উৎপত্তির পর মৃত্যু নিশ্চিত জীবন

2482110 ১। জীবন
আমরা জানি জীবন একটি অবস্থা। যেটি একটি অর্গানিজমকে জড় পদার্থ (মানে প্রাণহীন) থেকে ও মৃত অবস্থা থেকে পৃথক করে। যখন জীবসত্তার অবস্থান স্থান কাল পাত্র ভেদে শূন্য থেকে কোন কিছুর দৃশ্যমান অবস্থানের মাধ্যমে পরিণত হয় কিংবা যখন তা নির্মীয়মান হয়, সেটি যেকোনো ধরনের হোক না কেন খাদ্য গ্রহণ বিপাক বংশবিস্তার পরিচালনা ও আরো ইত্যাদি বিষয়াদির মাধ্যমকে তাঁর নীতিতে পরিণত করে তখনই নতুন একটি অস্তিত্বের গঠন ক্রিয়ার অবস্থান সূচিত হয়।

অথবা টিকে থাকার জন্য যখন উপস্থিত শক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান ও অবকাঠামোগত অবস্থার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে তখন তার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। যাকে আমরা জীবসত্তা বা জীবনসত্তা বলে চিহ্নিত করে থাকি এসব কিছুই জীবের উপস্থিতিতে নির্দেশ করে। আর এর প্রকৃত মৌল হচ্ছে প্রোটোপ্লাজম। আমরা অনেকেই জানি জীবন বা প্রাণ বিষয়ক শিক্ষা জীববিজ্ঞানে আলোচিত একটি বিষয় যাকে আমরা প্রোটোপ্লাজম বলে চিহ্নিত করে থাকি এই প্রোটোপ্লাজমের ক্রিয়া-কলাপকেই জীবন বলা হয়।

প্রকৃতি, এ এক অপার বিস্ময়কর অবস্থা। প্রকৃতি মহাবিশ্বের এক অনন্য সৃষ্টি। এই সৃষ্টির মাধ্যমে জীবের উৎপত্তি সূচিত হয়েছে। প্রকৃতিতে এমন কিছু মৌল উপাদান রয়েছে যার দ্বারা জীবের আবির্ভাব ঘটে। সেখান থেকেই প্রাণের উৎপত্তি শুরু হয়। সৃষ্টির মাধ্যমে যেহেতু প্রাণের শুরু হয়েছে মৃত্যুর মাধ্যমে ঠিক তার শেষ হয়। এটি শুধু জীবন নয়। প্রকৃতিতে যা রয়েছে যা কিছু রয়েছে এই মহা ব্রহ্মান্ডে যা কিছু রয়েছে। এর বিনাশ হচ্ছে এবং বিনাশ থেকেই নতুন করে তার নতুন একটি অবস্থা শুরু হচ্ছে।

এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বিষয়গুলোকেই জীবসত্তা বলে। যা জৈবিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন ভৌত সত্তাগুলোকে আলাদা করে চিহ্নিত করে। কোষীয় সংকেত সম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকার একটি দারুন প্রক্রিয়া যা দারুণভাবে ভাববার বা উপলব্ধির বিষয়। যেসব বস্তু গুলোতে এই সকল গুণাবলী নেই হয়তো সেই সকল বস্তুর ভেতর থেকে জীবন শক্তির আবহমান কালের পথ ধরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে নয়তো তাদের ভেতরে সেই গুণগত মান গুলো কোনদিনও ছিল না।

২। জন্ম
জন্মের মাধ্যমে যেহেতু জীবনের উৎপত্তি হয় তেমনি এই উৎপত্তির পর মৃত্যু নিশ্চিত। এ নিয়ে আমার তেমন কোনো আগ্রহ নেই। পৃথিবীতে সবাই যেমন আসতে পারে ঠিক একই রকমভাবে তারা সবাই প্রত্যাগমন হয় তার ভিতরে আমিও বাদ যাবো না। পৃথিবীর কোন কিছুই অবিনশ্বর নয়; মুখের হাসি, চোখের অশ্রু, সময়ের দীর্ঘ মায়াজাল থেকে ছিন্ন হয়ে কোন একটা স্থানে গিয়ে বাষ্প হবে। পাহাড় সমুদ্র বন জঙ্গল মন্থন গতিতে ছুটে যাবে
অতি সূক্ষ্ম ভাবে তারা তাদের শক্তি হারাবে। আমাদের নীরবতা আমাদের চিৎকার এই মহা শূন্যতা ভেদ করে আর কোথাও পৌঁছবে না।

সৃষ্টির শুরু অথবা সূচনা লগ্ন থেকে নিয়তির এই অন্ধকার দঙ্গল থেকে আমরা কখনই বের হতে পারিনি, পারব না। কোন একটা শক্তির মাধ্যমে মুক্ত আকাশ বালুর কনায় ছেয়ে যাবে। মেঘের বজ্র দ্রুভিভূত অন্ধকার মেঘের আকার ধারণ করে নিশ্চিহ্ন করবে এই পরিপূর্ণ ভাসমান পৃথিবী। এখানে আর থাকবেনা অস্তিত্বের খন্ডন, এখানে আর থাকবেনা জীবের আনাগোনা মুক্তি অবমুক্তি এসব খেয়ালে পরিণত হবে। এখানে জানার জন্য আর কেউ থাকবে না। বোঝার জন্য আর কেউ থাকবে না, মানার জন্য আর কেউ থাকবে না, ভাববার জন্য আর কেউ থাকবে না।

এখানে কোন শুদ্ধতা অশুদ্ধতা পরিশুদ্ধ অপরিশোধ্য পরিচিত অপরিচিত দহন উৎপীড়ন নিপীড়ন বেহিসেবি জীবনের এই খন্ডন কোন কাজে আসবে না। নিশ্চিহ্ন হবে সব, চিহ্নহীন অন্ধকার প্রকারান্তে ছেয়ে যাবে পৃথিবীর এই প্রানন্তর আরেকটি পথের পাথেয় হয়ে জমাট বাঁধবে আরেকটি শক্তির মহড়ায়। মুক্তির ফোয়ারায় নিজেকে উজ্জ্বল করে যখন কোন মানুষ মানবজাতির অস্তিত্বের খণ্ডন করবে সেই ক্রমবর্ধমান সময় সে ক্রমবর্ধমান স্থান সেকাল সে পাত্র ভেদে তখনই পূর্ণমান তখনই প্রয়োজন; তুমি যখন এসেছ কিংবা যখন তুমি ছিলে যখন তুমি থাকবে যখন তুমি চলাচল করবে মায়ার সেই অখন্ডতা খন্ডন করে মানুষ যে সত্য প্রবচন উপলব্ধি করতে পারে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তা সময়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান।

শূন্যে ভাসমান এই পৃথিবী কয়েক শ আলোকবর্ষ কিংবা কয়েক মিলিয়ন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন দূরে থেকে যেমন বালুকণার মতোই উপলব্ধ হয়। যখনই সপ্ত স্তরের কোন কিছুই অবলোকন হয় না কোন কিছুই থাকেনা কোন কিছুই বোঝার উপায় নেই তখন ইহকাল ও পরকালের অভাব মানুষকে অন্য চেতনার আলোকে বিচ্ছিন্ন করবে। মৃত্যু নিয়ে আমার তেমন কোনো আক্ষেপ নেই। মৃত্যুকে ভয় পাওয়া মানেই শত্রুকে ভয় পাওয়ার মতোই স্বাভাবিক ব্যাপার। মৃত্যুর জন্য আয়োজন হতে পারে মৃত্যুকে ভয় না পেয়ে সদা প্রস্তুত থাকা। কোন ঋণ রেখে যাওয়া নয়। আপনি যদি কারো উপর অন্যায় করেন জুলুম করেন অত্যাচার করেন। ফ্রম সেটা আপনার জন্য মৃত্যুর কারণ হতে পারে। প্রকৃতির শাস্তির বিধান অত্যন্ত সূক্ষ্ম।

আজ যা আপনি নিজে রেখে যাচ্ছেন অন্যায় উপার্জনের মাধ্যমে অসাধুপায় ও উপার্জনের মাধ্যমে আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ও শাস্তির সম্মুখীন করবেন। আপনি বেঁচে যাওয়া মানে আপনার অপরাধ ক্ষমা হয়ে গিয়েছে আপনার অন্যায় সবাই ভুলে গিয়েছে সেটা ভাবা আপাদমস্তক ভুল। আপনার অস্তিত্বের অহংকার আপনাকে যখন শেষ করে দেবে তখন আপনার জন্য আর কোন কিছু অবশিষ্ট থাকে না।ফ্রিজের ভিতরে যত উপার্জন হবে তার জন্য আপনাকে ততটাই নমনীয় হতে হবে। অস্তিত্বশীল মানব জীবনের এটাই সবচাইতে বড় সৌন্দর্য। কেউ কোনো অন্যায় কেউ কোনো অপরাধ কেউ কোনো অপকর্ম করে জগজ্জীবন প্রতীক্ষা আনন্দ করতে পারবে এই ধারণার তা নিতান্তই প্রকৃতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

৩। মৃত্যু
তাই বলবো, ভয় করো না।
মৃত্যুকে ভয় না করে মৃত্যুর জন্য তৈরি হও।
প্রিয় মহোদয়, মৃত্যু আসবে বিষয়টি নিশ্চিত।

অনিবার্য সত্য হলো
মৃত্যু কাউকে ছাড়বে না।
আপনি সাময়িক সুন্দর পদক্ষেপের মাধ্যমে
মৃত্যুকে এড়িয়ে যেতে পারেন।

কিন্তু মৃত্যু আপনার সামনে এবং পেছনেl
কিম্বা চতুর্দিক থেকেই প্রস্তুত।
একটা সময়, একটি স্থান, একটি কাল
প্রকৃতির এই অপার মহিমার মধ্যেই মৃত্যু অপেক্ষামান।

চেষ্টা করো কোন কিছুতে আশাহীন হইওনা
বুদ্ধিমত্তা, তোমার বিবেক, তোমার শক্তি ও সাহসের
মাধ্যমেই তোমার পরিচ্ছন্ন পথ সূচিত হবে।

কেউ কারো ক্ষতি করতে পারে না।
যতক্ষণ না পর্যন্ত কোনো একজন মানুষ
আরেকজন মানুষকে সুযোগ দেবে।
সহজে কেউ কারো কাছাকাছি আসতে পারে না।
যতক্ষণ পর্যন্ত একজন মানুষ
আরেকজন মানুষকে কাছে না ডাকবে।

কেউ যদি তোমার সাথে রূঢ় আচরণ করে
প্রথমে তাকে ছেড়ে দাও, তার হাতেই ছেড়ে দাও
অপেক্ষা করো সে পরিবর্তন হয় কিনা…

প্রত্যেকটি মানুষকে সুযোগ দেয়া উচিত;
এই সুযোগটা তার অধিকার
তার কর্ম অনুধাবনের জন্য
এ সুযোগটি পেতেই পারে।
এটি একজন বিবেক এবং বুদ্ধিমান
মানুষের দ্বারা যৌক্তিক আচরণ বলেই পরিগণিত হয়।

দেখো, সে বারবার আঘাত করে কিনা।
দেখো সে বারবার তোমার হৃদয়ে
ক্ষত সৃষ্টি করছে কিনা।
আমাদের প্রানান্তর ছুটে চলা পৃথিবী
কাউকে ফেলে দেয় না।
খুনি, জালিম, বর্বর অপরাধীরাও তার কাছে আশ্রয়প্রার্থী

অতএব যে কোন বিচার,
প্রকৃতির মুখোমুখি হয়ে উপভোগ করতেই হবে।
জীবন থেকে কখনো আস্থা হারানোর উচিত না…

একটি জীবন তৈরি হয়েছে
আরেকটি জীবনের জন্য
এটি আমরা আমাদের আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে
আত্মচেতনার মাধ্যমে আত্ম ভাবনার মাধ্যমে
অনুধাবন করে নিয়েছি।

তোমার মাঝে মৃত্যুর আত্ম ফলন ঘটবেই।
এটি অস্বীকার করার কোন ইচ্ছেও নেই
তবুও যদি কেউ অহংকারী হয় তার পতন নিশ্চিত।

জগতের কোন কিছুই অবিনশ্বর নয়।
নশ্বরের এই কোলাহলে সবাই মুক্ত, সবাই স্বাধীন।
তবে সেই সত্য কর্মের মাধ্যমে হতে হয়, হতে হবে।
অন্যায়-অপরাধ অবিচারের স্বাধীনতা
কেউ কাউকে দেয়নি দিতে পারেনা।

তাহলে সেই সম্পর্কে
তোমাকে সচেতন থাকতেই হবে।
এবং তোমাকে সৎকর্ম দাঁড়া
তোমার জীবনকে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে
ভাবিত করো ও ধাবিত করো।

এটাই তোমার কর্ম, এটাই তোমার নিয়তি।
শুধু এটুকু মনে রেখো
আমাদের এই শুদ্ধ ও সুন্দর সময়
জীবন এক জায়গায় গতিমান অন্য স্থানে স্থির;

1 thought on “উৎপত্তির পর মৃত্যু নিশ্চিত জীবন

  1. শুধু জীবন নয়; প্রকৃতিতে যা রয়েছে যা কিছু রয়েছে এবং এই মহা ব্রহ্মান্ডে যা কিছু রয়েছে সবার বিনাশ হচ্ছে। বিনাশ থেকেই নতুন করে তার নতুন অবস্থা শুরু হচ্ছে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।