হতাশা


এই মূহুর্তে মানসিক চাপে কে কে আছেন? হাত তুলুন..
এমন প্রশ্ন করা হলে হয়ত শতকরা আটানব্বই জনই হাত উঠিয়ে বলবেন- আমিইই…
আচ্ছা এটা কি ছোঁয়াচে রোগ? নয়ত সবাই কেন একই রোগেই আক্রান্ত?
“সংসার সাগরে সুখ-দুঃখ তরঙ্গের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা…”
-এই ভাব সম্প্রসারণটি না পড়ে স্কুলের গন্ডি পেরোতে পেরেছেন এমন কারও ভাগ্য হয়েছে বলে আমার মনে হয়না। সুতরাং বলা যায় খুব অল্প বয়সেই স্কুল আমাদের জানিয়ে দিয়েছিল –
‘জীবন হল সুখ-দুঃখের পালাবর্তন।’
কিন্তু এটা জানার পরও কেন আমাদের সবার মাঝে দুঃখ জয়ের দৃঢ়তা জন্ম না নিয়ে হতাশা জন্ম নেয়? সমস্যা সমাধানের উপায় না খুঁজে স্রষ্টার অপার সম্ভাবনাময় সৃষ্টি এই ‘মানব মন আর মস্তিষ্ক’ বিকল হয়ে হতাশার মাঝে ডুবে যায়?
সবচেয়ে মজার বিষয় হল আমরা মানবরা সকল প্রাণীকূলের মধ্যে বিচক্ষণ আর বুদ্ধিমান প্রাণী অথচ আজ পর্যন্ত মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণীকে হতাশা, মানসিক চাপ এসবে ভুগতে দেখা যায়নি। আমাদের জীবন আর অন্য প্রাণীদের জীবন তুলনা করে দেখুন কারা বেশি উন্নত, নিরাপদ আর আয়েশি জীবন যাপন করছে?
উত্তর- মানুষ।
তাহলে সহজ ভাবে বললে দাড়ায় মানুষ ছাড়া পৃথিবীর অন্য সকল প্রাণীরই প্রাত্যহিক জীবন নিত্য নতুন সমস্যায় ভরা এরপরও ওরা টিকে থাকে এসবের সাথে লড়াই করে। একজন মানুষকে যদি জীবনটা পাল্টে একটি কীট অথবা পাখির জীবন দেয়া হয় ভাবুন তো ফলাফল কেমন হতে পারে? দেখা যাবে ক্ষুধা-তৃষ্ণা-মৃত্যু এসবের সাথে লড়তে গিয়ে হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিবে কিছুদিনের মধ্যেই।
বলতে পারেন কেন?
কারণটা আমিই বলছি।
আপনার আশে পাশে একটু চোখ বুলিয়ে নিন। আপনার চারপাশের মানুষ গুলো কি সবাই একই রকম?
-না।
আমরা মানব জাতির মাঝেই কত শ্রেণী বিন্যাস! মেধা, বংশ, গায়ের রং, পেশা, চরিত্র, টাকা-পয়সা, রুচি, শিক্ষা প্রত্যেকটা বিষয়েই ভাল-মন্দ-উঁচু-নিচু কত বৈষম্য! আপনার মেধা কম, গায়ের রং ভালোনা, তৃতীয় শ্রেণীর পেশা, কম শিক্ষা যেদিকেই আপনার ঘাটতি থাকুক না কেন আপনার সমাজ তথা সমাজের মানুষ আপনাকে প্রতিনিয়ত চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে আপনার অপূর্ণতাকে। যার যত বেশি অপূর্ণতা তাকে তত বেশি কথার খোঁচা নামক বুলেট হজম করতে হয়। আর এই বুলেটে জর্জরিত মানুষগুলোর পরিণতি দাড়ায় হতাশায়। পশু-পাখিদের মাঝে এসব বৈষম্য নেই। ওরা একজন আরেকজনকে ছোট করে মজা নেয়না। ওদের মাঝেও ঝগড়া হয়, মারামারি হয় কিন্তু উদ্দেশ্য একটাই বেঁচে থাকা…
সুতরাং দেখা যাচ্ছে আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোই একজন আরেকজনের মাঝে হতাশার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে পালা করে। কি লাভ হচ্ছে এতে বলতে পারেন? আরেকজনের অপূর্ণতাকে পুঁজি করে নিয়মিত তাকে কথার অনলে না পুড়িয়ে দিন না তাকে একটু আশার আলো…একদিন পাশে বসে তার মনে চেপে রাখা হতাশার গল্পটি শুনুন আর মাথায় হাত রেখে বলুন – তুমি পারবেই। বিশ্বাস করুন আপনার এই ছোট্ট কাজটি বদলে দিবে ঐ মানুষটির জীবন আর পুরো সমাজকে। হোক সে আপনার বোন-মা-বাবা-ভাই-বন্ধু কিংবা প্রতিবেশি। প্রতিদিন এভাবে অন্তত একটি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে দেখুন না। দেখবেন একদিন ঝলমলে সকালে পাখির কলকাকলি ছাপিয়ে চারদিক মুখরিত হতাশামুক্ত সুখি মানুষের সরব হাসিতে।
জীবনে দুঃখ-অপূর্ণতা-ব্যর্থতা এসব থাকবেই। তাই বলে নিজেকে কখনও অযোগ্য ভাববেন না। আপনি স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এটাই আপনার বড় যোগ্যতা।

10 thoughts on “হতাশা

  1. আপনি স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এটাই আপনার বড় যোগ্যতা।

     

    * এটিই চূড়ান্ত  কথা… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  2. লিখাটিতে সমস্যাকে যেভাবে চিহ্নিত করা গেছে সেভাবে … সমাধানও চলে এসেছে। গ্রেট। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  3. ঝলমলে প্রতিটি সকালে চারদিক মুখরিত হোক হতাশামুক্ত সুখি মানুষের সরব হাসিতে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  4. হতাশাবোধ থেকে মুক্ত হোক আমাদের নিত্যদিন।  সুন্দর পোস্ট।  

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।