রাহাতের দিনগুলো ঘড়ির কাটা ধরে কেটে যাচ্ছে। শনি থেকে শুরু হয়ে সেই বৃহস্পতিবারে এই রুটিন শেষ হয়। তাও একদম রাত দশটায়। নিজের পরিবারের সকলে কেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সে এক জায়গায়, বউ ছেলেমেয়ে আর এক জায়গায়। বাবা-মা ভাইয়েরা অন্য আর এক জায়গায়। এদের সকলের সাথে যোগাযোগ বলতে গেলে সেই এক বিনা তারে কথা বলা।
মোবাইল।
রেখা আগে প্রতিদিন কয়েকবার কথা বলতো। এখন সপ্তাহে কদাচিৎ দু’একবার কথা হয়। তাও ঠেকে গেলে। মোবাইলে টাকা ভরে দিও তো (রাত দশটায় মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে)। মেয়ে পিম্পি যখন ওর ক্লাশের পড়ালিখায় আটকে যায়, তখন বাবাকে ফোন করে। ইংরেজী কোন শব্দের মানে বুঝছে না কিংবা কেমিস্ট্রির কোনো সংকেত নিয়ে সন্দিহান, তখনই বাবার কাছে জানতে চায়। আর ছোট ছেলে বৃহস্পতিবারে ওর জন্য কোন খেলনাটা নিয়ে আসতে হবে সেটা বলে দেবার জন্য বাবাকে মনে করে। সপ্তাহব্যাপী প্রচণ্ড শারীরিক এবং মানসিক কষ্টে রাহাত বউ, ছেলেমেয়েকে মনে মনে কাছে পাবার চেষ্টা করে। ওরা কি ওদের এই প্রিয় মানুষটির জন্য একটুও কষ্ট অনুভব করে?
নিজে যখন রাহাত ওদেরকে ফোন করে, ওদের ফোন বেজে চলে। ওপাশের মানুষগুলো রাহাতের ফোন রিসিভ কেন করে না? নিজের আব্বাকে বা আম্মাকে ফোন করলে দুটো কি তিনটে রিঙ হবার সাথে সাথেই ওনারা ফোন ধরেন। তাঁরা কি রাহাতের ফোনের অপেক্ষায়-ই থাকেন? অথচ তাদেরকে সেভাবে ফোন করা হয়ে উঠে না।
হঠাৎই রাহাত নিজেকে এক বিরানভূমির মাঝে আবিষ্কার করে। দু’পাশের দিগন্ত বিস্তৃত মরুভুমির এক পাশে নিজের পুর্বপুরুষ, অন্য পাশে উত্তরপুরুষ। সে উত্তরপুরুষের দিকে একটু বেশী ঝুঁকে থাকলেও তারা ওর দিকে কেন জানি ঝুঁকতে চায় না। আর পুর্বপুরুষ ওর দিকে মুখিয়ে থাকলেও রাহাতের সেদিকে ফিরতে কেন জানি আলসেমিতে ধরে। এক বাবা ওর দিকে ফিরে থাকে… সে অন্য এক ছোট বাবার হৃদয়ের উষ্ণতাকে পাবার জন্য- ওর দিকে ফিরে থাকা বাবার হৃদয়কে এখন আর আগের মত অনুভব করতে পারে না।
পারে না? না কি চায় না?
সে নিজে আজ একজন বাবা। সপ্তাহব্যাপী একাকীত্বকে শেষ করে যখন নিজের ছোট বাবার কাছে ফিরে যায়, নিজের বড় বাবার কষ্টটা বাসায় ফিরবার পর নিজের এক দিনের মিলনের আনন্দ উপভোগ করার সময়ে চকিতে অনুভব করে। কিন্তু বড় বাবার কাছে ছেলে হিসেবে ফেরাটা কি আসলভাবে হয়? আদৌ কি ফেরা হয়?
তিনপুরুষের এই চিরন্তন মায়াবী খেলায় রাহাত নামের এক মধ্যবর্তী বাবা নিজেকে বড্ডো অসহায় ভাবে উপলব্ধিতে অনুভব করে নিরন্তর ছটফট করে।
____________________
#মধ্যবর্তী_বাবা_অণুগল্প_৪৭১
মুগ্ধ হলাম মি. মামুন। অসাধারণ একটি অণুগল্প উপহার দিয়েছেন।
আপনার মুগ্ধতা আমার জন্য আশীর্বাদ হলো জানবেন।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
মধ্যবর্তী বাবারাও একসময় বড় বাবা হয়ে যাবে । আজকের বড় বাবার মতো সে ও মধ্যবর্তী আরেক বাবার ফোনের জন্য মুখিয়ে থাকবে , এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
জি, প্রিয় কবি, সঠিক বলেছেন আপনি।
গল্পটি পড়ার শুভেচ্ছা রইলো। ধন্যবাদ।
অনেক সুন্দর সৃষ্টি মহ. আল মামুন ভাই।
জেনে অনেক ভালো লাগলো প্রিয় কবি দাদা!
ধন্যবাদ আপনাকে।

অসাধারণ একটি অণুগল্প পড়লাম।
আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ আমার গল্প পড়ার জন্য।
ভালো থাকুন সবাইকে নিয়ে প্রিয় দিদি। শুভেচ্ছা…
* এক অপূর্ব সৃষ্টি…
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই।
শুভেচ্ছা…
