নিজস্ব কারাবাস

নিজস্ব কারাবাস

রঙচড়া মেকাপের আড়ালে অশ্রুভেজা চোখ আরশীতে দেখতে দেখতে
একদিন ক্লান্ত হয়ে নিজেই বেরিয়ে পড়লাম সত্য সুখের সন্ধানে;
সুখ ! এ এক মরিচীকাসদৃশ শব্দ।
কেউ তার সন্ধান পায় মার্শিডিজ হাঁকিয়ে,
কেউবা পায় অট্টালিকায় ঘুমিয়ে।

আমার মতোন নগন্য মধ্যবিত্ত সুখ পেতে হাজির হয়;
দু’বাহু বাড়িয়ে কেবল প্রকৃতির কাছ।
আহা ! বিধাতা …
কী অপরূপ সাজে সাজিয়েছো তুমি ধরণী,
আমার হাজার টাকার রেভলন,
ডোভের মিষ্টি সুবাস আর জেসমিনের ঠাণ্ডা পরশ
হার মেনে গেল নিমিষে।

আমি যদি পাখি হতে পারতাম;
তবে উড়ে বেড়াতাম ভূমধ্যসাগরের নীল ছুঁয়ে।
যদি মেঘ হতে পারতাম;
তবে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরতাম নায়াগ্রার জলে।

আমি নারী হয়ে জন্মেছি,
বছরের তিনশত পয়ষট্টি দিন আমাকে কড়ায় গণ্ডায়
হিসেব করে রাখতে হয়।
দাঁড়িপাল্লার এক পাশ যদি একটু ভারি ঠেকে
তবে তীব্রবানে জবাব চায় কৈফিয়ত।

ছোট বেলায় পিতা, আর বড় বেলায় স্বামী,
আর ও দু’টো পথ যারা মাড়িয়ে এসেছে তাদের জন্যে
সমাজ পতিরা খুব মুখিয়ে থাকেন।
আমি যতোই নিজের খাই, নিজের পরি;
কোন এক অজ্ঞাত কারণে আমি অন্যের কাছে জিম্মি।

মুক্ত বলে আদৌ কি কোন শব্দ আছে অভিধানে ?
আদতে খাঁচার পাখিকে তুমি যতোই বলে দাও উড়াল দিতে,
বেলা শেষে সে ঠিকঠিক নিড়ে ফিরতে চায়
যতোই সেখানে শেকল পড়ানো থাক।
এ হলো অভ্যাস;
নারীরা জন্মের পর থেকে এক অদৃশ্য মায়ায় নিজেকে বেঁধে ফেলেছে।
সে মায়া সংসারের।

কেউ হয়তো ছুটে যেতে পারে আবার কেউ কেউ চেষ্টা করে মাত্র;
কিন্তু বেলা শেষে দু’পা সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলে – নাও, শেকল পরাও।
প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করা আর হয়ে ওঠে না …
নিজস্ব কারাবাসেই লিখে যেতে চায় তার আপন পরিচয়।

8 thoughts on “নিজস্ব কারাবাস

  1. আমরা প্রত্যেকেই আমাদের নিজস্ব বৃত্তের কারাকক্ষে … স্বেচ্ছা অথবা অনিচ্ছায়; জীবনের কোন না কোন অধ্যায়ে এসে অবস্থান নেই অথবা নিতে হয়। এই একাকীত্ব আমি কখনও উপভোগ করি কখনও শাসকের শোষণ পদ্ধতির অংশবিশেষ মনে করি। ____ স্বাভাবিক জীবন চরিতে এও এক সনাতন অংক। এই ই জীবন। মানতে হবে বা মেনে নিতে হয়। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. সত্যিইতো আমরা কোথাও না কোথাও নিজেদের তোইরি করা কারাবাসে আটকে আছি যুগের পর যুগ।

      সবটা হয়ো মেনে নেওয়া কঠিন তবু মেনে নিতে হয় ।ধন্যবাদ ভাইয়া ।

  2. মুক্ত বলে আদৌ কি কোন শব্দ আছে অভিধানে ?
    আদতে খাঁচার পাখিকে তুমি যতোই বলে দাও উড়াল দিতে,———রোদেলা আপা সুন্দর ———–নয়নেজল ঝরল

  3. আমাদের অনেকের জীবন গল্পের ছায়ালিপি পেলাম দিদি ভাই। সুন্দর করে লিখেছেন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  4.  কবিতটি হয়তো নারীবাদী মনে হতে পারে কিন্তু আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। 

    যদি পুরুষ শাসিত সমাজ নাও থাকতো তবুও নারীরা মুক্ত বা স্বাধীন হতে পারতো না।

    নারীরা যে মা'এর জাঁত।

    বিয়ের পর তাঁরা তাঁদের স্বামী সংসার ছাড়া আর কিছুই বোঝে না।

    নিজে ছোট মাছের টুকরা খাবে কিন্তু স্বামী বা সন্তানের পাতে বড় টুকরাটাই তুলে দেবে।

     স্রষ্টা তাঁদের ওভাবেই বানিয়েছন, তাঁদের মন নরম এবং ভালোবাসায় পরিপুর্ণতা দান করেছেন।

    তাই ছেড়ে দিলেও সে নিজেই  এসে বলে, শিকল পড়াও! সে স্বামী-সন্তান-সংসার এর মায়া ত্যাগ করতে পারে না।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।