আমি পুঁইফুল অষ্টমীর চাঁদে জন্ম নেয়া এক ক্রোধ ক্ষুধা,
আমার না আছে কোন অতীত, না আছে আগামীর স্বপ্ন।
গ্রহে নিগ্রহে ঘুমন্ত চোখের অর্ধেকটা রাখি খুলে
বাকি অর্ধেকে লিখে রাখি ত্বকের তল্লাশি ধ্বনি।
আমার জন্ম নিয়ে ততটা উচ্ছ্বাস দেখিনি কারো মাঝে,
আমার মা বলে যে ছিল সেও আমার জন্মে সুখি হয়নি,
আমাকে ক্ষুধার অজুহাতে পশুদের খোঁয়াড়ে পাঠিয়ে দিয়েছিল,
সেই থেকে আমার বেড়ে ওঠা পশুদের সাথে।
রূপকথার ধ্বনিধুননে মা আমার ঝর্ণাফুর্তি আঁকতে
রাস্তার ওপারে উদ্দাম হয়েছিল আমি দেখেছি,
তাঁর অমানুষপনা নিয়ে মঙ্গলের ধুলোয় আমি অশ্রু ঢেলেছি কেবল।
পশুরা আমাকে যখন খাবলাতো
আমি ফাঁকা ফুসফুস নিয়ে বনজারুলের ডালে ভীত বসে থেকেছি,
অন্ধকার রাতে কবরমুখী লম্বা নীরবতায় আত্মমৈথুন হয়েছি।
মাত্র সাতশ’পঁয়তাল্লিশ টাকায় বিক্রি হওয়া এই আমি
যে পশুটাকে বাবা বলে ডেকেছিলাম,
সেই প্রথম আমার রোদ্দুরকণা অশৈল্পিক উল্লাসে ছিঁড়েছিল,
আমার অভিমানী তলপেটে রুগ্নরাতের কিমাকার আগুন ছড়িয়েছিল।
সে দহনে একটি অঙ্কুর যখন প্রথম লজ্জাপত্রে সই দিলো
আমি অনন্ত বিষাদে বীজক্ষেত্রে সাপের নীলবিষ ঢাললাম
অঙ্কুরের মৃতরক্তে আমার স্বয়ংমৃত্যু হলো প্রথমবার,
আমার মৃত্যুর মূল্য ছিল মাত্র দু’হাজার কাগজের নোট।
পথ আমাকে বারবার পথে নামিয়েছে,
আমি কুমারী কলঙ্ক নিয়ে আবারো এক পশুর খোঁয়াড়ে আশ্রয় নিলাম,
সেখানে বাবা বলে আর কাউকে ডাকিনি,
ক্ষুধার বদলে শ্রম, শ্রমের বদলে দেহ, দেহের বদলে সুখ
আমি নৃশংস সুখে শয়ে শয়ে দীনাত্মার ঘৃণা আঙুলের তুবড়িতে উড়িয়েছি,
বর্ষা নামিয়েছি ভাঙচুর বিশ্বাসে।
মন্দ সময় শূন্যতার বুকপকেটে ঢেলে আমি পুঁইফুল লাল হয়ে ফুটেছি,
আমার মননদীর খেয়া ধরে জীবনানন্দের শালিকটি উড়েছে,
শিশিরের হিমে কবিতার খুনোখুনি দেখে
আমি অহেতুক পদ্মার জলে নেমে স্নিগ্ধ হয়েছি,
বাড়ন্ত যৌবনে বীজেরা পাতা মেলতে চাইলে নিপুন শিল্প হয়েছি।
আবারো অঙ্কুরোদগম হলো, আবারো রেশমপথে শিশিরকণা স্বপ্ন হলো,
আমার ছিপছিপে অস্তিত্বকে বাজি রেখে অঙ্কুরের প্রশ্রয় গুনেছি,
চমৎকার নদীতে ধানের ছড়া বিছিয়ে
সৎকার করেছি আমার সকল ভীরুতা, হয়েছি জ্বলজ্বলে এক পূর্নাঙ্গ নারী।
আমি এখন আমার অতীতকে জুয়োর দানে ধরে রেখেছি,
অঙ্কুরোদগমের অপরিণত সুখে নিলামে তুলেছি কুমারী কলঙ্ক, আমার অজস্র মৃত সংলাপ,
এক পূর্ণাঙ্গ নারী এখন ক্রোধদৈন্য লোকাচারের প্রতি কোন দায় রাখে না,
তার পুরোটা দায় কেবল পুঁইফুলের লালিমায় অঙ্কুরিত এক বিন্দু শিশিরকণা।
‘নারীর কথা শুনবে বিশ্ব, কমলা রঙে নতুন দৃশ্য’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে আপনার কবিতাটি শব্দনীড়কে সম্মানিত করেছে। :yes:
আপনার অসাধারণ মন্তব্যে আমিও সম্মানিত হলাম । অনেক ধন্যবাদ।
আজকের দিনে আপনার এই কবিতা শ্রেষ্ঠ একটি উৎসর্গ হয়েছে বলে বিশ্বাস করি বোন।
কবিতার পাশে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ দাদা । ভালো থাকুন ।
কাহিনি প্রধান কবিতা।
একজন নির্যাতিত মেয়ের জীবনের কথা শুনলাম যার প্রতিধ্বনিতে জলে আঁকা একটা ফুলের কথা আছে; তাই বিষন্ন হলাম। যখন পড়লাম জলগুলো ঘাসের ডগায় শিশিরের সৌন্দর্য নিয়ে আমার চোখে ভাসলো। অসাধারণ বিনির্মাণ!
“গ্রহে নিগ্রহে ঘুমন্ত চোখের অর্ধেকটা রাখি খুলে
বাকি অর্ধেকে লিখে রাখি ত্বকের তল্লাশি ধ্বনি।“
শিশির বিন্দুতে ভোরের সূর্য প্রবেশ করলে সেটা দেখতে যেমন লাগে; উপমাগুলি যেন কবিতাটাকে তেমনই চিকমিক রুপ দিয়েছে।
কবিতাটা একজন দুখি মেয়ের অসাধারণ একটা কেইস স্টাডির মতো লেগেছে। যেখানে মেয়েটার চোখের কোণের জল মেশানো আছে; সাথে অসাধারণ কাব্যস্বাদের জোছনাও। আমার কাছে তাই এটা অসাধারণ এক জল-জোছনার কবিতা!
আমাদের সমাজের আনাচে কানাচে কত নাম না জানা মেয়েদের করুণ কাহিনী রয়েছে যার হিসেব আমরা কতটা রাখি। কাহিনী নির্ভর কবিতা অন্তর খুলে লিখা যায় বলে কবিতাগুলো হয়তো হৃদয়স্পর্শী হয়ে থাকে।
কবিতার বিশ্লেষণ এতটাই মনছোঁয়া যে আমি সত্যিই বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। কি বলে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করবো ঠিক বুঝতে পারছি না ।
ধন্যবাদ ও নিরন্তর শুভকামনা।
অসাধারণ হয়েছে দিদি ভাই। সব কবিতাই কথা বলে তবে খেইহীন জীবনের না-বলা কথা খুব কম কবিতাই বলে। আপনি স্পষ্ট বলেছেন। অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
কবিতাটি ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো দি'ভাই। অনেক অনেক ভালবাসা ।
এক পূর্ণাঙ্গ নারী এখন ক্রোধদৈন্য লোকাচারের প্রতি কোন দায় রাখে না,
তার পুরোটা দায় কেবল পুঁইফুলের লালিমায় অঙ্কুরিত এক বিন্দু শিশিরকণা।
* অভিনন্দন প্রিয় কবি…
আপনাকেও অসামান্য শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন।
অনেক বেশী অসহায় এখনও নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই !খুব অপারগ মনে হয় মাঝে মাঝেই । সকল রুদ্ধশ্বাস থেকে আমরা বের হয়ে আসার সংগ্রাম করছি এবং করবো । ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর করে ভিন্নধর্মী কবিতা উপহার দেওয়ার জন্য ।
নারীর প্রতি বৈষম্য কিংবা সহিংসতা এখনো বলবত রয়ে গেছে। সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে কেবল এর ধরণ পাল্টেছে , নির্যাতন বন্ধ হয়নি। আপনার সুচিন্তিত মতামতে খুশি হয়েছি।
ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা।
মর্মভেদী কবিতা আপু। এরকম অজস্র লক্ষ্য কোটি পুঁইফুল আমাদের পৃথিবীতে ছিল আছে আর থাকবেও আরও অনির্দিষ্টকালের জন্য। সত্যি নারীর জন্য অবাধ, নিরপদ্রুপ পৃথিবীর স্বপ্ন আপনার আমার আদৌ হয়তো পূরণ হবার নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রুশ সৈন্যরা জার্মানিতে পৌছে বীভৎস ভয়ানক শারীরিক অত্যাচার করেছিল স্থানীয় নারীদের ওপর। সে সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসক যোসেফ স্ট্যালিনকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বেমালুম তা হেসে উড়িয়ে দেন। বলেন, "পঞ্চান্ন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আমার ছেলেরা জার্মানিতে। এসময় স্বভাবতই তারা ক্লান্ত। তাদের এখন আনন্দ ফূর্তির দরকার আছে বৈকি।"
এটাই আমাদের মানবসভ্যতা ও মানবসমাজ। হয়তো আমিও অল্পবিস্তর এর বাইরে নই। তবু গৌরবের সঙ্গে বলছি, আপনার এ লেখাটি আমাকে বিষণ্ণ করে তুললো।
ভরপুর শুভকামনা রইলো।
নারীর প্রতি আপনার শ্রদ্ধা ও গভীর মমত্ব বোধ আমাকে প্রীত করেছে। সত্য বলতে কি আজো নারী মানুষ হিসেবে মর্যাদা পায়নি । সভ্যতার হাজার বছর পরে ও নারী তার প্রাপ্য মর্যাদা পাবে কি না কে জানে।
কবিতায় সুন্দর অনুভূতি রাখার জন্য ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকুন।