শেষ তৈলচিত্র

FB_IMG_1485341895880

সাদাকালো অরণ্য- পাহাড়- নদী পার হয়ে
মরুর ধুলো উড়িয়ে দুরন্ত ছুটে চলা ভাবনার
লাগামহীন এক পাগলাঘোড়ায় সওয়ার হয়ে
নিশ্চুপ বসে আছি।

দুর্দান্ত গতিময় স্বপ্ন – স্থবির বাস্তব – অর্থহীন -সম্ভাবনাহীন।
অথবা কি সম্ভাবনাময়?
কী রং তাদের?
.
এক হঠাৎ বর্ণান্ধ শিল্পী।
যা কিছুই আঁকি – যে রং এ আঁকি – কিছুই দেখিনা।
আঁকার অসহ্য তাড়না ছবির পর ছবি আঁকিয়ে নেয় আমাকে দিয়ে।
অথচ নিজেই দেখিনা কী আঁকি!
.
জীবনের ক্যানভাসে আঁকা ছবিটায় ও কোন রং নেই।
ছবি জুড়ে শুন্যতা। শুন্যতা যেন হঠাৎ সারা পৃথিবীতে।
অনুভূতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে –
“আমি একা! বড্ড একা!”

আমাকে নি:সংগ করে রং গুলো সব
বারান্দার চড়ুইগুলির মতো পালিয়েছে।
.
আমার আকাশে ইচ্ছে ঘুড়িগুলোর কোনো রঙ নেই।
আকাশটা জানি নীল।
সেখানে কষ্টের বিষাক্ত নীলাভ আভা নিয়ে
দুঃখগুলো সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে বেড়ায়।

জানি পৃথিবী রঙে রঙে ভরা।
হরেক রঙের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি- বর্নান্ধ শিল্পী।
.
যে দূরে চলে গেছে, তবু এত কাছে,
তবু দূরে – অন্য কারো।
তার মুখ ক্যানভাসে আঁকি।
শেষ তৈলচিত্রে আঁকি
হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা – ভালো লাগা দিয়ে সেই হাসিমুখ।

এ কি ভালোবাসা! এ কি ভালোলাগা!
কেন অনুভুতি বলে না আমাকে!
তীব্র কষ্ট যেন হিমাংকের বহু নিচে নিয়ে যায় আংগুলগুলোকে।

তুলি এঁকে যায়।
সে কি ভুল রেখা ভুল রঙে আনন্দ আঁকে!
.
দিশেহারা লাগে।
আনন্দ নেই!
ক্যানভাসে শুধুই সাদাকালো কষ্টের ছাপ – তার মুখচ্ছবি!
একজন রঙ বিশেষজ্ঞের জীবনের শেষ ছবিটি – অজানা রঙে আঁকা।
.
অতিপরিচিত একদার আনন্দে উদ্ভাসিত হাসিমুখ
সে আজ কষ্টের তীব্রতায় বিবর্ণ, পাংশুটে।
রং নেই। রেখাগুলি কথা শুনবে না!

ক্যানভাসে আঁকি যেন তার কষ্টভরা মুখ নয়,
এক অহংকারী শিল্পীর ব্যর্থতার ছবি!
মূর্ত উপহাস!

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

17 thoughts on “শেষ তৈলচিত্র

  1. খুব ভালো লিখেন আপনি।
    অসাধারণ লেখার হাত।

    শুভ কামনা রইলো।

    1. ধন্যবাদ আপনার শুভকামনার জন্য।
      আপনার জন্যও অনি:শেষ রইলো।

    1. লিখার প্রতি আপনার মমত্ববোধ আমার ভীষণ ভালো লাগে মি. মামুন। গুড। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

    2. ধন্যবাদ :)
      এখন লেখালেখি-ই আমার একচিলতে আনন্দ, ভাইয়া।
      ভালো থাকুন আপনি।

  2. ‘জানি পৃথিবী রঙে রঙে ভরা
    হরেক রঙের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি- বর্নান্ধ শিল্পী।`
    শুভেচ্ছা এবং ভালো লাগা রইলো মিতা।

  3. The last painting.
    আমার এই লেখালেখিতেই আনন্দ! কেও পড়ুক বা না পড়ুক।
    এক অহংকারী শিল্পীর ব্যর্থতার ছবি!
    মূর্ত উপহাস!
    জীবনের প্রতিচ্ছবি!

    1. সত্য বলেছেন প্রিয় খালিদ ভাই- লেখালেখিতেই আনন্দ, কেউ পড়ুক বা না পড়ুক। এক চিলতে আনন্দের উতস।

      অনেক ভালো থাকুন প্রিয় খালিদ ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  4. শেষ তৈলচিত্র এর জন্য রইল অফুরান ভালোবাসা। সাফল্য কামনা করি।

    1. ধন্যবাদ প্রিয় ভাই। দেশে আদবেন কি শীঘ্র?
      এলে জানাবেন :) জম্পেশ আড্ডা হবে।
      অনেক ভালোবাসা রইলো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।