সেদিন বাড়ির বউটি নবানেরপুজো- আচ্চা- সেরে, ঘর- বর, ছেলে-পুলে, অতিথ্- পথিত্, পাখ- পাখালি সক্কলকে নবান্ নিবেদন করে পুকুরঘাটে জলকে – মাছকেও তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়ে এলো। মহানন্দে চিংড়িরানী পদ্মপাতায় হায় করে বসে মিষ্টি রোদে চুল শুকুতে শুকুতে নবান মুখে তুলতে যাবে, আর ওমনি যমকাক ওপোর থেকে হাঁক পাড়লো : ওলো, তোরে খাই।
এমনিতে চিংড়ির ভয় পেয়ে পদ্মপাতার তলায় লুকিয়ে পড়বার কথা। কিন্তু ভয়তো নয়, রাগ হলো ভীষন।
— হারামজাদা, তুই খাবি তো খাবি। কিন্তু ‘লো’ কেন বললি??
মূহুর্তের মধ্যে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে সাঁতরে চললো মাইলে র পর মাইল। যার তার কাছেতো আর সে প্রতিকার চাইতে পারেনা। একমাত্র ইলিশই তার সমগোত্রীয়। তার কাছে পৌঁছতে পৌঁছতে দিন তো কাবার। মাঝরাতে গিয়ে সে কড়া নাড়লো,
— ইলিশভাই, ইলিশভাই ঘরে?
— এতো রেতে কে বা ডাকাডাকি করে?
—আমি চিংড়ি রানী…
— দাও বোনকে পিঁড়ি পানী…
তারপর যথাবিহিত সম্মান সহকারে ইলিশ জানলো, তাকে সাহায্য করতে পারলে তো সে ধন্যই হতো। তবে কিনা এতোটা রাত… আর পথও অনেক। তুমি বোন রুই য়ের কাছে যাও। সে তোমার প্রতিবেশি।
মনঃক্ষুন্ন চিংড়ি ওই রাতে আবার উজিয়ে গেল মাছের সেরা রুইয়ের কাছে, :
—রুই দাদা, রুই দাদা ঘরে?
— এতো রেতে কে বা ডাকাডাকি করে?
— আমি চিংড়ি রানি….
— দাও বোনকে পিঁড়ি পানি…
খাতিরদানির পর রুই জানালো, :
—তোমাকে সাহায্য করতে পারলে তো বর্তে যেতাম। তবে বুঝছোই তো, বেপাড়ার কেস। তুমি বরং তোমার পাড়ার কই, মাগুরকে বলো…
ক্রমে ক্রমে কই,মাগুর, ল্যাঠা, চ্যাং, ছিমুরি ইত্যকার যতরকম মাছ সবার কাছেই চিংড়ি তার অপমানের বিহিত চাইতে যায়, আর অভিন্ন উপদেশ শুনে শুনে যখন হতাশ, কাঁকড়া তখন এগিয়ে এলো, :
—কাককে শাস্তি দিতে হবে তো! ও আর এমনকি বেশি কথা। তুমি বোন এক কাজ করো দিকি। দু পয়সার মুড়ি কিনে আমার গর্তের চারপাশে ছড়িয়ে দাও। তারপর পদ্মপাতার আড়ালে গিয়ে গা ঢাকা দাও। দ্যাখো কি হয়!
শোনামাত্র চিংড়ি কাজ করে ফেললো।
খানিক পর কাক ছড়ানো মুড়ি দেখতে পেয়ে খুঁটে খুঁটে খেতে লাগলো। অনবধায় একটা সময় কাঁকড়ার গর্তে পা পড়তেই, কাঁকড়া মরন কামড় বসালো পায়ে। কাক না পারে নড়তে, না পারে উড়তে। আর চিংড়ির উল্লাস দ্যাখে কে! সে নাচতে নাচতে হাত তালি দিয়ে গাইতে লাগলো:
আমার সকল দাদায় হারলো,
কেবল কাঁকড়া দাদায় জিতলো।
কাকের কানে এই গান যেতেই, শক্ত হলো ঘাড়। সে তার তীক্ষ্ণ চঞ্চু জোড়া গর্তে প্রবেশ করিয়ে এক ঠোকরে কাঁকড়ার পেট ফুঁটো করে তাকে তুলে নিয়ে ডানা মেলে দিল আকাশে।
(লোকগল্প)
খুবই সরস একটি লিখা বলার অপেক্ষা রাখেনা। শেষে পাঠকের জন্য বোধকরি একটি শিক্ষণীয় প্রশ্নও রেখেছিলেন … এখান থেকে শেখার মতো কি পেলাম এই জাতিয়। আপনার কাছেই জানতে চাইছি বন্ধু। কি উত্তর দেবেন বন্ধু। কি বুঝবো ?
ধন্যবাদ আপনাকে।
মরাল অনেকগুলো হতে পারে :
১। বড়োর পিরীতি বালির বাঁধ
২। আগে যথেষ্ট ভেবে তবেই কাজে ঝাঁপানো উচিত।
৩। বোকা বন্ধুর চেয়ে বুদ্ধিমান শত্রু শ্রেয়।
এমন আরো কয়েকটি হয়। আপনারা দিন, অনুরোধ।
৩। বোকা বন্ধুর চেয়ে বুদ্ধিমান শত্রু শ্রেয়।
খুবই শিক্ষণীয় একটি পোষ্ট। লোকগল্প হলেও উপকার করলে যে ক্ষতিও হতে পারে তাই উপকার করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়তো ভেবে দ্যাখার আছে বলেই মনে হচ্ছে।
শুভেচ্ছা প্রিয় রত্না দিদি

ধন্যবাদ।
ঠিকই বলেছেন। উপকার করা খুবই ভাল। তবে তার আগে যথেষ্ট বিচক্ষণতার সঙ্গে পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।
উত্তর তো একটা থাকবেই তবে আপনার উপস্থাপনা আমাকে মুগ্ধ করেছে দিদি ভাই। অনেক ভাল থাকুন।
ভালবাসা অনেক।