ফাও

ইন দ্য ইয়ার অফ টু থাওযেন্ড ফৌর, আমাগো জাহিদ দিপার প্রেমে হাবুডুবু খাইতাছে। সপ্তায় দুই দিন ঢাকার থেকা একশো কিলোমিটার দূরে দিপাগো শহরে যায়। রিকশায় ঘুরে। কথা কয়। রেস্টুরেন্টে খায়। প্রত্যেক রাইতে ৩টা ৪টা পর্যন্ত কুটুর-কুটুর কথা তো আছেই।

টু থাওযেন্ড ফাইভের সেপ্টেম্বর থেকা জাহিদ দিপারে বিয়া করনের চাপ দিতে শুরু করলো। মধুমধু গলায় দিনে রাইতে চৌদ্দবার কইরা কইতে শুরু করলো- “জানু, প্রস্তাব দিয়া আম্মারে পাঠাই। তোমার ফ্যামিলি রাজি না হইলে ডাইরেক্ট কোর্ট ম্যারেজ করুম। আমার ফ্যামিলিতে প্রব্লেম নাই।” দিপা খালি কয়, ‘জানটুশ, একটু অপেক্ষা করো। আমি বাবাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি।”

টু থাওযেন্ড সিক্সের মাঝামাঝি পর্যন্ত দিপা ফ্যামিলিরে ম্যানেজ করতে পারলো না। জাহিদ আর দেরী করতে চায় না। বিভিন্ন আচেনা নাম্বার থেকা মোবাইলে ফোন কইরা প্রায়ই দিপার নামে উলটাপালটা কথা কয়। দিপারে জিগাইলে কসম কাইটা অস্বীকার করে। জাহিদের চাপাচাপিতে দিপা কোর্ট ম্যারেজে রাজী হইলো। ডিসিশন ফাইনাল। সংসার শুরুর আগে দুইজন মিলা ফার্নিচার পছন্দ করল। দিপার পছন্দে খাট আর সোফাসেট বানাইতে দিলো। জাহিদ বাড়ীওয়ালারে পামপট্টি মাইরা চাইরতালার ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারে দুইমাসের মধ্যে বিদায়ের ব্যাবস্থা করলো। ফ্ল্যাট খালি হওনের পনেরো দিন পরে বিয়া।

এক বিষ্যুদবারে জাহিদের অফিসে এক লোক আইসা হাজির। দিপার ব্যাপারে গোপনে কিছু কইতে চায়। জাহিদ হাসতে হাসতে কইলো- “ভাই, দিপার যদি চাইর বছর আগে একটা বিয়া হয়া থাকে আর দশটা বাচ্চাও থাকে তবেও তারে বিয়া করুম।” লোকটা কয়, “বেশ ভালো কথা। তবে বিয়ের আগে এই মেমোরী কার্ডের ভিডিওগুলি দেইখেন। কিছু জানতে হইলে ফোন দিয়েন। এই কাগজে নাম্বার আছে।”

ভিডিও দেইখা জাহিদ বেদিশা। একবার চিন্তা করলো বিষ খায়া মইরা যাইবো। আবার ভাবলো কার জন্য মরবো! দিপারে মাইরা ফালাইলে পৈশাচিক শান্তি পাইতো। ওর মাথার ভিতরে দুই বার্নারের বিশটা গ্যাসের চুলা দাউদাউ জ্বলতাছে।

জাহিদ বহুতদিন বাদে বারে গেল। লম্বা সময় ধইরা পাঁচ পেগ ভদকা খাইল। মাথা কিছুটা ঠান্ডা হইলো। রিকশায় কইরা বাসায় ফিরনের সময় কলিজায় কামড় দিল- দিপারে কি কেউ ব্ল্যাকমেইল করতাছে! রাইতে দিপারে ফোন দিল-
: জানু, তুমি সত্য কইরা কও কারো সাথে তোমার ফিজিক্যাল এফেয়ার আছে?
: হঠাত, এসব জিজ্ঞেস করছো কেন!
: আইজ একটা মেমোরী কার্ড পাইছি। মেয়েটার চেহারা তোমার মত। তোমার শরীর এখনও খুইলা দেখি নাই। তাই বুঝতাছি না এইটা তুমি না অন্যকেউ।
এইবার দিপা কাইন্দা দেয়, কয়- “জাহিদ, ওরা ব্ল্যাকমেইল করছে। আমাকে রেপ করার সিন মোবাইলে রেকর্ড করেছিল। ভিডিও ফিরিয়ে দিবে বলে দুই দিন ডেকে নিয়ে আবার রেপ করে, মোবাইলে ভিডিও করে। এখন ব্ল্যাকমেইল করে প্রায়ই আমাকে ডাকে আর…” দিপা কথা শেষ করতে পারে না। জাহিদের মাথায় আগুন চইড়া যায়- “এতদিন আমারে কও নাই ক্যান! কাইন্দো না। জানোয়ারগো মাটিতে পুইতা ফালামু- খোদার কসম।”

ইন দিস সিচ্যুয়েশন, জাহিদ পুরা পাগলা কুত্তা। ক্যারাবেরা দুই বন্ধুর কাছে হেল্প চায়। দিপার কাহিনী শুননের ইচ্ছা জানায়া ঐ লোকরে দাওয়াত দিয়া ঢাকায় আনে। মিরপুরের এক আন্ডার কন্সট্রাকশন বিল্ডিংয়ের ছয়তালায় পাঠার মত গলায় দড়ি দিয়া বান্দে। হারামজাদা ডরে প্যান্টে ছোট আর বড় কাম দুইটাই একলগে কইরা দেয়। তারে লেংটা কইরা ভিডিও করে। তারপর বারো ঘন্টার মধ্যে দিপার সব ভিডিও ফিরত দিতে বলে। ১মিনিট বেশী লাগলে লেংটা ভিডিও ইউটিউবে ছাইড়া দিবে আর পোস্টার ছাপায়া জেলা শহরের দেয়াল ভইরা দেওনের হুমকী দেয়। হুমকীতে কাম হয়, লোকটা সকল ভিডিও ফিরায়া দেয়।

বিয়ার আর একমাসের মত বাকী। সারা রাইত দুইজনে মোবাইলে বাকুম বাকুম করছে। সকালে জাহিদ এসএমএস পাইলো- “জানটুশ, মোবাইল নষ্ট। ফোন বন্ধ পেলে টেনশন করো না। টেক কেয়ার উম্মম্মম্মা।”

জাহিদ তিন দিন ধইরা সমানে দশ মিনিট পর পর ফোন দিয়া যাইতাছে। দিপার ফোন বন্ধ। সে ছটফটায়। চিন্তায় মইরা যাওনের দশা। চাইর দিনের মাথায় মোবাইল চালু পায়-
: হ্যালো, কে বলছেন?
: জানু, আমি জাহিদ। ঠান্ডা লাগাইছো কেমনে! গলা এমন কেন?
: আমার ভয়েস এমনই। আপনি কাকে চাচ্ছেন?
: দিপা, রাগ করো কেন!
: হি:হি:হি:হি: আমি দিপা না। আমি দিপার ছোট বোন রিপা।
: দিপা কোথায়! দিপাকে দাও।
: দিপা আপ্পিকে দেয়া যাবেনা।
: কেন?
: দিপা আপ্পি গতকাল রাতের ফ্ল্যাইটে আমেরিকা গেছেন, শিকাগো সিটিতে দুলাভায়ের কাছে।

2 thoughts on “ফাও

  1. রম্য রসে আপনার লেখা পড়তে ভাল লাগে।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।