(মামা বাড়ির দুধভাত দেখতে এমন হলে কি হবে আমরা কোনদিন এমনটা দেখিনি)
“মামার বাড়ির আবদার” এই প্রবাদ বাক্য আমরা কেবল শুনেই এসেছি কিন্তু বাস্তবে কোনদিন প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাইনি যদিও আমাদের উপযুক্ত ৪ জন মামা ছিলেন যাদের ৩ জন এখনও বর্তমান আছেন। দেশ স্বাধীন হবার পরে আমার SSC পরীক্ষার পর আমার বাবা যখন ঢাকায় আমার পড়ালেখা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন তখন এক মামার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড এর বাসায় থেকে আমাকে পড়াশুনা চালিয়ে যাবার জন্য পাঠিয়ে দিলেন।
সেখানে একদিন বাথরুমের বাল্ব বদলাবার সময় হাত থেকে পরে একটা বাল্ব ভেঙ্গে গিয়েছিল তখন এক মামা বেশ ভাল করেই বকুনি দিয়েছিলেন যা এখনও মনে আছে। মামি কোনদিন ভাগ্নে হিসেবে আমাকে খাবার সময় ভাত বেড়ে দেয়ার সময় পায়নি। একদিন দুপুরে খাবার সময় তখন মামা বাড়ির সফুরা নাম্নী এক কাজের মহিলার কাছে কোন একটা তরকারি চেয়ে নিয়েছিলাম বলে পরে মামিকে বলতে শুনেছি ‘এরা দেখি সব লুট করে খেয়ে ফেলছে’ এ কথা এখনও আমার মনে জ্বল জ্বল করে জ্বলছে।
মামা একটা বড় বিদেশি কোম্পানিতে চাকুরীর সূত্রে প্রায়ই ঢাকার বাইরে যেতেন। একবার রাজশাহী থেকে ফিরে এলে গাড়ি ভরে আম, লিচু, মিষ্টি এবং বেশ কিছু কাপড় চোপর এনেছিলেন। সন্ধ্যার পরে তার ছোট দুই মামা বাক্স ঝাকা খুলে সবাইকে দিচ্ছিলেন আর মামা পাশের খাটে আধ শোয়া অবস্থায় দেখছিলেন। কয়েকটা জামা শহীদ, কামরুল এবং অন্যান্য কাওকে দিলেন কিন্তু পাশেই যে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই আমার প্রতি কারো দৃষ্টি পড়েনি, তবে হ্যাঁ কয়েকটা লিচু আর একটু আমের ভাগ পেয়েছিলাম। এ কথাও ভুলে যাবার মত নয়।
একদিন আমার বাবা আমাকে বিষন্ন মুখে দেখে জিজ্ঞেস করলেন কিরে কি হয়েছে? না আব্বা কিছু হয়নি! শত হলেও বাবার মন সে কি কিছু আচ করতে পারে না? আবার জিজ্ঞেস করলেন তখন কেদে দিয়ে বললাম আমি আর এখানে থাকব না! কেন? তখন এই কয়েকটা কথা আব্বাকে জানালাম শুনে তিনি আমাকে আবার গ্রামে ফিরে যাবার কথা বললেন। ফিরে গেলাম গ্রামের বাড়িতে। এর কিছুদিন পরেই আব্বা গাবতলিতে একটা ছোট্ট বাসা ভাড়া নিয়ে আমাদের সবাইকে নিয়ে এলেন আর আমি ভর্তি হলাম মিরপুরের বাংলা কলেজে। আমার আর মামার বাড়ির আবদার দেখা হলো না। এমন অবহেলার ভাগ্নেই ছিলাম আমরা। তখন এমনি অবহেলার ভাগ্নে হলে কি হবে আমার কদর বেড়ে গেলে তখন, যখন আমি বিদেশি জাহাজ থেকে আমার প্রথম সমুদ্র যাত্রা শেষ করে দেশে ফিরে এসেছি। দেশে আসার আগে মামা তার চাকুরী থেকে তার দুর্ভাগ্য বা যে ভাবেই হোক টার্মিনেট হয়ে ঢাকায় এসে আমাদের মিরপুরের বাসায় থাকছেন। দেশে আসার পরে আমাদের এজেন্ট চিটাগাং এর জেমস ফিনলে থেকে আমার সমুদ্র যাত্রা এর টাকা নিয়ে আসতেই সব টাকা আমার মা বাবা মামার হাতে তুলে দিলেন। জীবনে টিকে থাকার জন্য মামার তখন কি এক ব্যবসা করার জন্য টাকার অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। মামা আমাকে বললেন আমার ব্যবসা হলে তোর টাকা ফিরিয়ে দিব চিন্তা করিস না। এর পরের সমুদ্র যাত্রা গুলির টাকাও একই ভাবে মামার কাছেই চলে যায়। তখন থেকেই মূলত আমি নিতান্ত টাকা রোজগারের মেশিন হতে পেরে আমার কদর বেড়ে গেল, আমিই মামার প্রিয় ভাগ্নে হয়ে গেলাম যদিও বিনিময়ে আমি বঞ্চনা ব্যতীত আর কিছুই কোনদিন পাইনি। সে টাকাও আর কোনদিন ফিরে পাইনি এভাবেই একদিন হঠাত শুনি মামা ইন্তেকাল করেছেন। আমাদের দুই ভাইয়ের সেইসব টাকা আর কোনদিন উদ্ধার হবে কি?
তবে হ্যাঁ এ কথাও ভুলি নাই, গাবতলির বাসায় আসার পরে একদিন আম্মাকে বলেছিলাম “আম্মা সিল্কের পাঞ্জাবী আবার কেমন“? সেই কথা আম্মা আবার মামাকে বলেছিলেন। তারপরে একদিন দেখি মামা আমাদের বাড়িতে এসেছেন এবং আমার হাতে একটা প্যাকেট দিলেন, খুলে দেখি ওতে একটা পাঞ্জাবী। মামা বললেন ‘গায়ে দিয়ে দেখ তোর লাগে নাকি, এটাই সিল্কের পাঞ্জাবী’। এই কথা আমি যতদিন বেচে থাকব ততদিন আমার মনে নক্ষত্রের মত উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এ ছাড়া আমরা মামাদের আর কোন কিছু কোন দিন পাইনি। আমাদের মামিরাও আমাদের জন্য কোনদিন কিছু রান্না করার প্রয়োজন মনে করেনি। তেমনি আমরাও জানিনা কোন মামির রান্না কেমন!
পরবর্তীতে আমি দেশে একটা চাকুরী পেয়ে আর জাহাজে যাওয়া হয়নি তখন আমার রোজগার কমে গেল আবার এদিকে দাঁড়াল আমার মেঝ ভাই কাদের, সে চলে গেল বিলাত। এখন থেকে যে কাদেরকে কেও চিনত না সেই কাদেরই নতুন করে সবার প্রিয় হয়ে গেল। এতদিন যে টাকার যোগানদাতা ছিলাম আমি তা বর্তাল কাদেরের উপর।
এসব কথা বলতে গেলে অনেক হয়ে যাবে তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আর কিছু লেখা অর্থহীন। মনের কথা মনেই থাক। ভঙ্গুর এই জীবনে কতজনের কত কিছুই ঘটে তার হিসাব কে রাখে!
তবুও ভাল মামারা আমাদের তাদের বাড়ি থেকে ঘার ধরে তাড়িয়ে দেয়নি, এতেই আমরা খুশি।
বিঃ দ্রষ্টব্য- মুরুব্বী মহাশয়ের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমার এই ছোট গল্প লেখার প্রথম প্রচেষ্টা। যদি আপনাদের ভাল লাগে তাহলে সমস্ত কৃতিত্ব মুরিব্বী সাহেবের আর খারাপ লাগলে পূর্ণ ব্যার্থতা আমার।
গল্পটি ভাল লেগেছে তাই বলে কৃতিত্ব চলে যাবে মুরব্বী হাড়িতে! এটা কি মামা বাড়ির আবদার?
কি করি কন ভাই! মুরুব্বী না?
ছোট কালে পড়ে ছিলাম মামী এল লাঠি নিয়ে পালাই …
এ রকম ঘটনার কম বেশি অভিজ্ঞতা সবারই আছে
শেয়ার করলে জানা যাবে মনে হয়।
হ্যা আপা যখন যা মনে আসে লিখে ফেলেন, আমরাইতো পড়ব কাজেই ভয় কিসের?
ধন্যবাদ।
হাহাহা।
সেই তো লিখলেন মুরুব্বী সাহেবকে আবার ক্রেডিট দেয়া কেন ? 
অসাধারণ আপনার উপস্থাপন বন্ধু। ব্লগে থাকতে না পেরে দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
তাইতো বলি মুরুব্বী না থাকলে শব্দনীড় বাচবে কি করে?
আরে ভাই বুঝলেন না, মাগনা ক্রেডিট দিতে কোন সমস্যা নাই, লাগলে আরো দিমুনে! তয় কথাতো হাসা কইছি!
জ্বী জনাব ঠিকই কইসেন।
হ্যা এইবার আরও ২/১ টা ছোট গল্পের প্লট মাথায় আনার চেষ্টা করবাম!
উত্তম অতিশয় প্রিয় মহাশয়।
নরউইচে একবার পেরায় কাচা চাইনিজ খাইছিলাম তাই লেখবাম!