স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক)- ১০ম পর্ব
জগাই – না না, পালালে আর ধরাবো কেন? ভয় নেই পালাবো না। আচ্ছা একটা কথা বলবেন দাদা! থানা কি সেই আগের মতোই সেই রকমই আছে?
কনস্টেবল – আগের মত মানে? কি রকম ছিল আগে?
জগাই – হে হে… সে আরেক গপ্পো দাদা। বছর পাঁচেক আগে ডিমের গুমটি বন্ধ করে দুপুরে বাড়ী ফিরছি। হঠাৎ ছ্যাড়াৎ করে একতাল কাদা আমার বুকে মুখে এসে ধেবড়ে গেল। চেয়ে দেখলুম এক ব্যাটা কোটির গাড়ী হাঁকিয়ে যাচ্ছে। সারা গায়ে পেন্টিং নিয়ে রে রে করে তেড়ে গেলুম। পালাতে গিয়ে ব্যাটা কাদায় গেল ফেঁসে। আর নামতে গিয়ে এক ব্যাটা ব্র্যান্ডেড মাল কাদায় পা হড়কে হড়াৎ করে চিৎপটাং। হিহিহি…সে কি দৃশ্য! কিন্তু বলব কি মশাই, থানায় গিয়ে সেই সেই ব্র্যান্ডেড মালটা উলটে আমার নামে কম্পেলেন করল, আর পুলিশও চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই চোঁওওওও করে আমায় ধরে নে গেল!
কনস্টেবল – ও! থানায় ঢোকা ওব্যেস আচে তাহলে?
জগাই – ওব্যেস কোতায়! সেই প্রথম। হেঁ হেঁ… বললো খাঁচা খোলা আছে। ঢুকে পড়।
কনস্টেবল – হুম লকআপ।
জগাই – হ্যাঁ সরকারি খাতায় তাই বলে। ভেতরে ঢুকে দেখি অন্ধকার, দুর্গন্ধ। তারমধ্যে গোটা পাঁচেক ত্যাড়াব্যাঁকা লোক বসে আছে। ভেতরে মেঝেতে একপাশে জল জমে আছে। একটা ষন্ডা মতো লোক ভুরু কুঁচকে আমাকে দেখছিল। মুলোর মত দাঁত বার করে বলল, রাতে আমরা সবাই হিসি করেছি, তারই জল। খারাপ কিছু নয়। চলে এসো দাদা! তারপর দেখি সারারাত ধরে একবার করে ফোন বাজে, আর একজন করে ছাড়া পায়, একবার করে ফোন বাজে আর একজন করে ছাড়া পায়। পাঁচবার ফোন পাঁচজন খালাস। হে হে… ওদের সব মাথারা মানে ওই হলুদ-বেগনী-কালো পার্টির দাদাদের এক এক মোক্ষম ফোনে সব বেকসুর খালাস। তা দাদা, থানা কি এখনো সেরকমই আছে?
কনস্টেবল – হ্যাঁ, তাতে কি হলো? তোমারও কোনো দাদা কিম্বা দিদি ফিট করা আছে নাকি?
জগাই – না না, দাদা দিদিরা আমাদের মত ফেকলুকে পাত্তা দেবে নাকি? ওই ভোটের সময়েই যেটুকু দেয়। তারপরে তো হ্যাট হ্যাট ভ্যাট ভ্যাট…
কনস্টেবল – তাহলে? থানা নিয়ে এত তদন্তে কি দরকার হে চাঁদ?
জগাই – কিন্তু ও যে নরক!
কনস্টেবল – তা তোমার জন্যে কি থানায় স্বর্গ বানিয়ে রাখতে হবে নাকি হে? অপ্সরারা নাচবে?
জগাই – ধুসসস… আমাদের লাইফে আবার অপ্সরা! হেঃ! অপ্সরা তো ওই ব্র্যান্ডেড মালদের সম্পত্তি। সেজন্যে নয়। কিন্তু ওই বিচ্ছিরি গন্ধে যে আমার বমি হয়ে যাবে!
কনস্টেবল – উঠে এলে করবে। ওরা হিসি করলে তুমিও বমি করবে। নাও, অনেক হল, এবার চল।
জগাই – হাহাহাহা… একটু আগে আপনি বলছিলেন, এখন ধরার পরে তুমি! বেশ-বেশ, ভালোই। আমরা আবার মানুষ! তার আবার আপনি আর তুমি! সে যাকগে, আচ্ছা আমার অপরাধটা কি জানতে পারলে ভালো হত না?
কনস্টেবল – সেটা কাল কোর্টে গিয়েই জানতে পারবে। এত ইংরেজী পড়তে পারলে আমি কবেই সার্কেল সাহেব হয়ে যেতাম। নাও, এখন চল তো! চল-চল…! অনেক দেরী হয়ে গেল। ঘুন্টি আবার অপেক্ষা করছে। তোমাকে লকআপে ঢুকিয়েই তার মানভঞ্জনে দৌড়তে হবে।
জগাই – ঘুন্টি আবার কে?
কনস্টেবল – (সচকিত হয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে নিজেকে সামলে নেয়) না কেউ না। নিজের ডিমে তেল দাও। চল এবার।
জগাই – আচ্ছা চলুন। মা! আমি চল্লুম গো! বাইরে বাটি পড়ে রইলো। (গেয়ে ওঠে) একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি…
(মঞ্চে একটি Zone আলোর বৃত্তে কনস্টেবল ও জগাই হাঁটতে থাকে। আলো ধীরে ধীরে নেভে। একই সঙ্গে মঞ্চের অন্যপ্রান্তে জগাইয়ের বাড়ীর ভেতর থেকে তার মা বেরিয়ে আসেন। আলাদা Zone এ আলোর বৃত্ত। মা জগাইয়ের যাওয়ার রাস্তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আঁচল দিয়ে চোখের জল
মোছেন। তারপর দু হাত জোড় করে কপালে ঠেকান। আলো নেভে।)
(চলবে)
চোখমুঁদে দর্শক হয়ে আছি প্রিয় কবি সৌমিত্র। শুভ সকাল।