আমরা অনেকেই জানিনা দুর্গাপূজায় কলা বৌ কি এবং কেনো?
দুর্গা পূজার সময় যদি আমরা মণ্ডপে গিয়ে শ্রী গণেশ কে দেখি, ত দেখতে পাই তাঁর পার্শ্বে লাল পেড়ে শাড়িতে ঘোমটা তে ঢাকা একটি কলা বৃক্ষ দেখি । আসলে এটি কী? অনেকেই বলে থাকেন এটি কলা বৌ বা দুর্গাপুত্র গণেশের স্ত্রী! আসলে এটি কি শ্রী গণেশের স্ত্রী? আসলে কিন্তু আদৌ এটি শ্রী গণেশের স্ত্রী বা বৌ নয় । এটিকে বলা হয় ‘নবপত্রিকা’। এটি মা দুর্গা। অর্থাৎ গণেশের জননী । গণেশের স্ত্রীর নাম রিদ্ধি ও সিদ্ধি ।
নবপত্রিকা কী?
নবপত্রিকার আক্ষরিক অর্থ বোঝায় নয়টি পাতা । কিন্তু এখানে নয়টি উদ্ভিদ দিয়ে নবপত্রিকা গঠন করা হয় । এই নয়টি উদ্ভিদ মা দুর্গার নয়টি শক্তির প্রতীক । সনাতন ধর্মের লকেরা বৃক্ষকে তাদের সকল কর্মকান্ডের একমাত্র উপকরন হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন । পূজা পার্বণে নৈবদ্য থেকে শুরু করে দেব দেবীদের উপাসনা সহ সকল ক্ষেত্রে বৃক্ষ ও তার অংশ বিশেষ যথাঃ ফুল, ফল, পাতা, বীজ প্রভৃতি অতি প্রাচীনকাল তথা আর্য সভ্যতা থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । যেমন দুর্গাপূজায় ব্যবহৃত কলা বৌ’র শাস্ত্রীয় নাম হচ্ছে নবপত্রিকা । নবপত্রিকা বলতে নয়টি গাছের চারা বুঝায় । এগুলো হচ্ছে :
১) কদলী (উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Musa sapientum)
২) কালো কচু (Alocasia sapientum)
৩) হরিদ্রা বা হলুদ (Curcuma domestica)
৪) জয়ন্তী (Sesbania sesban)
৫) বেল বা বিল্ব (Aegle mermelos)
৬) দাড়িম্ব (Punica granatum)
৭) অশোক (Saraca indica)
৮) মানকচু (Alocasia indica)
৯) ধান্য (Orgzasativa)
এই নয়টি গাছের চারাকে শ্বেত অপারাজিতা লতা দিয়ে বেষ্টন করে কলা বৌ সাজানো হয় । সমষ্টিগতভাবে মা দূর্গার প্রতিনিধিরূপে এদের অর্চনা করা হয় । এজন্য এ বৃক্ষগুলোকে নিয়ে চন্ডিতে একটি শ্লোক আছে।
“রম্ভা কচ্ছী হরিদ্রাচ জয়ন্তী বিল্ব দাড়িমৌ
অশোক মানকশ্চৈব ধান্যঞ্চ নব পত্রিকা”
তাই একটি সপত্র কলাগাছের সাথে অপর আট টি সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে দুটি বেলের সাথে সাদা অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়িয়ে ঘোমটা দিয়ে বধূর আকার দেওয়া হয় । তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে দুর্গা দেবীর ডান পাশে রাখা হয় । এটি গণেশের ডান পাশে দেখা যায় ।
শুধু তাই নয় এই নয়টি গাছের প্রত্যেকের আবার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা আছেন।
১) কদলী (কলা) এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হলেন ব্রাক্ষ্মণী
২) কচ্চি (কালো কচু) এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল কালিকা
৩) হরিদ্রা বা হলুদ এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল দুর্গা
৪) জয়ন্তী এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল কার্তিকা
৫) বেল বা বিল্ব এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল শিবা
৬) দাড়িম্ব এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল রক্তদন্তিকা
৭) অশোক এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল শোকরহিতা
৮) মানকচু এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল চামুন্ডা
৯) ধান্য এর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হল লক্ষ্মী
লক্ষ্য করা যায় দুর্গা পূজোর প্রথম দিন সপ্তমীর দিন সকালে পুরোহিত নিজেই নবপত্রিকা কে নিয়ে নিকটস্থ কোন নদী বা পুকুরে স্নান করাতে নিয়ে যান। সাথে মহিলারা উলু ধ্বনি ও শঙ্খ ধ্বনি করতে করতে যান, ঢাকী রাও ঢাক বাজাতে বাজাতে যান। শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয়। তারপর পূজামণ্ডপে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান দিকে একটি কাষ্ঠসিংহাসনে স্থাপন করা হয়। পূজামণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা প্রতিমাস্থ দেবদেবীদের সঙ্গেই পূজিত হতে থাকেন। বিশেষভাবে লক্ষণীয় হল, নবপত্রিকা প্রবেশের পূর্বে পত্রিকার সম্মুখে দেবী চামুণ্ডার আবাহন ও পূজা করা হয়। পত্রিকাস্থ অপর কোনো দেবীকে পৃথকভাবে পূজা করা হয় না।
আজ এই পর্যন্ত পরের পর্বে বৃক্ষ পূজার ধর্মীয় গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা কর হবে।
মা দুর্গাদেবীকে প্রণাম করার মন্ত্র:
সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে।
শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরি নারায়নী নমস্তুতে।।
অর্থঃ
হে দেবী সর্বমঙ্গলা, শিবা, সকল কার্য সাধিকা, শরণযোগ্য, গৌরি ত্রিনয়ণী, নারায়নী তোমাকে নমস্কার।।
তথ্যসংগ্রহ সনাতন ভাবনা অনলাইন থেকে।
আলোচ্য বিষয়টি জানা ছিলো না। দীর্ঘ দিন ধরে দেখে আসা বিষয় ব্যাখ্যাটি আপনার পোস্টে পেলাম। ধন্যবাদ মি. নিতাই বাবু। শুভ সকাল। শুভ দশমী।
শুভ বিজয়াদশমীর শুভেচ্ছা রইল শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। আশা করি ভালো থাকবেন সবসময়।
সুন্দর শেয়ারিং নিতাই দা।
শুভ বিজয়াদশমীর শুভেচ্ছা রইল শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। আশা করি ভালো থাকবেন সবসময়।
হে দেবী সর্বমঙ্গলা, শিবা, সকল কার্য সাধিকা, শরণযোগ্য, গৌরি ত্রিনয়ণী, নারায়নী তোমাকে নমস্কার।
শুভ বিজয়াদশমীর শুভেচ্ছা রইল শ্রদ্ধেয় রিয়া দিদি। আশা করি ভালো থাকবেন সবসময়।
বাহ!! অনেক কিছু জানা হলো।
একটি গাছ অচেনা।
ওচেনা থাকতেই পারে শ্রদ্ধেয় দাদা। পৃথিবীর সব গাছ চিনতো 'লোকমান হেকিম'। আমি আর আপনিতো মানুষই দাদা। তবে কোন গাছটি অচেনা তা কি জানতে পারি?
শুভ বিজয়াদশমীর শুভেচ্ছা রইল শ্রদ্ধেয় দাদা। আশা করি ভালো থাকবেন সবসময়।
ও বাবা ! এতকিছু তো জানা ছিল না!
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা অটুট থাক।
শুভেচ্ছা ও প্রীতি রইলো দাদা
সব ধর্মের সব নিয়ম আর তথ্য জানা থাকা ভালো দাদা। জানা জ্ঞান বিফলে জায় না।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অজস্র ধন্যবাদ ।
বিজয়াদশমীর শুভেচ্ছা
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অজস্র ধন্যবাদ। সাথে দুঃখপ্রকাশ করছি মন্তব্যের জবাব দিতে দেরি হওয়ার জন্য। আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন শ্রদ্ধেয় দাদা। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।