বাবুইসভ্যতা

বাবুইসভ্যতা

তোমাকে খোঁজা মানে দেখে নেওয়া পুরনো গ্রিস বা মিশরের কতটুকু আকাশ ওই মাথায় ভিড় ক’রে আছে। তো দেখলাম, পেন্ডুলাম একটা মিড় করে আছে মার্লো পন্টি পিকাসোর মধ্যে, ক্লাসিক রোম্যান্টিকের মধ্যে, দিবাকর চৌধুরী সুজিত মিত্রের মধ্যে, আর এইভাবে ক্রমাগত মুড বদলাচ্ছে চিত্রনাট্য।

আরও লক্ষ করেছি তুমি প্রায় পুরোটাই ঢাকা একফালি সাগর বা একটুকরো মরুভূমিতে। এসব নিয়ে বড্ডো অসুবিধে, কারণ শ্যামরঙা মেয়েদের সমুদ্রে ভালো বন্দর থাকে না, উলটে তাদের নদীগুলোতে এত জলপ্রপাত — ক্যানো বাওয়াই মুশকিল!

যেহেতু আমি কোনওদিন গাছকে শুধু কাঠ হিসেবে দেখতে চাইনি, তোমাকে বুঝতে চেয়ে সময়ের অববাহিকায় বহুদূর নেমে যেতে হয়েছিল। সেখানে পনেরোশো সালে তোমার সমুদ্র এক অভিযাত্রী জিতে নেয়, তারও আগে তোমার মরুভূমি পার হয়েছিল কেউ, আমি বালিতে স্পষ্ট পায়ের ছাপ দেখেছি। এরপর অন্তত দশগুণ বেড়ে গিয়েছিল ট্রাফিক, তোমার দক্ষিণ থেকে উত্তরে রপ্তানি হতে শুরু করে মিউচুয়াল ফান্ডের টাকা, ক্রীতদাসদাসী; উত্তর থেকে দক্ষিণে যায় বাংলা কবিতা আর নলেন গুড়ের সন্দেশ।

শেষ পর্যন্ত তুমি তো মানুষ দিয়েই তৈরি, কাজেই আমার জীবনীও তোমার ভেতরে রয়ে গেছে। যে পুরুষ আসুক, তুমি গ্রহণ করে নাও ব’লে গ্রহণেচ্ছা দিয়ে তোমায় চিনতে পারি না। সেই কাছে-টানা মানুষগুলোকে যখন খুব আস্তে ছেড়ে দিচ্ছো, তখন ধরা সহজ বাবুইসভ্যতাকে — যেভাবে তুর্করা কনস্টানটিনোপল আক্রমণ করলে, সেটা মনে হয় চোদ্দশো তিপ্পান্নটিপ্পান্ন, বাইজানটাইন সভ্যতা ল্যাটিনদের ত্যাগ করেছিল। অবশ্য তারপরও আমার মনে হয়েছে যে তুর্ক অথবা ধীমান মজুমদারকে কাছে টানার মধ্যে তোমার সম্পূর্ণ নিজস্ব এক ভঙ্গি ছিল, যেমন পশ্চিম ইয়োরোপের পুঁজিবাদ বাকি সবার চেয়ে আলাদা।

আসলে, তুমি ভূগোলের বাইরে অনেক দূর ছড়িয়ে গেছ, যদি না তারও অতিরিক্তে হারিয়ে গিয়ে থাকো। দেখো, এই কথাগুলো লিখতে লিখতে আমার রাতও রূপকথা হয়ে যাবে, কেননা সভ্যতা সমস্ত গল্পের চেয়ে অফুরন্ত…

4 thoughts on “বাবুইসভ্যতা

  1. গদ্যের অলংকারে মগ্ধপাঠ প্রিয় কবি চন্দন দা। শুভ নবমী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  2. আপনার লেখা পড়লে মনে হয়, কেন যে আপনার মতো সুন্দর লিখতে পারি না !!
    অবাক মুগ্ধতা চন্দন দা। :)

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।