নিজের জনকের চল্লিশা শেষে বউ বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে ফিরে চলছে শিহাব। টানা এতগুলি দিন আম্মা এবং ছোট ভাইয়ের সাথে থেকে যেতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও, জীবন জীবিকা অনেক কষ্টকর মুহুর্তকে উপভোগ করতে বাধ্য করে।
প্রচণ্ড বরষায় ভিজে ভিজে সাইডব্যাগটিকে সামলে যখন বাসটির নির্ধারিত আসনে বসে শিহাব, বামপাশের জানালা দিয়ে বাইরে তাকানো পাশের সহযাত্রী বৃষ্টিবিলাসী মনে গভীর তন্ময়তায় মৌণ-বিভোর! পাশে কারো উপস্থিতিতে ঘোর থেকে জেগে ওঠে নারী.. হাজার বছরের রহস্যময়ী কালের সোপান বেয়ে ধেয়ে আসা দৃষ্টির ছুঁয়ে যাওয়ায় নিশ্চুপ শিহাব.. থমকে যাওয়া সময়ের দ্বিতীয় যাত্রী হয়ে নির্নিমেষ চেয়ে থাকে অধর কোণের সেই তিলটির দিকে!
এ-টু সিটে বসে সামনের উইন্ডস্ক্রিনের দিয়ে মেঘবালিকাদের অবিরাম কান্না দেখে দেখে নিজের মনে হাসে শিহাব.. হ্যা, সে! সে-ই তো.. হারানো সুর! এতগুলো বছর পরে.. এভাবে? কোনো একসময়ে শিহাবের হৃদয় হরণ করেছিলো এই মেয়েটি। আজ সে যদিও মেয়ে নয়। এখন সে নারী! পুর্ণাংগ রমনী। কিন্তু অন্য কারো…।
মুহুর্তে সময়ের ধাপের পশ্চাদগতিতে অনেক আগে ফিরে যাওয়া.. স্মৃতিদের কোলাহল আর আন্দোলনে থমকে থাকা কিছু বিশেষ সময়.. সব নিমিষে ভাবনা-চিন্তার এপার ওপার করে দিয়ে ফ্রিজ হয়ে যায়।
বাবার পছন্দ ছিলো না এই মেয়েটি। তারপরও বাবা শিহাবের জন্য রাজী হয়েছিলেন। কিন্তু কেনো জানি সম্পর্কটা হলোই না। জেদী বাবা এক সপ্তাহের ভিতর শিহাবের জন্য নিজের পছন্দের মেয়ে খুঁজে এনেছিলেন।
দেড় দশক আগে!
সময়! কত দ্রুত চলে যায়।
স্মৃতি রেখে যায়..
বাবাও দ্রুত চলে গেলেন।
রেখে গেছেন পছন্দের মেয়েটিকে…
‘তোমার কি পছন্দের নয়?’
এমন প্রশ্নে চমকে ওঠে শিহাব। নিজের দিকে তাকায়। উত্তর খুঁজে ফিরে।
হ্যা! আজ যে মেয়েটি শিহাবের বউ, বাবার পছন্দের হলেও, কিভাবে যেন সে শিহাবেরও পছন্দের মেয়েতে পরিণত হয়ে গেছে!
‘তবে এখনো এ-টু সিটে বসে আছো কি মনে করে?’
হ্যা! তাইতো, বাবার অপছন্দের মেয়েটির পাশে কেনো বসে থাকা? বাবা নেই। স্মৃতি আছে। আছে বাবার পছন্দ-অপছন্দের বিষয়। সিগ্রেট ছেড়েছে, টুকটাক নেশা করতো বাদ দিয়েছে, আড্ডা ছাড়া পেটের ভাত হজম হতো না-বাদ দিয়েছে।
আজ দেড় দশক পরে একদার সেই মেয়েটির পাশের সিটে বসে নস্টালজিক কিছু মুহূর্তকে কেন তবে উপভোগ করা।
পাশের রমনীর চোখে চিনতে পারার দৃষ্টি ফুটে উঠতেই তা নিমিষে বিস্ময়ে পরিণত হয় শিহাবের পরবর্তী কর্মকাণ্ডে। বাস ছেড়ে দিয়েছে। লাফ দিয়ে উঠে শিহাব ড্রাইভারকে বাস থামাতে বলে। বাস থামে। শিহাব সুপারভাইজারের সামনে এ-টু সিটের টিকেটটি ছিড়ে ফেলে বলে,
– আমি নেমে যাচ্ছি। তুমি পথের থেকে কাউকে নিয়ে বসিয়ে দিও না। ঢাকা পর্যন্ত এই সিটটা না হয় খালিই যাক?
প্রচন্ড বৃষ্টির ভিতরে শিহাব মাথা উঁচু করে পিছনে বাস কাউন্টারের দিকে এগিয়ে চলে। ঝাপসা জানালা দিয়ে এক জোড়া বিস্মিত চোখের দৃষ্টি ম্লান হতে হতে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে পড়ে! দেখা হয়না শিহাবের।
বাবা চলে গিয়ে বাবার পছন্দ-অপছন্দ বড্ড তীব্রভাবে ‘রিয়্যাক্ট’ করাচ্ছে শিহাবকে! বাবা যদি দেখে যেতে পারতেন!
একজন শিহাব প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝে পিচঢালা পথ ধরে যেতে যেতে কিছু যদি এবং কিন্তুর হিসেব মিলায়।
হিসেব মিলে কি?
____________________
#অণুগল্প_২৮২_হারানো_সুর।
প্রথমত : অকালপ্রয়াত আপনার বাবার বিদেহী আত্মার প্রতি যথাযোগ্য সম্মান।
দ্বিতীয়ত : আপনার রক্তে মিশে আছে লিখা। সৃষ্টির এই উন্মাদনা অকালে ঝরে যাক আমরা কেউই তা চাই না। আপনি যেমন লিখছিলেন … সেভাবেই লিখা চালিয়ে নিন। আমাদের সমবেদনা এবং ভালোবাসা আপনার সাথে থাকবে মি. মামুন।
অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানবেন প্রিয় ভাইয়া।
হ্যা, লেখা চালিয়ে যাবো ইনশা আল্লাহ। আমার ভিতরে আমার আব্বা বেচে থাকবেন।
সবাই ভালো থাকুন।
আপনার বাবার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
.
লিখুন, লিখতে থাকুন। আর আমরা পাঠক পড়তে থাকি।
আপনার মরহুম আব্বার মাগফেরাত কামনা করি। মহান আল্লাহ রাহমানুর রাহীম উনাকে জান্নাতবাসী করুন, এই প্রার্থনা।
নিয়মিত লিখুন, আমরাও নিয়মিত রসাস্বাদন করে যাব।
শুভেচ্ছা মহ. আল মামুন ভাই।
ভালো থাকবেন মামুন ভাই এই প্রত্যাশা।
শুভেচ্ছা গল্পকার মামুন ভাই।
গল্পটি পড়লাম প্রিয় গল্প দা।
এটা কি সত্য ঘটনা? উপরের মন্তব্য পড়ে কিছুটা কনফিউজড আমি। রবী ঠাকুরের কবিতা রেল গাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা পড়েছেন? আমার খুব প্রিয় কবিতা!
ভাল থাকুন।
মন ছুইয়ে গেলো লিখাটি।
শ্রদ্ধাও ভালবাসা রইলো
আল্লাহ আপনার বাবাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন।