বুদ্ধিমান কৃপণ জামাই ও শ্বাশুড়ির গল্প

বুদ্ধিমান কৃপণ জামাই ও শ্বাশুড়ির গল্প

এক বুদ্ধিমান কৃপণ জামাই যাবে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। শ্বশুরবাড়ি যেতে হলে হাতে করে কিছু-না-কিছু নিতেই হয়। না নিলে আর মানসম্মান বলতে কিছুই থাকে না। এই নিয়মটা ধনী গরিব সবার জন্যই প্রযোজ্য। তাই বুদ্ধিমান কৃপণ জামাই শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে এক মিষ্টির দোকান থেকে একটা দইয়ের পাতিল কিনে, রওনা হলো।

শ্বশুরবাড়ি গিয়ে দইয়ের পাতিলটা শ্বাশুড়ির হাতে ধরিয়ে দিলো। শ্বাশুড়ি জামাতার হাত থেকে দইয়ের পাতিল নিয়ে রান্নাঘরে ছিকায় ঝুলিয়ে রাখলো। জামাই শ্বশুরবাড়ি গেল বিকালবেলা। শ্বশুরবাড়ি গিয়ে বাড়ির আশে-পাশে ঘোরা-ফেরা করে বাড়ি ফিরলো রাত ৯টায়। এদিকে জামাতার আগমনে শ্বাশুড়ি কয়েকরকমের খাবারের ব্যবস্থা করে ফেললো। জামাই বলে তো একটা কথা আছে, তাই।

শ্বাশুড়ি জামাইকে বলছে, বাবাজি হাত মুখ ধুয়ে এসে রাতের খাবারটা সেরে নাও।

শ্বাশুড়ি বলার আগেই তো জামাই বাবাজি হাত মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে বসে আছে পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য। সাথে আছে কষ্টের টাকা দিয়ে কেনা বড় এক দইয়ের পাতিল। কখন যে দই খাবে, সেই চিন্তাই জামাই বাবাজির মনটা আনচান আনচান। অনেক অপেক্ষায় থাকার পর শ্বাশুড়ির ডাক পড়লো এখন। ডাক পড়ার সাথে সাথে কৃপণ জামাই একটু তাড়াতাড়ি করেই রান্নাঘরে থাকা খাবারের টেবিলের এক কোণে গিয়ে বসলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবারের টেবিলের চারকোনা ভরে গেল। বাসলো শ্বশুর, শালা, শালিরাও। শ্বাশুড়ি খাবার পরিবেশন করছেন। খাবারের তালিকায় ছিল, মুরগি মাংস, গরুর মাংসের ভুনা, রুইমাছের ঝোল, মসুরের ডাল সহ আরও কিছু শাকসবজি। সবাই মনের আনন্দে খাচ্ছে। কৃপণ জামাই বাবাজিও সবার সাথে তাল মিলিয়ে খাচ্ছে ঠিক, তাঁর নজর কিন্তু টাকা দিয়ে কেনা দইয়ের দিকে। খাচ্ছে আর এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। কিন্তু দইয়ের পাতিল তাঁর নজরে পড়ছে না। মনে মনে কৃপণ জামাই চিন্তা করছে, দইয়ের পাতিলটা আমার শ্বাশুড়ি কোথায় লুকিয়ে রাখলো? ভাবনার বিষয়ই বটে! তারপর দেখা গেল মাথার উপর দইয়ের পাতিল ছিকায় ঝুলানো আছে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল, দেখি শেষতক কী হয়?

খাওয়া-দাওয়া প্রায় শেষ পর্যায় এসে পড়লো। শালা-শালি, শ্বশুর আব্বাও খাবার খেয়ে চলে গেল। এখন খাবারের টেবিলের এক কোণায় শুধু জামাই বাবাজিই বসা। জামাই শুধু দইয়ের কথাই ভাবছে! আর মনে মনে বলছে, আমার শ্বাশুড়ি তো দইয়ের কথা একেবারে ভুলেই গেছে। এখন উপায়? ভেবেচিন্তে বুদ্ধিমান কৃপণ জামাই মাথায় একটা বুদ্ধি ডাউনলোড করে ফেললো। বুদ্ধি হলো, একটা মিথ্যে গল্প শুনিয়ে শ্বাশুড়িকে দইয়ের কথা মনে করিয়ে দিতে হবে। গল্পটাও কৃপণ জামাই রেডি করে ফেললো। শ্বাশুড়ি কিছু জিজ্ঞেস করলেই, শ্বাশুড়িকে মিথ্যে গল্পটা শোনাতে হবে। এই ভেবেই জামাই খাওয়ার টেবিল থেকে আর উঠছে না, বসে বসে শুধু খাওয়া পাতে ঘষামাজা করছে।

এদিকে শ্বাশুড়ি মনে মনে ভাবছে, জামাই বাবাজির পেটের ক্ষুধা মনে হয় নিবারণ হয়নি। তাই খাবারের টেবিল থেকে ওঠছে না।

সামনে গিয়ে শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করলো, বাবাজি আর কিছু লাগবে?
জামাই– না আম্মা, আর কিছু আমার লাগবে না। তো একটা কথা মনে পড়ে গেল। তাই বসে বসে ভাবছি আম্মা।
শ্বাশুড়ি– কী কথা বাবাজি? বলো শুনি!
জামাই–আম্মা আপনাদের বাড়ি আমি আর আসবো না।
শ্বাশুড়ি– কেন বাবা, কেন? কী হয়েছে বলো দেখি?
জামাই– না আম্মা, তেমন কিছু হয়নি। তবে আপনাদের বাড়ি আসার পথে একটা সাপ দেখে ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম তো, তাই।
শ্বাশুড়ি– বলো কী বাবা! কোথায়, কোনখানে?
জামাই– ঐযে, আপনাদের বাড়িতে আসা দুই সাইটে বাগান আর জংলার মাঝখান দিয়ে রাস্তার মাঝে। অনেক বড় বিষাক্ত সাপ, আম্মা। দেখেই আমার শরীর শিউরে ওঠলো!
শ্বাশুড়ি– হায় হায়! বলে কী জামাই? তা কত বড় সাপ হবে, জামাই বাবাজি?
জামাই– অনেক বড় সাপ আম্মা! তা আমার এই খাওয়ার থালা থেকে ঐযে ছিকার উপর ঝুলানো দইয়ের পাতিলটা দেখা যাচ্ছে? ঠিক এতো বড় হবে আম্মা।

এই বলেই জামাই পানির জগ হাতে নিয়ে হাত ধোবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর শ্বাশুড়ি নিজের জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো, হায় হায়! আমার জামাই তো এই দইয়ের জন্যই এতক্ষণ যাবত বসে আছে! আমিতো দইয়ের কথা একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম।

তাড়াতাড়ি জামাই বাবাজির হাত ধরে শ্বাশুড়ি বললো, হাত ধুয়ো না বাবা, দই আছে। এতো কষ্ট করে দইয়ের পাতিলটা এনেছ, না খেলে কি আর হয়! আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম বাবা। এখন দই খাও।

জামাই– আমিও তো আম্মা তা-ই ভেবে আপনাকে মিথ্যের সাপের গল্পটা শোনালাম। কারণ, আমার অনেক কষ্টের টাকা দিয়ে এই দইয়ের পাতিলটা কেনা। না খেলে কি আর চলে? দেন, দেন আম্মা, তাড়াতাড়ি দেন!

আমরা কি এতো বুদ্ধিমান জামাই হতে পেরেছি? মনে হয় না!

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

12 thoughts on “বুদ্ধিমান কৃপণ জামাই ও শ্বাশুড়ির গল্প

    1. আমাদের এলাকায় থাকা এক কৃপণ ব্যক্তির সাথে কথা বলতে গিয়ে এই গল্পটা মনে পড়ে গেল, শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। তাই লিখলাম। ওই লোক, চার কেজি মিষ্টি শ্বশুরবাড়ি নিয়েছিল। কিন্তু এই চার কেজি মিষ্টি থেকে একটা মিষ্টিও ল্পকটি ভাগে পায়নি। সেই জ্বালায় এই বিগত চার-পাঁচ বছর যাবত আর শ্বশুরবাড়ি যায় না। দেখুন অবস্থা!

  1. হাহাহা। বেচারা জামাই এর বুদ্ধি ঠিক আছে নিতাই বাবু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Razz.gif.gif

    1. এইরকম গল্প কোনোএক সময় বাস্তবে হয়েছে দাদা। আমার এই মামার মুখে শোনা গল্প লিখলাম। ভালো থাকবেন দাদা।

  2. হাহ হাহ হা হা খুব সুন্দর গল্পই না লিখেছেন পড়ে মজা পেলাম।

    শুভেচ্ছা জানবেন

     

     

     

    অসাবধানতাবসত কিছু বানান…..

    1. সত্যি এক হাদির গল্প দাদা। আসলে এরকম বাস্তবেও রূপ নিয়েছিল। এখনো এমন কৃপণ মানুষ আমাদের আশে-পাশে বসবাস করছে। এটা তাদের জন্যই প্রযোজ্য দাদা।

    1. রাতে শুভেচ্ছা জানাতে পারিনি বলে এখন শুভ সকালের শুভেচ্ছা জানিয়ে দিলাম, শ্রদ্ধেয় দাদা। আশা করিি ভালো থাকবেন সবসময় ।

  3. সেকেলে বুড়োদের মুখে শোনা গল্প নতুনভাবে উপস্থাপন করার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই দাদা আপনাকে। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।