আসগর পড়ালেখা শেষ করেছে আজ চার বছর হয়ে গেলো। তার ইচ্ছে ছিলো সরকারী চাকুরী করা। ডিফেন্স ছিলো তার প্রাথমিক লক্ষ্য কিন্তু সেটা যখন হলো না তখন টার্গেট নিলো বি সি এস।
এটাও যখন হলো না তখন সে সিদ্ধান্ত নিলো সরকারী চাকুরীর পিছনে ছুটে লাভ নেই এই দেশে। তাই প্রাইভেট চাকুরী প্রতি আগ্রহ নিয়ে এপ্লিকেশন করা শুরু করলো কিন্তু এখানে এসে দেখলো আরেক জটিলতা আর সেটা হচ্ছে প্রাইভেট চাকুরী পেতে হলে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। সে কয়েকটা সেক্টরে চেষ্টা করে ব্যার্থ হলো। ভাবতে লাগলো, চাকুরী যদি শুরুই করতে না পারি তাহলে অভিজ্ঞতাটা আসবে কোথা থেকে? এগুলো এসব প্রাইভেট কোম্পানির এম ডি/ডিরেক্টরেরা কি বোঝে না? এক্ষেত্রে সে একটি বিষয় দেখলো, যাদের আত্নীয় স্বজন বড় বড় পজিশনে আছেন তাদের চাকুরী অভিজ্ঞতা ছাড়াই হয়ে যায়। কিন্তু আসগরের মনে পড়ে না তার কোনও আত্নীয় প্রাইভেট কোম্পানিতে বড় কোনও পজিশনে আছেন কি না।
অবশেষে অভিজ্ঞতা ছাড়াই একটা চাকুরী পেয়ে গেলো। এটা হচ্ছে একটা মার্কেট রিসার্চ ফার্ম। এরা বিভিন্ন সময়ে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে চুক্তি ভিত্তিক কাজ নিয়ে উক্ত ক্লায়েন্টের প্রডাক্ট মার্কেটে কি অবস্থানে আছে এবং কি করলে মার্কেট ধরতে পারবে তার সোট এনালাইসিস (SWOT analysis) করে একটা হাইপোথেটিক্যাল রিপোর্ট ক্লায়েন্ট এর কাছে প্রেজেন্ট করে। এর জন্য বিভিন্ন ধরনের মার্কেট প্রমোশনাল কোয়েশ্চেনারি আছে। আসগরের ডেজিগনেশন হচ্ছে FS (ফিল্ড সুপারভাইজার)।
এই রিসার্চ ফার্ম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে। তার কিছু হচ্ছে ভোগ্য পন্ন (Consuming product) আর কিছু প্রোজেক্ট আছে সোসিয়াল রিসার্চ। অর্থাৎ যখন যে ক্লায়েন্টের কাছে থেকে যেমন কাজ পায় তাই করে। এবারের প্রোজেক্টটা হচ্ছে লক্ষ্য স্থির বিষয়ক। তার আন্ডারে ২০ জন ছেলে-মেয়ে কাজ করে। সে এগুলোর ফিল্ড সুপারভাইজিং করে।
আজ ফিল্ড সুপার ভাইজিং এর একটি বিশেষ অংশ হিসেবে তাকে নিজেকেই ইন্টারভিউ নিতে হচ্ছে। সে রাস্তায় বের হয়ে দেখলো এক ভদ্রলোক একটি বাগানের পাশে বসে বৃদ্ধাঙ্গুল এবং শাহাদাত আঙুল নিচের ঠোটের একটু নিচে ধরে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। আসগরের কাছে মনে হলো, এইতো পেয়ে গেছি একটা বলদ টাইপের লোক যার লক্ষ্যস্থির নেই। এমন লোকইতো প্রয়োজন।
আসগর আস্তে আস্তে হেটে ভদ্রলোকের কাছে গেলো কিন্তু ভদ্রলোক একই ভাবে মাটির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। আশেপাশে কে আসলো আর কে গেলো তার খবর নাই। আসগর জিজ্ঞেস করলো, ভাই আপনার নাম জানতে পারি?
ভদ্রলোক এবার আসগরের দিকে তাকিয়ে বললো, ধ্যনাত্মা আসগর বললো, ভাই আপনার নামটা কি একটু লিখে দেবেন? ভদ্রলোক বললেন, কেনো?
আসগরঃ আপনার নামটার উচ্চারণ বুঝতে পারি নি
ভদ্রলোকঃ গৌতম বুদ্ধের নাম শুনেছেন?
আসগরঃ হ্যাঁ, শুনেছি
ভদ্রলোকঃ উনি ধর্ম প্রচারের আগে কি করেছিলেন?
আসগরঃ ডুমুর গাছের নিচে দীর্ঘদিন ধ্যান করেছিলেন
ভদ্রলোকঃ ধ্যান এর সাথে একটা আত্মা যোগ করলে কি হয়
আসগরঃ ধ্যান-আত্মা
ভদ্রলোকঃ এটাই আমার নাম
আসগরঃ আপনি কি একটু আগে ধ্যান করছিলেন?
ভদ্রলোকঃ আপনার পরিচয় দিন
আসগরঃ আমি সোমরা নামক একটি মার্কেট রিসার্চ ফার্মে এফ এস হিসেবে কাজ করছি
ভদ্রলোকঃ ও আচ্ছা, তা এখন কি কাজ করছেন
আসগরঃ আমাদের এবারের প্রজেক্ট হচ্ছে, লক্ষ্যস্থীর নিয়ে কাজ করা
ভদ্রলোকঃ আপনারা কি ভাবে কাজ করছেন
আসগরঃ আমরা বিভিন্ন কোয়েসচারিনির মাদ্ধ্যমে বাংলাদেশে কতজন মানুষের জীবনের লক্ষ্যস্থীর আছে আর কতজন লক্ষ্যহীনভাবে চলছে তার জরিপ করছি
ভদ্রলোকঃ আপনার জীবনের লক্ষ্য কি ছিলো
আসগরঃ আর্মি চিফ হওয়া
ভদ্রলোকঃ তাহলে এই সব ফালতু জব করছেন কেনো?
আসগরঃ আমি আর্মিতে রিটেনে টিকে গেলাম, আই এস এস বি তেও ভালো করলাম, ভাইভা-বোর্ডে এক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এক জটিল প্রশ্ন করলেন
ভদ্রলোকঃ কি প্রশ্ন?
আসগরঃ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বললেন, “আমি যদি আপনার মা কে নিয়ে পালিয়ে যাই তাহলে আপনি কি করবেন?
ভদ্রলোকঃ বুঝেছি, উনারা আপনার আই কিউ টেস্ট করেছেন, দেশে যুদ্ধ বাঁধলে যেকোনও পরিস্থিতিতে আপনার আই কিউ কেমন হবে সেটাই বোঝার চেষ্টা করেছেন। যাইহোক, আপনি কি উত্তর দিয়েছিলেন?
আসগরঃ আমি উনাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম
ভদ্রলোকঃ কি প্রশ্ন?
আসগরঃ আমি প্রশ্ন করেছি, “আপনার সন্তান কয়টি?”
ভদ্রলোকঃ উনি কি উত্তর দিলেন?
আসগরঃ উনি বললেন, ” আমার একটিই মেয়ে বিবিএ পড়ছে এন এস ইউ ইউনিভার্সিটিতে
ভদ্রলোকঃ তারপর?
আসগরঃ আমি তখন বললাম, ” আপনি যদি আমার মা কে নিয়ে পালিয়ে যান তাহলে আমি আপনার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাবো”
ভদ্রলোকঃ তারপর?
আসগরঃ উনি একটু ভ্রু কুচকালেন
ভদ্রলোকঃ তারপর?
আসগরঃ বোর্ডের অন্যান্নরা তখন বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলেন
ভদ্রলোকঃ বুঝেছি, পরে আপনার আর চাকুরী হয় নি, তাইতো?
আসগরঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছেন
ভদ্রলোকঃ কিন্তু আপনি পারফেক্ট উত্তর দিয়েছিলেন তাতে আপনার চাকুরী হওয়ার কথাই ছিল, যাইহোক, তারপর কি করলেন
আসগরঃ তারপর লক্ষ্য পরিবর্তন করে বিসিএস দিলাম, টার্গেট ছিলো ফরেন এফেয়ার্স।
ভদ্রলোকঃ বিসিএস এ হলো না কেনো?
আসগরঃ এম সি কিউ থেকে শুরু করে রিটেন, ভাইভা সবই ভালো করেছিলাম কিন্তু হয় নি
ভদ্রলোকঃ ভাইভা-বোর্ডে কি জানতে চেয়েছিলো
আসগরঃ যেহেতু আমার একটাই চয়েজ ছিলো ফরেন এফেয়ার্স তাই প্রশ্ন করেছিলো, ” অ্যামেরিকার চীন নীতি সম্পর্কে কি জানুন বলুন”।
ভদ্রলোকঃ কি বললেন?
আসগরঃ আমি জানতে চাইলাম, বুশ প্রশাসন নীতি বলবো নাকি সিক্স প্রেমিসেস নীতি বলবো?
ভদ্রলোকঃ উনারা বললেন, সিক্স প্রেমিসেস এর কি জানেন?
আসগরঃ আমি বললাম, প্রেমিসেস#১ হচ্ছেঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়া তার জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য চীন থেকে আসা স্থিতিশীলতার ধরন থেকে উপকার লাভ করতে পারে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের (পিআরসি) বড় সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে দেশটিতে দুর্ঘটনা ঘটবে এবং এই অঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুতর সমস্যা দেখা দেবে।
ভদ্রলোকঃ তারপর?
আসগরঃ চীন নিয়ে বুশ প্রশাসনের যে কোনও একটি নীতি জানতে চাইলো
ভদ্রলোকঃ কি বলেছিলেন?
আসগরঃ আমি বললাম, বুশ প্রশাসন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত, চীনের নীতি আমেরিকান জনসাধারণের আলোচনার মাধ্যমে চীনের অনিবার্য বিকাশের ফলে দুটি বিকল্পের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে: একটি শক্তিশালী, বিরোধপূর্ণ চীন (চীন হুমকি) এবং একটি সফল, সমবায় চীন (একটি গঠনমূলক কৌশলগত অংশীদার)।
ভদ্রলোকঃ তারপর?
আসগরঃ ভাইভা বোর্ডের লোকজন একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাতাকি করে আমাকে বললো, আপনার ভাইভা ভালো হয়েছে, রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করুন
ভদ্রলোকঃ রেজাল্টে আপনার নাম, ক্রমিক নং এবং পদবী দ্যাখেন নি, তাইতো?
আসগরঃ জ্বী, এই চাকুরীটাও হলো না
ভদ্রলোকঃ এখন বলেন, আমার কাছে কি জানতে এসেছেন
আসগরঃ আপনি কি করেন?
ভদ্রলোকঃ আগে জব করতাম এখন ব্যাবসা করছি
আসগরঃ আর কিছু করেন?
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ করি
আসগরঃ সেটা কি
ভদ্রলোকঃ সোসাল মিডিয়াতে সময় দেই
আসগরঃ ও, এটা মনে হয় রিক্রিয়েশন
ভদ্রলোকঃ না
আসগরঃ তাহলে?
ভদ্রলোকঃ লেখালিখি করি
আসগরঃ কি লেখেন
ভদ্রলোকঃ কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/সমসাময়ীক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি
আসগরঃ ও আচ্ছা! আপনি কবি! হা হা হা !!!
ভদ্রলোকঃ এতো হাসির কি হলো
আসগরঃ আপনি কি জানেন বাংলাদেশে কাকের সংখ্যা বেশি নাকি কবি’র সংখ্যা বেশি?
ভদ্রলোকঃ নাহ
আসগরঃ আমরা জরিপের কাজ করি, আমাদের কাছে সব হিসেব আছে
ভদ্রলোকঃ কেমন হিসেব?
আসগরঃ এ দেশেতো এখন জনসংখ্যা ১৬ কোটি, যদি প্রাপ্ত বয়ষ্ক ৮ কোটি হয় এবং এর এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ যদি ২ কোটি কবি হয় তাহলেওতো ২ কোটি কাক এ দেশে নেই
ভদ্রলোকঃ হুম
আসগরঃ কোন সোসাল মিডিয়ায় লিখেন?
ভদ্রলোকঃ ফেসবুক/টুইটার
আসগরঃ ফেসবুকেতো নিজের টাইমলাইন ছাড়াও অনেক গ্রুপ আছে
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ নিজের টাইমলাইন ছাড়াও ১০৫০টি গ্রুপে এড আছি
আসগরঃ আর কোথাও লেখেন?
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ বিভিন্ন ব্লগে লিখি
আসগরঃ আপনার কি নিজের ব্লগও আছে নাকি
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ আছে এটা গুগোল ফ্রী ব্লগ
আসগরঃ ইউটিউব চ্যানেল আছে?
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ আমার নিজের ১০টা ইউটিউব চ্যানেল আছে
আসগরঃ আর কোথাও সংযুক্ত আছেন?
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ প্রফেশনাল মিডিয়া লিঙ্কডিন এ আছি
আসগরঃ আর কিছু করেন?
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ অনলাইন সাংবাদিকতা করি
আসগরঃ আর কিছু করেন নাকি
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ ফ্রিল্যন্সিং করি
আসগরঃ কোন বিষয়ে?
ভদ্রলোকঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন
আসগরঃ আর কোনও গ্রুপে?
ভদ্রলোকঃ মেসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসএপ, ইমো, উইচ্যাট, লাইন এই ধরণের অনেক এপ্সের গ্রুপেও এড আছি
আসগরঃ হুম। একটা প্রশ্ন রাখতে চাই
ভদ্রলোকঃ জ্বী বলুন
আসগরঃ আপনার জীবনের লক্ষ্য কি
ভদ্রলোকঃ তার মানে?
আসগরঃ মানে জানতে চাচ্ছি আপনি কিসে সফল হতে চান? আপনি কি আপনার লক্ষ্যস্থির করেছেন?
ভদ্রলোকঃ একটু ভেঙ্গে বলুনতো, কি জানতে চাইছেন।
আসগরঃ ব্যাবসা/কবি/লেখক/ইউটিউবার/সাঙ্গবাদিকতা/ব্লগার/ফ্রিল্যান্সিং – এর মধ্যে আপনি কোনটাতে সফল হতে চান?
ভদ্রলোকঃ আপনি কি জানেন সুনীল গাঙ্গোপাধ্যায়ের পেশা কি ছিলো?
আসগরঃ না
ভদ্রলোকঃ জীবনানন্দ দাসের পেশা ছিল শিক্ষকতা এবং সাংবাদিকতা
আসগরঃ আচ্ছা
ভদ্রলোকঃ হুমায়ুন আহমেদের পেশা ছিলো শিক্ষকতা
আসগরঃ হ্যাঁ তা জানি
ভদ্রলোকঃ মাইকেল মধুশুদন দত্তের পেশা ছিলো শিক্ষকতা
আসগরঃ বুঝলাম
ভদ্রলোকঃ সূনীল গাঙ্গোপাধ্যায় সাংবাদিক ছিলেন কিন্তু সফল হয়েছেন কিসে?
আসগরঃ কবি/লেখক হিসেবে
ভদ্রলোকঃ জীবনানন্দ দাস কি শিক্ষকতায় সফল হতে পেরেছিলেন?
আসগরঃ না
ভদ্রলোকঃ হুমায়ুন আহমেদ রসায়ন শিক্ষকতায় খ্যাতি পেয়েছেন নাকি লেখক হিসেবে?
আসগরঃ লেখক হিসেবে
ভদ্রলোকঃ মধুসূদন দত্তও কি শিক্ষকতায় খ্যাতি পেয়েছেন?
আসগরঃ না
ভদ্রলোকঃ উনাদের সময়ে ফেসবুক/টুইটার/ইউটিউব/ফ্রিল্যন্সিং থাকলে উনারাও এগুলোতে যুক্ত থাকতেন
আসগরঃ উনাদের পেশা ভিন্ন থাকলেও উনাদের কিন্তু লক্ষ্য স্থির ছিল
ভদ্রলোকঃ ভাইরে, এটা আখেরী জামানা, এখানে কোনও লক্ষ্য টক্ষ্য স্থির রাখা যায় না
আসগরঃ আখেরী জামানা তো কি হয়েছে?
ভদ্রলোকঃ আইয়ামে জাহেলিয়াতের নাম শুনেছেন?
আসগরঃ সেটাতো ছিল ১৫০০ বছর আগে নবীজির সময়, এখন সাইন্স মানুষকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে
ভদ্রলোকঃ এই আখেরী জামানা, আইয়ামে জাহেলিয়াতের চেয়েও ভয়ংকর
আসগরঃ কেনো?
ভদ্রলোকঃ আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে কাফেররা আল্লাহ-নবী বিশ্বাস করতো না কিন্তু তা প্রকাশ করতো
আসগরঃ এখন?
ভদ্রলোকঃ এই আখেরী জামানায় মুসলমানরা যে আল্লাহ-নবী বিশ্বাস করে না তা কিন্তু প্রকাশ করে না, মানুষের কাছে ভালো সাজার জন্য লোক দেখানো নামাজ-রোজা-হজ্জ্ব করে
আসগরঃ বুঝতে পারলাম। আমার হাতে সময় কম। আপনি একটু বলেন, ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে, ১০৫০টি গ্রুপে, বিভিন্ন ব্লগে, নিজের ব্লগে, ১০টি ইউটিউব চ্যানেলে, লিংকডইনে,ফ্রী ল্যন্সিং এ, সাংবাদিকতায় এবং আপনার ব্যাবসায় কখন কোথায় কতটুকু সময় দিয়ে থাকেন?
ভদ্রলোকঃ আমি কি আপনাকে এগুলো বলতে বাধ্য
আসগরঃ না
ভদ্রলোকঃ আপনি নিজেওতো লক্ষ্যস্থীর করেছিলেন আর্মি চিফ হবেন, আবার লক্ষ্য পরিবর্তন করেছেন বি সি এস এ ফরেন এফেয়ার্সে সেকশন অফিসার হবেন, তাতেওতো সফল হতে পারেন নি
আসগরঃ হ্যা ভাই আপনি একদম ঠিক বলেছেন। আইয়ামে জাহেলিয়াতে ছিলো ঈমানদার এবং মোনাফেক। আর এখন কিছু ঈমানদার আছে বটে আর বাকিরা মোনাফেকের চেয়ে ভয়ঙ্কর।
ভদ্রলোকঃ এখন জ্যাক অব অল ট্রেড বাট মাস্টার অফ নাথিং এর যুগ
আসগরঃ কেন ভাই?
ভদ্রলোকঃ সব অপশন রাখতে হয়, বলাতো যায় না কোনটা ক্লীক করবে
আসগরঃ ও
ভদ্রলোকঃ যে কোনও একটা ক্লীক করলেই বাকি সব বন্ধ, তারপর ঐ একটা নিয়েই খেলা শুরু। শুরু তো শুরু। শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। শুরুও নেই শেষও নেই। সবখানেই শুরু আবার সবখানেই শেষ। পিছু ফিরে তাকাবার সময় আর কোথায়?
আসগরঃ শুরু শেষ এসব কি বলে চলেছেন, কিছুইতো বুঝতে পারছি না
ভদ্রলোকঃ ঐ যে উপরে তাকান, ঐ আকাশটার শুরু কোথায় আর শেষ কোথায় বলতে পারবেন?
আসগরঃ না
ভদ্রলোকঃ একটা বৃত্ত আঁকার জন্য প্রথমে একটা বিন্দু থেকে শুরু করে আবার সেই বিন্দুতে মিলিয়ে দিয়ে অন্য একজনের কাছে যেয়ে যদি বলেন, এর শুরু কোথায় আর শেষ কোথায়? উনি বলতে পারবেন?
আসগরঃ না
ভদ্রলোকঃ আমি যদি বলি যেখান থেকে শুরু সেখানেই শেষ
আসগরঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছেন
ভদ্রলোকঃ যদি বলি শুরু-শেষ কিছুই নাই
আসগরঃ তাও ঠিক
ভদ্রলোকঃ যদি বলি সব বিন্দুতেই শুরু আবার সব বিন্দুতেই শেষ
আসগরঃ এটাও ঠিক
ভদ্রলোকঃ বৃত্তের ভিতরে কি থাকে
আসগরঃ ফাঁকা
ভদ্রলোকঃ বৃত্তের বাহিরে কি থাকে
আসগরঃ কিছুই থাকে না
ভদ্রলোকঃ চক্র বোঝেন? চক্রের শুরু কোথায় শেষ কোথায়?
আসগরঃ না ভাই, আমি এগুলো বুঝি না, আমি এখন যাই
ভদ্রলোকঃ সরি! মিস্টার! আপনি এক কদমও এখান থেকে যেতে পারবেন না
আসগরঃ কেনো ভাই?
ভদ্রলোকঃ আপনি যে এই স্টাইল করে দাঁড়ি রেখেছেন, এগুলো কারা রাখে জানেন তো?
আসগরঃ অনেকেই তো রাখে, এটা তো এই যুগের ফ্যাশান
ভদ্রলোকঃ দুঃখিত! আমার মনে হয় আপনি জঙ্গি, এদিকে তাকান আপনার একটা ছবি তুলি
আসগরঃ কেনো ভাই?
ভদ্রলোকঃ পেপারে দেবো
আসগরঃ ভাই, আমার ভুল হয়ে গেছে,কাক আর কবির হিসেব আপনাকে দেয়া ভুল হয়ে গেছে ভাই, মাফ চাই
ভদ্রলোকঃ আমি মাফ করি না
আসগরঃ ভুল করলেতো স্বয়ং আল্লাহ তালাও মাফ করে দেন
ভদ্রলোকঃ তিনি মহাণ, অতিশয় দয়াময়। আমি আল্লাহ না। আমি মানুষ। আমি মাফ করি না
আসগরঃ ভাই আমি হাত জ্বোড় করছি, আপনার পায়ে পড়ছি, আমাকে মাফ করে দেন
ভদ্রলোকঃ কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন, এসব ফালতু জব ছেড়ে দিন
আসগরঃ ভাই আমি একটা মার্কেট রিসার্চ কোম্পানিতে নতুন চাকুরী নিয়েছি। কোয়েশচেনারির মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে লক্ষস্থির জরিপের কাজ দিয়েছে। ভাই বিশ্বাস করুন এতো জটিল কাজ আর ভালো লাগছে না।
ভদ্রলোকঃ ঐ সব ফালতু চাকুরী ছেড়ে দিন
আসগরঃ তাহলে কি করবো ভাই? কতো চেষ্টা করলাম কোনও চাকুরী পেলাম না
ভদ্রলোকঃ এই যে আমি যা করছি তাই করবেন
আসগরঃ আপনার মতো এতো যোগ্যতাতো আমার নাই ভাই
ভদ্রলোকঃ শুনুন, যোগ্যতা একটা ভুয়া ব্যাপার। আপনি আমাকে দেখানতো বড় বড় পজিশনের যোগ্য চেয়ারগুলোতে কয়টা যোগ্য ব্যাক্তি বসে আছে?
আসগরঃ আমাকে জরিপের কাজে উনাদের কাছে যেতে হয়েছিলো, উনাদের অনেক বড় বড় ডিগ্রী আছে
ভদ্রলোকঃ ডিগ্রী হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতা আর এসব ডিগ্রী টাকা থাকলে অনেক কিনতে পাওয়া যায়
আসগরঃ ভাই, তাইলে ক্যামনে কি!
ভদ্রলোকঃ ডিগ্রী ফিগ্রী কিচ্ছু নাই এমন অনেকে আছে যারা অনেক বড় বড় পজিশন হোল্ড করছে, এগুলো আপনি জানেন?
আসগরঃ না তো! তাহলে উনারা কি করে টিকে আছেন!
ভদ্রলোকঃ এগুলো আত্নীয় স্বজন, টাকার ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক পোষ্ট
আসগরঃ তাহলে উনারা এতো বড় বড় দায়িত্ব পালন করেন কি করে?
ভদ্রলোকঃ তারা দামী গাড়ীতে চলে্ন, অনেক স্যলারি পান এবং নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে বেড়ান
আসগরঃ কাজ করেন কি করে?
ভদ্রলোকঃ তাদের পায়ের নিচে অনেক শিক্ষিত এবং যোগ্য মানুষের ঘাড় থাকে। ঐ সব ঘাড়ে পা রেখে উনারা চলেন
আসগরঃ ও
ভদ্রলোকঃ আপনার বয়স কম! নতুন পাশ করে বেরিয়েছেন। এগুলো বুঝতে সময় লাগবে
আসগরঃ হ ভাই ঠিক কইছেন
ভদ্রলোকঃ এখন যান। এই নিন আমার কার্ড। যোগাযোগ রাখবেন
আসগরঃ ঠিক আছে ভাই, আসসালামুয়ালাইকুম!
ভদ্রলোকঃ ওয়ালাইকুম।
পর্ব চলছে?
জ্বী ভাই, এর আগে আলাপন-১,২,৩ পোষ্ট দিয়েছি।
চমৎকার স্যাটায়ার !
আপনি তো মহামতি ধ্যনাত্মা'র ধ্যানটাই ভেঙে দিলেন— হুম্মম !
যাইহোক, আমি ভবঘুরেই হব এটাই আমার এম্বিশ্যন।
হা হা! ভবঘুরে মনে হয় বেশ ভালোই হবে পেশা হিসেবে, বহু দেশ ভ্রমন সহ বিভিন্ন মানুষের সাথে মেশা, তাছাড়াও আছে স্ট্রেসহীন লাইফ!
* ইলহাম ভাই, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ছিলাম…
উপস্থাপনা ভালো লেগেছে। ভালো থাকুন নিরন্তর।
প্রিয় দিলওয়ার ভাই, আপনার আন্তরিক মন্তব্যে দারুণভাবে অনু্প্রাণিত হলাম!
অসাধারণ কথোপকথন। লিখাটি পড়তে গিয়ে মোটেও ক্লান্তি এলো না। গুড জব।
প্রিয় শ্রদ্ধাষ্পদেষু, আমি দেখেছি অন্যান্ন কবি/লেখকদের মন্তব্যের ক্ষেত্রেও আপনার আন্তরিকতার তুলনা হয় না।
অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এই জন্য যে, আপনার এই মন্তব্যের মাঝে ৭ টি ম্যাসেজ আছে যা ফলো করলে ফার্স্ট ইম্প্রেশনে উইন হওয়া যায়


বাস্তবতার ছবি উপস্থাপনা খুউবি ভাল হয়েছে দাদা।
প্রিয় কবি ও লেখিকা, মুগ্ধ হলাম (খুউবি) এই বাক্যটি লিখার জন্য কারণ এই বাক্যটিতে অনেক আন্তরিকতা লুকিয়ে আছে


ইন্টারেস্টিং।
প্রিয় কবি ও লেখিকা মিস শাকিলা তুবা, আপনার কাছে ভালো লেগেছে দেখে আমি সত্যিই আনন্দিত!
আর দশজন পাঠকের মতো আমিও গল্পের ভিতরের গল্পটাকে খুঁজি। বাস্তবতায় সমৃদ্ধ লেখা। ভালোলাগা নিয়ে পড়লাম।
ধন্যবাদ প্রিয় লেখক মিড ডে ডেজারট!
অনন্য সুন্দর প্রকাশ
প্রিয় কবি মিঃ শংকর দেবনাথ, আপনার মতো খ্যাতিমান কবির মন্তব্য পেয়ে আমি দারুণ ভাবে অনুপ্রাণিত!
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা প্রিয় কবির জন্য



