ইউরোপের অনেক রেস্টুরেন্টের বারে ফানবোর্ডে লেখা থাকে “ড্রিংক বিয়ার সেভ ওয়াটার”। এই লেখাটা প্রথমবার দেখে বেশ হাসি আসলেও বারটেন্ডার যখন বললো আফ্রিকার অনেক দেশে বিশুদ্ধ পানির দাম বীয়ারের চেয়ে বেশী, তখন হতাশা পেয়ে বসে। যেকোনো পরিমানের এলকোহলই হোক, যকৃত কিডনির জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সেসব দেশে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য হলেও সবাইকে বীয়ার পান করে বাঁচতে হবে। তারা কৈশোর থেকেই এলকাহলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আমরা যেখানে কেটো ডায়েটের নামে একটা বীয়ার পান করলে ৭ টা পাউরুটির সমান কিলোক্যালোরী গ্রহন করবো এই ভয়ে তার ধারে কাছে যাই না, সেখানে কালো দরিদ্র মানুষগুলো নিজের জীবন বাচাতে বীয়ার তথা এলকোহলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।
একটা সময় মনে হতো আর কতটা ক্ষতি হলে মনে হবে অনেক হয়েছে, এখন আমাদের থামা উচিত। সমাজ থেকে সকল কলুষিত চিন্তা ভাবনা, অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। শুনেছি বিশ্বের ৮০ টি শহরে যুবক যুবতীরা মিছিল করে রাস্তা বন্ধ করছে শুধু একটা দাবী নিয়ে, পৃথিবীর জলবায়ু রক্ষা করতে হবে। অথচ নেতাদের কথাবার্তা শুনলে ছোটবেলার আজব একটা চিন্তার কথা মনে পড়ে যায়।
তখন বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই লম্বা ছুটিতে নানু বাসা চলে যেতাম। সকাল বেলা উঠেই সুবর্ন বাসে উঠে ঢাকার দিকে যাত্রা করা, দৌলতদিয়ার ঘাটে লঞ্চ ধরা, পদ্মার থৈ থৈ ঢেউয়ে ভয় লাগলেও একটা রোমাঞ্চ অনুভব করতাম নানু বাড়ি যাচ্ছি। আমি আবার সাতার জানতাম না। পদ্মার প্রমত্তা ঢেউ আমার মনে ভয় জাগাতো, ভাবতাম এটাই বুঝি শেষ যাত্রা আমার। কিন্তু দেখো! তারপরও দিব্যি বেচে আছি। পদ্মা এখন দেখতে কুমার নদীর মতো মজা কোনো খাল। সে যাই হোউক, ঢাকায় এলে নানুকে দেখতাম বিশাল একটা এলুমিনিয়ামের ট্রেতে চালের খুঁত বাছতেন। মামারা ছিলো যৌথ পরিবার, তার ওপর দু তিনজন বিয়ে করে সবাই একসাথেই থাকতো, সে এক বিশাল হুলস্থুল ব্যাপার স্যাপার। নানু কাজের মেয়েদের নিয়ে দিনের একটা বড় অংশ কাটাতেন চাল বাছতে বাছতে। ছুটির সময় সব কাজিনরা এলে বাসা পুরো গরম হয়ে যেতো। নানু সব পিচকি পাচকাদের ধরে চাল বাছতে বসিয়ে দিতেন আর আমরা স্বানন্দে পুরো ড্রাম ভরে দিতাম।
চাল বাছতে বাছতে মনে হতো এই যে একটা দুটো তিনটি খুত বেছে নিলাম এতে কি চালের পরিমান কমবে? এত গুলো চালের মধ্যে দুটো চাল নিলেও তাতে কোনো পার্থক্য হবে না। এমনকি আরো দুটি, আরো দুটি, প্রগমনিক ধারায় চলতে থাকলেও সে চাল ফুরোবে না। নানুকে বুঝিয়ে না বলতে পারলেও তিনি ঠিকই বুঝে নিয়ে একটা লাইন বললেন,”কোন সে ব্যাপারী গুনতে পারে এক থাল সুপারী?” রাতের বেলা আকাশের তারা গুনতে গিয়েও একই সমস্যায় পড়লাম। ঠিক যেখান থেকে তারা গুনতে শুরু করেছি, আমি সেখানেই আটকে থাকি। কোথা থেকে কোন তারা কোথা দিয়ে উকি দিচ্ছে, বোঝা মুস্কিল। তারা গোনাটা একটা গোলক ধাঁধাঁ। তবু আমার দুঃসাহস থামেনি। জ্ঞান অর্জন করলাম, বুঝতে শিখলাম কিভাবে অসংখ্য জিনিসকে মাপতে হয়, তাকে কাজে লাগাতে হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্ব নেতারা নাছোড়বান্দা। তারা ছোটবেলার সেই চাল গোনার হিসাবেই পড়ে আছে। মনে করে এতটুকু কার্বন নিঃসরনে কিছু হবে না। হলেও প্রকৃতি ঠিকই সামলে নেবে। অথবা যদি হয়ও তাহলে সেটা অবশ্যম্ভাবী। ঠেকানো যাবে না। তারা যেনো ছোটবেলার সেই ভ্রান্ত দর্শনে আটকে আছে।
স্লাভিক গড চেরনোবগ ছিলেন একজন অপদেবতা। সে অভিশাপ দেবার পয়মন্ত ছিলো, হাস্যজ্বল উৎসবে মৃত্যুর ছায়া ডেকে এনে বিষাদের বন্যা বইয়ে দিতে তার মুন্সিয়ানা তুলনাহীন। ওডিনের গুংনীরের মতো তার ছিলো কাঠের তৈরী বিশাল হাতল ওয়ালা হাতুড়ী। উৎসর্গের গরুর মাথায় এক আঘাতে ফাটিয়ে হত্যার প্রিয় অস্ত্র ছিলো সেই হাতূড়ি, যেনো তরমুজের মতো ফেটে চূরমার। আমাদের নেতারা হলো সেই চেরনোবগের ছায়া। তাদের কলমের খোঁচা গ্রীমনিরের গুংনীড়।
আমরা সেই উৎসর্গের গরু, বলা যায় বলির পাঠা। যদিও প্রহেলিকার জগতে বাস আমরা নিজেদেরকে মহান হুবালের বিশ্বাস ধারন করা সাহসী ছায়াসঙ্গী ভাবতে ভালোবাসি অথচ এ সবই মায়া, মিথ্যা। আমাদের বিশ্বাসের মোহরে তারা বেঁচে থাকে, ঈশ্বর হয়ে আমাদের ভাগ্য নিয়ে হাস্যকর খেলা খেলে।
আমাদের দরকার ছিলো একজন প্রমেথিউস অথবা ফ্রান্সের আধুনা “ভলতেয়ার” পল সাঁত্রে, যারা আমাদের চোখের পর্দা সরিয়ে ইউটোপিয়ার জগতকে ভেঙ্গে দেবেন! যদিও ভয় হয়, আমাদের বিপ্লব হাতছাড়া হয়ে মধ্যযুগীয় হুবালের হন্তারক ডাকাতের অনুসারীদের হাতে না চলে যায়! আজ তাই ইরান, আফগানিস্তান, সিরিয়ার লাখোকোটি মানুষ নীরবে কাঁদছে, সে কস্ট গুলো আসলেই কাউকে স্পর্শ করে না, না হুবাল, না আজুরা মেহতা, না ওডিন অথবা আখেনাতেনের সেই আদি পরাক্রমশালী “আতেন”!
হ্যাপী ব্লগিং!!
মি. উদাসী স্বপ্ন।
প্রথমেই দুটি কারণে আপনাকে বিশেষ শুভেচ্ছা জানাবো। একটি হচ্ছে শব্দনীড়ের আংশিক ব্লগারদের মতো আপনি কবিতার সাগর পাড়ি দিয়ে ভাব-কাব্যের ভাণ্ডার হাতে নিয়ে প্রবেশ করেন নি। সামনেও আশা করবো ইহজগতের বাইরে নেবেন না। প্লিজ।
দ্বিতীয় কারণ, আপনার প্রকাশনার শেষে হ্যাপী ব্লগিং শব্দটিকে জুড়ে দিয়ে সবার প্রতি যে আহ্বানটি রাখলেন তাতে করে নস্টালজিক হলাম। আমার শুরু'র ছায়া খুঁজে পেলাম।
ছোট ছোট স্মৃতি কথায় স্বাভাবিক রেখেছেন আপনার ব্লগ। চেরনোবগ বা কালো ঈশ্বরের অশুভ ছায়া থেকে নিজেকে যেমন বাঁচাতে হবে; অন্যকেও সজাগ রাখতে হবে। পদ্মা এখন কুমার নদীর মজা খাল। এই খালে যেদিন বিকল্প দাঁড়াবে, দাঁড়াতে দাঁড়াতে ঈশ্বরদীর মতো মানুষও সেদিন পায়ে হেঁটে নদী পেরুবে। এক্সিলেটর লাগিয়ে সুফল আসবে না। চেরনোবগ এর জয় নয়; ক্ষয় চাই। ভালো থাকুন। স্বাগতম শুভ ব্লগিং। :yes:
আপনি কি সামু ব্লগের সেই মুরুব্বি নাকি? একজন ছিলেন, বেশ কিছু ভালো স্মৃতি ছিলো ঐ নিকের সাথে।
আপনার এই ব্লগ বেশ আধুনিক বলতে পারেন অনেক মৌলিক ফিচার আছে। বেশ কয়েকবছর ধরে চোখ রাখছিলাম। কিন্তু অন্যকোথাও লেখার তাগাদা অনুভব করিনি। সামু ব্লক হবার পর এখন সেটা করতেই হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ সে সুযোগ করে দেবার জন্য
আর কবিতা লেখা আমার দ্বারা হয় না। আমার ধাতে নেই। তাই বখাটে কবি হয়ে কবিতাসন্ত্রাস করে সবাইকে উত্তক্ত করবো সে ভয় থেকে নিস্কৃতি দিতেই পারি।
হ্যাপী ব্লগিং
কেবলই সামু ব্লগের কিনা সঠিক বলতে পারবো না; তবে 'আমার ব্লগ' নামের ব্লগে একজন মুরুব্বি নিকে লিখতেন। অসম্ভব মেধাবী একজন মানুষ। তাঁর সঠিক নাম একসময় পেয়েছিলাম তবে এখন আর তেমন মনে নেই আমার। আমি তাঁর ভক্ত।
২০০৭/৮ এ মুরুব্বী নিকে আমার যাত্রা শুরু প্রথম আলো ব্লগে। আর স্বনামে কিছু লিখা ছিলো চতুর্মাত্রিক এবং সামুতে। তারপর ২০০৯ এ শব্দনীড় তৈরী হলে তখন থেকে এখানেই। কোথাও আর তেমন ভাবে যাওয় হয়নি। সামু'র দরোজা নিশ্চয়ই একদিন; জানা ম্যা'মকে যতটা জানি, তিনি তাঁর সাইটকে খুলিয়েই ছাড়বেন। হয়তো নীড়ের পাখি নীড়ে ফিরে যাবেন। অনুরোধ আমাদেরকেও সঙ্গ দেবেন।
শব্দনীড় তৈরী হয়েছে কিছু নিজস্বতা নিয়ে। প্লাগইনও নিজস্ব। অপ্টিমাইজেশন গড়পড়তা অন্যান্য ওয়ার্ডপ্রেস ডিপেন্ডেন্ট ব্লগ গুলো থেকে ভিন্ন চিত্রের। অটো।
কবিতাসন্ত্রাস থেকে সবাইকে উত্তক্ত করার ভয় থেকে নিস্কৃতি পেয়ে নিশ্চিন্ত হলাম।
সামু ব্লগের ওপর স্টিভ জব্বারের খেদ কেমন যেনো কটু লাগে। তেলবাজী করে মন্ত্রিত্ব বাগাতে পারলেও জাতে যে উঠতে পারেননি সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য তার প্রমান রাখে। যতই রাগ অভিমান থাকুক, সামুর স্থান সবার কাছেই নস্টালজিয়ায় ভরা।
আমার নিজের মধ্যেও এখন কিছুটা হতাশা বিরাজ করে এসব অনাহূত পরিস্থিতি দেখে। দিন দিন ঘোর অমানিশা গ্রাস করছে।
আপনাকে স্বাগতম উদাসী। মুরুব্বী যথার্থ আলোকপাত করেছেন। আপনার লিখা নিয়মিত চাই। আর হ্যাঁ প্রিয় সঞ্চালককে অনুরোধ করবো আপনার ওপেনিং লিখাটিকে বিশেষ নির্বাচন করার জন্য। কাউকে সম্মান দিলে নিজে যেমন সম্মানিত হওয়া যায়, অন্যকেও সম্মানিত করা যায়। আমনা সম্মানিত হতে চাই। ধন্যবাদ।
কি বলবো ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। নিজের ধর্মবিরোধী কট্টর অবস্থানের কারনে বাস্তবিক জীবনে অনেক কথা শুনতে হয়। এমন সময় এতটুকু সম্মান অনেক অর্থবহ মনে হয়।
সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা সাথে থাকবার জন্য
হ্যাপী ব্লগিং। আজকে তো পড়লাম। আজকেই তো দেখা হলো। দেখি আরও কিছুকাল।
অবশ্যই দেখা হবে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য
আর কতটা ক্ষতি হলে মনে হবে অনেক হয়েছে, এখন আমাদের থামা উচিত। সমাজ থেকে সকল কলুষিত চিন্তা ভাবনা, অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। রিপিটেড।
ঠিক তাই
আপনি নিয়মিত লিখতে থাকুন, আমরা পড়তে থাকবো। লেখার মধ্যে একধরনের স্নিগ্ধ সুগন্ধ পেলাম। সত্যিই ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ অনুপ্রেরনার জন্য
শব্দনীড়ে আপনাকে স্বাগতম উদাসী স্বপ্ন ভাই। নিয়মিত চাই।
অনুপ্রেরনামূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ