প্রতিভাবান ব্যক্তিদের মানসিক সমস্যা – পর্ব ২

প্রতিভাবান ব্যক্তিদের মানসিক সমস্যা – ২

এর আগেই আমরা জেনেছি যে প্রতিভাবান ও সৃজনশীল মানুষেরা বাইপোলার ডিসঅর্ডার নামক মানসিক রোগের শিকার হয়ে থাকেন। ইতিমধ্যেই আমরা কিছু সাহিত্যিক ও সৃজনশীল ব্যাক্তিত্বদের সম্বন্ধে (যেমন ভ্যান গঘ, সিলভিয়া প্লাথ, ভার্জিনিয়া উল্ফ, এডগার অ্যালান পোর মতো খ্যাতিমান ব্যাক্তিদের সম্বন্ধে) জেনেছি।

আজ প্রথমেই যেটা জানবো সেটা হল বাইপোলার ডিসঅর্ডার কি? আমরা জানি শরীর ও মন একে অপরের জন্য অপরিহার্য। মন ভাল না থাকলে শরীর ভাল থাকে না। তেমনি শরীর ভাল না থাকলে মনও ভাল থাকে না। আপনাকে সুস্থ থাকতে হলে শরীর ও মন দুটোতেই সুস্থ থাকতে হবে। কিন্তু শরীরের অসুখ হলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি এবং চিকিৎসক এর কাছে গিয়ে নিজেরাই চিকিৎসা করাতে পারি। মনের অসুখ হলেও তা পারি কি? হ্যাঁ আমরা তাও পারি, তবে তার আগে মনের অসুখ হয়েছে কি না, সেটার গুরুত্ব দেওয়ার উপর নির্ভর করে আমরা মনের অসুখের জন্য চিকিৎসকের কাছে যাবো কি না। বেশীর ভাগ সময় আমরা বুঝতেই পারি না যে আমাদের মনের সমস্যা আছে এবং চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

তাছাড়া মনোরোগ শুরুতেই বুঝতে পারলে এর ক্ষতিগ্রস্ততা কম হয়, কারণ তাতে চিকিৎসা করে অথবা সাবধান হয়ে রোগটি সাড়ানো যায়। মনের অসুখ সারাতে মেডিটেশন খুবই দরকারি। আমরা অনেকেই কম বেশী মেডিটেশন সম্পর্কে জানি যে কিভাবে মেডিটেশন করতে হয়। স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা, হতাশা, বিষণ্নতার পাশাপাশি অন্যান্য মানসিক রোগের ক্ষেত্রেও মেডিটেশন কার্যকরী। অনেক সাইকিয়াট্রিস্টই এখন অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, মনোযোগের বিক্ষিপ্ততা, হাইপার এক্টিভিটি ডিসঅর্ডার, এবং সিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক রোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে মেডিটেশন করাকেই যুক্তি সঙ্গত বলে মনে করেন।

বাইপোলার ডিসঅর্ডার হলো হঠাৎ করে কোন ইচ্ছের বা মুডের ফলে যে মানসিক ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়, একে ‘ম্যানিয়া’ও বলা হয়। বাইপোলার ডিসঅর্ডার এক ধরনের গুরুতর আবেগজনিত মানসিক রোগ, এর এক দিকে থাকে ‘ডিপ্রেশন’ বা বিষণ্নতা এবং অন্য দিকে থাকে ম্যানিয়া। ডিপ্রেশনে মনের আবেগের উদ্দীপনা কম থাকে। মনে বিষণ্ণতা অনুভব হয়। কোনো কাজ ভালো লাগে না। শরীরে ও মনে অবসাদ অনুভব হয় আর অন্যদিকে ম্যানিয়াতে মনের আবেগের উদ্দীপনা অতিরিক্ত অনুভূত হয়। সব কিছু বেশি বেশি ভালো লাগে মনে অতিরিক্ত উত্তেজনা কাজ করে ইত্যাদি।

এ রোগের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হলো রোগী হঠাৎ করে আত্মহত্যা করতে পারে। বাইপোলার ডিপ্রেশনে থাকাকালীন সময়ে আত্মহত্যার সম্ভাবনা প্রায় ৪০% হতে পারে। ম্যানিক ডিসঅর্ডারেও প্রায় ১০% রোগী আত্মহত্যা করতে পারে। অধিক উত্তেজনার কারণে অনেক সময় কাউকে মেরেও ফেলতে পারে। জিনিসপত্র ভাঙচুর বা অন্য কাউকে শারীরিকভাবে আঘাতও এ রোগের অন্যতম ঝুঁকি। তাছাড়া ম্যানিক রোগগ্রস্ত অবস্থায় অনেকের বেশি টাকা-পয়সা খরচের প্রবণতা বেড়ে যায়। এ সময় হঠাৎ করে বিভিন্ন ব্যাবসায় অর্থ বিনিয়োগ করে দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। বাইপোলার ডিসঅর্ডারে রোগীর জীবনের একটা বড় কার্যক্ষম সময় নষ্ট হয়ে যায়। তাই রোগী বিভিন্ন সময় নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লিপ্ত থাকে এমনকি বহু ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপে আকৃষ্ট হতে পারে।

চলবে …

21 thoughts on “প্রতিভাবান ব্যক্তিদের মানসিক সমস্যা – পর্ব ২

  1. 'মনের অসুখ সারাতে মেডিটেশন খুবই দরকারি। আমরা অনেকেই কম বেশী মেডিটেশন সম্পর্কে জানি যে কিভাবে মেডিটেশন করতে হয়। স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা, হতাশা, বিষণ্নতার পাশাপাশি অন্যান্য মানসিক রোগের ক্ষেত্রেও মেডিটেশন কার্যকরী। অনেক সাইকিয়াট্রিস্টই এখন অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, মনোযোগের বিক্ষিপ্ততা, হাইপার এক্টিভিটি ডিসঅর্ডার, এবং সিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক রোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে মেডিটেশন করাকেই যুক্তি সঙ্গত বলে মনে করেন।'

    নিবন্ধে বেশ কিছু শিক্ষণীয় থাকে। আপনার লিখাতেও পেলাম কবি বন্ধু রিয়া রিয়া।

    1. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রিয় বন্ধু। আপনার মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা। :)

  2. মেডিটেশন সবার জন্যই আসলে দরকার । জীবন তো ওঠানামার সমষ্টি । এগুলোকে ব্যালান্স করার জন্য দরকার মেডিটেশন । বড় মানুষগুলোর বিষয়গুলোতো আরো সমস্যাজনক । আবার মনে হয় ওনারা আসলে নিজেরাও জানতেন না কতটা প্রতিভাবান তারা …। এজন্যই এই খুটিনাটি দিকগুলোর দিকে নজর রাখতেন না যতটা মনে হয়  । তোমার পোস্ট ভালো লাগছে  ।শুভেচ্ছা জেনো । 

  3. ভালো লাগলো আপনার গবেষণালব্ধ লেখাটি। আবারও, প্রতিভাবান অপ্রিতিভাবান মানুষ মাত্রেরই কোনও না কোনও বুদ্ধি বিবেচনার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি আছেই। যেমন ধরুন আমার অস্বাভাবিক টিকটিকি ভীতি, উচ্চতা ভীতি ইত্যাদি।

     

    ভরপুর শুভেচ্ছা রইলো।    

    1. ভালো লাগলো আপনার গবেষণালব্ধ লেখাটি। আবারও, প্রতিভাবান প্রতিভাহীন মানুষ মাত্রেরই কোনও না কোনও বুদ্ধি বিবেচনার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি আছেই। যেমন ধরুন আমার অস্বাভাবিক টিকটিকি ভীতি, উচ্চতা ভীতি ইত্যাদি।

       

      ভরপুর শুভেচ্ছা রইলো।

    2. আমারও অসম্ভব টিকটিকি ভীতি রয়েছে প্রিয় অর্ক দা। মন্তব্যে খুশি হলাম। :)

  4. ভালো লাগলো আপনার গবেষণালব্ধ লেখাটি। আবারও, প্রতিভাবান প্রতিভাহীন মানুষ মাত্রেরই কোনও না কোনও বুদ্ধি বিবেচনার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি আছেই। যেমন ধরুন আমার অস্বাভাবিক টিকটিকি ভীতি, উচ্চতা ভীতি ইত্যাদি।

     

    ভরপুর শুভেচ্ছা রইলো। 

    (আগের দুটো মন্তব্য খানিক ভুল এসেছে!)

  5. স্কিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার এফেক্টিভ ডিসঅরডার এবং আরোকিছু মানসিক রোগের ওপর চমৎকার লিখেছেন। এইসব মানসিক রোগের সাথে মানুষের প্রতিভার কতোটা সম্পর্ক আছে সেটা গবেষণার বিষয়। বড় বড় গবেষণার পরও সেগুলির ফলাফল বাস্তব জীবনে কাজে লাগানোর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এই যেমন ডিম নিয়ে এখন গবেষণালব্ধ নতুন ধারণা একেবারেই এতোদিনের ধারণার বিপরীত। কিন্তু মেডিক্যাল প্রফেশনালদের অনেকেই ওটা গ্রহণ করবেনা যতদিন না গুরুত্বপূর্ণ মেডিক্যাল জার্নাল যেমন ল্যাঞ্চেট বা মেডিক্যাল বই যেমন ডেভিডসনে না  আসে।

    জাস্ট স্কিজোফ্রেনিয়ার জন্য বিশাল রাজবংশ ধংশ হয়ে গেছে এমন কাহিনি আমরা শ্রেণি শিক্ষকের কাছে শুনেছি। খুব সহজ করে (অসাধারণ উপস্থাপনা) এইসব রোগের ভয়াবহতা (যেমন আত্মহত্যার প্রবণতা, ধ্বংসাত্মক কাজ) এবং প্রতিকার বলে দিয়েছেন।

    খুব দামি পোস্ট দিদি!

    1. :) আর একটি পর্ব অর্থ্যাৎ শেষ পর্ব আগামীকাল আসবে আশা করি। ধন্যবাদ।

  6. * অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট….https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    ভালো থাকুন সুপ্রিয়। 

  7. সুন্দর। তথ্য সমৃদ্ধ  পোস্ট। বর্তমানে উপমহাদেশে মানসিক রুগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে । সাবলীল গতিতে পর্ব গুলো এগিয়ে যাক ।            

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।