়না আর!
জাগিয়ে তাকে প্রতিটি ভোরে,
ডাকু এলার্ম তাজা স্বপ্ন মারে জোড় শিকারে,
খুনী এলার্মের বিচার চাই! বিচার চাই আজ!
আজো স্বপ্নে প্রেমিক ছিল বেঘোর ঘুমে অসাড়,
মেয়েটি জাগানোর সময় পায়নি আর!
খুনী এলার্মের বিচার চাই! বিচার চাই আবার!

মেয়েটি ব্যস্ত ল্যপটপে,
প্রোজেক্টের কাজ এখনো অনেক বাকী যে,
যারে মেঘ দূরে যা! যারে চাঁদ সরে যা!
তার দেখার সময় কই?
ক্রেডিটে ডেবিটে আর একটুও সময় জমা নাই!
মাসের শুরুর চকচকে চেক,
বন্ধক রাখে সময় সময় অনেক,
এসি কারে বোটকা গন্ধ,
সাতসকালেই নাকটা বন্ধ,
ওহ! ড্রাইভার! কাঁচটা নামিয়ে দাওতো ভাই!
একটি বানর লাফিয়ে গেলো!
তার পিছনে লেজের মতোন সংগী গেল ওই,
ছোট্ট খুকি ময়লা জামা; পরীর মতো চোখের তারা,
রাঙ্গা হাতে গোলাপ তোড়া,
প্রতিটি ফুল দশ টাকা! আপু, দশটা টাকা চাই!
লজেঞ্চ খাবোনা, পুডিং নিবনা, নাস্তা খাবে ভাই!
চোখের সামনে ল্যাপটপ! প্রোজেক্ট নাচে তা-থৈ থৈ!
অবাধ্য মন বাড়াচ্ছে হাত,
একটি গোলাপ করূণ কেন?
হারানো প্রেম জীবিতএখনো! কান্না পাচ্ছে আজ,
ভীষণ বৃষ্টি এলে পন্ড হবে কাজ!
ড্রাইভার! উঠাও না ভাই জানালাটার কাঁচ!
ছোট্ট খুকির চোখ ছলমল,
মেয়েটির বুকে প্রেম টলমল,
ড্রাইভার! দাওতো ওকে দশটা টাকা!
ভালো মন্দ খাক! মনের ভিতর লাগছে ফাঁকা!

এই যা! সবুজ হলো ট্র্যাফিক বাতি!
ছেড়েই দিল জ্যাম! কাঁপছে কেন বুকের ছাতি?
পথের ক্ষুধা, বুকের প্রেম বাজিয়ে দিল কোন বিপত্তি,
ক্রিং! ক্রিং! ক্রিং………
ডাকছে ভারচুয়াল মিটিং! ডাকছে হোয়াটস আপ!
দক্ষিণা আকাশে মেঘ জমেছে!
একটি বানর মেঘের উপর লাফ দিয়েছে,
অনেক গুলো তার পিছনে!
মেয়েটার আর দেখার সময় নাই!
আরে! ড্রাইভার! চালাও না গাড়ি টেনে…………!
পেতে পেতেও হারিয়ে গেলো দশটা টাকার নোট,
করুণ চোখে পথের খুকি এখনো তাকিয়ে একমনে,
কোকড়া চুলের দেবশিশু দাড়িয়ে পথের মাঝখানে!

লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প

Floren

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ১২মে ১৮২০ সালে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মদিনকে সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তিনি জাতিতে ব্রিটিশ ছিলেন। জন্মের সময় পরিবার ইতালির ফ্লোরেন্সে অবস্থান করছিল, তাই ওই শহরের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছিল তার। পিতা উইলিয়াম এডওয়ার্ড নাইটিঙ্গেল একজন প্রচন্ড বিদ্যানুরাগী মানুষ ছিলেন। ভিক্টোরিয়ান রক্ষণশীলতার যুগেও তিনি মেয়েদের গণিত, দর্শন, ক্ল্যাসিকাল সাহিত্য এবং বিভিন্ন ভাষা শেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। মা ফ্রান্সিস নাইটিঙ্গেল অভিজাত পরিবারের মানুষ ছিলেন।

ছোটবেলা থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় পরিবারের সাথে ঘোরার সুযোগ হয়েছিল তার। এরকম এক ভ্রমণের সময় প্যারিসে পরিচিত হয়েছিলেন ম্যারী এলিজাবেথ ক্লার্ক এর সঙ্গে। নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ম্যারী প্যারিসের বুদ্ধিজীবিদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ম্যারী বিশ্বাস করতেন নারীরা পুরুষের সমকক্ষ। প্রকৃতপক্ষে তিনি ব্রিটিশ অভিজাত পরিবারের মেয়েদের এড়িয়ে চলতেন। ঘটনাক্রমে ফ্লোরেন্সের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়েছিল। এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক টিকে ছিল প্রায় চল্লিশ বছর। ধারণা করা হয় ম্যারীর ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ নাইটিঙ্গেলকে খুব বেশি অণুপ্রাণিত করেছিল। এরপর নাইটিঙ্গেল গ্রীস ও মিশর ভ্রমণে যান। এথেন্সে অবস্থান কালে একটি ছোট ঘটনা তার মনকে খুব নাড়া দেয়। কিছু বাচ্চা দুষ্টুমির ছলে একটা ছোট প্যাঁচাকে নিষ্ঠুর ভাবে কষ্ট দিচ্ছিল। নাইটিঙ্গেল পাখিটিকে উদ্ধার করে তার কাছে রেখে নাম দিয়েছিলেন এথেনা। এরপর ১৮৩৭ সালে মিশরের থিবেসে ভ্রমণের সময় তার অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়- মনে হতে থাকে সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে ডাকছেন! তার নিজের ভাষায়-“God called me in the morning and asked me would I do good for him alone without reputation.”।

একজন অভিজাত পরিবারের মেয়ে কিভাবে এই সিদ্ধান্তে আসলেন তা নিয়ে আরো অনেক গল্প আছে। ফ্লোরেন্সে জন্মালেও বেড়ে উঠেছিলেন লন্ডনের নিকটবর্তী ডার্বিশায়ারের গ্রামাঞ্চলে। ওই এলাকায় রজার নামে এক দরিদ্র রাখাল ভেড়ার পাল নিয়ে বসবাস করত। ভেড়ার পাল পাহারা দেয়ার জন্য ছিল পালিত কুকুর ক্যাপ। একদিন গ্রামের ডানপিটে ছেলের দল পাথর ছুড়লে ক্যাপের এক পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। রজারের পক্ষে একটি অকর্মণ্য আহত কুকুরকে পালার মতো আর্থিক সক্ষমতা ছিলো না। সে কুকুরটিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়! অন্যদিকে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল কুকুরটিকে খুব ভালোবাসতেন। মাঝে মাঝে বাইরে বের হলে ক্যাপের সাথে খেলতেন। সেদিন রাস্তায় বের হয়ে রজারের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন সব ঘটনা। মর্মাহত হয়ে স্থানীয় এক পাদ্রীকে সাথে নিয়ে ক্যাপকে দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করলেন, ক্যাপের হাড় ভাঙ্গেনি! স্রেফ জখম হয়েছে চামড়ায় কিছুটা। পাদ্রীর নির্দেশনায় গরম পানি, ব্যান্ডেজ দিয়ে তার শুশ্রূষা করলেন দুইদিন। এরপর কুকুরটি ভালো হয়ে যায়। পরদিন রাতে ৭ ফেব্রুয়ারী, ১৮৩৭ সালে স্বপ্ন দেখলেন অথবা এটা তার নিজস্ব অন্তর্দৃষ্টি ছিল যে- যেন তিনি ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন। তিনি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করা শুরু করলেন তার জীবনের বিশেষ লক্ষ্য রয়েছে। সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে এসবই তার জন্য ইশারা! হয়তো সেবা দিয়ে একজন মৃত্যু পথযাত্রীকে ফিরিয়ে আনা যায়, এই ঘটনায় এই বিশ্বাস তার মনে গড়ে উঠেছিল।

১৮৪৪ সালে তিনি যখন প্রথম প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন নার্সিংকে পেশা হিসেবে নিবেন, পরিবারের তরফ থেকে তীব্র আপত্তি ছিল। বিশেষ করে তার মা অভিজাত ব্রিটিশ হওয়ায় বিষয়টা মেনে নিতে পারছিলেন না। কিন্তু নাইটিঙ্গেল সেই সময়ের নারীদের মতো কারো স্ত্রী বা কার মা হয়ে কাটাতে রাজী ছিলেন না। এটা সুস্পষ্ট বিদ্রোহ ছিল এবং তিনি প্রত্যয়ী ছিলেন! সোশ্যাল কগনিটিভ থিওরী তে ভাবলে বোঝা যায়, সেই সময়ের নারীদের জন্য রক্ষণশীল পরিবেশে তার এই আচরণের কারণ ছিল তার বাবার দেওয়া উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার পরিবেশ এবং বাবার সাথে মেয়ের সম্পর্ক। কারণ পরিবেশ মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে, বদলাতেও পারে। এরিকসনের সাইকোসোশ্যাল থিওরী মতে মানুষের ব্যক্তিত্ব গঠনে বড় নিয়ামক হলো তার শৈশব, পিতা মাতার ভূমিকা, আর সমাজ। এক্ষেত্রে ধারণা করা যেতে পারে নাইটিঙ্গেলের এই সিদ্ধান্তের পিছনে হয়তো ছিল সেই সময়ের সামাজিক রীতি নীতি, নারীর প্রতি রক্ষণশীলতা ও উচ্চবিত্তের জীবনাচরণের প্রতি প্রতিবাদ।

এরপর ১৮৫০ সালে জার্মানিতে প্রটেস্টান্ট ধর্মযাজক থিওডর ফ্লেডনারের হাসপাতালে অসুস্থ ও বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তার সেবামূলক কাজ দেখার সুযোগ পান। এই অভিজ্ঞতা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তিনি সমস্ত সংশয় ঝেড়ে ফেলে মানুষের সেবায় জীবন উৎসর্গের ব্রত নিলেন। এখানেই চার মাস নার্সিং ও মেডিকেল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন যা তার পরবর্তী জীবনের বুনিয়াদ হিসেবে কাজ করেছিল।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের সবথেকে বড় অবদান ছিল ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করা। ১৮৫৪ সালে সাথে আঠারো জন স্বেচ্ছাসেবী তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্যের কৃষ্ণসাগরের নিকটবর্তী একটি অংশে কাজ করা শুরু করলেন। সেখানে তখন ভয়াবহ ঝুঁকি পূর্ণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিরাজমান ছিল! যতো রুগী যুদ্ধে আহত হয়ে মারা যাচ্ছিল তার চেয়ে দশ গুণ বেশি মারা যাচ্ছিল কলেরা, টাইফয়েড, টাইফাস এইসব রোগে। না ছিল পর্যাপ্ত ঔষধ, পরিচ্ছন্ন গজ ব্যান্ডেজ, সর্বোপরি ড্রেইনেজ বা সুয়ারেজের কোন ব্যবস্থাপনাই ছিলনা। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে কারো কোন ধারণা ছিলনা। আনুমানিক দুই হাজার সৈনিকের জন্য ছিল মাত্র চোদ্দটি গোসলখানা! মানুষের শরীরে উকুন, চারপাশে মাছিদের বাজার! আবর্জনায় পরিপূর্ণ ছিল চারিপাশ!

নাইটিঙ্গেল সব দেখে এইসব দেখে সিদ্ধান্তে পৌছালেন সমস্যা মূলত তিনটি জায়গায়- খাবারে, আবর্জনা ও ড্রেইনেজ ব্যবস্থাপনায়। তিনি ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ করে এইসবে আমূল পরিবর্তন আনেন। তার সব থেকে বড় অবদান এটা যে তিনি পরিচ্ছন্নতা ও মৃত্যহারের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পেরেছিলেন। দিন রাত অবিশ্রান্ত খেটে গভীর রাতে মেডিকেল অফিসাররা চলে যাওয়ার পর হাতে আলো নিয়ে ঘুরতেন এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে! কোন আহত সৈনিক কষ্ট পাচ্ছে কিনা নিজে গিয়ে শুনতেন। আর এই মানুষ গুলো তাকে নাম দিয়েছিল- “the Lady with the Lamp”!

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ছিলেন একজন সুলেখিকা ও পরিসংখ্যানবিদ। ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড ধর্মভীরু ছিলেন। এই যে জীবন ব্যাপী কর্মযজ্ঞ- নার্সিং কে আধুনিকীকরণ, সমাজ সংস্কার, পরিচ্ছন্নতার ধারণা পরিবর্তন, যাকে অনেকে বলেন নাইটিঙ্গেল পাওয়ার। একে বুঝতে হলে তার নিজস্ব বিশ্বাসকে বোঝা প্রয়োজন। তিনি আধ্যাত্মিক মানুষ ছিলেন। চিরাচরিত আধ্যাত্মিকতার কিছু মত মানুষকে সমাজ সংসার থেকে একদম দূরে নিয়ে আত্মমুক্তির কথা বলে। আবার কিছু মত আধ্যাত্মিকতায় উদ্বুদ্ধ মানুষকে প্রেরণা দেয় তাদের আত্মোপলব্ধি সমগ্র মানব জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল অনেক লেখা লিখেছেন আধ্যাত্মিকতার উপর। লিখেছেন- “Where shall I find God? In myself”। অতিন্দ্রীয়বাদ, সুফিবাদের মতো শোনায় কথাগুলো। এইযে পরার্থপরতার উদাহরণ নাইটিঙ্গেল দেখিয়েছিলেন তার উদাহরণ আগে থেকেই খ্রিস্টিয়ান মিস্টিকদের মধ্যে ছিল। ক্যাথেরিন অফ সিয়েনা, ক্যাথেরিন অফ জেনোয়ার নাম বলা যায় উদাহরণ হিসেবে। এই সেবা করার তাড়না, মানুষের ভালোর জন্য কিছু করার আগ্রহ ও মানসিক শক্তির পিছনে হয়তো কাজ করে তাদের বিশ্বাস। হয়তো তাদের উপলব্ধি এমন যে এই শক্তি চলে আসে অলৌকিক উৎস থেকে, যার জন্য তাদের কোন প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়েনা, স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে আসে! হয়তো এরকম বিশ্বাসই নাইটিংগেলকে অনুপ্রাণিত করেছিল কিশোরী বেলা থেকেই।

তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য তার বিশ্বাস কে মাদার তেরেসার মানব সেবার বিশ্বাসের সাথে মিলানো যাবেনা। মাদার তেরেসা ভাবতেন যন্ত্রণা, দুঃখ মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তার সুন্দর দান, যাতে তারা যীশুর যন্ত্রণাকে বুঝতে পারে, সমব্যাথী হতে পারে। কিন্তু নাইটিঙ্গেল ভাবতেন উপশমের কথা। ভাবতেন কিভাবে মানুষের যন্ত্রণা কমে, কিভাবে তার রোগ হচ্ছে, আর তা ঠেকানোর উপায় কি! তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিকতায় উদ্বুদ্ধ বিজ্ঞানমনস্ক সংস্কারক!

তৎকালীন সময়ে নাইটিঙ্গেলের জন্য অনেকে অনুরক্ত থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তার মানব সেবা বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে এই আশংকায় আজীবন অবিবাহিতই ছিলেন। এই যে অদৃশ্য মানসিক শান্তি, তৃপ্তি যার জন্য অনেকেই বেছে নেয় এই জীবন, এই যে তাড়না তৈরী হয় মানুষের মনে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা, করুণা ও ভালোবাসা দিয়ে সেবা দিয়ে যাওয়ার, তাকে আলবার্ট ফিনি ১৯৮২ সালে উল্লেখ করেছিলেন ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল সিন্ড্রোম’ নামে। অনেকে আবার বলেন ‘নাইটিঙ্গেল এফেক্ট’! তবে সুস্পষ্ট ভাবেই এটা কোন রোমান্সের উপর গড়ে উঠেনা। এই সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা, দয়াশীলতা এবং পেশাদার ইতিবাচক মনোভাব। এই সবগুলোই অসুস্থ মানুষের সেরে উঠার জন্য খুব জরুরী। তবে এখানে পেশাদারিত্বের সীমারেখা থাকে। যার ভিতরে থেকে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের দুঃখ দুর্দশা কমানোর জন্য সর্বোচ্চটা করতে পারেন। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল নিজে নার্সিং বিষয়ে পেশাদারিত্বের চরম উৎকর্ষতা দেখিয়েছিলেন।

দায়িত্বের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত যত্নশীল। সার্বিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় তখনকার দিনের পুরুষদের সমকক্ষ ছিলেন। এই গুণ তাকে সবকিছু বদলাতে আর পরিবর্তন আনতে সাহায্য করেছিল। অনেকের মতে জনসাধারণ তাকে নিয়ে ভাবত- “woman with a strong “man’s” character”।

পরবর্তী জীবনের পুরোটা সময় নার্সিং পেশার উন্নয়নে, প্রশিক্ষণ প্রদানে পার করেছেন। তিনি ১৮৬০ সালে প্রথম সেইন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিং স্কুল উদ্বোধন করেন। এছাড়া তিনি আমেরিকার প্রথম প্রশিক্ষিত নার্স লিন্ডা রিচার্ডস এর প্রশিক্ষক ছিলেন। ১৮৫৭ সালের পর থেকে মাঝেমাঝেই শয্যাশায়ী থাকতেন। অনেকে মনে করেন ব্রুসেলোসিস আর স্পন্ডাইলিটিসে আক্রান্ত হয়ে পরেছিলেন তখন। ডিপ্রেশন ও আসতো মাঝে মাঝে। ১৩ আগস্ট, ১৯১০ সালে লন্ডনে ঘুমের মধ্যে শান্তিতে মৃত্যুবরণ করেন আজীবন মানুষের যন্ত্রণা লাঘবের জন্য কাজ করে আসা এই মহীয়সী নারী।

ছবি ও লেখা কৃতজ্ঞতাঃ ইন্টারনেট।

উন্মনা

তোমার জন্য হাত বাড়াতেই শহর হলো উন্মনা,
ঝড়ের ধুলায় উড়লো গোলাপ,
তোমাকে দেয়া আর হলোনা! ভাসল চন্দ্রমল্লিকা!
সিক্ত ফুলের কবর থেকে জন্ম নিল প্রজাপতি,
ভুলোমনে সরিয়ে দিওনা খোঁপায় এসে বসে যদি!

লম্বা মেঘের ট্রেনে চেপেছি, যাত্রী একাকী আমি,
প্রতিটি স্টেশনে লক্ষবার তোমার খোঁজে নামি!
শহর জুড়ে আলোর মিছিল হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে,
শেষ মশালের আলোয় পাখি বসল এসে নীড়ে!
চাঁদ উঠেছে! চাঁদ উঠেছে ওই! পাগলি তুমি কই?
পরিত্যক্ত শহরের প্রেমে অকারণে শিহরিত হই!
অমরাবতীর দরোজা জুড়ে কঠিন শিকল বাঁধা,
তবু বন্ধ হলোনা আনমনে তোমার নামটা সাধা!

রেশম পোকা ঢুকলো ঘরে এক্কেবারে চিরতরে,
রাস্তা ঘাটে বৃক্ষ হাঁটে চাঁদের আলো ফেরী করে,
শোন বৃক্ষ! শোন লতাপাতা!
বলতে পার এই শহরের পাগলি মেয়েটির কথা?
কোথায় তার আসল নিবাস! কোথায় রাখে প্রেম!
সাঁঝ বিকালে রাস্তা ধরে হাঁটে কি সে অনিঃশেষ?

একটিবার ইচ্ছা জেগেছে বুঁদ হবো তার নেশায়,
এই কথাটা শুনেই মেয়েটি মিলিয়ে গেল ছায়ায়!
মাতাল করে ভাসিয়ে দিল মহাসাগরের হাওয়ায়!
রাজপথে আজ অনেক ছায়া! মেলার মতো ভিড়,
পাগলি বলতে পারো ঠিক কোন ছায়াটা তোমার?
চশমায় চোখে আবছা লাগে, ঠাহর পাইনা আর!

প্রপাত

একটা রিকশা ডাকি এই ঝুম বৃষ্টিতে!
মাতাল বাতাস বয় সদ্যোজাত প্রেমের নদীতে,
পাশে এসে বসো ভেজা গোলাপের মতো,
কিছুটা শীতল জল পান করে নিক উত্তপ্ত গ্রহ,
কতো লক্ষ বছর দুজনে পুড়েছি বলোতো!
বারন্দায় কফি আর গীতবিতানের গানে,
বিরহে চুপসানো মন আর কতো পোষ মানে?
নেমে এসো পথ ভুলে, আলতো পায়ে জলে,
যান্ত্রিক বাঁশি বাজে নাগরিক নীপবনে!
পাশে এসে বসো, কুড়িয়ে এনেছি কদম!

প্রেমের আবাদে লাগে বিশুদ্ধ কণার জল,
এই অপার মেঘের দিনে একটা রিকশা ডাকি,
নেমে এসো যত্নে পড়ে নীলাম্বরী শাড়ি,
স্বেচ্ছায় ভিজে হবো পুকুরের মতো টলমল!
বয়সী রাস্তায় উথাল পাতাল নাচে শালিক যুগল,
পাশে এসে বসো, ক্লান্তির দখলে আধুনিক কাল,
তোমাকে ছুঁয়েই আজ শেষ হোক আকাল!
বাতাসের ভুলে লেগে যাক হাতে হাত,
শখের কাঁচের চুড়ি পড়ে নিও জোড়ায়,
একটা রিকশা ডাকি শহর ডোবানো বর্ষায়?

পৃথিবীর সমস্ত ভেজা পাতা ডাকছে তোমাকে,
জলের প্রপাত আমি আনব কুড়িয়ে,
শুধু তুমি পাশে এসে বসো,
মেঘমালা নকশায় সিক্ত আঁচল বাতাসে উড়িয়ে!
চলো কাকভেজা হই স্তম্ভিত মোড়ে,
ডানা ঝাপটাক পাখি ভয়ে ঝড়ের বাতাসে,
একটি আগুন তীব্র দাবদাহে জ্বলছে তো জ্বলছেই,
আমাদের বুকের সিন্দুকে,
নিভে যাক তারা আজ স্রেফ ভিজে যেতে যেতে!
তোমার সিক্ত চুলে গেঁথে নিও প্রজাপতি ক্লিপ,
হৃদপিন্ড অনিয়মে করুক ভয়ংকর বিপ বিপ!
তবু আজ ছুঁয়ে দিব খোপার কুন্ডলী,
নেমে এসো প্লিজ! একটা রিকশা ডাকি!

অপার্থিব বর্ষাতি

বাতাসে হাসছে আজ ঘুরে ঘুরে,
প্রলয় প্লাবন এল দ্বারে দ্বারে!
মধ্যরাতের কোলে নাচছে ময়ূর,
নীল বুকে তার জমা ছোট্ট সমুদ্দুর!
পালকে বিষন্নতা নিয়ে রাজহাঁসে,
বসে আছে ঠায় পুরাতন কার্নিশে,
বীণাপাণি হাসে মৃদুলা বাতাসে,
পুজাতো কবেই শেষ!
ভেজা গাছে মৃন্ময়ী মায়ার আবেশ,
এখানে ফার্ণের চোখে থাকে জল,
মেঘ গলে খসে পড়ে তীব্র আঁচল,
ময়ূরীরা যায় ভেসে বিরহ নদীতে,
মানবী ছোঁয়ালো তার পায়ের নুপূর,
সেই নীল স্রোতে! গহীন গাংগেতে!
কে ফিরতে চায় স্বর্গে হায়,
এমন অপার্থিব দৃশ্য ভুলে!
মেয়েটি তো বলেছিল ভালোবাসে,
এমনি প্রলয় ছিল সেদিন আকাশে!

আজ মাতাল হয়েছে স্রোত,
অলিতে গলিতে,
বাশমতী গন্ধে ঢাকা কদম্বের ডাকে,
এসছে কানাই বুঝি পশ্চিম দুয়ারে,
প্রণয় দেবতার চোখ কালিন্দী বাঁকে!
গগনে মেঘের বাঁশি,
উড়ালো খোপার ফুল পাগল জোয়ারে!
এসো হেরাক্লিয়নের মেয়ে,
ভেজা পায়ে সর্পিল সিঁড়িটা বেয়ে,
নেমে এসো ফার্ণে ঢাকা সিক্ত,
উঠানে!
ভাসব খানিক ক্ষণ নায়রী ডিঙিতে!
ভিজে যাবে কালো চুলে,
বিণুনির লাল ফিতে,
হাত দিয়ে ছোঁব সেই তীব্র গোলাপ,
মুখ ঢেকো তুমি ঈষৎ লজ্জাতে!

দাবদাহ ডেকে নিল তীব্র বর্ষণে,
মেঘের চাদর ঢাকে সংগীত আসর!
মজিয়ে জলসা অদৃশ্য তানসেনে,
বাজের আঘাতে নাকি,
হয়েছে পাথর! এখন অঝর ধারা,
ঝরে ঝরঝর!
মধ্যরাতের ঘুমজাগা শহরে,
নীরব এখন ঝড়ে,
সারেগামাপাধানির করুণ আওয়াজ!
তবু কান পেতে শোন-
দেয়ালে দেয়ালে,
কারা যেন করে যায় ঠান্ডা রেওয়াজ!
অশরীরীরা দখল নিলো কি আজ,
প্রাণবন্ত ছাদ! মরে যাওয়া চাঁদ!
গভীর স্রোতস্বিনী এলো এ শহরে,
সকরূণ ভোরে!
নেমে এসো মেয়ে,
পুরাতন দুর্গটার ভীত সিঁড়ি বেয়ে,
হাত মেলে গান গাব! রাত্রির পাখি হব,
বাজবে রুণুঝুণু তোমার নুপূর,
ঘুম ভেঙ্গে জাগবে রাত্রি দুপুর!

পরাণের বোন

(১)
অতসী! অতসী!
বেড়ার ধারে শান্ত চন্দ্রবোড়া,
শরীরের ছোপ ছোপ খুব বেশি চেনা?
অমাবস্যার রাতে তারো দাঁতে আসে বিষ!
ওখানে ঈশান কোণে পা রেখোনা!

(২)
ঐ যে ওখানে প্লেটে স্বপ্ন সাজানো,
লাল স্বর্গীয় ফলের মতো টুকরো আপেলে!
ছুঁতে বড় মন চায়! আহা, একবার!
সর্বব্যাপী অদৃশ্য চোখ দেয়ালে দেয়ালে,
খাটে দুলছে বিবি, দরোজায় সাহেব!
থাক! অচ্ছুৎ এর কাছে নেইতো দলিল,
থাক স্বপ্ন ছোঁবনা! সামনেই মনিব!

(৩)
ছোট্ট ভাইটি গল্প শুনবে? তোমার কপালে টিপ,
দৈত্য-দানো, জিন-পরীরা অদ্ভুত সব জীব!
গাছের আগায় রাজকুমারী তারা পারতে গেলো!
তাপ্পর?…… তাপ্পর?……
হাত ফসকে হঠাত পিছলে সবই তো হারালো,
মন মরেছে, এখন শুধু শরীরটাই জীবিত!
ভয় পেয়োনা লক্ষী ভাইটি,
এই দুনিয়ার সব মানুষই প্রকারান্তরে মৃত!

(৪)
দখিণ দুয়ারে বাতাস বইছে, কাঁপছে প্রিয় আয়না,
শক্ত হয়ে পাথর হলো আগ বছরের কুমকুম,
পানি দিলাম, তেল মিশালাম, টিপ তো আর হয়না!
টিপ লাগিয়ে কিইবা হবে? পরাণ বন্দী পাকের ঘরে,
তবু মাইয়া লোকের কিশোরী মন-
সহজে যুক্তি তর্ক মানতে চায়না!

(৫)
এই বাগানে ডাকিস কেন?
কোন বাড়ির মুরগা গো;
নয়া যৌবন তালে থাকেনা বুঝি?
আমি চতুরঙ্গে বন্দী কন্যা; পাহারা দেয় বিবি,
এই জগতে ভাব চলেনা; নিষিদ্ধ প্রেমপ্রীতি!
অন্য বাগানে খুঁজরে ময়না,
কাউরে পাইলেও হয়তো পাবি!
আরে সইরা যারে মুখপোড়া, বেহায়া, বেশরম!
বিনা দোষে আমার ছাল ছাড়াবে,
যদি দেইখা ফালায় বিবি!

(৬)
বাপে দিল দস্তখৎ, আমি হইলাম বান্দী,
বলছিল আসবে নিতে মাস ছয়েক পর!
চোখের তারায় কষ্ট বাইন্ধ্যা,
ভিতরে ভিতরে কাঁন্দি,
হাজারবার সদর রোডে ছুইট্টা গিয়া দেখি,
মায়ার খনি বাপটা আমায় নিতে আইলো নাকি!
কেউ রাখেনা কথা ভাইরে এই দুনিয়ার পর,
হঠাত খবর পাইলাম-
বাপে চইল্যা গ্যাছে উপর!

(৭)
সে ছিল নিস্পৃহ!
শুক্রবারের কাঙ্ক্ষিত সিনেমার দিনে,
গুটিশুটি মেরে একেবারে চুপ বসে শেষ কোণে!
মাঝে মাঝে বর্ষায় ভেসে গেলে ভবানীর উঠোন,
বলতো- ‘জানো ভাই, আমার বাড়িটাও এমন!
বৃষ্টিতে হাত দিয়ে ডাঙ্গায় ধরেছি কতো কইমাছ!’
তারপর আবার নীরব, নিঃশ্চুপ বিষণ্ণতা!
তার কাছে থেকে আমার শৈশব,
শিখে নিলো একদিন এই অদ্ভুত নীরবতা!

(৮)
নামটা বদলে দেব,
বোধ হয় ভালোবেসে বলেছিল বাবুরা,
সাহেব-বিবিরা!
এখন থেকে তুই ‘রমা’! ছোট্ট নাম চমৎকার!
এই নাম ছিল এক মহানায়িকার,
আগের গ্রাম্য নাম চলবেনা আর!
তবু রাস্তায় পুরাতন নামে কেউ দিলে ডাক,
কেন জানি ফেটে যায় বুক!
বুকের উপর পড়ে ঢেঁকি- ধপাস! ধপাস!

(৯)
এই ছুড়ি! জন্ম বোবা বুঝি তুই?
শুধু চোখ-মুখ-হাত ভরা আকার ইঙ্গিত!
আয় আজ থেকে দুজনে পাতালাম সই!
তোর নাই মুখেত জবান; আছে মুক্ত শ্বাস,
আমার জবান আছে;
নাই শব্দ বলার বিশ্বাস! শুধু দীর্ঘশ্বাস!
এমন অন্ত্যমিলের সই,
কোথায় পাবিরে তুই?

(১০)
পড়ে আছে নীল নিথর মেঝেতে,
মেয়েটার মুখে নিহত ফেনা গড়াচ্ছে গলগল,
খেয়েছিল বিষ যতোটুকু পেয়েছিল খুঁজে!
কিছু নারীজন্ম শুধু পরিপূর্ণ পাত্রের গরল,
তবুও সে খোঁজে সুখ, কাঙ্ক্ষিত সংসার,
মেলেনা মেলেনা, সবকিছু সবখানে,
মেলান না হিসাব ঈশ্বর!

মেঘশিকারী

মেয়ে তুমি মেঘশিকারী!
এক শহরের ছোট্ট বাসার ছাদের উপর,
নীল বাতাসের গাছের পাশে বসা!
সকাল বিকাল মেঘকে ধরে জমিয়ে রাখো,
চোখের কোণায়!
বসতিকে গিলে রাখা পাথরের পাইথন,
অবিরত করে পার বালুঘড়ির সময়!
তোমাকে পাবেনা খুঁজে তারা কেউ।
তোমার বাড়ির চতুর্দিকে,
এখন শুধু মেঘ পাথরের ঢেউ!

লাল ঘুড়িটা নাটাই ছিঁড়ে হারালে উড়ে,
অকারণে অশ্রু গড়ায় ফোঁটায় ফোঁটায়।
জমানো মেঘ পড়লে গলে ধীরে ধীরে,
আজো বসে থাকো!
কাজল রঙের চুলের ফাঁকে,
আটকে রাখো মেঘ ও আকাশ!
অচেনা রাতের বিণুনি করা ঝাঁকে,
মেঘ শিকারের ফন্দি থাকে জমাট!
তুমিই ডাকো মেঘদূতকে!
ইট পাথরের এই জামানায় ক্লান্তি এলে,
অচেনা বেলায়!

আর্তেমিসের মতো আকাশটাকে যত্ন করে,
আজো চোখে চোখেই রাখো!
সুযোগ পেলে ছাদে একা বৃষ্টি চলে এলে,
গহীন ধারায় কালপুরুষকে ডাকো!
তুমি মেঘশিকারী মেঘের পাশেই থাকো!

মেয়ে তুমি মেঘশিকারী!
প্রাচীন আকাশে ধরতে জানো,
কেমন ব্যাথা তীরের মতো বিঁধে থাকে,
হরেক রকম মেঘের বুকে।
সেই কষ্টে ছেড়া কান্না তুমি পড়তে জানো!
তুমি মেঘশিকারী!
রঙ্গিন মেঘের হরিণ সব তোমার সাথে থাকে,
তুমি ভালোবাসতে জানো!

কেমন লাগে কারণ ছাড়াই,
দিনের আলোয় ভোরবেলার ওই মন খারাপ!
পাগল বাতাস দিগ্বলয়ে বদলালে রং,
লাগে কেমন!
সেসব তোমার জানা আছে ভালোই!
তুমি মেঘেদের গল্প জানো!
যদি দেখো ফুটপাথে হাঁটছি কেমন অন্যমনে,
মাথায় রঙ্গিন ছাতা!
ভিজিয়ে দিও বৃষ্টি দিয়ে,
করোই নাহয় পাগলামিটা

পূর্ণদশী

মেয়ে তুমি শুইয়ো না অতল জলে,
ডুবে যাবে! ডুবে যাবে!
এইতো সেদিন পূর্ণদশী জোছনাকে নিয়ে বুকে,
ডুবে গেলো ওইখানে, মাহুতের সাঁকোর নীচে-
অষ্টাদশী মেয়ে উথাল পাতাল পাঁকে!
তার মতো ডুবোনা অকালে,
তুমি ডুবোনা আর রাণীর কুঠুরির ঘাটে,
শাপলার ডগার আগায় নাচছে বাসুকির প্রেম!
কিছুটা শরীরে তার অশরীরি ছায়া,
বৃষ্টির রেণুর মতো অবিরত মায়া,
পুড়বে! পোড়াবে সব!
মেয়ে তুমি এ ভ্রষ্ট লগ্নে ভেসোনা জলেতে আর,
এই শহরে হেইমডালের শিঙার হুংকার,
প্রতারিত ভবিষ্যৎ নিয়ে ডুবে আছে পাশাপাশি,
অপেক্ষা সময়ের; ফুটবে আগুনে সব,
নদীর মায়াবী স্রোত নেই নিরাপদ!
নীলাভ ওড়নাকে পাখনা ভাবার কি দরকার?
মেয়ে তুমি ডুবোনা আর,
লুকানো গুপ্তধনের মতো, গুপ্ত-মৌর্যদের লুপ্ত-
মূদ্রার মতো উঠে এলে অকস্মাৎ,
ভেসে এলে টন টন দুঃখরাশি,
তুমিও ভেসে যাবে! ভেসে যাবে!
মেয়ে জলের নীলচে চোখে ভেসোনা আর,
তুমি আকাশের সোনারঙ্গা চত্বরে উদাস বরণ পাখি,
বিলাসী জলে ডোবার নেই কোন দরকার!

তুমিতো যাচ্ছ ভেসে কচুরিপানার মতো,
কার ঘাটে? কোন ঘাটে?
দুইপারে কালো মাটি; পিচ্ছিল জোঁকের আস্তানা!
রক্ত শুষে নেবে; শালুক ফলের খোসায়-
মোড়া শাঁসে স্বাদ নেই কোন!
মেয়ে তুমি ক্ষান্ত দাও দুরন্ত সাঁতারে,
কাঙ্ক্ষিত যুবকেরা অনুপস্থিত লম্বিত দুই তীরে,
স্বয়ংবরে কুমার পৌছায়নি এখনো!
যুবকেরা চাঁদ ভেজে খায় রাতের কড়াইয়ে,
তারা সাঁতার বোঝেনা; রুপালী শরীরের কসরত-
দেখে ক্ষুধার্ত হয়ে উন্মাদ হলো যারা,
দুই তীরে তাদের আবদ্ধ রাখে পাগলাগারদ!
মেয়ে তুমি যাবে কোন ঘাটে? কার ঘাটে?
তুমি আর জলে ভেসোনা!
স্রোতের তলায় ভাসে আজকাল মাংসাশী উদ্ভিদ,
প্রণয়ের কলস বৃক্ষ গিলে খায় সব!
তোমার ছড়ানো হাত বাতাসের মতো,
পুন্ড্র বৈশালী হয়ে উড়লো কোথায়?
তুমি তো জলেতে আছ! এখানে আকাশ নেই,
মেয়ে তুমি আর জলে উড়োনা,
ডুবে যাবে! ডুবে যাবে!
জলের চোখের নীচে কালির মতো বেঁধেছে বাসা,
সুগভীর পাঁক!
ভেসে যাবে! ভেসে যাবে!

ঐহিক

(১)
কোথায় তোমাকে রাখবো হেলেন,
ট্রয় তো গিয়েছে পুড়ে!
আমিও তো এক প্রবাসী আকাশ,
ভাসিনি কি বলো ভিনদেশী রোদ্দুরে!

(২)
হাতে নিতে নিতে উষ্ণতা হারালো,
ব্রাজিলিয়ান ক্যাফেইন!
তুমি বলেছিলে সব প্রেমই নীল জল,
ঠোঁটে ছুলে বিষক্রিয়া হবে নিশ্চিত!

(৩)
সবটুকু সমুদ্র শুধু তোমার বুকেই,
বলে কেঁদে ছেঁড়ে গেলে কি রঙমহল?
ত্রিপল ছেড়া টর্নেডো সবাইকে ডুবালো,
ব্যর্থ প্রাচুর্য নিয়ে আমি এখনো অতল!

(৪)
শিরোনাম দেখে পাখি কাঁদছে কেন?
সম্ভাব্য আকাশে হবে পারমাণবিক যুদ্ধ!
আসক্তের চোখে অহিংসা ব্যর্থ তরিকা-
বলে স্মিত হেসে চোখ বুজলেন বুদ্ধ!
তবুও নিরঞ্জনায় নিষ্কাম প্রেমে,
আমরা দুজনে হইনি কি পরিশুদ্ধ?

(৫)
দুইটি বিড়াল অন্ধকারে লাফিয়ে উঠলো-
বারান্দায়,
ভাবছো কষ্ট তোমার ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে কিনা?
আমার দুঃখ দাঁড়কাকে খায়,
উঠোন ছাড়িয়ে সমস্ত শোক বাঁধিয়েছে যে-
রাস্তায় বন্যা!

হসপিটালেও রাত

সে আসে নিঃশব্দ পায়ে টলমল জলে,
ফারাওয়ের সমাধি স্তম্ভের মতো অতন্দ্র টহলে,
ওয়ার্ডের সমস্ত বিপত্নীক পিলার,
পাহারায় রেখেছিলো বুক ঝাপটানো মেয়েটাকে!
আক্রান্ত স্থলে বিদ্রোহী যুবক যেভাবে করে পণ,
আটকাতে চায় অবশ্যম্ভাবী আত্মসমর্পণ!
মেয়েটার শখ ছিলো একদিন উড়বে-
মেঘের সাথে বিকালের পাখির মতোন!
আজ চন্দ্রমাসের শেষদিন তার শরীরে লুপাস,
বিষময় প্রজাপতি দিয়েছে গালেতে ছাপ,
অক্সিজেনের গতি বাড়ছে ক্রমশ!
দুমদাম উড়ছে সাদা পর্দারা অসময়ে ঝড়ে,
দেবদূত এলো নাকি মধ্যরাতের ঘরে?
না! না! এই মাহেন্দ্রক্ষণে তারা আসবেনা!
দরোজার ফাঁক দিয়ে ঢুকেছে নিথর ওয়ার্ডে,
অলক্ষ্যে সবার চঞ্চলা কিশোরী এক!
নৃত্যপটীয়সীর মতো বেড গুলো নেচে নেচে,
ঘুরছে! মাঝে মাঝে খাচ্ছে ঘুরপাক!
সে আসে! প্রায়ই আসে! এভাবে লুকিয়ে,
একে ওকে ছুঁয়ে বলে- ‘এসো উড়ব আকাশে!’
মধ্যরাতে মেয়েটি আজ পারলোনা বেশিক্ষণ-
আটকাতে তার সর্বসংহারী ডাক!
রুপান্তরিত হলো তুলতুলে পক্ষীশাবকে,
নরম বলের মতো উষ্ণ পশমে!
তারপর কিছুটা উড়াউড়ি!
ব্যাস!
অমর কিশোরী খপ করে ধরে নিল মেয়েটিকে,
পুরে দিল খাঁচার ভিতর!
নিঃস্তব্ধতা ভেঙ্গে চিৎকারে ছুটল তন্দ্রা সবার,
মেয়েটির মা ডুকরে উঠল-
মারে! তুই চলে গেলি! ফিরবি না আর?
আর্তচিৎকার দিলো পরিচিত বাতাস তখন,
নিয়ে গেলো! নিয়ে গেলো সব পড়শি মরণ!

নিহত গোলাপ

fman570

নিহত গোলাপেরা সুন্দর হয়,
মানবীর চোখে উৎসারিত বিশুদ্ধ বিষক্রিয়া,
থামিয়ে দিয়েছে মহাপ্রস্থান!
পরিপূর্ণ প্রেম শেষে পুরুষ হাওয়ায় ভাসে,
তলানিতে জমে শ্বাশত অবিশ্বাস!
বুকের প্রকোষ্ঠে রক্তগন্ধী ঢেউ,
সযতনে লুকিয়ে রেখেছিল কেউ কেউ!
ধারালো ছুরির ঠোঁটে শ্বেতগন্ধী রাজহাঁস,
স্বেচ্ছায় পোঁচ দিল মাংসল হৃদয়ে তার,
বন্য উঠান তাজা রক্তে ভরপুর!
সব রক্তই নাকি গোলাপ?
নাড়ীর টানে বাঁধা পাপড়ির আহ্লাদী প্রলাপ!
মানবী কুরুক্ষেত্র ঝাড়ু দেয় প্রাচীন অভ্যাসে,
ঢেকে রাখে রক্ত নিরীহ কুরুবকে,
তবুও বারান্দায় লাল, সামিয়ানায় লাল,
আগুনের মতো ছোপ ছড়ানো ছিটানো!
তীব্র লালের আরেক নাম অব্যক্ত প্রলয়!
নিহত গোলাপেরা প্রচন্ড সুন্দর হয়!

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ইন্টারনেট