সিনায় সিনায় জিকির উঠে নির্বাচন নির্বাচন

Civil_Rights_March_on_Washington,_D.C._(Leaders_of_the_march_posing_in_front_of_the_statue_of_Abraham_Lincoln..._-_NARA_-_542063_(cropped)

১.
এমনভাবে বলা হয়ে থাকে যেন নির্বাচন ব্যবস্থা সাম্যবাদী। ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমান চোখে দেখে। চরিত্রের বিবেচনায় তাই নির্বাচনকে সমাজতান্ত্রিক বলেও চিহ্নিত করা যায় বৈকি! একথা সত্যি বটে নির্বাচন সকলের জন্য, তাত্ত্বিকভাবে ধনী গরীব আলাদা করে না। এক্ষেত্রে নির্বাচনকে শ্রেণি নিরপেক্ষ বলা যেতেই পারে। কিন্তু রাষ্ট্র কাঠামো ও সমাজ ব্যবস্থা নিরপেক্ষ নয়।

২.
রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচন বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণাগুলো আমরা সবাই দেখছি। একটা বিশেষ দল রাজনৈতিক ক্ষমতায় এলেই সব সমস্যার সমাধান। সব জায়গাই বলেছে, নির্বাচনে থাকুন। বেশি বেশি করে স্মরন করে দিতাছে আপনারা এখন যারা দেশ পরিচালনা করছেন তারা সব অনির্বাচিত। বলে দিয়েছেন নেতা প্রতিদিনই স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। জনগনকে বলছে, নির্বাচন নির্বাচন করুন। যাদের শুনার ক্ষমতা আছে তারা শুনতে পারছে- জনগণের এক অংশ তাদের বলছে প্রোটিন-জাতীয় খাবার আর ফল-মূল ও শাক-সবজি খান। মানে এগুলো খেলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। শরীরের প্রতিরোধের কাছে ধরাশায়ী হবে রোগশোক। তবে কি তারা অসুস্থ! তবে কি তারা করোনায় আক্রান্ত! জনগণের এই অংশ কি নির্বাচন আকাঙ্খা কারীদের ঘরে অবস্থান করতে আহ্বান করছে!

কিন্তু প্রোটিনের উৎস মাছ-মাংস-ডিম-দুধ-বাদাম। দামী খাবার। উচ্চবিত্তের খাবার। ধরে নিচ্ছি, নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও মোটামুটি প্রোটিনের ব্যবস্থা করতে পারলো। কিন্তু গরীবের উপায় কী? গরীবদের শুধু ডাল। ডালে প্রোটিন আছে। তা বটে! মোটা চালের ভাত আর ডাল। ডালই শেষ আশ্রয়।

গরীবের টাকা নেই। সিস্টেম মতো সন্তানের জন্য উচ্চশিক্ষা নেই; ভালো চাকরী নেই; বড় চাকরী নেই, বড় বেতন নেই। ভালো বাসস্থান নেই এবং ডাল ছাড়া পুষ্টিকর খাবার নেই; রোগ-বালাইয়ের শেষ নেই; বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। তাতো যাবেই। তাইতো?

গরীব নির্বাচন খাবে! গরীবের দরিদ্রতা নিরসনে নির্বাচনের আর ক্ষমতাই কতটা?
গরীব ধরাশায়ী।

৩.
রাষ্ট্রের বড় মাথা। বড় ভাবনা। নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্টযন্ত্র দখল করে নিবে বড় বড় ব্যবসায়ীরা। সংসদের ভিতর কতজন বণিক শ্রেণীর জানা আছে তো? তাই বড় মাথায় বড় বড় বণিকের কথা থাকে। তাদের জন্য প্রণোদনা আসে। ডুবে যাওয়া লঞ্চকে টেনে তুলতে যায় উদ্ধারকারী জাহাজ। আর শিল্পপতিদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ।

এসব প্রণোদনার অর্থ আসে কোত্থেকে? বাণিজ্যের পেছনে ঢেলে দেয়া হয় রাষ্ট্রের কোষাগারে থাকা কৃষক-কামার-কুমার-তাঁতি-জেলের অর্থ, বিদেশের মাটিতে কামলা খাটা গণমানুষের পাঠানো রেমিট্যান্স অপমান আর ঘাম থেকে। নির্বাচিত সাংসদরা আর বণিকেরা লাভ গুলো গচ্ছিত রাখে নিজেদের একাউন্টে। আর লোকসানের ভারটুকু চাপিয়ে দেয় জনতার কাঁধে।

এভাবে চক্করে পরে গরীব হয় প্রতারিত। নির্বাচন নির্বাচন মহামারির এই দিনে মুক্তিকামী গরীব শ্রেণী নাভিশ্বাস উঠে মরছে। কিন্তু রাষ্ট্রের মগজে নির্বাচন ব্যবসায়ীদের দখলে। তারা লুটপাটে মেতে উঠেছে!

৪.
এই দুর্দিনে কীভাবে চলে কৃষক-শ্রমিক-কুলি-মজুর-তাঁতি-জেলে-কুমার-দেহপসারিনী-গৃহপরিচারিকাদের সংসার? উবার-পাঠাও চালিয়ে, টিউশনি করে, কাপড় আয়রন করার দোকান দিয়ে, পার্ট-টাইম সেলসম্যান এর কাজ করে যারা চলতো, কী করে চলছে তাদের?

বহু মধ্যবিত্তের জীবনও প্রকাশ করতে না পাড়ার বোবা কান্নায় নীরব হাহাকার। একেবারে গরীবের তো মাথা ঢাকলে পা উদাম। কাজ নেই। আয়-রোজগার নেই। সঞ্চয়ও কারো শেষ, কারো বা তলানিতে। প্রায় ছয় কোটি মানুষ দিনে ১০০ টাকা আয়ে চলে! এরা কি সত্যি চলে?

The Prime Minister, Shri Narendra Modi meeting the Prime Minister of Bangladesh, Ms. Sheikh Hasina, on the sidelines of the 4th BIMSTEC Summit, in Kathmandu, Nepal on August 30, 2018.
The Prime Minister, Shri Narendra Modi meeting the Prime Minister of Bangladesh, Ms. Sheikh Hasina, on the sidelines of the 4th BIMSTEC Summit, in Kathmandu, Nepal on August 30, 2018.

৫.
প্রতিদিন একজনকে দেখতাম উন্নয়নের নানা তথ্য নিয়ে আসতো। মিডিয়াগুলো উন্নয়ন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত নারী-পুরুষের অনুপাত জানিয়ে দেয় কি? মিডিয়া বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানও রসিয়ে রসিয়ে বলেন যেন কত সুখকর কাহিনী বলে যাচ্ছেন। আমার তো মাঝে মাঝে এক বয়োবৃদ্ধ অর্থমন্ত্রীর মতো বলতে ইচ্ছা করতো-রাবিশ। আপনারা কি ভাবেন? যা খুশি ভাবুন। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচন ভাইরাসে আক্রান্তদের শ্রেণি-পরিচয় জানতে পান কি?

আমরা খবর পাই উন্নয়ন মন্ত্রের দখল নিতে নির্বাচন নির্বাচন জপ করা অধিকাংশই অভিজাত শ্রেণির বাসিন্দা। শুনতে পেয়েছিলাম, তখন বেদনাক্রান্ত হয়ে শুনতে পাই পাশ্ববর্তী দেশগুলো থেকে থেকে এয়ার এম্বুলেন্সে ডজন খানিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এনেও বাঁচানোই যায়নি না রাজনৈতিক অভিজাতদের।

ব্যাস হয়ে গেল! কথা কি এখানে শেষ?

ধনী অভিজাতদের চিকিৎসার সুযোগ ও সামর্থ্য বেশি। তারা বিদেশে চলে যায় চিকিৎসা করাতে। কিন্তু গরীবের মধ্যেও যারা একেবারে গরীব, অজপাড়াগাঁ, দুর্গম চর বা হাওরাঞ্চলে যারা থাকে অথবা মফস্বলে ও উপজেলা অঞ্চলে যে গরীব জনগোষ্ঠী আছে, চিকিৎসার সামান্যতম সুযোগ না থাকায় তারা যে স্বাস্থ্য পরীক্ষাই করাতে পারছে না, বেহুদা মরে যাচ্ছে বেখবরে তার তদন্ত বা পরিসংখ্যান হাসিমুখে বর্ণনা করে কি কোন অভিজাত নির্বাচন প্রত্যাশী জনতার কন্ঠস্বরের দাবীদারেরা?
করে না। তারা জনগনের মাঝেও এটা ছড়িয়ে দিতে পারছে নির্বাচনই সমাধান।

৬.
রাজনীতির কর্ণধার আর সরকারি কর্তাদের জন্য প্রণোদনার ঘোষণা এসেছে। এইতো মাত্র একটি নির্বাচন। দামী প্রাণ ওদের। সরকারতো ওদেরই, লাগে টাকা দেবে করদাতাগণ।
হায়! বেসরকারি প্রাণ। আহা! আধমরা হয়ে কেবল বেঁচে থাকা। মুড়ি -মুড়কির চেয়েও সস্তা। উন্নয়ন উন্নয়ন, ধনতন্ত্রের উৎসবের অকাতরে বলি হয় এইসব প্রাণ।

দেশকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার আদলে রূপান্তরের রূপকথার গল্প চলছে হরদম।
FB_IMG_1743206802817

৭.
উন্নয়ন বহু যুগ উপর থেকে নিচে চুঁইয়েছে, এবার নিচ থেকে উপরে যাবার বন্দোবস্ত করে দেখুন। লুটপাটের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে রাজনীতিকে নিয়ে আসি নিয়ন্ত্রণে। জবাবদিহিতা করি নিশ্চিত আর ক্ষমতা পারিবারিক বলয়ে আটকে না রেখে উন্মুক্ত করে দেই গণতান্ত্রিক ধারায়। যার যোগ্যতা আছে দেশকে কিছু দেবার, তাকে নেতৃত্বে নিয়ে আসি। গাছের শেকড় থেকে যেভাবে কাণ্ড ও পাতায় যায় প্রাণ রস, সেইভাবে উন্নয়নকেও চালনা করুন। এই আহ্বান জানিয়ে লেখাটি শেষ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি জানি এভাবে হয় না কিছুই। অধিকার কেউকে দেয় না, আদায় করে নিতে হয়।

কোথায় সেই প্রচেষ্টা?

মন্তব্য করুন