আজও ছড়াদাদুর পাঠশালা বসেছে। দাদুর বাড়ির দক্ষিণদিকের খোলারমাঠের ঘাসের উপর সবাই বসে পড়েছে হাত পা ছেড়ে।
দাদু বলেন- স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত হল, আজ অক্ষরবৃত্ত। তাই তো?
ওরা বলে – হ্যাঁ,
– শোনো, অক্ষরবৃত্তে মুক্তদল একমাত্রা ও রুদ্ধদল যদি শব্দের শুরুতে বা মধ্যে থাকে তাহলেও এক মাত্রা হয়। কিন্তু, যদি শব্দের শেষে থাকে তাহলে দুইমাত্রা হয়।
এর সাথে মাত্রাবৃত্তের সামান্য মিল আছে। এ দুটি ছন্দে একটি প্রধান পার্থক্য হলো, মাত্রাবৃত্ত ছন্দ রুদ্ধদল সবসময় দুইমাত্রা। কিন্তু, অক্ষরবৃত্ত ছন্দে শুধুমাত্র শব্দের শেষের রুদ্ধদল দুইমাত্রা, বাকিগুলো একমাত্রা। যেমন-
‘‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন
তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি”।
বিশ্লেষণে দাঁড়ায় – হে +বঙ্ +গ +ভান্+ডা+রে+ত+ব / বি+ বি+ধ+ র +ত+ন –
এখানে বঙ্গ- বঙ্+গ, ভাণ্ডার – ভান্+ডার,। শব্দের শুরুতে বলে এই বঙ্ ও ভান্ এক মাত্রা করে হবে কিন্তু রতন- র+ তন্, এখানে রুদ্ধদল- তন্ শব্দের শেষে বলে দুইমাত্রা পাবে।
তোমাদের বিষয়টা বোঝাতে পেরেছি কি?
অরনি বলে – হ্যাঁ দাদু, বুঝতে পেরেছি।
আদৃতা বলে – স্বরবৃত্তে তো চারচার মাত্রার পর্ব, মাত্রাবৃত্তে চার,পাঁচ, ছয় ও সাত মাত্রা, কিন্তু অক্ষরবৃত্তে পর্ব ভাগ হয় কিভাবে?
-এটাই আমি বলব ভাবছিলাম। তুমি সঠিক সময়ে সঠিক প্রশ্ন তুলেছ। শোন তবে-
‘‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব/ বিবিধ রতন-৮+৬
তা সবে অবোধ আমি/ অবহেলা করি”। ৮+৬
বা
হাজার বছর ধরে/ আমি পথ হাঁটিতেছি/ পৃথিবীর পথে,৮+৮+৬
সিংহল সমুদ্র থেকে/ নিশীথের অন্ধকারে/ মালয় সাগরে।৮+৮+৬
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে মূল পর্ব ৮ বা ১০ মাত্রার হয়।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতার আবৃত্তি ধীরগতি ও একটু গম্ভীর হয়।
অক্ষরবৃত্তের বৈশিষ্ট্যগুলো একটু বলুন দাদু – অনিক বলে।
দাদু বলেন- এই ছন্দের প্রতিটি পর্বে জোড়সংখ্যক মাত্রা থাকে। পর্বে মাত্রা সংখ্যা দুই থেকে শুরু করে চার, ছয়, আট, দশ যে কোনো সংখ্যক রাখা যায়। এক্ষেত্রে মানতে হয় জোড়ে জোড়, বিজোড়ে বিজোড়।
আদৃতা বলে – কি রকম দাদু?
– জোড় মাত্রার শব্দের পাশে জোড় মাত্রার শব্দ এবং বিজোড় মাত্রার শব্দের পাশে বিজোড় মাত্রার শব্দ বসানো। পরে ইচ্ছেমতো লাইন তৈরি করলেও ছন্দের ক্ষেত্রে কোনো ক্রুটি হয়না।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের চাল আসলে চার মাত্রার । চারের যে-কোনও গুণিতকের সঙ্গে দুই যোগ করলে যে-সংখ্যাটা মিলবে, তত সংখ্যার মাত্ৰা দিয়েই অক্ষরবৃত্তের লাইন তৈরি করা যায়।
দীপেন বলে – যেমন?
দাদু জানান- হাসিমাখা/ মুখ
এ হল ৪+২=৬ মাত্রার অক্ষরবৃত্ত। এর সাথে আরও চার মাত্রা জুড়ে দিয়ে – হাসিমাখা/ মুখখানি/ দেখি
৪+৪+২=১০ মাত্রা। এভাবে মাত্রা বাড়াতে হয়।
আদৃতা বলে – তাহলে চতুর্দশপদীগুলোর মাত্রা মুলত ৪+৪+৪+২ হবে।
-একদম ঠিক বলেছো। ওটাকেই যুক্ত করে ৮+৬ বলা হয়।
মামুন জানতে চায় – সব ছন্দের ক্ষেত্রে মাত্রার সাথে কিছু অপূর্ণমাত্রা যেমন ১, ২, বা ৩ মাত্রা বেশি রাখতে হয় কেন?
দাদু বলেন-পড়ার সময় একটু দম ফেলার জন্য এই মাত্রাঘাটতি রাখতে হয়। যদি পূর্ণমাত্রা রাখা হয় তাহলে তো থামার ফাঁক পাওয়া যায় না তাই । ওদের যদি না জুড়ে দেওয়া হত, তাহলে প্রথম লাইন শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিতীয় লাইন শুরু করতে হত।
– বাহ্, এইবার বুঝলাম। অতিপর্ব আসলে কেন রাখতে হয়। – মামুন বলে।
দাদু বলেন – আজ তাহলে ওঠা যাক। আবার পরের দিন।
সকলে উঠে পড়ল।
(চলবে)
কবিরা এখন তাঁদের লেখায় অসীম স্বাধীনতা ভোগ করেন। যতদূর মনে পড়ে জীবনানন্দ দাসও সনেটের নিয়ম ভেঙ্গে ফেলেছিলেন।
অসাধারণ বিষয় নিয়ে আপনার এই পোস্ট; কতো কী যে আছে এতে ! খুব বেশি মুগ্ধ করেছে লেখার ঢং! যেন দাদু সম্মুখে বসে বলছেন এবং আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি !
ধন্যবাদ। পাশে থাকুন
পাঠের আসর দারুণ জমে উঠেছে। দিন দিন আমারও আগ্রহ বেড়ে চলেছে। পোস্টটি আমি আপাতত একবার পড়ে উঠলাম। পরে আবার ফিরে আসবো আশা করি। ধন্যবাদ মি. শংকর দেবনাথ।
আপনার আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত ও সাহসী করছে আরো লিখতে।
পাঠশালা থেকে যতটা পারলাম নেবার চেষ্টা করলাম দাদা। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাদের আগ্রহ আমাকে সাহস জোড়াচ্ছে। ভাল থাকুন দিদিভাই
পাঠশালায় আসন নিলাম। পড়লামও বটে। অফিসে বসে কতোটা আয়ত্ব করতে পারবো জানিনা তাই নিয়ে গেলাম। ধন্যবাদ শংকর দা।
বাহ্ পাশে আছেন জেনে ভাল লাগছে দাদা
অনেক কিছু জানলাম,,,,কৃতজ্ঞতা রইলো শ্রদ্ধেয়,,,
ধন্যবাদ ভাই
* পাঠশালার সাথেই আছি…
ধন্যবাদ
ছড়াদাদুর পাঠশালা ৬ -এ এসে ছন্দের অনেক পরিষ্কার হয়ে গেল!