অপঘাত

: ইন দ্য ইয়ার অফ ১৯৪২, আমাদের এই মিরপুরের শ্যাওড়া পাড়ার ঘটনা। অণুগল্পকার মোখলেস খন্দকার গভীর রাতে অণুগল্প লিখছিলেন।
: শফিক চাচা, তারপরে কি হলো?
: তিনি গল্প লিখে শেষ করার আগেই স্ট্রোকে মারা যান। তার সাথে অসমাপ্ত গল্পটারও অপমৃত্যু ঘটে।
: গল্পও মারা যায়!
: মারা গেলে ভালোই হত, কিন্তু গল্পটা পুরোপুরি মারা যায় না। আফটার অল অপমৃত্যুতো।
: তবে?
: ধর্মীয় নিয়মে মোখলেস খন্দকারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। কিন্তু অপঘাতে মৃত্যু আর শেষ কৃত্য সম্পন্ন না হওয়ায় অসমাপ্ত অণুগল্পটা ভুতে পরিনত হয়। বাড়ির দক্ষিণ দিকের তমাল গাছে আশ্রয় নেয়। একা একাই থাকত। ঝামেলা করতো না।
: তারপর?
: একদিন সন্ধ্যায় এক প্রখ্যাত অণুগল্পকার গল্পের প্লট ভাবতে ভাবতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তমাল গাছের পাশের দেয়ালে হিসু করছিলো। সেই হিসুর ছিটা গল্পভুতকে ভিজিয়ে দেয়। ভুতের ভিতরের ভুতোত্ব জেগে ওঠে।
: তারপর?
: অতৃপ্ত আত্নার মত অসমাপ্ত অণুগল্প ঐ অণুগল্পকারের কাধে সওয়ার হয়।
: তারপর?
: তারপরের অবস্থা ভয়াবহ। প্রায় সারাক্ষণ অণুগল্পের ভুত লেখকের কাধে আসর করে থাকে। সে অস্থির হয়ে ওঠে। কখনও কখনও ফেরোসাস, ভায়োলেন্ট। নিজে লিখে, সামনে যাকে পায় তাকে দিয়েই অণুগল্প লেখাতে চায়। না লিখলেই দায়ের কোপ।
: বলেন কি!
: কিছুদিন আগে পাংগাস মাছের ফেরিওয়ালাকে অণুগল্প লেখার জন্য রাম দা নিয়ে তাড়া করেছিল। সেই থেকে এই গলিতে ফেরিওয়ালারা ঢুকে না।
: তাই না কি! ভুতের গল্পের নামে আজগুবি কি এক গল্প শোনালেন। ভয় নেই, থ্রিল নেই, সাসপেন্স নেই। বানোয়াট গল্প, দূর্বল কাহিনী।
: ইয়ংম্যান, জানতাম, আপনি বিশ্বাস করবেন না। সোজা তিন তলায় উঠে কলিং বেল বাজান। সাসপেন্স, থ্রিলার আর ভূতের ভয় আপনার শরীরের প্রতিটি রোমকূপে অনুভব করবেন।
: তবে তিন তলাতেই যাই, ভুত দেখে আসি।

সেলিম সাহেব মুক্তমনা লোক। দ্রুত সিড়ি ভেংগে তিনতলায় উঠে গেলেন। পাঁচ মিনিট পরে বিশাল শোরগোল। সেলিম সাহেব ‘বাঁচাও…বাঁচাও’ বলে প্রাণপনে সিড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় দৌড়াচ্ছেন, তার পিছনে পিছনে ‘তুই অণুগল্প লিখবিনা! তোর বাপ লিখবে… তোর দাদা লিখবে… তোর চাচামামাখালুফুপা লিখবে.. ফোরটিন্ত দুগুনে টুয়েন্টিএইট গুষ্টি লিখবে…: বলে চেচাতে চেচাতে দুই হাতে শান দেয়া দুই রামদা নিয়ে প্রখ্যাত অণুগল্পকার বেলাল দৌড়াচ্ছেন। অণুগল্পের ভুত আজ একটু বেশীই ক্ষেপেছে, চৌদ্দগোষ্ঠীর সীমাকে অপঘাতে ঘায়েল করে আটাশগোষ্ঠীতে পৌছে গেছে।

18 thoughts on “অপঘাত

  1. * চমৎকার…
    শুভ কামনা নিরন্তর।

  2. ইন দ্য ইয়ার অফ ১৯৪২, আমাদের এই মিরপুরের শ্যাওড়া পাড়ার ঘটনা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Shock.gif.gif

  3. কী কারণ? এই জন্যই আপনার অণুগল্পের ভীষণ ভক্ত আমি হরবোলা ভাই। :)

  4. আপনার অণুগল্পসমূহে পারফেক্ট অণুগল্পের অনুষঙ্গগুলি খুঁজে পাই।

    অণুগল্প তো আসলে বিশাল গল্পের অণু (এটোমিক) রুপ। কেউ কেউ অণুগল্পের নামে শত শত ভুলভাল গল্প লিখেন যার ভিতর আবশ্যকীয় ইলেমেন্টগুলি অনুপস্থিত থাকে। ওসব যেন বারো হাত বাঙ্গির তেরো হাত বিচি যা অণুগল্পের কন্সেপ্টের পুরো উল্টো। ওসব বিরক্তি জাগায়। আপনারগুলি পড়ে তৃপ্তি পাই।

    পরাবাস্তব গল্পটি পড়ে মজা পেলাম। তবে এটা আপনার মানের নয়।

     

  5. অণুগল্পের ভুত আজ একটু বেশীই ক্ষেপেছে, চৌদ্দগোষ্ঠীর সীমাকে অপঘাতে ঘায়েল করে আটাশগোষ্ঠীতে পৌছে গেছে।

     

    * https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।