বিস্মিত বাঙাল: চুমো কি খায়!
চারপাশের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে চুমু যে একটা খাবার জিনিস- এটা জাতি প্রথম জানলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, কলাভবন, কার্জন হল, এনেক্স বিল্ডিং, লেকচার থিয়েটার- এর চিপাচাপায় এবং লম্বা করিডোরে নির্জন সময়ে চুমু খাওয়া আর আক্ষরিক অর্থেই ‘লদকালদকি’র জন্য বিশেষায়িত স্পট আছে, এবং তা ওপেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষায়িত এসব স্পট অনেকেই এড়িয়ে চলেন, অনেকে মজা নিতে ঢু মারেন, আর বাকীরা তা ব্যবহার করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সব ঐতিহ্যের মত এ বিশেষায়িত স্পটের ঐতিহ্যও প্রাচীন। টিএসসি’র বাউন্ডারি ওয়ালের বাইরের ফুটপাতে বসে প্রকাশ্যে চুম্বনরত জুটির একটি ছবি সম্প্রতি ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সবার প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে- এ যেনো তাদের চিন্তার বাইরে ছিলো। এর আগে জাতি যেনো জানতোই না চুমু কি! এরা এটাও প্রবলভাবে বিশ্বাস করতো যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চুমু খায় না। হায়রে বিস্ময়গ্রস্থ বাঙালি, এরা সবকিছু জানার পরেও এমন একটা ভাব ধরে থাকে, যে মনে হয় এইমাত্র আকাশ থেকে পড়লো।
টিএসসি’র যে পাশের রাস্তায় বসে যুবক-যুবতী চুমু খাচ্ছেন, তার প্রায় একশো গজের মধ্যে ছবিরহাট। এটাও এক টুকরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারের অংশ। ঢাকা শহরের একমাত্র স্বীকৃত ওপেন এয়ার গাঁজা খাবার স্পট। প্রতিদিন ছবির হাট মুখরিত হয়ে ওঠে মহান সৃজনশীল কবি, লেখক, চলচ্চিত্রকার, শিল্পীসহ উদীয়মান বুদ্ধিজীবীদের পদচারণায়। তারা এখানে এসে নিজ নিজ গ্রুপ ও ভক্তদের সাথে গাঁজা টানেন, জ্ঞানে টইটুম্বুর আলোচনা করেন। এসব জ্ঞানগর্ভ আলোচনার ৪০% জুড়ে থাকে কিভাবে প্রতিপক্ষ বিদ্বানের ফুটোয় আঙুল চালিয়েছেন তার স্মৃতি রোমন্থন, অবশিষ্ট ৬০% জুড়ে থাকে আত্মঅহমিকা ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার ভবিষ্যত পরিকল্পনা।
ছবির হাটের একেকজন জ্ঞানী লোক যেনো আদ্যন্ত ৪০-৬০ মিশেলের কটন স্যান্ডো গেঞ্জি। এই স্যান্ডো গেঞ্জির বুনট জুড়েও অবাধ যৌনতা- কে কবে কাকে নিয়ে বিছানায় গিয়েছেন, কে কবে কাকে নিয়ে যাবেন, কত খরচে কাকে নিয়ে মাস্তি করা যাবে- আহারে সৃজনশীলতা! এখানেই শেষ নয়, ছবির হাটেও দিনদুপুরে প্রকাশ্যে চুমাচাট্টি আছে, সন্ধ্যার আবছায়ায় আছে আরও বেশী কিছু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’তে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার ফটোগ্রাফ দেখে উত্তেজিত হবার কোনো কারণ দেখিনা, এটা বাস্তবতা। আওয়াজ যদি তুলতেই হয় তবে আওয়াজ তুলেন – দুনিয়ার প্রথম ৫০০ ভার্সিটির তালিকায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নাই কেনো! ৩৮টাকার খাবার আর ১৫টাকার সিট ভাড়ায় থেকে একজন শিক্ষার্থী সুস্থভাবে পড়ালেখা করতে পারেন কি! গবেষণায় বরাদ্ধ বাড়বে কবে!! দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে করেও বেকার থাকার দিন শেষ হবে কবে! নীল-শাদা-গোলাপির রাজনীতি অপেক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কবে শিক্ষাদানে অধিক মনোযোগী হবেন! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবে মেরুদণ্ডসমেত একজন ভিসি পাবে! – এসব আওয়াজ তুলতে না পারলে চুপ থাকেন, অথবা আপনিও চুমো খান- প্রকাশ্যে, যত্রতত্র। তাতে কারো কিছু যায় আসেনা, যায় আসেনি।
ওভার এন্ড আউট।
চুমু যে একটা খাবার জিনিস– এটা জাতি প্রথম জানলো। দুঃশ্চিন্তার বিষয়।
কী কথা !! বাঙ্গালী তাহলে চুমু খেতে জানে না !!! ছবিতে তো অসম্ভব কিছু মনে হয়নি।
"৩৮টাকার খাবার আর ১৫টাকার সিট ভাড়ায় থেকে একজন শিক্ষার্থী সুস্থভাবে পড়ালেখা করতে পারেন কি"
দারুণ লিখেছেন প্রিয় লেখক সাইদ ভাই
প্রকাশ্যে চুমুখাওয়া আদতে ভালো কিছু না, তবে এরচেয়ে হাজার গুণ খারাপ কাজ হচ্ছে আমাদের চোখের সামনে, সেদিকে আমাদের মনোযোগ যায় না।
নচিকাতার একটি গানের কথা মনে হয়ে গেলো।