আজ অষ্টমী পূজা, আজ সক্কাল সক্কাল স্নান সেরে নতুন পোশাক পরে অঞ্জলী দেবার দিন। যদিও অঞ্জলী সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত দেওয়া যায়!
অঞ্জলি:
অষ্টমী মানেই কিন্তু পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া নতুন জামাকাপড় পড়ে। স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্রে ঠাকুরের সামনে তিনবার হাতে গঙ্গাজল নিয়ে আচমন করে এবার হাতে ফুল নিন ও তিনবার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র পড়ে ঠাকুরের চরণে তা প্রদান করুন। এবার প্রণাম মন্ত্র অর্থাৎ “ওঁ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে, শরণ্যে ত্রম্ব্যকে গৌরী নারায়ণী নমস্তুতে” ইত্যাদি বলে অঞ্জলি শেষ করে মায়ের পায়ে ফুল দিতে হয়।
কুমারী পুজো:
সকল মেয়েই মা দুর্গার অংশ, তাই মৃন্ময়ী প্রতিমাকে পুজো করার পাশাপাশি কম বয়সের ছোট মেয়েদেরও পুজো করা হয়। পৌরাণিক কাহিনি অনুসরণে কুমারী পূজার উদ্ভব হয় কোলাসুরকে হত্যার মধ্য দিয়ে। উল্লেখ্য, কোলাসুর নামক অসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করে নেয়। ফলে বিপন্ন দেবরা মহাকালীর শরণাপন্ন হন। দেবতাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী মানবকন্যা রূপে জন্মগ্রহণ করেন কুমারী অবস্থায় কোলাসুরকে হত্যা করেন। এই সূত্রে কুমারী পূজার প্রচলন হয়।
বেলুড় মঠে স্বামী বিবেকানন্দ প্রথম কুমারী পূজা করেন ১৯০১ সালে। ষোলো বছরের মেয়ে পর্যন্তই কুমারী হিসাবে পুজো করা যায়। একটি মেয়েকে প্রথমে আমন্ত্রণ করে তাকে শাড়ি ও গয়না উপহার দিতে হয়। সেই শাড়ি ও গয়না তাকে পড়িয়ে মাতৃমূর্তির সামনে এনে উঁচু আসনে বসাতে হয়। কুমারীর পা জল দিয়ে ধুয়ে দেওয়া হয়। তারপর তার পূজা শুরু হয়। তাকে মিষ্টান্নাদি নৈবেদ্য প্রদান করা হয়। তার উদ্দেশে অঞ্জলি দেওয়া হয়। এইদিন ওই কুমারীকে দেবী দুর্গার রূপ হিসাবেই ধরা হয়।
বয়সের ক্রমানুসারে পূজাকালে এই সকল কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন:
এক বছরের কন্যা – সন্ধ্যা
দুই বছরের কন্যা – সরস্বতী
তিন বছরের কন্যা – ত্রিধামূর্তি
চার বছরের কন্যা – কালিকা
পাঁচ বছরের কন্যা – সুভগা
ছয় বছরের কন্যা – উমা
সাত বছরের কন্যা – মালিনী
আট বছরের কন্যা – কুষ্ঠিকা
নয় বছরের কন্যা – কালসন্দর্ভা
দশ বছরের কন্যা – অপরাজিতা
এগারো বছরের কন্যা – রূদ্রাণী
বারো বছরের কন্যা – ভৈরবী
তেরো বছরের কন্যা – মহালপ্তী
চৌদ্দ বছরের কন্যা – পীঠনায়িকা
পনেরো বছরের কন্যা – ক্ষেত্রজ্ঞা
ষোলো বছরের কন্যা – অন্নদা বা অম্বিকা
শ্রীরামকৃষ্ণের মতে— সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমীতে সাধারণ ৫ থেকে ৭ বছরের একটি কুমারীকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে পূজা করা হয়। চণ্ডীতে বলা হয়েছে:
যা দেবী সর্বভূতেষু
মাতৃরূপেণ সংস্থিতা
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তসৈ নমঃ নমঃ
সন্ধি পুজো:
মা দুর্গার আরেক রূপ হল মহিষাসুর-মর্দিনী। মহিষাসুর মর্দিনী অর্থাৎ তিনি এই অসুরের নিধন করেছিলেন। কিন্তু দুর্গা পুজোর পিছনে আরো অসুরবধের কাহিনী আছে, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সন্ধিপূজা। অষ্টমী শেষ হয়ে যখন নবমী তিথি শুরু হয়ে তখন সন্ধিপূজার মাধ্যমে মায়ের আরাধনা করা হয়। এই সন্ধিপূজা হল সেই সন্ধ্যার প্রতীক যখন মা দুর্গা চন্ড ও মুন্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরকে বধ করেছিলেন।মূলত অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিস্থলে অর্থাৎ অষ্টমী শেষ হবার ২৪ মিনিট ও নবমী শুরু হবার ২৪ মিনিট এই সময়ের মধ্যে এই পূজা হয়। এই সময়ে মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা করা হয়। এই পূজাতেই ১০৮ টি পদ্মফুল দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। এর মূলে রামায়ণের কাহিনী আমরা সবাই জানি। রাবণ বধের জন্য রাম ১০৮ পদ্ম দিয়ে দেবীর পূজা করেন ও তারপর রাবণ নিধন হয়। সেই সূত্রেই এই সন্ধি পূজা করা হয়। দেবীর সামনে নানা রকম খাদ্যদ্রব্য কাঁচা অবস্থায় এবং রান্না করা ভোগ হিসাবেও রাখা হয়। ১০৮ টি মাটির প্রদীপ দেবীর সামনে জ্বালানো হয়।
কোনো কোনো জায়গায় এই দিন বলিও দেওয়া হয়। বলি হিসাবে পশুবলি নিয়ে অনেক নিষেধাজ্ঞা জারি আছে বলেই আঁখ, চালকুমড়ো এইসব বলি হিসাবে প্রদত্ত হয়।কোনো বছর অষ্টমী, নবমীর সন্ধিক্ষণ রাত ৮টাতেও হতে পারে আবার কোনো বছর ভোররাতেও হতে পারে। সেই সময় দেবীর গাত্রবর্ণ বা গায়ের রঙ ছিল স্বর্ণাভ বা সোনালী এবং তিনি হলুদ শাড়ি পরে অবতীর্ণ হন। তাঁর দশ হাত সজ্জিত ছিল দশ ধরণের অস্ত্রে। যখন মহিষাসুরের সঙ্গে ভয়ানক যুদ্ধে তিনি ব্যস্ত, সেইসময় মহিষাসুরের দুই বন্ধু চন্ড এবং মুন্ড পিছন থেকে দেবীকে আক্রমণ করে। রণনীতির চুক্তি ভঙ্গ হওয়ায় দেবী অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হন এবং রাগে তাঁর মুখ নীল হয়ে যায়। দেবী তাঁর ত্রিনয়ন উন্মীলিত করেন এবং চামুন্ডা রূপ ধারণ করেন। ঘনীভূত রক্তের কালীরই অন্য রূপ হল চামুন্ডা রূপ। চামুন্ডা রূপে দেবী দুর্গা চন্ড এবং মুন্ডের মাথা কেটে নেন তাঁর হাতের খড়গ দিয়ে। দেবীর এই চামুন্ডারূপেরই আরাধনা করা হয় সন্ধি পূজার মাধ্যমে।
শুভ অষ্টমী।
বেশ বড় সড় বর্ণনা দিলেন। ধন্যবাদ।
রাতে লেখার সুযোগ নিয়েছিলাম বাবু দা। তাই দিতে পারলাম। শুভেচ্ছা।
ভাল থাকুন। ধন্যবাদ।
শুভ অষ্টমী শুভ অষ্টমী শুভ অষ্টমী।
শুভ অষ্টমী প্রিয় বন্ধু। ধন্যবাদ।
আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। খুব ভালো লেগেছে !
শুভ অষ্টমী !
ধন্যবাদ মিড দা।
শুভ অষ্টমী দিদিভাই। একবার দুর্গাপূজার সময় আমার মা আর স্ত্রী সহ কোলকাতায় ছিলাম তখন দেখেছি আনন্দস্রোত কাকে বলে। তবে এ সম্পর্কে বিষেষ কোন ধারনা ছিলনা। আমার অফিসে এক ভদ্রলোক সমীর মুখার্জির কাছে কাজের ফাকে ফাকে মাঝে মাঝে কৌতুহল জেনে নিই কিন্তু আপনার লেখা পড়ে বিষদ জানলাম। স্কুলে পড়ার সময় আমার এক বন্ধুর বাড়ি থেকে রামায়ন এনে পড়েছিলাম, ভুলে গেছি তার অনেক কিছু।
আমাদের পক্ষ থেকে অনেক অনেক ভালবাসা নিয়ে পরিবারের সবাইকে সহ আনন্দ করুন এই শুভকামনা।
আপনার জন্য শুভকামনা রইলো খালিদ দা।
* মহা অষ্টমীর শুভেচ্ছা সুপ্রিয়……


ধন্যবাদ কবি দা।
আগ্রহ এবং ভালো লাগা নিয়েই পড়লাম!
ভালো লেগেছে লেখাটা!
ধন্যবাদ রাফাতুল ইসলাম আরাফাত। স্বাগতম।