[ এই অণুগল্পটি কোনাবাড়িতে চাকরি করাকালীন সময়ে লিখেছিলাম। ফেসবুক মেমোরির কল্যাণে আজ আর একবার সামনে এলো। আমার নতুন বন্ধুদের জন্য শেয়ার করলাম ]
তোতলা লেখকের এক বৃহস্পতিবার
আজ বৃহস্পতিবার।
একাধারে আমার ‘বউ দিবস’ এবং ‘কন্যা দিবস’। সপ্তাহের এই দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। আজ অধিকাংশ সুইং ফ্লোর পাঁচটায় ছুটি। সামনে দুই দিন বন্ধ। ভালোলাগার থার্মোমিটারে পারদ এক ধাপ চড়া হয়ে আছে আগে থেকেই।
একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ছোট্ট গ্রামটির আমার এখনকার অস্থায়ী নিবাস আমাকে ডাকছে। আমার অপেক্ষায় ব্যালকনিতে দাঁড়ানো তিন নারী ‘আমাকে ঘিরে’ তাদের অপেক্ষার অনুভূতিতে কেমন প্রগলভ হয়, আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এই ইচ্ছেটা ওদের সামনে এলে কেন জানি সুপ্ত থাকতে ভালোবাসে।
ছোট কন্যার সাথে আসন্ন খুনসুটির তীব্র ভালোলাগার অনুভূতি… বড় কন্যার কাছে-দূরে থাকা বাবার প্রতি ওর ভালোবাসায় সিক্ত হবার অন্যরকম ভালোলাগা… আর ওদের থেকে নিজেকে যখন বিচ্ছিন্ন দেখতে পাই, তারপরে আমার সময় হয় ‘মেকুরাণীর’ (আমার বউকে এই নামেও ডাকি আমি) সাথে মুহুর্তগুলো কাটানোর।
আমার লেখার একজন সমালোচক এবং বিমুগ্ধ পাঠক আমার মেকুরাণী। দিনভর সংসার সংসার খেলায় ক্লান্ত সে রাতের গভীর মুহুর্তগুলোতে আমার অনেক কাছে থেকে আমার লেখা আমার নিজের মুখে শোনে (আমি একটু তোতলা, কথা বলার সময় না বোঝা গেলেও আমার নিজের লেখা কাউকে পড়ে শোনাতে গেলে স্পষ্ট বোঝা যায়)। এরকম একজন মানুষের কাছ থেকে পড়া শোনাটা যে কতটা কষ্টকর, সেটা ভুক্তভোগীমাত্রই অনুধাবনে সক্ষম হবেন।
তবে আমি পড়তে পড়তে ক্লান্ত হই না। পাশে আমার ‘সাথী’ থাকার অনুভূতিতে প্রচন্ড উদ্বেলিত এই আমি একটানা পড়ে যাই। হঠাৎ অনুভব করি আমার শরীরে ওর শরীর! কখন ঘুমিয়ে পড়েছে সে… আমার সামনে ল্যাপটপে আমার অনুভূতিগুলোর কালো আক্ষরিক রূপ! আমি যে নিজেকে এক অনুভূতির কারিগর মনে করি, নিজের অনুভূতিগুলো বাড়ি ফেরার স্বল্প সময়গুলোতে ‘ওকে’ আর বলা হয়ে উঠে না। তবে সে আমার একটা হাত ধরে থাকে… যদিও ঘুমে, তবুও ওর অবচেতন মনে আমি বিরাজ করি। সে জানে আমাদের জীবন এভাবেই কেটে এসেছে, যাচ্ছে, হয়তো এভাবেই কাটবে সামনেও। তাই এরই মাঝে জীবনের মানে খুঁজে নিতে হবে সবকিছু মিলিয়ে।
আমার মেকুরাণী আমাকে এই সামান্য হাত ধরে থেকেই রাজ্যের অনুভূতি এনে দেয়… কল্পনার এক বিচিত্র জগত যেখানে আমরা দুইময় জগত… সেখানে টেনে নিয়ে যায়। তার ভাবনা হয়তো এমন-
‘মেঘ করে আসবেই, পথ ঝাপসা হবেই বৃষ্টিতে
পা পিছলে তলিয়ে যাবে, তার আগে যতক্ষণ পারো
আঙুলে আঙুল আঁকড়ে রাখো…’ *
আমিও ঘুমন্ত সেই মুখের দিকে চেয়ে আমার কোয়ালিটি সময়গুলো পার করি… ভালোলাগা আরো ভালোলাগাকে সাথে নিয়ে পাক খেতে থাকে আমাদেরকে ঘিরে!
এমনই কিছু অনুভূতি নিতে আর কিছুক্ষণ পরে রওয়ানা হব সাভারের উদ্দেশ্যে।
_______________
* কবিতাঃ জয় গোস্বামী।
‘মেঘ করে আসবেই, পথ ঝাপসা হবেই বৃষ্টিতে
পা পিছলে তলিয়ে যাবে, তার আগে যতক্ষণ পারো
আঙুলে আঙুল আঁকড়ে রাখো…’ *
জয় গোস্বামীর কবিতা যোগ আপনার লিখাটিকে অনন্য এক মর্যাদায় নিয়ে গেছে।
মূলত এই কবিতাটি পড়ার সময়েই গল্পটির জন্ম অবচেতন মনে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য। শুভেচ্ছা…

সুন্দর মহ. আল মামুন ভাই।
গল্পটি পড়ার শুভেচ্ছা গ্রহন করুন, দাদা। অনেক ভালোবাসা…

শুভেচ্ছা নিন প্রিয় গল্প দা।
নিলাম প্রিয় দিদি। ধন্যবাদ এবং আপনার জন্যও অনেক শুভেচ্ছা…
