অফিসে হারুন সাহেব প্রতিদিনই দুপুরের চা শিহাবের সাথে খেতে আসেন ওর ডেস্কে। আদা দিয়ে লাল চা। আজ আবার আবহাওয়াটা ও সেরাম। মানে আদা চা’র জন্য আরকি।
যথাসময়ে তিনি হাজির। চা খেতে খেতে হালকা কথা বার্তা তো হতেই পারে। আজো হচ্ছে। তবে খাবার সময়ে একেবারে চুপ করে খাওয়াও নাকি নবীর সুন্নতের পরিপন্থী। আবার খাবার মুখে নিয়ে ভয়ংকর আওয়াজে কথা বলা কিংবা মুখে চা বা পানীয় নিয়ে গার্গল টাইপের কথা বলাও অভদ্রতা।
শিহাব সাধারণত এই টাইপের মানুষদেরকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। ওর বউ এবং বাচ্চারাও তার এই অনুশাসনের বাইরে নয়।
শীত একটু বেশী লাগাতেই বোধ হয় আজ হারুন সাহেব নিজেই চা’টা নিয়ে গার্গলের মত করে পান করতে লাগলেন। শিহাবের মাথার ও হাতের পশম (অন্য সব জায়গার ও) রাগে নাকি ঘৃনায় খাড়া হয়ে গেল। সে অনেক কষ্টে রাগ কমিয়ে নিজেকে শান্ত করলো। কখনও রাগ করবেনা বলেছিলো সেদিন বউয়ের কাছে।
কিন্তু এটা সবসময় মনে থাকে না। ইদানিং মনের যেন কি রোগ হয়েছে। মনের খবর রাখেন যারা, তাদেরকে দেখানো দরকার।
চা পানের সাথে সাথে, এক পর্যায়ে দেশের চলমান রাজনীতির কথাও এসে গেলো। হারুন সাহেব গণতন্ত্র নিয়ে বেশ ফালাফালি করছিলেন। আলাপের এক পর্যায়ে শিহাব বললো,
: গণতন্ত্র যে একটা বোগাস জিনিস তা জানেন?
: কিভাবে? ব্যাখ্যা করুন ?
: তাহলে শোনেন। আমাদের দেশে গণতন্ত্রে মেজরিটি জণগণের ভোটে সরকার গঠন হয়, ঠিক?
: ঠিক।
: মনে করেন ১০ কোটি ভোটারের ভিতর ৫৫% ভোট পেয়ে একদল সরকার গঠন করলো। তাহলে সেই দেশের বাকী ৪৫% ভোটার কিন্তু সরকার গঠনকারী দলকে চায় নাই। তাহলে For the People… Of the People… By the people সম্পূর্ণভাবে কিভাবে সম্পন্ন হয়? এটা শুধু সেই ৫৫% এর জন্য হয়।
হারুণ সাহেব চুপ করে রইলেন। শিহাব আলাপ চালিয়ে গেলো-
: আমাদের এখানে দরকার একনায়কতন্ত্র। ব্যাখ্যা চাইলেন না, শুনেন তবে। ধরেন, এক পরিবারে বাবা, মা ও চার সন্তান। দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। একদিন বাবা সবাইকে ডেকে বললেনঃ ” আমি বাজারে যাচ্ছি। কে কি খাবে বল?
বড় ছেলেঃ আমি খাশীর গোশত খেতে চাই বাবা।
বড় মেয়েঃ আমি গরুর মাংসের ভুনা খাবো।
ছোট ছেলেঃ বাজারে চাঁদপুরের ইলিশ পেলে শর্ষে বাটা দিয়ে খেতে চাই।
ছোট মেয়েঃ রুই মাছের মুড়ি ঘন্ট খাবো বাবা।
সবারটা শুনে ওদের মা বললেনঃ এ মাসে অনেক খাই খাই করেছো। আজ নিরামিশ নিয়ে এসো।”
গল্প শেষ করে হারুন সাহেবকে জিজ্ঞেস করলো শিহাব-
: তো এখন এই পরিবারের কর্তা কার মন রক্ষা করে বাজার নিয়ে আসবে বলেন?
: আপনি ই বলেন।
: তিনি যদি সবার মন রক্ষা করে চলতে চান, তবে যে খরচ হবে তাতে করে কুলিয়ে উঠতে পারবেন না। আর যে কোনো একজনের পছন্দের খাবার আনলে, অন্যরা মুখ ভারী করে উঠে যাবে। তখন একটা বিশ্রী কান্ড হয়ে যাবে।
: তাহলে কি করতে হবে?
: এই পরিবারের কর্তা যদি গণতান্ত্রিক উপায়ে এদের মতামত নিয়ে চলতে চান, তবে তার প্রশাসন কলাপ্স হয়ে যাবে। কারণ ওনার সন্তানদের ভিতর সেই মানার যোগ্যতা নেই। এজন্য তিনি সবার পছন্দ শুনে বাজারে যাবেন এবং সেখানে গিয়ে দেখলেন ভালো কৈ মাছ পাওয়া গেছে। সেটার কয়েক কেজি কিনে আনবেন। এরপর খাবার টেবিলে জলদ্গম্ভীর স্বরে বলবেন, ‘আজ এইটাই খাবার মেনু। চুপচাপ সবাই খেয়ে উঠে চলে যাও’।
এবার উত্তর দেন হারুন সাহেব-
: এটা তো গণতন্ত্র হলো না।
: না, হল না। এটা একনায়কতন্ত্র ওরফে পুটকিতন্ত্র। আরে মশাই, রাখেন আপনার গণতন্ত্র! আগে মানার যোগ্যতা অর্জন করেন। তারপর গনতন্ত্র ফলাইয়েন। এর আগে আর একটা কথাও বইলেন না। যতদিন মানতে পারবেন না, ততদিন ‘মারা খেতে’ থাকেন।।
#গণতন্ত্র_এবং_পুটকিতন্ত্র_কথন_অণুগল্প_৪৫৫
ভাল লেগেছে
ধন্যবাদ দাদা।
শুভ সকাল।
১০ কোটি ভোটারের ভিতর ৫৫% ভোট পেয়ে একদল সরকার গঠন করলো। তাহলে সেই দেশের বাকী ৪৫% ভোটার কিন্তু সরকার গঠনকারী দলকে চায় নাই। তাহলে For the People… Of the People… By the people সম্পূর্ণভাবে কিভাবে সম্পন্ন হয়? এটা শুধু সেই ৫৫% এর জন্য হয়।
শিহাব এর প্রত্যুত্তর যথার্থ মি. মামুন।
শিহাবের সাথে সহমত পোষণের জন্য অনেক ধন্যবাফ ভাইয়া।
শুভ সকাল।

শুভ সকাল রিয়া দিদি।
আগে বাড়ো মহ. আল মামুন ভাই।
আশীর্বাদ চাই প্রিয় কবিদা'
শুভেচ্ছা..