উপেক্ষিত বাংলা ও একটি প্রতনু প্রতিবাদ

বাংলা আমাদের ভাষা, আমাদের অদৃশ্য ভূষণ, আমাদের অর্জনের অভিমুখ!
হৃদয়ে লালিত স্বপ্ন সব বাংলার আধারেই প্রকাশ পায়।
জন্মসূত্রে লাভ করা এ ভাষা বাঙালীর তরে প্রকৃতির উৎকৃষ্ট অঞ্জলি!
আমাদের ভাষাশিক্ষার হাতেখড়ি হয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সূচনার পূর্বেই।
মা-বাবা, পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতা একজন শিশুর ভাষাশিক্ষার প্রারম্ভিক সোপান।
ভাষা বিষয়ক প্রাথমিক জ্ঞান এবং যোগাযোগ উপযোগী আলাপ-দক্ষতা অর্জিত হয় এভাবেই।
তবু তাতে পূর্ণতা আসে না!
প্রত্যাশিত পূর্ণতা আনয়নের লক্ষ্যেই আমাদের কাঠামোবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে গমন!
সেখানে আমরা ভাষা শিখি, বিজ্ঞান ও গণিত শিখি, সমাজিক সচেতনতা সৃষ্টি হয়, শিখি ধর্ম ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি।
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, যে বিষয়ই আমরা আত্মস্থ করি না কেন, তার উন্নত প্রকাশের জন্য ভাষাগত উৎকর্ষের প্রয়োজন পড়ে।
সুধীজন স্বীকৃত প্রমিত রীতি এক্ষেত্রে অপরিহার্য।
ধরাধামে আগমনের পর আমরা নিকটজনদের থেকে ভাষার যে রূপ পরিগ্রহ করি, তা আঞ্চলিক রূপ।
ভাষার এহেন অবয়ব স্ব স্ব অঞ্চলের জন্য যুতসই, তবে অখিলের সুবৃহৎ অঙ্গনে ভাষার রাষ্ট্র-স্বীকৃত রূপ বা প্রমিত রূপের ব্যবহার আবশ্যক।
এবেলায় তা দ্ব্যর্থতা নিরোধক এবং বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মাঝে পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের স্বচ্ছ মাধ্যম।
এখন, স্বভাষার এই সরল রূপ শিক্ষণের সুবিদিত সরণি হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রণীত পাঠ্যপুস্তক।
বিশেষত বাংলা সাহিত্য ও বাংলা ব্যাকরণ।
মূখ্যত এটাই উদীয়মানদের শুদ্ধরূপে ভাষা শিক্ষার সরল পথ।
কিন্তু এটা প্রকাশিত গোপনীয়তা যে, বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থীই তাদের জন্য প্রস্তুতকৃত বাংলা সাহিত্য(১ম পত্র) ও বাংলা ব্যাকরণ(২য় পত্র) আত্মকে আলোকিত করা কিংবা ভাষাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য পড়ে না!
সীমিত পরিসরে তারা তা পড়ে পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে কৃতকার্য হতে!
ফলে এই বিষয়টা থেকে যায় তাদের আধোশিক্ষা-অশিক্ষার দোলাচলেই!
বৃহৎ পরিসরে এই অবহেলার ফলাফল হচ্ছে– প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বেড়ে ওঠা নাগরিকেরা ধারাবাহিকভাবে সুউচ্চ পদাবলি অধিগ্রহণ করছে বটে কিন্তু বাকে জড়তা, ভাষণে বাক্য প্রণয়ন ও শব্দ প্রয়োগে বিচ্যূতি, বাচনে স্বতঃস্ফূর্ততার ঘাটতি তাদের ক্ষেত্রে প্রায়শই পরিলক্ষিত!
তবু সেখানে যতটুকু ভালো তা মূলত ঐ সনদ অর্জনের নিমিত্তে পঠিত বাংলা ভাষা-সাহিত্যের কল্যাণেই।

আমরা অবগত যে, বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এবারের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে স্বল্প সংখ্যক বিষয়ের উপরে।
নৈসর্গিক বৈরীতার দরুন সংক্ষিপ্ত পরিসরে পরীক্ষা গ্রহণের আমরা বিরোধী নই!
এটা সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, উভয় স্তর থেকে বাংলাকে বাদ দেওয়া!
অর্থাৎ বাংলা শেখার সুবিদিত পথ এবারের শিক্ষার্থীদের জন্য দৃশ্যত রোহিত হয়ে গেল!
এই সিদ্ধান্তের হেতু আমাদের কাছে অস্পষ্ট!
এখানে তো শুধু ভাষাশিক্ষা জড়িত না বরং বাংলা আমাদের অন্তর ও ঐতিহ্যের সাথে মিশে থাকা বিষয়!
আমাদের বৈপ্লবিক উত্থানের সূচনা হয়েছে এই ভাষার হাত ধরে।
ভাষার নামেই এই স্বাধীন ভূখণ্ডের নামকরণ, যা বিশ্ববুকে দারুণ দৃষ্টান্ত!
ভাষাপ্রেমী সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের তাই সুস্পষ্ট প্রস্তাব– স্বাধীন বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্তরে কার্যকারণ উল্লেখপূর্বক যদি একটি বিষয়ের উপরে পরীক্ষা নিতে হয়, তবে তা বাংলা হোক!
যদি দুই বা ততোধিক বিষয়ের উপরে পরীক্ষা নিতে হয়, সেখানেও গুরুত্বের সাথে বাংলার অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করা হোক।
এর পাশাপাশি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে বাংলা ভাষা-সাহিত্য যত্নের সাথে প্রতিষ্ঠিত হোক এবং বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের সাথে স্বল্পায়তনে হলেও সহপাঠ হিসেবে বাংলাকে সংযুক্ত করা হোক।
রাষ্ট্র থেকে যথাযথভাবে বাংলা ভাষা শিক্ষণের প্রতি সব স্তরের নাগরিকদের মধ্যে সবিশেষ উদ্দীপনা সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গৃহীত হোক!
বাঙালীর বাংলাপ্রীতি যেন বছরের একটি নির্দিষ্ট দিবসকেন্দ্রীক না হয়!
বরং বাংলার সাথে গড়ে উঠুক বাঙালীর চিরন্তন সখ্য, বাংলা হোক আমাদের অগ্রযাত্রা ও উন্নতির উন্নত আধেয়!

4 thoughts on “উপেক্ষিত বাংলা ও একটি প্রতনু প্রতিবাদ

  1. শুদ্ধ বাংলা ছড়িয়ে পড়ুক সৃজনশীলতায় ভিতর দিয়ে বিশ্বময়

  2. ভাষার নামেই এই স্বাধীন ভূখণ্ডের নামকরণ, যা বিশ্ববুকে দারুণ দৃষ্টান্ত! https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. *বিষয়টা বারংবার আমাকে উদ্দীপ্ত করে!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।