বলেছেন: দেশে এখন মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে উত্তেজনা চলছে। বিষয়টির সঙ্গে হেফাজতিরা ইসলামকে জড়িয়ে ফেলেছে। তাই চলুন আমরা সূত্র ধরে দেখি এ ব্যাপারে কোরান, হাদিস, সিরাত (ইবনে হিশাম ইবনে ইবনে ইসহাক), তারিখ আল তারারি ও অন্যান্য দলিল কী বলে।
প্রথমেই তিনটে শব্দ বুঝে নেওয়া যাক: প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি। প্রতিমা হল মানুষ যার আরাধনা উপাসনা করে, ইহকালে-পরকালে মঙ্গল চায়, ভুলের ক্ষমা চায় ইত্যাদি। ভাস্কর্য্য হল মানুষসহ কোনো প্রাণী বা কোনো কিছুর মূর্তি যাকে মানুষ রাখে সম্মান দেখতে বা সৌন্দর্য্য বর্ধন করতে, যার মানুষ আরাধনা বা উপাসনা করে না। এবারে অন্যান্য দলিলের দিকে তাকানো যাক, সেখানে আমরা দেখব হযরত মুহাম্মদের (সা.) বাড়িতে মূর্তি ছিল তাঁর সম্মতিক্রমেই। সব দলিলের শেষে আমরা কোরানে যাব এবং দেখতে পাব আল্লাহর নির্দেশেই এক পয়গম্বরের প্রাসাদে ভাস্কর্য ছিল।
কোরানে যাওয়ার আগে প্রথমেই হাদিস ও অন্যান্য দলিল। কাবাতে রাসূল (সা.) লাত, মানাত, উজ্জা, হোবল, ওয়াদ ইত্যাদির প্রতিমা ভেঙেছিলেন, এগুলোর আরাধনা করা হত বলে। ভাস্কর্য ও মূর্তির বিপক্ষে কিছু হাদিস আছে, কিন্তু সাধারণত বিপক্ষের দলিলে আমরা ব্যক্তির নাম ও ঘটনার বিবরণ পাই না, যা পক্ষের হাদিসগুলোতে পাই। পার্থক্যটা গুরুত্বপূর্ণ।
(ক) সহি বুখারি ৮ম খণ্ড হাদিস ১৫১:
আয়েশা বলিয়াছেন, আমি রাসুলের (সা.) উপস্থিতিতে পুতুলগুলি লইয়া খেলিতাম এবং আমার বান্ধবীরাও আমার সহিত খেলিত। যখন আল্লাহর রাসুল (সা.) আমার খেলাঘরে প্রবেশ করিতেন, তাহারা লুকাইয়া যাইত, কিন্তু রাসুল (সা.) তাহাদিগকে ডাকিয়া আমার সহিত খেলিতে বলিতেন।
(খ) সহি আবু দাউদ বুক ৪১ হাদিস নং ৪৯১৪:
বিশ্বাসীদের মাতা আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন, যখন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাবুক অথবা খাইবার যুদ্ধ হইতে ফিরিলেন তখন বাতাসে তাঁহার কক্ষের সামনের পর্দা সরিয়ে গেলে তাঁহার কিছু পুতুল দেখা গেল। তিনি [(রাসুল (সা.)] বলিলেন, “এইগুলি কী?” তিনি বলিলেন, “আমার পুতুল।” ওইগুলির মধ্যে তিনি দেখিলেন একটি ঘোড়া যাহার ডানা কাপড় দিয়া বানানো হইয়াছে এবং জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইহা কি যাহা উহার উপর রহিয়াছে?” তিনি উত্তরে বলিলেন, “দুইটি ডানা।” তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “ডানাওয়ালা ঘোড়া?” তিনি উত্তরে বলিলেন, “আপনি কি শোনেননি যে সুলেমানের ডানাওয়ালা ঘোড়া ছিল?” তিনি বলিয়েছেন, ইহাতে আল্লাহর রাসুল (সা.) এমন অট্টহাসি হাসিলেন যে আমি উনার মাড়ির দাঁত দেখিতে পাইলাম।”
(গ) সহি মুসলিম – বুক ০০৮, নং ৩৩১১:
আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন যে আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁহাকে সাত বৎসর বয়সে বিবাহ করিয়াছিলেন (যদিও অন্য রেওয়াতে আমরা পাই ছয় বছর: হাসান মাহমুদ) এবং তাঁহাকে নয় বৎসর বয়সে কনে হিসেবে তাঁহার বাসায় লইয়া যাওয়া হয়, এবং তাঁহার পুতুলগুলি তাঁহার সাথে ছিল এবং যখন তিনি দেহত্যাগ করিলেন তখন তাঁহার বয়স ছিল আঠারো।
(ঘ) সহি মুসলিম – বুক ০৩১ নং ৫৯৮১:
আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন যে তিনি আল্লাহর রাসুলের (সা.) উপস্থিতিতে পুতুল লইয়া খেলিতেন এবং যখন তাঁহার সঙ্গিনীরা তাঁহার কাছে আসিত তখন তাহারা চলিয়া যাইত। কারণ তাহারা আল্লাহর রাসুলের (সা.) জন্য লজ্জা পাইত। যদিও আল্লাহর রাসুল (সা.) তাহাদিগকে তাঁহার কাছে পাঠাইয়া দিতেন।
সহি বুখারির ব্যাখ্যা শুনুন। হাদিসটার ফুটনোটে ‘ফতহুল বারি’র লেখক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানীর উদ্ধৃতি: “পুতুল ও একই রকম ইমেজ অবৈধ কিন্তু ইহা বৈধ করা হইয়াছিল তখন আয়েশার (রা.) জন্য। কারণ তিনি ছিলেন ছোট বালিকা, তখনও তিনি বয়স্কা হননি।” (ফতহুল বারি, পৃষ্ঠা ১৪৩, ১৩ খণ্ড)
নবী (সা.) পুতুল বৈধ করেছিলেন এটাই আসল কথা। কী কারণে করেছিলেন সেটা ইমামের জানা সম্ভব নয়। কারণ তিনি রাসুলের (সা.) ৮০০ বছর পরের হাজার মাইল দূরে মিসরের লোক, রাসুলের (সা.) সঙ্গে তাঁর দেখাও হয়নি, কথাও হয়নি। ওটা তাঁর ব্যক্তিগত মত মাত্র।
এবারে আরও কিছু সংশ্লিষ্ট দলিল।
তখন কাবার দেয়ালে ৩৬০টি মূর্তি (বুখারি ৩য় খণ্ড – ৬৫৮) ও অনেক ছবির সঙ্গে ছিল হযরত ঈসা (আ.) ও মাতা মেরির ছবিও। উদ্ধৃতি দিচ্ছি, “রাসুল (সা.) হযরত ঈসা (আ.) ও মাতা মেরির ছবি বাদে বাকি সব ছবি মুছিয়া ফেলিতে নির্দেশ দিলেন।” (সিরাত (ইবনে হিশাম/ইবনে ইশাক-এর পৃষ্ঠা ৫৫২)
এবারে সাহাবি ও খলিফারা।
দুনিয়ার প্রায় এক চতুর্থাংশ জয় করেছিলেন মুসলিমরা। সবই অমুসলিমের দেশ এবং সেখানেও নিশ্চয়ই অনেক প্রতিমা-ভাস্কর্য ছিল, সেগুলোর তো সবই ভেঙে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেখানেও আমরা তেমন দলিল পাই না। ৭১০ সালে হিন্দু রাজা দাহিরের দেশ সিন্ধু জয় করার পর কয়টা মূর্তি ভেঙেছিলেন মুহম্মদ বিন কাশেম? ভাস্কর্য-মূর্তি তো দূরের কথা কোনো প্রতিমাও ভেঙেছেন বলে জানা যায় না।
রাসুলের (সা.) অজস্র ছবি স্বচক্ষে দেখতে চাইলে ইরানে চলে যান। দেখবেন দেয়ালে ঝুলানো সুদৃশ্য কার্পেটে আছে মা আমিনার কোলে শিশু নবী (সা.), সাহাবি পরিবেষ্টিত নবীজি (সা.), আসমানে বোরাখে উপবিষ্ট নবীজি (সা.) ইত্যাদি।
গুগল করলেই পেয়ে যাবেন– সবই কাল্পনিক ছবি অবশ্য– হাজার বছর ধরে আছে ওগুলো। ইরান এখন তো শিয়া দেশ, কিন্তু ৭৫০ সালে আব্বাসিরা দখল করার আগে পর্যন্ত ওটা সুন্নি উমাইয়াদের রাজত্ব ছিল।
এবারে সাম্প্রতিক কাল। ছবি তো ছবি, নবীজির (সা.) আট ফুট উঁচু, ১০০০ পাউণ্ড ওজনের মার্বেল পাথরের ভাস্কর্যও ছিল দীর্ঘ ৫৩ বছর। ১৯০২ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ২৫ নং স্ট্রিট ম্যাডিসন এভিনিউতে অবস্থিত ম্যাডিসন পার্কের মুখোমুখি নিউইয়র্ক আপিল বিভাগের কোর্ট দালানের ছাদে। ইতিহাসের আরও নয়জন আইনদাতাদের সঙ্গে নবীজির (সা.) আট ফুট উঁচু মার্বেল পাথরের ভাস্কর্যও রাখা ছিল সসম্মানে।
গুগলে ‘এ স্ট্যাচু অব মুহাম্মদ’ সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। মুসলিম সমাজ ও দেশগুলোর অনুরোধের প্রেক্ষিতে ওটা সরানো হয়েছে। এখন ইতিহাসের বাকি নয়জন আইনদাতার ভাস্কর্য রাখা আছে। কোর্টের ভেতরের দেয়ালে ওই দশজনের সঙ্গে তাঁর ভাস্কর্য এখনও আছে কি না জানি না। ওটার ছবি এখনও আছে কি না জানি না।
কোরান-রাসুল (সা.)-সাহাবি-খলিফা-সাম্প্রতিক কাল তো অনেক হল, মধ্যপ্রাচ্যের কী খবর? হাঙ্গামা করার আগে বাংলাদেশের ইমামদের ভেবে দেখা দরকার কেন মধ্যপ্রাচ্যের ইমামেরা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে নন। সৌদি আরবেও বহু ভাস্কর্য আছে। গুগল করুন ‘স্ট্যাচু ইন মুসলিম ওয়ার্ল্ড’ কিংবা ‘স্ট্যাচু ইন সৌদি আরব’– রাস্তার মোড়ে মোড়ে উটের, কবজি থেকে হাতের আঙুলের, মুসলিম বীরদের এবং আরও কত ভাস্কর্য। সেখানকার মওলানারা জানেন কোরান ও রাসুল (সা.) সুস্পষ্টভাবে প্রতিমাকে নিষিদ্ধ করে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে বৈধ করেছেন। তাই তাঁরা মুসলিম বিশ্বে অজস্র মূর্তি ও ভাস্কর্যকে অস্বীকৃতি জানাননি।
এবারে কোরান। কোরানে সুস্পষ্ট বলা আছে: (ক.) মূর্তিপূজা শয়তানের কাজ (মায়েদা ৯০) এবং (খ.) “এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ?” (আম্বিয়া ৫২)।
অর্থাৎ কোরানের নিষেধ মূর্তিপূজা, উপাসনা-আরাধনা-ইবাদত সম্পর্কে। কারণ, মূর্তি স্রষ্টার অংশীদার অর্থাৎ শরিক হয়ে দাঁড়ায়। এটাই মানুষকে মুশরিক বানায়। তাহলে যে মূর্তিকে আরাধনা ইবাদত করা হয় না, যে মূর্তি সৌন্দর্য্য বাড়ায়, সুসজ্জিত করে সে ব্যাপারে কোরান কী বলে? এখানে আমরা অবাক হয়ে দেখব কোরান সুস্পষ্ট ভাষায় ভাস্কর্যের অনুমতি দেয়। উদ্ধৃতি:
“তারা সোলায়মানের (আ.) ইচ্ছানুযায়ী দূর্গ, মূর্তি, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত।” (সুরা সাবা, আয়াত ১৩)
নবীজি (সা.) মূর্তি-ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সেটা কোরানের ওই আয়াতের বিরুদ্ধে যেত, সেটা সম্ভব নয়। আরাধনা করলে সেটা হয় প্রতিমা আর না করলে হয় ভাস্কর্য (মূর্তি)। ইসলাম প্রতিমার বিরুদ্ধে, ভাস্কর্য ও মূর্তির বিরুদ্ধে নয়।
আদি থেকে মানুষ স্রষ্টা খুঁজেছে, সূর্য-চন্দ্র থেকে শুরু করে পশু-পাখিকে, এমনকি নিজেরাই মূর্তি বানিয়ে আরাধনা করেছে। যে হযরত মুসা (আ.) মানুষকে সেই একমেবাদ্বিতীয়ম স্রষ্টার দিকে ডেকেছেন তাঁর বিশ্বাসীরা বাছুরের মূর্তির আরাধনা করেছে। যে ঈসা (আ.) মানুষকে সেই একমেবাদ্বিতীয়ম স্রষ্টার দিকে ডেকেছেন তাঁর বিশ্বাসীরা তাঁর তো বটেই, তাঁর মায়েরও (মাতা মেরি) মূর্তি বানিয়ে আরাধনা শুরু করেছে। যে গৌতম বুদ্ধ স্রষ্টার ধারণা ত্যাগ করে কর্মফলের কথা বলেছেন, তাঁর অনুসারীরা তাঁর মূর্তি বানিয়ে আরাধনা শুরু করেছে। এখানেই ইসলামের আপত্তি: ইসলাম আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক বা অংশীদার করার ঘোর বিপক্ষে।
তাই হয়তো অতীত বর্তমানের কিছু ইমাম সরাসরি মূর্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, প্রতিমা ও ভাস্কর্যের পার্থক্য উপেক্ষা করছেন। ইমামেরা প্রতিমার বিরুদ্ধে বলুন অসুবিধা নেই, কিন্তু ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সেটা কোরান-রাসুলের (সা.) বিরুদ্ধে দাঁড়ানো হয় কি না, তাঁরা ভেবে দেখতে পারেন। কারো দরকার হলে উপরোক্ত সূত্রগুলোর কপি দেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের স্মৃতিকে লালন করার জন্য এবং পরবর্তি প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার চেতনাকে প্রবাহিত করার জন্য। স্বাধীনতাযুদ্ধ স্মরণে নির্মিত এসব ভাস্কর্য রাজধানী শহর ছাড়িয়ে দেশের সর্বত্রই প্রায় রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের বাইরে, বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলেও রয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধের এসব ভাস্কর্য।
জাগ্রত চৌরঙ্গী
মূল নিবন্ধ: জাগ্রত চৌরঙ্গী
জাগ্রত চৌরঙ্গী, জয়দেবপুর চৌরাস্তা
মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের অসামান্য আত্মত্যাগের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য। ভাস্কর আবদুর রাজ্জাক জাগ্রত চৌরঙ্গীর ভাস্কর। এটি ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত এটিই প্রথম ভাস্কর্য।[১] ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চের আন্দোলন ছিল মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্বে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। আর এই প্রতিরোধযুদ্ধে শহীদ হুরমত উল্যা ও অন্য শহীদদের অবদান এবং আত্মত্যাগকে জাতির চেতনায় সমুন্নত রাখতে জয়দেবপুর চৌরাস্তার সড়কদ্বীপে স্থাপন করা হয় দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকর্ম জাগ্রত চৌরঙ্গী। [১][২][৩]
জাগ্রত চৌরঙ্গী
কিভাবে যাওয়া যায়:
জিরো পয়েন্ট হতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে গাজীপুর গামী বাসে আসা যায়।
জয়দেবপুর চান্দনা চৌরাস্তা, গাজীপুর-এ অবস্থিত। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রথম স্মারক ভাস্কর্য হলো জাগ্রত চৌরঙ্গী মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ১৯৭১ সালে ১৯ শে মার্চ গাজীপুরে সংঘটিত প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামের চেতনার আলোকে ও শহীদ হুরমত আলীসহ অন্যান্য শহীদদের স্মরনে নির্মিত হয় জাগ্রত চৌরঙ্গী। ভাস্কর্যটির উচ্চতা মাটি থেকে ১০০ (একশত) ফুট। দুপাশে ১৬ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১১ নং সেক্টরের ১০৭ জন এবং ৩নং সেক্টরের ১০০ জন শহীদ সৈনিকের নাম খোদাই করা রয়েছে।
সংশপ্তক l
সংশপ্তক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতর্পণমূলক ভাস্কর্যগুলোর অন্যতম। এই ভাস্কর্যটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত। এর স্থপতি শিল্পী হামিদুজ্জামান খান। [১][২][৩]
অবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে এ ভাস্কর্যটি।১৯৯০ সালের ২৬ মার্চ এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন জাবির উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সালেহ আহম্মেদ।[১][২][৩]
আকার
মূল ভূমি থেকে ভাস্কর্যটির ঊচ্চতা ১৫ ফুট। মূল ভাস্কর্যটি ব্রোঞ্জ ধাতুতে তৈরি। এছাড়া এটি নির্মানে লাল সিরামিক ইট ব্যবহার করা হয়েছে।[১]
স্থাপত্য তাৎপর্য
১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদের তাঁজা প্রাণ ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল বাঙালি জাতি। তাদের এ আত্মত্যাগের বিনিময়ে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের বিজয় দিবস কে স্মরণ রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় তৈরি করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ । সেই রকম ভাবে বাঙালি জাতির এই গৌরব ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ধরে রাখতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয়েছে স্মারক ভাস্কর্য ‘সংশপ্তক’। শিল্পী হামিদুজ্জামান খান ভাস্কর্যটিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্রোঞ্জের শরীরে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবজ্জল ইতিহাস, ঐতিহ্য ও চেতনাকে এতে দৃশ্যমান করা হয়েছে।‘ সংশপ্তক’ হলো ধ্রুপদী যোদ্ধাদের নাম। মরণপন যুদ্ধে যারা অপরাজিত। এ ভাস্কর্যটির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যুদ্ধে শত্রুর আঘাতে এক হাত, এক পা হারিয়েও রাইফেল হাতে লড়ে যাচ্ছেন দেশমাতৃকার বীর সন্তান। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করা যাদের স্বপ্ন, শত্রুর বুলেটের সামনেও জীবন তাদের কাছে তুচ্ছ। সংশপ্তকের গায়ে প্রতিফলিত হয়েছে ধ্রুপদী যোদ্ধাদের দৃঢ় অঙ্গীকার। যুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও লড়ে যান যে অকুতোভয় বীর সেই সংশপ্তক। আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চেতনাকে দৃশ্যমান করার লক্ষেই ‘সংশপ্তক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় বীরদের স্মরণেও এটি নির্মাণ করা হয়েছে।[১][২][৩]
মূল নিবন্ধ: সংp)
সংশপ্তক ভাস্কর্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০ সালের ২৬ মার্চ নির্মিত হয়েছিল স্মারক ভাস্কর্য সংশপ্তক। এ ভাস্কর্যটির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যুদ্ধে শত্রুর আঘাতে এক হাত, এক পা হারিয়েও রাইফেল হাতে লড়ে যাচ্ছেন দেশমাতৃকার বীর সন্তান। যুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও লড়ে যান যে অকুতোভয় বীর সেই সংশপ্তক। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে ভাস্কর্যটি। এর ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান।[৪][৫][৬]
অপরাজেয় বাংলা
মূল নিবন্ধ: অপরাজেয় বাংলা
অপরাজেয় বাংলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বন্দুক কাঁধে দাঁড়িয়ে থাকা তিন নারী-পুরুষের ভাস্কর্য যেটি সর্বসত্মরের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সেটি ‘অপরাজেয় বাংলা’। এর তিনটি মূর্তির একটির ডান হাতে দৃঢ় প্রত্যয়ে রাইফেলের বেল্ট ধরা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। এর মডেল ছিলেন আর্ট কলেজের ছাত্র মুক্তযোদ্ধা বদরম্নল আলম বেনু। থ্রি নট থ্রি রাইফেল হাতে সাবলীল ভঙ্গিতে দাঁড়ানো অপর মূর্তির মডেল ছিলেন সৈয়দ হামিদ মকসুদ ফজলে। আর নারী মূর্তির মডেল ছিলেন হাসিনা আহমেদ। ১৯৭৯ সালের ১৯ জানুয়ারি পূর্ণোদ্যমে অপরাজেয় বাংলার নির্মাণ কাজ শুরম্ন হয়। ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় এ ভাস্কর্যের উদ্বোধন করা হয়। তবে অপরাজেয় বাংলার কাছে ভাস্করের নাম খচিত কোন শিলালিপি নেই। স্বাধীনতার এ প্রতীক তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন গুণী শিল্পী ভাস্কর সৈয়দ আব্দুলস্নাহ খালিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনের বেদিতে দাঁড়ানো তিন মুক্তিযোদ্ধার প্রতিচ্ছবি যেন অন্যায় ও বৈষম্য দূর করে দেশে সাম্য প্রতিষ্ঠার গান গাইছে। এ ভাস্কর্যে সব শ্রেণীর যোদ্ধার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে। [৪]
স্বোপার্জিত স্বাধীনতা
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পশ্চিম পাশে ডাসের পেছনে অবস্থিত এ ভাস্কর্য অন্যায়-অত্যাচারের বিরম্নদ্ধে সংগ্রামের অনুপ্রেরণা যোগায়। একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে এ ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এটি একাত্তরে পাকিসত্মানী হানাদারের অত্যাচারের একটি খণ্ড-চিত্র। ১৯৮৭ সালের ১০ নবেম্বর এর নির্মাণ কাজ শুরম্ন হয়। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এটির কাজ শেষে উদ্বোধন করা হয়। এটি গড়েছেন অন্যতম কীর্তিমান ভাস্কর শামীম সিকদার। এটির চৌকো বেদির ওপর মূল ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। [৪]
সাবাস বাংলাদেশ
মূল নিবন্ধ: শাবাশ বাংলাদেশ
শাবাশ বাংলাদেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে নিতুন কুণ্ডুর তৈরি ‘সাবাস বাংলাদেশ’ নামের ভাস্কর্য দেখা যায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক শিক্ষক-ছাত্র শহীদ হওয়ায় এর স্মৃতিকে চির অমস্নান করে রাখার জন্য উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করা হয় সিনেট ভবনের দক্ষিণে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ১৯৯১ সালের ৩ ফেব্রম্নয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উদ্যোগে শিল্পী নিতুন কুণ্ডুর উপস্থাপনায় নির্মাণ কাজ শুরম্ন হয়। নির্মাণ কাজ শেষে ফলক উন্মোচন করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। ভাস্কর্যটি দাঁড়িয়ে আছে ৪০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে, যেখানে রয়েছে দু’জন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি। একজন রাইফেল উঁচু করে দাঁড়িয়ে আর তার বাঁ বাহুটি মুষ্টিবদ্ধ করে জাগানো। অন্যজন রাইফেল হাতে দৌড়ের ভঙ্গিতে রয়েছে; যার পরনে প্যান্ট, মাথায় এলোমেলো চুলের প্রাচুর্য যা কিনা আধুনিক সভ্যতার প্রতীক। এ দু’জন মুক্তিযোদ্ধার পেছনে ৩৬ ফুট উঁচু একটি দেয়ালও দাঁড়িয়ে আছে। দেয়ালের উপরের দিকে রয়েছে একটি শূন্য বৃত্ত, যা দেখতে সূর্যের মতোই। ভাস্কর্যটির নিচের দিকে ডান ও বাম উভয়পাশে ৬ ফুট বাই ৫ ফুট উঁচু দু’টি ভিন্ন চিত্র খোদাই করা হয়েছে। ডানদিকের দেয়ালে রয়েছে দু’জন যুবক-যুবতী। যুবকের কাঁধে রাইফেল, মুখে কালো দাড়ি, কোমরে গামছা বাঁধা, যেন বাউল। আর যুবতীর হাতে একতারা। গাছের নিচে মহিলা বাউলের ডান হাত বাউলের বুকে বাম দিকের দেয়ালে রয়েছে মায়ের কোলে শিশু, দু’জন যুবতী একজনের হাতে পতাকা। পতাকার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গেঞ্জিপরা এক কিশোর। শিল্পী নিতুন কুণ্ডু তার মনতুলি দিয়ে এমনভাবে ভাস্কর্যটি চিত্রিত করেছেন দেখলে মনে হয় যেন ১৯৭১ সালেরই অর্জিত স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি। [৪]
বিজয় ‘৭১’
‘বিজয় ‘৭১’ ভাস্কর্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
মূল নিবন্ধ: ‘বিজয় ‘৭১'(ভাস্কর্য)
১৯৭১ সালের মহান মুক্তি সংগ্রামে বাংলার সর্বসত্মরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মূর্ত প্রতীক হয়ে আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ‘বিজয় ‘৭১’। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ‘বিজয় ‘৭১’। ভাস্কর্যে একজন নারী, একজন কৃষক ও একজন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধার নজরকাড়া ভঙ্গিমা বার বার মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোতে নিয়ে যায় দর্শনার্থীদের। একজন কৃষক মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরেছে আকাশের দিকে। তার ডান পাশেই শাশ্বত বাংলার সর্বস্বত্যাগী ও সংগ্রামী নারী দৃঢ়চিত্তে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন। যার সঙ্গে আছে রাইফেল। অন্যদিকে একজন ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে গ্রেনেড ছোড়ার ভঙ্গিমায় বাম হাতে রাইফেল নিয়ে তেজোদীপ্তচিত্তে দাঁড়িয়ে । বিখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী শ্যামল চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ‘বিজয় ‘৭১’ ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ ২০০০ সালের জুন মাসে শেষ হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টাকা। ‘বিজয় ‘৭১’ ভাস্কর্য দেখতে প্রতিদিন অগণিত মানুষ ক্যাম্পাসে ভিড় জমায়।[৪][৭][৮]
সক্রেটিসের মৃত্যুদ-ের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে আলবেরুনীর ভারততত্ত্বে। তথ্যনির্ভর এ পুস্তকটি প্রাচীন ভারতবর্ষের ওপর রচিত প্রথম গবেষণাধর্মী কিতাব। আন্তর্জাতিকভাবে বইটি পঠিত, গৃহীত এবং স্বীকৃত। পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে বইটি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্তও বটে। বইটির রচনাকাল ১০৩১ খ্রিস্টাব্দ। গ্রন্থনা করেন দ্বাদশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী, দার্শনিক, মহাজ্ঞানী আবু রায়হান মুহাম্মাদ বিন আহমদ। জনসমাজে খ্যাত আলবেরুনী নামে। তিনি লিখেছেন, ‘সক্রেটিস নিজে যখন জনসাধারণের মতের বিরুদ্ধে মূর্তিপূজার প্রতিবাদ করেছিলেন এবং গ্রহনক্ষত্রকে ওদের ভাষায় ভগবান বলতে অস্বীকার করেছিলেন। তখন এথেন্সের ১২ জন বিচারকম-লীর মধ্যে ১১ জনই তাকে মৃত্যুদ- দিতে একমত হয়েছিল। সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রেটিসের মৃত্যু হয়েছিল। ভারতবর্ষে এইরূপ দার্শনিকের মতো কোনো লোক জন্মায়নি যার দ্বারা জ্ঞানের তেমন উৎকর্ষ সাধন হতে পারত। (আলবেরুনির ভারততত্ত্ব, বাংলা একাডেমি, টিকা ১৯, পৃ: ৮)
অতএব, দেখা যায় দুটি কারণে সক্রেটিসকে মৃত্যুদ- দেয় এথেন্স আদালত। এক. ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যুরাল, প্রতিমা তৈরি ও পূজার প্রতিবাদ করেছিলেন; দুই. গ্রহ, নক্ষত্র, সূর্য, প্রকৃতিকে ভগবান, স্রষ্টা বলতে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ স্রষ্টা তো একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আলবেরুনী বলেছেন, সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্যই সক্রেটিসের মৃত্যুদ- হয়। কী সেই সত্য? সত্যটা হলো মূর্তির বিরোধিতা। প্রতিমা, প্রতিকৃতি প্রতিষ্ঠায় প্রতিরোধ গড়া। সক্রেটিসের মৃত্যু প্রমাণ করে মাটি বা ইট-পাথরের ভাস্কর্য ম্যূরাল নির্মাণ, স্থাপন মিথ্যা প্রতিষ্ঠারই নামান্তর। সোজাসুজি বলতে গেলে মূর্তির স্বপক্ষশক্তি অসত্যের পক্ষভুক্ত। আর বিরোধিতাকারীরাই সত্যের পক্ষে। – See more at: https://www.dailyinqilab.com/article/71046/#sthash.8pSXPKBM.dpuf
প-িত জওহরলাল নেহেরু বিষয়টি নিয়ে আলাদা এক ইতিহাসের অবতারণা করেছেন। তিনি ১৯২৮ সালে লিখেন, আদিম যুগের মানুষেরা অনেক প্রাকৃতিক ঘটনার কারণই ঠিক ঠাক বুঝতে না পেরে ভয় পেত। … নদী, পাহাড়, সূর্য, গাছ, পশু এদের সবকিছুকেই প্রাচীন মানুষেরা দেব-দেবী বলে মনে করত; কতগুলো ছিলো আবার অদৃশ্য মনগড়া ভূত। ভয় তাদের মনে লেগেই ছিলো, কাজেই তারা মনে করত দেবতা বুঝি তাদের শাস্তি দেবার জন্যই সব সময় ব্যস্ত। তারা ভাবত দেবতা বুঝি তাদেরই মতো কর্কশ আর নিষ্ঠুর; কাজেই একটা পশু, পাখি অথবা মানুষ বলি দিয়ে তারা চাইত দেবতাকে খুশি রাখতে। এই দেবতাদের পূজার জন্য ক্রমে ক্রমে মন্দির গড়ে ওঠতে লাগল। মন্দিরের মধ্যে একটা বিশেষ স্থান ছিল যাকে বলা হত ‘পূজা-ঘর’। সেখানে তাদের আরাধ্য দেবতার মূর্তি থাকত। চোখের সামনে কিছু না দেখে আর কেমন করে পূজা করবে? সেটা কঠিন। (জওহরলাল নেহেরু: পৃথিবীর ইতিহাস, অধ্যায় ২৫, পৃ: ১১১) – See more at: https://www.dailyinqilab.com/article/71046/#sthash.8pSXPKBM.dpuf
আভিধানিক অর্থে ভাস্কর্য :
ভাস্কর্য অর্থ : Sculpture (স্কালপচার)। যে আকৃতি বা ছবি খোদাই করে তৈরি করা হয় তা-ই ভাস্কর্য। যেমন বলা হয় ‘ভাস্কর্য বিদ্যা’ এর অর্থ, The art of carving বা খোদাই বিদ্যা। যিনি এ বিদ্যা অর্জন করেছেন তাকে বলা হয় ভাস্কর (Sculptor) অর্থাৎ যিনি খোদাই করে আকৃতি বা ছবি নির্মাণ করেন। যেমন আছে অক্সফোর্ড অভিধানে- One who carves images or figures. অর্থাৎ যে ছবি অথবা আকৃতি খোদাই করে তৈরি করে। পক্ষান্তরে মূর্তি অর্থ ছায়া বা এমন আকৃতি-শরীর, যার ছায়া আছে।
ভাস্কর্য ও মূর্তির আভিধানিক অর্থে স্পষ্ট পার্থক্য দেখা গেল। এককথায় যে সকল আকৃতি খোদাই করে তৈরি করা হয় তা ভাস্কর্য- রৌদ্র বা আলোর বিপরীতে যার ছায়া পড়ে না। আর যে সকল আকৃতি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়, রৌদ্রে বা আলোর বিপরীতে যার ছায়া প্রকাশ পায়, তা হল মূর্তি। বিভিন্ন অভিধানে এভাবেই বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় উত্তরের জবাবে বলতে চাই, আপনারা যেমন মনে করেছেন যে, পারিভাষিক অর্থে, যে আকৃতির পূজা করা হয় সেটি মূর্তি। আর যার পূজা করা হয় না সেটি ভাস্কর্য। আপনাদের এ ব্যাখ্যা কোথাও প্রচলিত নয়। যা প্রচলিত নয়, তা কখনো পারিভাষিক অর্থ বলে গণ্য হয় না। বরং ছায়া আছে এমন সকল আকৃতিকে মূর্তি বলে মানুষ জানে ও জানায়। যেমন আমরা দেখেছি যখন লেলিনের দেহটি টেনে নামানো হল, তখন সকলে বলেছে ‘লেলিনের মূর্তি ..’ এমনিভাবে যখন সাদ্দামের আকৃতি টেনে নামানো হল, তখন সকলে বলল, ‘সাদ্দামের মূর্তি নামিয়ে ফেলা হয়েছে।’ তখন কেউ ভাস্কর্য বলেছে বলে শুনিনি। এমনিভাবে লোকে বলে ফেরআউনের মূর্তি, আব্রাহাম লিঙ্কনের মূর্তি ইত্যাদি। এ দুটো উদাহরণে প্রমাণ পাওয়া গেল যে, ওই আকৃতিগুলোর ছায়া ছিল ও খোদাই করে নির্মিত নয় বলে ওগুলো মূর্তি। আর ওগুলো পূজার জন্য স্থাপন করা হয়নি, তবু তা মূর্তি। অতএব দেখা গেল, ভাস্কর্য ও মূর্তির আভিধানিক অর্থই পারিভাষিক অর্থ হিসাবে প্রচলিত। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। পূজার জন্য হলেও মূর্তি, পূজার জন্য না হলেও মূর্তি। এখানে আমাদের বুদ্ধিজীবী ও পণ্ডিতদের জ্ঞানের দৈন্যতার আরেকটি প্রকাশ! তাদের প্রতি করুণা হয়!
ভাস্কর্য মূলত তিন ধরনের। রিয়েলিস্টিক বা মূর্ত ভাস্কর্য, অ্যাবস্ট্রাক্ট বা বিমূর্ত ভাস্কর্য ও রিলিফ অর্থাৎ টু ডাইমেনশনাল ভাস্কর্য। বাংলাদেশে এই তিন ধরনের ভাস্কর্যের প্রচলন থাকলেও অন্য দু’টির তুলনায় রিয়েলিস্টিক বা মূর্ত ভাস্কর্যের প্রচলন সর্বাগ্রে। এই রিয়েলিস্টিক ভাস্কর্যকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি, গোছালো মূর্ত ভাস্কর্য, অন্যটি অগোছালো মূর্ত ভাস্কর্য। বাংলাদেশে গোছালো মূর্ত ভাস্কর্য অধিক সমাদৃত। যা অর্ধশিল্পসমৃদ্ধ। ‘অর্ধ’ শব্দটির ব্যবহার এই কারণে যে, শিল্পবোধ ব্যাপারটা প্রাকৃতিক। প্রকৃতি গোছালো নয়, বরং অগোছালো সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। সুতরাং শিল্প অগোছালো সৌন্দর্যকেই দাবি করে। নিরলঙ্কার পরিচ্ছন্ন বাণীর মতোই গোছালো ভাস্কর্য শিল্পের মূল সৌন্দর্যকে ব্যাহত করে। এখানে রাফ অর্থে অগোছালো শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে। একটি বাণী বা কবিতার পঙক্তি যদি স্টেটমেন্ট বা বিবরণমূলক হয়, তাহলে তার আবেদন তাৎক্ষণিক। আর যদি তা তীর্যক বা ঘুরিয়ে বলা হয়, তখন তা বহুরৈখিক ভাবনার উদ্রেক করে। যাকে শিল্পোত্তীর্ণ বলা হয়। এই বহুরৈখিকতাই শিল্পের মূলমন্ত্র। মূলত শিল্প তাই, যা মানুষকে ভাবতে এবং সৌন্দর্য উপলব্ধি করাতে বাধ্য করে। কোনো কোনো ভাস্কর্য রয়েছে যার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে চমকে উঠতে হয়। এই চমকানোটাই প্রকৃত শিল্পের ইঙ্গিত করে।
themise57e77c1 থেমিস কে ছিলেন?
গ্রিক পৌরাণিক কাহিনি মতে– ইনি ছিলেন প্রাকৃতিক নিয়মকানুন নিয়ন্ত্রণকারিণী দেবী। ইনি ইউরেনাসের ঔরসে গেইয়ার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বংশের বিচারে ইনি ১২ জন টাইটানের একজন। ভবিষ্যৎ-বাণী করার ক্ষমতা পেয়েছিলেন গেইয়ার কাছ থেকে। পরে এই ক্ষমতা ফিবিকে প্রদান করেছিলেন। দেবরাজ জিউসের ঔরসে তিনি জন্ম দিয়েছিলেন হোরায়ে (ঋতু নিয়ন্ত্রণের তিন দেবী) এবং মোইরায়ে (ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের তিন দেবী। রোমান পুরাণে এর নাম জাস্টিয়া (Justitia)।
ইউরোনোমে এই থেমিস এবং ইউরিমেডোন-কে বৃহস্পতি গ্রহ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন।
আদি রোমানরা গ্রিক মিথ এর কথিত দেবী জাস্টিসিয়াকে বিচারের প্রতীক হিসেবে মনে করতো।
প্রাচীন রোমে বিচার বা সামাজিক ব্যবস্থা কেমন ছিলো সেটা মনে করতে গ্লাডিয়েটর মুভির কথা মনে করে দেখা যেতে পারে।যেখানে দাসদের আটকে রেখে হিংস্র পশুর সাথে যুদ্ধ করতে দেওয়া হতো, আর সেই জঘন্য দৃশ্য দেখে মজা নিতো সম্রাট ও সাধারণ জনগন।
৫০০০ বছর আগে বর্বর রোমানরা কি কল্পকাহিনী বিশ্বাস করতো, সেটাকে একেবারে সুপ্রীম কোর্টের নাকের ডগাতে বসাতে চাইছে আধুনিকতার নামে, কি বিস্ময়কর!
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা এখনও অনেক সেকেলে অন্ধকারে আছে। আড়াইশ’ বছর আগে ব্রিটিশ জলদস্যুরা যে কুসঙ্কারাচ্ছন্ন আইন শিখিয়ে দিয়ে গেছে সেটাই এখন মুর্খের মত ফলো করে যাচ্ছে উকিল-জাস্টিসরা।
প্রধান বিচারক মাথায় উলের টুপি পড়ে মা-ভেড়া সেজে থাকে, দাবি করে- সে মা ভেড়া তার সামনে সবাই সমান। এখনও উকিলরা জাস্টিসদের দেখলে ব্রিটিশ নিয়মে ‘মাই লর্ড’ ‘মাই লর্ড’ (আমার প্রভু, আমার প্রভু) করে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এতটাই অন্ধ অনুকরণপ্রিয় যে, ব্রিটেনে তীব্র শীত পরার কারণে উকিল-জাস্টিসরা কোর্ট, গাউন পরে থাকে। আর বাংলাদেশে সেই অণুকরণে গরমকালে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে শত শত লোকের মধ্যে ভ্যাপসা আবহাওয়ায় উকিল-জাস্টিসরা কোর্ট-গাউন পরে থাকে। দরদর করে ঘামতে থাকে, কিন্তু ব্রিটেনের অন্ধ অনুকরণ বলে কথা!!
দুঃখের কথা- ভাষা আন্দোলনের প্রায় ৬৫ বছর হয়ে গেছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৪৫ বছর, কিন্তু এখনও বিচারবিভাগ সেই ব্রিটিশ ভাষা থেকে বের হতে পারলো না। এখনও সুপ্রীম কোর্টে বাংলা ভাষা সম্পূর্ণ অচল।
কথাগুলো এ কারণে বললাম- সবাই যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা যেন আরো উল্টো পথে হাটছে। এতদিন ২৫০ বছর আগের ব্রিটিশ জলদস্যুদের ফলো করতো, আর এখন আরো পিছিয়ে গিয়ে ৫০০০ বছর আগে রোমান বর্বরদের কাল্পনিক বিষয় ঘেটে সুপ্রীম কোর্টের নাকের ডগায় বসাচ্ছে।
উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা এখানে থাকা উচিত নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হাইকোর্টের সামনে গ্রিক থেমেসিসের এক মূর্তি লাগানো হয়েছে। সত্য কথা বলতে কি, আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। কারণ গ্রিক থেমেসিসের মূর্তি আমাদের এখানে কেন আসবে। এটাতো আমাদের দেশে আসার কথা না। আর গ্রিকদের পোশাক ছিল একরকম, সেখানে মূর্তি বানিয়ে তাকে আবার শাড়িও পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাও একটা হাস্যকর ব্যাপার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কেন করা হলো, কারা করল, কীভাবে—আমি জানি না। ইতিমধ্যেই আমাদের প্রধান বিচারপতিকে আমি এই খবরটা দিয়েছি এবং খুব শিগগিরই আমি ওনার সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে বসব। আলোচনা করব এবং আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা এখানে থাকা উচিত নয়।
আশা করা যায় মূর্তি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তার অবসান হবে।themise57e77c1
আবেদনের যুক্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের সামনে মূর্তি স্থাপন সংবিধানের ১২ ও ২৩ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। এই দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ মুসলমান। ইসলাম মূর্তির উপাসনাকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের পাশেই জাতীয় ঈদগাহ ময়দান রয়েছে। এখানে মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে দেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা হয়েছে। তাই এই মূর্তি অপসারণ চাওয়া হয়েছে।
সর্বোচ্চ আদালতে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য স্থাপন উপমহাদেশে বাংলাদেশেই প্রথম। পাশের দেশ ভারতে পৌত্তলিকতার প্রাধান্য থাকা সত্ত্বেও সেখানে নেই এই প্রতীক। পাকিস্তানে তো এই ধরনের কিছু স্থাপনের প্রশ্নই আসে না। একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র নেপালেও নেই এই দেবীর মূর্তি। এমনকি শ্রীলঙ্কা-মিয়ানমারেও নেই তথাকথিত ন্যায়বিচারের এই প্রতীক। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ইরানে ১৯৬৪ সালে কুখ্যাত শাহ প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টের সামনে পাশ্চাত্যের অনুকরণে গ্রিক বিচারের দেবী থেমিসের মূর্তি স্থাপন করেছিল। একমাত্র এ উদাহরণটি বাদে এ পর্যন্ত মুসলিম দেশের শাসকরা যত মন্দই হোক না কেন আদালতের সামনে দেবীমূর্তি স্থাপনের মতো চরম ইসলামবিরোধী কর্মটি করেননি বা করতে সাহস পাননি। অথচ বাংলাদেশের মতো দ্বিতীয় একটি মুসলিম রাষ্ট্রে আজ দুঃসাহসিক এই অপকর্মটি করা হলো। কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো কিছু করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এই সরকারের আমলে এমন কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কাজ কিভাবে হলো সে জবাব এই সরকারকে একদিন না একদিন দিতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের ফুল কোর্টে আলোচনাও হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা যায়। সেখানেও ভাস্কর্য স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত আসে। এরপর ভাস্কর্যটি নির্মাণে দেশের স্বনামধন্য ভাস্কর মৃণাল হককে দায়িত্ব দেয়া হয়। চলতি বছর শুরুর দিকে ভাস্কর্যটির নমুনা সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনকে দেখান ভাস্কর মৃণাল হক। সুপ্রিমকোর্ট বিষয়টি দেখে অনুমোদন দেয়ার পর গত ১৮ ডিসেম্বর কোর্টে মূল ভবনের সামনে ফোয়ারার মধ্যে এটি স্থাপন করা হয়। গত ২৪ ডিসেম্বর বিচার বিভাগীয় সম্মেলন ২০১৬ এর সাজ সজ্জায় স্থান পায় ভাস্কর্যটির। মূল মঞ্চের দু’পাশে দুটি ভাস্কর্য বসানো হয়।
ভাস্কর্যটি বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। স্টেইলনেস স্টিলের বিভিন্ন আকারে পাইপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ভাস্কর্যটির রাতের অন্ধকারে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হবে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে ভাস্কর্যটি সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিলে এর একটি নাম দেয়া হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। জানা যায়, আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ভাস্কর্য এই প্রথম। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সামনে নেই কোনো ভাস্কর্য।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য অপসারণের দাবিটি আক্রোশের বসে তোলা হয়েছে। প্রথম কথা হলো, হেফাজতে এটা করছে যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার আমরা চাচ্ছি সেটাকে বন্ধ করার জন্য বা অন্যদিকে সরানোর জন্য। কারণ আক্রোশটা সুপ্রিম কোর্টের উপর। সুপ্রিম কোর্টই যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, তারা এটাকে মূর্তি বলছে। কিন্তু এটা মূর্তি নয়, এটা ভাস্কর্য। পৃথিবীর বহু দেশে এই জাস্টিশিয়ারি ভাস্কর্য রয়েছে। সৌদি আরব থেকে শুরু করে, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বহু মুসলিমপ্রধান দেশে এই ভাস্কর্য আছে।
৭ ফেব্রুয়ারী প্রথম আলো
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়ে বিবিসিকে বলেন, ‘এটা তো মূর্তি না, এটা তো স্কাল্পচার (ভাস্কর্য)। আর এখানে দেখানো হয়েছে তিনটা জিনিস। একটা হলো দাঁড়িপাল্লা, ন্যায়বিচারের একটা সূচক। আর হাতে একটা তলোয়ার। দণ্ড বা শাস্তির সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তলোয়ার। তৃতীয়ত, চোখটা বাঁধা। অর্থাৎ একদম নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই বিচারের নিরপেক্ষতা তুলে ধরা হয় এই স্কাল্পচার দিয়েই।’ হেফাজতের দাবির প্রতি কান দেওয়া ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হুমকির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত ও বিচারব্যবস্থার প্রতি হুমকি প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই ভাস্কর্যকে মূর্তি বা প্রতিমা বলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক এবং নির্জলা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। এই ভাস্কর্য জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বহু দেশের উচ্চতর আদালতে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
সুুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপিত ভাস্কর্যটি নিয়ে ইসলামী দলগুলোর বিরোধীতা এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন ভাস্কর্যটির নির্মাতা মৃণাল হক। তার মতে এই ভাস্কর্য কোনো গ্রিক দেবীর মূর্তি নয়। মানুষের আকৃতিতে তৈরি যেকোনো ভাস্কর্যকে মূর্তি হিসেবে দেখে তা সরানোর দাবি মেনে নিলে সেটা ‘আত্মসমর্পণ’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন এই ভাস্কর।
সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্যটি সরাতে ইসলামী দলগুলোর চাপ এবং এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পর চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে নিজের এই মতামত তুলে ধরেছেন ভাস্কর মৃণাল।
রাজধানীতে আরও কয়েকটি ভাস্কর্যের নির্মাতা তার এই ভাস্কর্যটিতে শাড়ি পরা নারীর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
ভাস্কর মৃণাল হক
তিনি বলেন,‘এটা কোনো গ্রিক দেবীর মূর্তি নয় বরং বাঙালি নারীর ভাস্কর্য। ন্যায় বিচারকের ভূমিকায় বাঙালি নারীর অবয়ব দেখাতে চেয়েছি এই ভাস্কর্যে। বিশ্বজুড়ে বিচারালয়ে ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে একটি ভাস্কর্য প্রচলিত আছে। উচ্চ আদালত কর্তৃপক্ষ সেই ভাস্কর্যটির মতো একটি ভাস্কর্য এখানে বানাতে বলেছিলো। সেটা করলে আরও বেশি বিতর্ক হতো। তখন বলা হতো এই ভাস্কর্য আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায়না। তাই বিতর্ক থেকে মুক্ত থাকতেই বাঙালি নারীর বেশে ভাস্কর্যটি তৈরি করি।’