ফাঁন্দে পইড়া কান্দে বগা

ফাঁন্দে পইড়া কান্দে বগা

বছর ঘোরে, ঘুরবেই জানা দুগ্ধপোষ্যেরও
দ্বিপদ মাথা ঠোকে অন্ধ দেওয়ালে-
ঠুকবেই, জানা পাহাড় ও সমুদ্রের:
অথচ অম্বুজা সিমেন্টের চেয়েও শক্ত প্রাচীর
অটুট, নির্বিকার।

দেখতে দেখতেই কয়েক বছর শেষ
আর এতদিনে হঠাৎ এক সদ্য কুঁড়ির ভোরে
কাঁচা ঘুম ভেঙে অকালে পক্ককেশ
হাট্টাকাট্টা সাজোয়ান রাজামশায়ের
এভারগ্রীন রানীমায়ের
নিমপাতা চেবানো জিভে মনে পড়ে গেল
জরুরী অবস্থার গুলির শব্দ!

মন্ত্রীমন্ডল বড়ই বিপদে,
আগেকার রামরাজত্বের সুখ উধাও
পেছনে সদা কাঠি দেয় বজ্জাত গণতন্ত্র,
একটু আধটু স্বজনপ্রীতি কিম্বা
সার্টিফিকেটের জালজোচ্চুরি অথবা…
অথবা … অথবা …
বাছতে গেলে কম্বলই উজাড়!
এত ত্যাগস্বীকারের দাম সামান্য রূপোলী টাকায়
আশ্চর্য, সেখানে কিসের ভুল!

তবু চাঁদ ওঠে, তবু আষাঢ়ের মেঘ অকারণে
ঢাকা দিয়ে চাঁদের শ্লীলতাহানি করে,
রাজার স্বাস্থ্যবান ছাতি আর হৃষ্টপুষ্ট
চওড়া কবজি দেখেও কোনেকাঞ্চিতে
ফিসফিস অকারণেই চলে,
অচ্ছে দিন এখনো এলোনা!

বারবার রাবণ সন্ত ছদ্মবেশে দরজায়
এলেই কি মায়াগাছ আপনি গজায়
অন্ধকার কুঁড়ের ঝাপসা স্যাঁতসেঁতে ছায়ায়!
বারবার বোকা হয় আমজন রাজমহিমায়…

তারপর …
তারপর …
তার আর কোনো আগে নেই, পিছে নেই
দিনাতিপাত অসহ হয় নিত্য উর্দ্ধগ্রাফে,
ফাঁস জড়িয়ে শক্ত হয়ে গলায় বসলে
চোখ শুকনো হয় আপনিই
জিভ বাইরে এসে সূর্যের আলো দেখে:
কোটির সিংহাসনে বসে মহিম রাজা
জড়োয়া মোড়কে তীক্ষ্ণ উদ্দীপক রানী
ঝিলমিল ঝলমল রাজপুরুষের গুচ্ছ
জরুরী অবস্থার গল্প শোনায়
পরিবর্তণের গল্প শোনায়
গল্প শোনায় অচ্ছে দিনের;
ভনভন মশার কাঁদুনির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে
মাটির রোয়াকে বসে লাখো ভাঁজ পড়া ত্বকের গাঁওবুড়া
ছড়া কেটে গল্প শোনায় সেই রূপকথার
আন্ধের নগরী চৌপট রাজা
টাকিসের ভাজি টাকাসের খাজা।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

12 thoughts on “ফাঁন্দে পইড়া কান্দে বগা

  1. সুন্দর প্রকাশ কবি সৌমিত্র দাদা।শুভেচ্ছা নিরন্তর।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  2. হাট্টাকাট্টা সাজোয়ান রাজামশায়ের
    এভারগ্রীন রানীমায়ের
    নিমপাতা চেবানো জিভে মনে পড়ে গেল
    জরুরী অবস্থার গুলির শব্দ!

    ভারতের রাজনীতির ডামাডোলে অসংখ্য প্রাণের যে মৃত্যু তা সত্যই দুঃখজনক। :(

    1. তুমি ঠিকই বলছো প্রিয় ভাই। নির্বাচন তো নয় হত্যাযজ্ঞ চলছে। ভালো থেকো।

  3. রূপক কবিতাটি মাথার উপর দিয়ে গেলেও অনবদ্য রচনা কবি সৌমিত্র চক্রবর্তী। 

    1. কবিতাটি রূপকই বটে কবি সুমন আহমেদ ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।