অণুগল্প : আগুনরাংগা ফাগুনবউ

এক আগুনরাংগা ফাগুনবউয়ের গল্প কি বলেছিলাম কাউকে? যদি না বলে থাকি শুনুন তবে আজ।

কলেজ জীবনে প্রথম পরিচয়… মাঝখানে কয়েক দশক পার হয়ে সেই কলেজেরই সুবর্ণ জয়ন্তীতে আবার দেখা হলো তার সাথে। শেষ দেখা… আমার কোনো একসময়ের ‘আগুনরাংগা ফাগুনবউয়ের’ সাথে।

আগুনরাংগা এজন্যই সে এতটা ফর্সা, সুন্দর এবং কমনীয় মুখশ্রীর ছিলো যে ওকে এই বিশেষন দিতেই হয়েছিলো আমায়। ‘ফর্সা’ শব্দটি ব্যবহার করায় ‘কালো’ মেয়েরা আমাকে বর্ণবাদী ভেবে বসো না আবার। রঙ এ আমার কোনো এলার্জি নেই। এক ফাগুনের প্রথম দিনে কলেজেরই এক অনুষ্ঠানে প্রথম দেখা এবং কথা হয়েছিলো। অন্য এক শহর থেকে মাইগ্রেশন করে আমাদের কলেজে সেশনের মাঝামাঝি সময়ে এসেছিলো সে। সেজন্যই ফাগুন শব্দটিও ব্যবহার করি। আর বউ? প্রথম দেখায় মনে হয়েছিলো বউ হিসেবে এই মেয়েটিকেই চাই আমি। আর কেমন বউ বউ একটা ‘লুক’ ছিলো ওর ভিতরে!

কিন্তু সে শেষ পর্যন্ত কি হলো আমার এটাই জানতে চাইছেন কি? আমি কিছুই হতে পারিনি তার। সর্বমোট সাড়ে চারশো’ দিন একসাথে কাটানোর পর, পায়ে পায়ে হারানো এক জীবন অন্য কোনো হাত ধরে, অনির্দিষ্টি ভালোবাসায় পথ খুঁজে নিয়েছিলো! কেনো? আজো ভাবি, নিজেই উত্তর পাইনা, হিসেব মেলাতে পারিনা, আপনাদেরকে কি বলবো?

এক জীবনে সব হিসেব কি আপনাদেরও মিলেছে?

যাইহোক, কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সে এলো, একা। ওর বার্গান্ডি রঙের চুল ঢেকে রাখতে পারেনি তার বেলা অবেলার সাঁঝবেলা। আর তার অধরের শুকনো হাসিও লুকোতে পারেনি, আমার বিষন্ন দিনগুলোতে মেতেছিলো সে আমার হৃদয় নিয়ে যে মরণখেলায়?

আশাহীন এক হৃদিভেলায় আমাকে বসিয়ে দিয়ে সে,
সেই যে চলে গেলো হাতে তুলে দিয়ে এক প্যান্ডোরার বাক্স! তার না থাকার সেই দিনগুলোতে, নিরাশার কালো মেঘে ঢেকে গেছি, তবুও সাহস হয়নি কখনো ঐ বাক্সের ডালা খুলে লুট করি কিছু আশা!

তখন ভালোবাসাই মেতে ছিল নিরাশার পরকিয়ায়…

আর আমি? অসহ্য যন্ত্রনায় পার করেছি কত দিনরাত্রি, বিষন্ন নিঃসঙ্গ প্রহর! আর ওদিকে সে আর তার নতুন ভালোবাসার মানুষ- দু’জনে হাত ধরাধরি করে
সবুজ ঘাসের বুক থেকে খুঁজে ফিরেছে প্রথম সুর্যকিরণে উচ্ছ্বসিত শিশির বিন্দু !

এদিকে আমি আষাঢ়ের প্রথম বারিধারায় সিক্ত হৃদয় শুকিয়েছি না পাওয়ার তপ্ত সাহারায়! ওদিকে, প্রতিটি বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল খোঁপায় গুঁজে সে মজেছে অন্য কারও কামনার বিন্দু বিন্দু সিন্ধুজলে!

সময়ের উত্থিত শিশ্ন নুয়ে পড়ে অবধারিত বীর্যপাতে
থেকে থেকে কেঁপেছে শুধু, হয়নি ভালোবাসার কোমল শিশুর জন্ম! তুমিহীন আমি আর আমিহীন তুমি- কেঁদে ফিরেছে বিষন্ন মেঘবালিকার তুলির আচরে!

এক লোলচর্মসর্বস্ব অপরিণত ভালোবাসা ধারণকারী সেই আমার একসময়ের ‘আগুনরাংগা ফাগুনবউ’, সেদিন কলেজের সুবর্ণজয়ন্তীতে, আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ম্লান দৃষ্টির সহস্র পর্দা ভেদ করে জানতে চায়, ‘কেমন আছ তুমি?’

প্রেমের যবনিকা ঘটিয়ে হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাসে মুখরিত এক শান্ত সরোবর থেকে, যে মেয়েটি নিজ হাতে উপড়ে এনেছিলো হৃদয়ের নীল পদ্ম! ভালোবাসা চুর চুর হয়ে ঝরে পড়ছিলো সেদিন..

দুই দশক পার করা সেই বার্গান্ডি চুলের মহিলার নীলাভ লেন্সে ধরা পড়ে না আজ, আমার দৃষ্টির অদৃশ্য লোনা জলের শুকনো ধারা!

পাকা অভিনেতা হয়ে বলি, ‘ প্রিয় ফাগুনবউ! এই তো… বেশ আছি।’

#আগুনরাংগা_ফাগুনবউ_অণুগল্প_৪৩৭
——————————————————
ফটো ক্রেডিটঃ ভালবাসার কবিতা

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

8 thoughts on “অণুগল্প : আগুনরাংগা ফাগুনবউ

  1. দুই দশক পার করা সেই বার্গান্ডি চুলের মহিলার নীলাভ লেন্সে ধরা পড়ে না আজ, আমার দৃষ্টির অদৃশ্য লোনা জলের শুকনো ধারা!

    পাকা অভিনেতা হয়ে বলি, ‘ প্রিয় ফাগুনবউ! এই তো… বেশ আছি।’

     

    * মামুন ভাই: great job. Go ahead.

    শুভ কামনা নিরন্তর। 

    1.  ধন্যবাদ প্রিয় দিলওয়ার হুসাইন ভাই আমাকে প্রেরণা দেবার জন্য।

      শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা রইলো…https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  2. অসাধারণ ফুটিয়ে তুলেছেন অণুগল্পটিকে। একবার পড়া শুরু হলে শেষ করে উপায় নেই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া।

      ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা গ্রহন করুন।

      https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  3. প্রিয় লেখক মানুন ভাই, আপনার ঘটনার সাথে হয়তো অনেকেরই মিলে যাবে।

    আমিও একবার প্রেমের বিরহ যন্ত্রনায় পড়েছিলাম।

    অসুখ হয়েছিলো তাই ছ্যাকামাইসিন খেয়েছিলাম হা হা!!!https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. প্রিয় ইলহাম ভাই, গল্পটি প্রথম পুরুষে লেখা হয়েছে বর্ণনার সুবিধার্থে। আমার কলেজ জীবন কেটেছে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে করে, অস্ত্র আর গন্ডগোল এর অবসরে আমার জীবনে প্রেম আসেনি কখনো- আগুনরাংগা কোনো ফাগুনবউ আমার জন্য ছিলো না, গল্পকারের কল্পনায় চরিত্রটি তৈরি হয়েছে গত রাতে।

       

      আপনার ঘটনা শুনে (ছ্যাকামাইসিন) যারপরনাই দুঃখ পেলাম

      শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য। ভালো থাকুন সবসময়।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif    

    1. ধন্যবাদ প্রিয় রিয়া দিদি।

      শুভেচ্ছা সবসময়ের জন্য…https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।