মৃত্যুর অহংকার

মৃত্যু আসে, আসবে; মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কি আছে¡ মৃত্যুর কোন অহংকার নেই’ আদর্শ নেই, নিয়ম-নীতি নেই, বাধ্যবাধকতা নেই। মৃত্যু আসে, নানা জনের নানা মতে, নানা ভাষা নানা কর্মে, নানা বর্ণে নানা ধর্মে, মৃত্যুতে ভয় পাওয়ার কি আছে? আর মৃত্যুরই বা অহংকার করার কি আছে …
গর্বিত হওয়ার কি আছে, নির্ভীক না হয়ে ভীতু হওয়ার কি আছে, মৃত্যুরই বা দেমাগী রূপ ধারণ করার বা কি আছে, মৃত্যুর কাছে অস্তিত্বের নত হওয়ারই বা কি আছে!

মৃত্যু, আমাদের এই সমাজ তোমাকে নানা মডেলে উপস্থাপন করে’ তাতে কি তোমাকে যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই বলে! যারা তোমাকে যেভাবে চান সেভাবে অনুভব করে? মানুষের দেখার দৃষ্টি, চলার দৃষ্টি বলার দৃষ্টি, সোনা ঝরানো রোদ বৃষ্টি ঝড় বোঝার দৃষ্টি একেকজনের একেকরকম, কেউ কারো কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না, কেউ কারো কোন বিষয়ে বিষোদগার জানায় না।
মৃত্যু তোমাকে এতো স্মরণ করারই বা কি আছে?
তুমি কি গর্ব করে বলতে পারো মৃত্যুর স্বাদ মধুময়
কিন্তু না’ তুমি তা পারোনা।
তুমি অহংকারী, তুমি হুংকার ছেড়েই বল মৃত্যুর
স্বাদ সবাইকে গ্রহণ করতে হবে।
আরে এ আর এমন কি! মৃত্যু যদি সবারই হয়
মৃত্যু যদি সবাইকেই নাড়া দিতে আসে
সেখানে অহংকারের কি আছে, গর্বের কি আছে,
বেশি বেশি স্মরণ এর বাকি আছে?
তুমি অপ্রতিরোধ্য বলে, তোমাতে নতজানু হতে হবে!
তুমি অপ্রতিরোধ্য অহংকারী বলে তোমাকে নমস্য করতে হবে?
মৃত্যু, নিজেকে দেখিয়ে তুমি নিজেকে করোনা গর্বিত, এটা কোন গল্প নয়’ এটা অহংকার;
মনে রেখো, অহংকার যে করে সে আধা শিক্ষিত।
আচ্ছা বলতো তুমি কি নিজেকে ভয়ঙ্কর ভাবতে শুরু করেছো?
তুমি কি বলতে চাওতোমার সাধ একেকজনের কাছে একেক রকম!
আমি তা মনে করি না তুমি তেমন কিছু,
আমি জানি তুমি তাও না, তুমি তেমনটা নয়।
মৃত্যুর কি কোন রং আছে, মৃত্যুর কি কোন ছায়া আছে, আকার আছে…
মৃত্যু তো বিভিন্ন ভাবে আসতে পারে
নানারূপে নানা কর্মে নানা ধর্মের নানা বর্ণে আসতে পারে, নানা হেতাবভ্যাসে আসতে পারো তুমি!
তোমার গর্বিত মুখ গর্বিত, গর্বিত চাহনি এ এক শিশুসুলভ আচরণ, যা দেখে আমার বরাবরই হাসি পায়।
আমাদের এই মহাজগতে যাদেরকে তুমি দংশন করেছ, যাদেরকে তুমি গ্রাস করেছ, তারা কি সত্যিই তোমার অহংকারে নত হয়েছে, তারা কি সত্যিই তোমার অহংকারে পৃষ্ঠ হয়েছে,
তুমি কি বলতে চাও তুমি তাদের পরাজিত করেছ?
আমি বলবো না তাও পারোনি তুমি;
কোন জীবের মৃত্যু হয় না’ তারা ফিরে যায় তাদের কর্ম সম্পাদন করে এক রূপ থেকে আরেক রূপে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে’ পরিবর্তন আর পরিবর্ধনের মাধ্যমে তারা গ্রহণ করছে আমাদের এই পৃথিবী।
তারা ফিরে যায় বাতাসে ভর করে, শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে তারা ফিরে যায় কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘের দেশে, তারা ফিরে যায় বৃষ্টি প্লাবিত জীবনের পথ ধরে।
মৃত্যু, নিজেকে নিয়ে গর্বিত হইও না, যে মানুষ দারিদ্র্যতায় মৃত্যুবরণ করেছে এখানে তোমার আর গর্ব কিসের? যে মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় মৃত্যুবরণ করেছে সেখানে তোমার গর্ব কিসের, অহংকার কিসের, শক্তিমত্তা কিসের নতজানু কিসের?
যেখানে মানুষ অসহায় জীবন নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে সেখানে তোমার স্বাদ কিসের আহলাদ কিসের, তবে কিসের সেই দেমাগ’ এমন মৃত্যু তো মানুষ প্রতিদিনই বরণ করে করছে।
একগাদা আফিমের ঘ্রানে মৃত্যু আসতে পারে
মৃত্যু তো সেখানে আরও গভীর আরো নিবিড় পরিচর্যায় আরো শীতল আরো উষ্ণতায় ভরে দেয় জীবন সময় সন্ধিক্ষণ।
মৃত্যু তো আরো ভালো এক প্যাক ক্যানাবিসের নেশায়
প্রতিদিন যে মানুষ মরে তার আবার নতুন করে নতুন ভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার কি আছে
শেখার কী আছে, মৃত্যুকে নতুন করে দেখার কিছু নেই ভাবার কিছু নেই বোঝার কিছু নেই কিন্তু শেখার অনেক কিছুই আছে।
প্রতিদিন মৃত্যুকে উপভোগ করে আমাদের বদ অভ্যাসগুলো ক্রেজি উত্তেজক মাদকতায় মোহগ্রস্ত মানুষের দল তাদের আবার মৃত্যুর সাথে কিসের নতুন করে বোঝাপড়া ওরা প্রতিদিন মরে প্রতিদিন জেগে ওঠে আবার প্রতিদিন ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে।
মৃত্যু তো প্রতিদিনই দেখি, ঘুমের মধ্যে যদিও সেখানে স্বপ্নেরা জেঁকে বসে, না না ছলে নানা অজুহাতে।
আমাদের পূর্বসূরীরা তোমার কাছে চলে গিয়েছে বহু আগে’ আমাদের সন্তান যাবে স্ত্রী যাবে পুত্র যাবে বোন ভাগ্নি মা-বাবা সবাই যাবে, আজ নয়তো কাল তারা পাড়ি দেবে এই মহাসমুদ্র।
আমরা যাব তার সাথে সাথে আমাদের অন্ত সীমায় নিমজ্জিত জীবনের সকল গল্প স্বপ্ন আশা নিরাশা ভালোবাসা অতীত বর্তমান ভবিষ্যত ও যাবে।
আমরা দেখি তোমাকে প্রতিদিন প্রতিরাত প্রতি মুহূর্তে জীবনের প্রতিপাদ্যে প্রতিটি গল্পে প্রতিটি শিক্ষনীয় জায়গায় যদি তুমি থাকতে’ তাহলে অবশ্যই তোমার থেকে অনেক কিছু শেখার ছিল মৃত্যু, তুমিতো অহরহ তুমিতো নানা মুনির নানা কথা নানাভাবে নানা দেখায়।
তোমার আর গর্ব কি, তোমার আর অহংকার কি
তোমাকে আর নত হওয়ায় কি আছে
তুমি মানুষের কর্মের দাসত্বে লিপ্ত, তুমি মানুষের ভাগ্যের দাসত্বে লিপ্ত, তুমি মানুষের নানা প্রবঞ্চনায় লিপ্ত তাইতো তুমি নিজেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন
মৃত্যু তোমার অহংকারী করার কি আছে!
তুমি যদি আসবে তবে তোমার অপরাজিত রূপ কি তুমিতো পরাজিত হয় নানা ধরনের নানা ক্ষমতায় নানাভাবে নানা বিচারে নানা দৈন্যতায়
তোমার নানা রূপ দেখি মহামারীতে না না ভাইরাসে মার্স ভাইরাস সার্চ ভাইরাস অ্যানথ্রাক্স ভাইরাস ইবোলা ভাইরাস পরিশেষে করোনা ভাইরাস
এরাও তো মৃত্যুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে তাহলে তার গর্ব কি মৃত্যু আমাদের শরীরে কাঁথা এক কোষ মৃত্যু আমাদের যত্নহীনতায় মৃত্যু আমাদের বুদ্ধি হীনতা
মৃত্যু আমাকে তুমি ভয় দেখাতে পারো না আমাকে তুমি মিথ্যে প্রবঞ্চনার শক্ত করতে পারো না কারণ আমি জানি মৃত্যু কি;
নিজেকে যতটা বিস্তার করো ততটা না ও নিজেকে যতটা অংকারি করো ততটা তুমি ক্ষমতাবান নও
তোমার অস্তিত্ব একসময় বিলীন হয়ে যাবে তুমি আসবে দুর্যোগে অন্যের অমনোযোগে
তুমি হবে এক চিলতে সার্চ বাহক কারণ তোমার অহংকার তোমার গর্ববোধ তোমার জানিয়ে দেবদুলাল আচরণ একসময় তা তোমার হাতেই থাকবে না চলে যাবে মানুষের হাতে
আমি জানি তুমি মানুষের ভাগ্যের দাসত্ব করো জীবের ভাগ্যের ওপর ভর করে যে তোমার নিজস্ব রুটিরুজি করো দাসত্ব করো প্রাণীদের ভাগ্যের দাসত্ব করো
তুমি কি জানো বিশ্রামের কত আনন্দ কত সুখ কত ভাবনা কত মত্ততা তুমি কি জানো
তাহলে তোমার দিকে কে এগিয়ে যাবে ভয় পেয়ে! অবশ্যই আমি না, আমাদের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনুষত্ববোধ যখন তোমাকে নত করবে যখন আমাদের দেহ মৃত্যুর অহংকার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে দেবেতখন তুমি কি করবে
তখন তোমার কি বা করার থাকবে
তুমি শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ হবে তুমি শুধু রবে এক্সিডেন্টে তুমি শুধু রবে দুর্বৃত্তের অস্ত্রে সজ্জিত খুনি হয় তুমি শুধু রবে আচমকা এক দমকা হাওয়ায় যেখানে তোমার কোন নিজস্বতা থাকবে না যে, অন্য কোন ক্ষমতাবলে তুমি ছুটে যাবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে শুধুমাত্র মৃত্যুকে আলিঙ্গন দিতে।
তোমার কোন অহংকার আমার কাছে আর কোন অহংকার নয় তোমার কোন ক্ষমতা, ক্ষমতা নয়। মৃত্যু, নিজেকে নিয়ে তুমি গর্বিত হইও না তোমার অহংকার মূর্খতা ছাড়িয়ে যাবে পৃথিবীর বুক চিরে
তোমারও একদিন দারিদ্রতা আসবে আত্মার মুক্তি দিয়ে তুমিও একদিন হতচকিত হয়ে থমকে দাঁড়াবে দাসত্ব করবে জীবিতদের
মৃত্যু, মনে রেখো ঘুম তোমার চেয়েও সুখদায়ক আরামদায়ক আনন্দদায়ক নেশা তোমার চেয়েও স্বস্তিদায়ক।

2 thoughts on “মৃত্যুর অহংকার

  1. অসামান্য বিশ্লেষণ। যাপিত জীবনের প্রত্যেকটি ভাবনাকে সূক্ষ্ম ভাবে পরিবেশনায় শামীম বখতিয়ারের জুড়ি মেলা ভার। অভিনন্দন প্রিয় লিখক। শুভ সকাল। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।