আমিন, ভুল জায়গায় ভুল বাক্য ব্যবহার করে যেভাবে নিজেদের বিপদ বাড়াচ্ছি

প্রসঙ্গ – আমিন, ভুল জায়গায় ভুল বাক্য ব্যবহার করে যেভাবে নিজেদের বিপদ বাড়াচ্ছি।

‘আমিন’ এটি একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ।
আমরা প্রতিদিনই শব্দ টি উচ্চারণ করছি, বলছি বা লিখছি। তবু আজ ‘আমিন’ প্রসঙ্গে লিখতে হচ্ছে কারণ বেশ কিছু দিন থেকে প্রসঙ্গটা আমাকে ভাবাচ্ছে। কারণ বর্তমান ভার্চুয়াল সময়ে আমরা কম বেশী প্রায় সবাই ইন্টারনেট/ ফেসবুক ব্যবহার করেন। আর এসব মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তের খবরা খবর পাই, খবর পড়ে বা যে কোন ঘটনা পড়ে মন্তব্য করছি- এই যে মন্তব্য করছি, একটা কথা লিখছি বা একটা শব্দ ব্যবহার করছি। এর গুরুত্ব কিন্তু অনেক। মন্তব্য বা বাক্য এমনিতে বিষয়ের উপর প্রভাব ফেলে, কারণ শব্দের একটি শক্তি আছে- যাই হোক মূল প্রসঙ্গে আসি-

কথা বলছি ‘ আমিন’ বলা নিয়ে। কেন আমরা আমিন বলবো, কখন বলবো?
আমিন শব্দ টির এসেছে ‘আমেন’ থেকে আমেন (Ameen) একটি হিব্রু শব্দ। এর অর্থ – ‘so be it’ অর্থাৎ ‘এমনটাই হোক’। ইহুদী ও খৃস্টানরা একে প্রার্থনা বা প্রভুর গুণগানের পরেই বলে থাকে। মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তারের সাথে সাথে বিজিত রাষ্ট্রগুলোর ইহুদী ও খৃষ্টানরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে, সেই সাথে তাদের অনেক রীতি নীতি ইসলামে প্রবেশ করে। ফলে মুসলমানেরাও যখন আল্লাহর নিকট কোন প্রার্থনা করে, মঙ্গল কামনা করে বা দোয়া করে তখন যিনি মোনাজাত করছেন তার সাথে সাথে অন্যরাও আমিন বলে সম্মতি জানান। তার মানে আমিন অর্থ হচ্ছে – সম্মতি দেয়া, একমত হওয়া বা কবুল করা।

যদিও কোরানের কোথাও এই শব্দটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে আল্লাহর কোরানে ‘আমিন’ শব্দটি না থাকার পরেও আজকের মুসলমানরা ‘আমিন’ শব্দটিকে কেন এত গুরুত্ব দেয়?
হ্যাঁ এর নির্দেশনা এসেছে হাদিস থেকে।
আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন যে রাসুল (সা) ইরশাদ করেন যে,- ইমাম যখন আমীন বলবে তোমরাও তখন আমীন বলবে। কারণ ফেরেশতাগণের আমীন বলার সাথে যার আমীন বলা হবে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে।
ইমাম তিরমিযী (রহ) বলেন, আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদিসটি হাসান ও সহীহ।

এখন আমরা যদি সড়ক দুর্ঘটনার কোন খবরের নিচে ‘আমিন’ আমিন’ লিখে মন্তব্য করি, অথবা কোন দুঃসংবাদ শুনে যদি আমিন আমিন বলে থাকি তাহলে অর্থ টা কি দাঁড়াচ্ছে?
দুর্ঘটনা টি বা দুঃসংবাদ টি কে আপনি সমর্থন করছেন, এবং আরো হবার জন্য দোয়া করছেন। আমরা আমাদের প্রতি ওয়াক্ত নামাজে ইমাম সাহেব যখন সুরা ফাতেহা পাঠ করেন তখন আমরা মনে মনে বা শব্দ করে আমিন বলি। কারণ সুরা ফাতেহা একটি সম্পূর্ণ দোয়া যার পরে আমরা আমিন বলে তা কবুল হোক বলে সম্মতি বা আবেদন জানাই।

এক কথায় আমিন মানে ‘(আল্লাহ) আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন’।

হিব্রু শব্দ আমেন “আরবি শব্দে ‘আমিন’ এর আরো কয়েকটি অর্থ আছে। যেমন- নিরাপদ, (কারো কাছে কিছু রাখলে, সেটাকে আমানত বলে) তারপর ‘বিশ্বস্ততা’ (কোনো ব্যক্তিকে বিশ্বাস করা) ও কবুল করা ( আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা)
যেমন রাসুল সা: কে বলা হতো আল-আমিন তথা একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি!

সুতরাং ভুল জায়গায় ভুল করলে যেমন ভুল ফলাফল দাঁড়ায়, তেমন দুঃসংবাদ বা খারাপ খবরে ‘আমিন’ লিখলে বা বললে এর ফলাফলও খারাপ হতে পারে বা হয়ে থাকে। আশা করি বিষয় টি সবার বোধগম্য হবে।

দাউদুল ইসলাম সম্পর্কে

সব সময় নিজেকে বলি- মানুষ হবি যদি- অন্ধকার ঘরে যখন একা থাকবি তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করে নিস তুই কতটা মানুষ। কতটা তোর সভ্যতা কতটা তোর ভদ্রতা! স্নান ঘরে যখন একা শাওয়ারের নিচে দাঁড়াস- তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করিস কত টা আছে তোর মনুষত্বের রুচি! জিজ্ঞেস করিস কতটা তুই ভদ্র, সভ্য!

4 thoughts on “আমিন, ভুল জায়গায় ভুল বাক্য ব্যবহার করে যেভাবে নিজেদের বিপদ বাড়াচ্ছি

  1. পূর্ণ সহমত স্যার। "ভুল জায়গায় ভুল করলে যেমন ভুল ফলাফল দাঁড়ায়, তেমন দুঃসংবাদ বা খারাপ খবরে ‘আমিন’ লিখলে বা বললে এর ফলাফলও খারাপ হতে পারে বা হয়ে থাকে।" __ আমাদের সচেতনতা বাড়াতে আপনার পোস্ট নিঃসন্দেহে অতূলনীয়। সালাম।

  2. ঠিক বলেছেন। গুরুত্বপূর্ণ যে কোন শব্দ ব্যবহারে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। পাছে অপব্যবহার না হয়। ভুল না হয়।

  3. চমৎকার লিখেছেন।
    এমন আরকেটি ভুল ব্যবহার আছে আলহামদুলিল্লাহ এবং ইনশাআল্লাহ নিয়ে। কোনটা কুন যায়গায় ব্যবহার হবে সেটা আমরা ঠিক ভাবে লখ্য না করেই বলে ফেলি। এই দুইয়ের ব্যহারের খব সহজ একটা সূত্র আছে।
    যা হয় গেছে এমন কারণে বলতে হবে – আলহামদুলিল্লাহ।
    যা আগামীতে হবে এমন কারণে বলতে হবে – ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।