আমি খামচে ধরি বাংলাদেশ
যেন আমি ক্রুশবিদ্ধ যীশু;
আমাকে পাগল-সাব্যস্থ এবং শিকলবন্ধী করা হলো
নির্জন প্রান্তরের বটবৃক্ষে উচু হয়ে উঠা শিকরে-
আমার অসম সাহসে তারা বিভ্রান্ত।
যে-ই আমি তাহাদ আলীর নিকট
বিনা লড়াইয়ে বিসর্জন দিয়েছি আয়েশাকে,
যেবার আয়েশাকে জোড় করে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সে
একটি টু-নট-টু পিস্তলের মুখে আমি কম্পমান ছিলাম, টু শব্দটি করিনি;
সেই আমিই মাটির বুকে উবুর হয়ে পড়ে থাকা
তাহাদ আলীর লাশের পাশে দাড়িয়ে চিৎকার করছি-
কোন ক্রশফায়ার হয়নি এখানে,
তাকে হত্যা করা হয়েছে;
তাহাদ আলী আমাদের উপর জুলুম করেছে-
কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়েছে;
সামাজিক জুলুমের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় জুলুম…
ওরা আমার অসম সাহসে বিভ্রান্ত
ওরা আমাকে খাবার দেয়নি, না পানি একফোঁটা।
ক্ষুধার যন্ত্রনা তীব্র হতে হতে উড়ে গেছে বহুক্ষণ আগে
লোভ, ঘৃণা, ক্রোধ, প্রতিহিংসা লুপ্ত হয়ে উঠে গেলাম
মানবীয় স্তর হতে প্রকৃতিক স্তরে
সারারাত আমি প্রকৃতিতে একাত্ম ছিলাম।
পুর্নিমার চাঁদ জ্যোৎস্নার পাল তুলে ভেসে গেলো
আকাশের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে
তারপর আমাকে চুমু দিয়ে টুপ করে ডুবে গেল দিগন্তে;
কুন্ডুলি পাকিয়ে শুয়েছিল যে বিষধর সাপ আমার পায়ের পাশে গর্তে
সূর্যের আগমনী আলোর প্রকাশে এঁকে বেঁকে চলে গেল নি:শব্দে;
সুবেহ্ সাদিকের সময় যখন
মানুষের স্বপ্নগুলি সত্য হয় বলে কিংবদন্তী আছে;
ভুতগ্রস্থের মতো দেখি তাহাদ আলী
নূর হোসেনের হাতে হাত ধরে, গোল হয়ে,
নেচে চলছে উদভ্রান্ত ব্রাজিলীয় স্বাম্বু নৃত্যে- আমার মস্তিস্কের উদ্যানে।
এইসব অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গজিয়ে উঠা নখে তাদের ধরতেই-
আমি খামচে ধরি বাংলাদেশ।
বন্ধুকের নলে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’-এর গায়ে
চাপ চাপ রক্ত ঝরছে অবিরল ধারায়
সাদা হাইকোর্টের ’চির উন্নত মম শির’
তাহাদ আলীর লাশের পাশে লজ্জায় নীল।