উদাসী স্বপ্ন এর সকল পোস্ট

উদাসী স্বপ্ন সম্পর্কে

ছেলেটি নেমেছিলো পথে নীল মায়ার হাতছানিতে। প্রথমে বোঝেনি জোছনা কি চায়! উদাসী স্বপ্নগুলো উজার করে তাই আজ নিঃস্ব হয়ে হিসাবের দেনা গুনে যায়। যদি কোনোদিন হিসাব মেলে, তাহলে প্রমেথিউসের মত ভালোবাসা চুরি করে বিলিয়ে দেবে সর্বহারাদের দলে। নির্মোঘ ঘোরে কাটিয়ে দেয়া ইউটোপিয়া তাই আজ খুব আপন....

হুদাই

১.
আলো সরল পথেই চলে। আর তাই আপনি ওয়ালে টর্চ মারলে ঐ ওয়ালেই পড়বে, জানালা দিয়ে ঘুরে ফিরে পাশের বাড়ির সুন্দরী জরিনার ওপর পড়বে না। এখন টর্চের আলোর সামনে একটা কার্ডবোর্ড রাখলে তার ছায়া ওয়ালে পড়বে। ছায়া অন্ধকার এবং আলোর এত ক্ষমতা নাই যে সে কার্ডবোর্ড ভেদ করে ওয়ালে আছড়া পড়বে। আলোহীনতার কারনে ছায়ার অংশটা অন্ধকার হবে। এটা সবাই জানে, এর মধ্যে নতুনত্ব কিছু নাই। এখন বাসার দুস্ট শিশুটি একটা সুই নিয়ে কার্ডবোর্ড ফুটো করে দিলো। তাহলে ওয়ালে দেখবেন ছায়ার মধ্যে একটা ফুটো পেয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে একটাই ফুটো পাবেন। কিন্তু শিশুটি ধারনাতিত দুস্ট হওয়ায় ঐ ফুটোর পাশে আরেকটা ফুটো করে দিলো। তো স্বভাবতই মনে হতে পারে ওয়ালে আপনি দুটো ফুটোই পাবেন।

কিন্তু না, তাকিয়ে দেখলেন অনেকগুলো ফুটো লাইন ধরে। মনে হতে পারে কোনো ম্যাজিক বা কিছু একটা ভুল বা ফুটো আরো কোথাও আছে। আপনি যেটা করলেন আরো কার্ড বোর্ড নিলেন এবং দুটো ফুটো করে বোর্ডে টর্চ মেরে দেখলেন ফোটার সংখ্যা টর্চের মাথা থেকে কার্ডবোর্ডের দূরত্বের সাথে বাড়ছে কমছে। এমনকি ফোটাগুলোর উজ্জলতাও। প্রশ্ন আসতে পারে আলো যদি এমন ঘুরায় ফেরায় যায় তাহলে ওয়াল ভেদ করে জরিনার কাছে যায় না কেন?

এরকম একটা পরীক্ষা, এমন সন্দেহ নিয়ে পদার্থবিদরাও চিন্তায় পড়েছিলেন এবং এখান থেকেই কোয়ান্টাম ফিজিক্সের ব্যাসিক ধারনা প্রতিষ্ঠা পায়। তারা এর সমাধান দেয় অনেকটা এভাবে: পুষ্কুরীনিতে আপনি যখন ঢিলটা মারলেন তখন তার চারপাশে গোলাকার ঢেউয়ের সৃষ্টি হইছে। এখন আপনি একটা কাজ করলেন ৮-১০ টা খুটি ফাকা ফাকা রেখে পুস্কুরিনীর তলদেশে পুতে একটা গোলাকার বৃত্তের সৃষ্টি করলেন এবং তার মধ্যে একটা ঢিল ছুড়লেন। একটু ভালো করে দেখেন এবার তার চারপাশের গোলাকার ঢেউ একটা প্যাটার্ন সৃষ্টি করছে। খুটি বরাবর সামনের দিকে কোনো উচু ঢেউ নেই কিন্তু দুটো খুটির মাঝখানে ফাকা বরাবর প্রথমে একটা, পরে সেটা থেকে দুটো এবং একটু পর চারটা এমন করে ছোট ছোট ঢেউয়ের সংখ্যা বাড়ছে। ঠিক এই জিনিসটাই আলোর সাথে হচ্ছে।

তার মানে আলো আসলে কনিকা নয়, এগুলো একেকটা ঢেউ। তাহলে আমরা যে অমুক কনিকা সমুক কনিকা পাওয়া গেছে বলি এটা কি ভুল? না, সেগুলো আমরা গননার সুবিধার্থে বলি। আর কনিকা হলেও যে পিং পং বলের মতো টু টু করে ফাল পাড়বে সেটা না। প্রতিটা ঢেউয়ের চূড়া একটা বিন্দু এবং বিন্দু গুলোর আচরন অনেকটা পিং পং বলের মতো। তাই বলে আপনি বলতে পারবেন না এটা শুধু ফাল পাড়তেছে। পিং পং বল যেমন ডানে বায়ে ঘুরে, সামনে এগোয়, বাউন্স করে এই পয়েন্টগুলোও সেরকম করে। এবং আপনি যখন তাদের বিন্দু মনে করে হিসাব করেন তাহলে তখন আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে একটা কনিকা নির্দিস্ট অনেক জায়গাতে থাকতে পারে।

আর এজন্যই শ্রোয়েডিঙ্গার তার তার বিড়ালের থট এক্সপ্যারিমেন্ট দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন কেন এটা একই সময় জীবিত ও মৃত!
এতুকু যদি বুঝতে পারেন, নিদেপক্ষে অনুধাবন করতে পারেন তাহলে আমার কথা শুনে রাখুন, আপনি এখন পুরো কোয়ান্টাম ফিজিক্স নিজে বুঝে ক্লাস থ্রি এর একটা পিচকিকে সে বিষয়ে জ্ঞান দিতে পারবেন এরকম মজাদার এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে, দারুন তাই না?

২.

পঞ্চইন্দ্রিয়ের ব্যাখ্যাতীত সবকিছুই আমাদের কাছে অলৌকিক লাগে। একসময় মনে হতো বৃষ্টি পড়া সুর্য দেখা, পীরের দোয়ায় গর্ভবতী হওয়া বিশাল কেরামতি। যদিও মানুষজনের জ্ঞানবুদ্ধি বাড়ার সাথে সাথে বুঝতে পারে আসলে ঐ পীরটা ছিলো একটা লম্পট চরিত্রের।

পোস্ট শেষ। ভাবলাম হুদাই একটা জিনিস লেখে পোস্ট করি।

ধর্ষন: কিছু মিথ -১

৭৭ এর দিকে মিশেল ফুকোঅদ্ভুত একটা যুক্তি দিলেন। নারী পুরুষের যৌনপ্রক্রিয়া কখনোই অপরাধতুল্য হতে পারে না। কারন এটা একটা আদিমতম জৈবিক প্রক্রিয়া যা স্বতঃস্ফূর্ত কিন্তু ধর্ষন অবশ্যই অপরাধতুল্য কেননা এটা জোর করে তার ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। অনেকটা এমন যে আপনি কাউকে সাকার পাঞ্চ বা সজোরে মুস্টিবদ্ধ ঘুষি মারলেন। সেভাবে কারো জননাঙ্গের ভেতরে জোর করে নিজের যৌনাঙ্গ প্রবেশ করা অবশ্যই সেরকম একটা উদাহরন ধরা যেতে পারে কিন্তু আপনি যখনই সেটা শুধু মেয়েদের জননাঙ্গ হিসেবে তুলে ধরবেন যা সুরক্ষা করা দরকার (যেমন টাকা পয়সা ইত্যাদির মতো বিশেষ লিঙ্গের জননাঙ্গকে অস্পৃশ্য মনে করা), বস্তুত আপনি তখনই ট্যাবুতে নিয়ে গেলেন। আসলে এটা তা না, এটা হলো একধরনের সহিংসতা। তার এই যুক্তিটি তৎকালীন নারীবাদের মেইনস্ট্রিমের সেক্সিট জনপ্রিয় ধারার থেকে সমালোচিত হয়। ফুকোর এই বক্তব্য অনুযায়ী আধুনিক সময়ে যৌনতাকে ট্যাবু হিসেবে দেখার যে ভ্রান্তি এবং তা থেকে সুযোগ নেয়া সুবিধাবাদীদের আঁতে বেশ ঘাঁ দিতে এখনো সক্ষম। হয়তো ২০২০ এর দিকে #MeToo এর সেকেন্ড ওয়েভে ধর্ষক বা নীপিড়কদের উল্টো প্রতিবাদী হয়ে ওঠা অথবা বাংলাদেশে সুবিধাবাদী সুশিল ধর্ষকদের কন্ঠে পুরুষ নির্যাতনের যে বুলি শোনা যায় এটা তারই ফল।
দ্বাদশ শতকে রোমানরা ধর্ষনকে অপরাধ গন্য করে সংজ্ঞায়িত করে এভাবে যে যৌনমিলন হোক বা না হোক নারীর ওপর ধর্ষনের উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগ করা হলেই সেটা ধর্ষন বলে গন্য হবে। সম্প্রতি এফবিআই তাদের ধর্ষনের সংজ্ঞাকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছে যার মাধ্যমে ভিক্টিম শুধু নারী হতে পারেন না, একটি শিশু, হিজড়া অথবা একজন পুরুষ বা সমকামী অথবা বিবাহিতা স্ত্রীও (যদি তার স্বামীর দ্বারা ধর্ষিত হন) হতে পারেন।

তারপরও ধর্ষন থেমে নেই। ধর্ষন কেন হয় সেটা নিয়ে একটা ব্লগ লিখেছিলাম চাইলে এখানে পড়ে আসতে পারেন। পুরোটাই মানসিক বিকৃতি সংশ্লিস্ট ব্যাপার।

ধর্ষন নিয়ে যখনই কোনো আলোচনা হয় তখন এর দুটো দিক নিয়ে কথা হয় সেটা হলো ধর্ষিতা নারী সাহসী হয়ে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জনসম্মুখে বলবে যাতে সবাই সচেতন হন এবং এটা যে আসলেই কত খারাপ সেটা নিয়ে সবাই ভাবতে পারে, এর মূল উদঘাটনে ডিসকোর্স হতে পারে। আরেকটি দিক হলো প্রশাসনিক যারা মূলত ধর্ষনের কোনো ঘটনা ঘটলে তার তদন্ত, আসামী পাকড়াও, ভিক্টিমের পুনর্বাসন এবং তার উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের মতো দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পাদন করেন।কিন্তু সমস্যা এখানেই শেষ হচ্ছে না, মূল সমস্যা যেখানে সেটা হলো ধর্ষনের সংজ্ঞা একেক দেশে একেক রকম। আমেরিকার এফবিআই ধর্ষনকে যে সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করেছে, মুসলমান দেশগুলো সেভাবে সংজ্ঞায়িত করে না কারন সেখানে দাসী আর স্ত্রী ধর্ষন হুদুদ আইনেই বৈধতা দিয়ে দিয়েছে এবং হ্বদের ধারায় ধর্ষনকে কোনোভাবেই সুস্পস্টরূপে ব্যাখ্যা করে নাই। আবার অনেক দেশে সমকামীরা নিজেদের পরিচয় জানালেই তাদের মৃত্যু অনিবার্য, আবার বাচ্চাবাজী ও বাল্যবিবাহের নামে শিশুধর্ষন বা স্টাচুয়ারী র‌েপ রাস্ট্রিয় ভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

১) সুইডেন ধর্ষনে এত উপরে কেন?

যদি আমরা ধর্ষনের পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তাহলে সুইডেনের অবস্থান পাবো ষষ্ঠ স্থানে। প্রশ্ন আসতে পারে সভ্যতার ধারক বাহক বলে খ্যাত এবং শান্তির দেশ হিসেবে যাকে বিবেচনা করা হয় তাদের সমাজ ব্যাবস্থা এত খারাপ কেন! তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
এর কারন হলো সুইডেনের অতিরিক্ত উদ্বাস্তু থাকার কারনে সেখানে যে সামাজিক বিপর্যয় হচ্ছে এবং দ্বিতীয়ত ধর্ষনের সংজ্ঞার পরিবর্তন।
বিশ্বের নানা জায়গায় যুদ্ধবিগ্রহ,অযাচারের কারনে উদ্বাস্তুরা যেসব উন্নত দেশে নিরাপদে থাকার অনুমতি পায় তাদের মধ্যে সুইডেন শীর্ষস্থানীয়। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে এসভিটির তথ্যমতে ধর্ষনকারীদের ৫৮ শতাংশের জন্মই সুইডেনের বাইরে যার ৪০ শতাংশ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের বর্বর মুসলমান দেশগুলো থেকে। বাকীরা আফগানিস্তান আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপ থেকে। আর বাকী যারা সুইডেনে জন্মেছে তাদের ৮০ ভাগ এসেছে ইমিগ্রান্ট ফ্যামিলির থেকে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, আফগানিস্তানের যুদ্ধের কারনে চলে আসা উদ্বাস্তুদের জন্য তার দুয়ার খুলে দেয়ার ফলে গত এক দশকে সুইডেনে বেড়েছে ৮০ শতাংশের ওপরে। ।

এখন আসি ধর্ষনের সংজ্ঞাতে তাদের কি বিবর্তন হয়েছে।ত্রয়োদশ দশক থেকেই স্টাচুয়ারী রেপ অর্থাৎ শিশু বা কিশোরের সাথে যেকোনো প্রকারের সহবাসকে ধর্ষন হিসেবে গন্য করে আসছে এবং সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এর শাস্তি মৃত্যুদন্ড ছিলো। ১৯৬৫ সালে সুইডেন বিশ্বে সর্বপ্রথম ম্যারিটাল রেপ অর্থাৎ স্ত্রীর অনুমতি ব্যাতিত সহবাসকে ধর্ষন হিসেবে গন্য করা শুরু করে। সমকামী এবং লিঙ্গ নিরপেক্ষ সংজ্ঞাকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করে ১৯৮৪ সাল থেকে। অজ্ঞান অবস্থায় কারো সাথে সহবাস করলে তা সে স্ত্রী হোক অথবা গার্লফ্রেন্ড সেটাকেও ধর্ষন হিসেবে গন্য করা শুরু করে ২০০৫ সাল থেকে। সুইডিশ পুলিশের ওয়েবসাইট অনুযায়ী বর্তমানে ধর্ষনের সংজ্ঞা অনেকটা এমন:

যেকেউ যদি কাউকে শক্তির মাধ্যমে যৌনক্রিয়া করা হুমকি দিলে যদি ভিক্টিম অপমানিত বোধ করেন তাহলে তাকে ধর্ষনের দায়ে ২ থেকে ৬ মাসের জেল খাটতে হবে।ধর্ষনের জন্য জেল কখনোই চার বছরের নীচে এবং ১০ বছরের ওপরে হবে না

যৌনক্রিয়া, হতে পারে তা সহবাস, কিন্তু অন্যান্য যৌনক্রিয়া ও এর তালিকাভুক্ত এবং তার জন্য যদি কাউকে হুমকি বা ঝগড়ার মাধ্যমে বাধ্য করা হয় বা তার চেস্টা করা হয় তাহলে সেটাও ধর্ষনের অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি অরাধী কাউকে ড্রাগ, মানসিক প্রতিবন্ধী বা মাতাল অথবা অন্যান্য মাদকের মাধ্যমে তার দুর্বলতার সুযোগ নেয় তাহলে তাকে ধর্ষনের দন্ডে দন্ডিত করা হবে।

২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে যৌনাঙ্গ ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে স হবাস বা পেনিট্রেট যেকোনো অবস্থাতে করলেও সেটা ধর্ষন বলে গন্য করা হবে।
সুইডেনে ধর্ষনের পরিসংখ্যান এমন ভাবে করা হয় যে যখনই উপরোক্ত সংজ্ঞানুসারে কোনো অভিযোগ রিপোর্ট করা হয় তখনই সেটা পরিসংখ্যান বিভাগে চলে যায়। পরে যদি কেসটা অপ্রমানিত বা ডিশমিশ হয়ে যায় তাতেও সে পরিসংখ্যানে কোনো প্রভাব পড়ে না যেটা অন্যান্য ইউরোপীয়ান দেশে হয়ে থাকে। আবার কোনো স্ত্রী যদি অভিযোগ করেন যে তার স্বামী মাসে প্রতিদিন তাকে ধর্ষন করে তাহলে সেখানকার পুলিশ তা ৩০ বার হিসাব করে।
আরো একটি কারন না বললেই নয় যে ২০০০ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ভিক্টিম সার্ভের তথ্যানুযায়ী ধর্ষনের মতো ঘটনা সুইডেনের পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ গোপনীয়তা এবং ভিক্টিমের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এবং শূন্য দুর্নীতি থাকায় সেখানে ধর্ষিতা বা অভিযোগকারীর সন্তুষ্টি বেশ ভালো কারন লিঙ্গ সাম্যতায় সুইডেন বিশ্বে শীর্ষস্থানে আছে।

ইউএনওডিসির রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ১ লক্ষ জনে ৬৫ জন ধর্ষনের অভিযোগ করে যেখানে ১২৯ টা দেশের মধ্যে ৬৭ দেশে ধর্ষনের কোনো ডাটাি পাওয়া যায় না। এর অন্যতম প্রধান কারন সেসব দেশের দুর্নীতি, প্রশাসনের ওপর অনাস্থা। আবার এই ৬৭ টা দেশের ৯০ ভাগ দেশই হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আবার অনেক দেশে ধর্ষন নামে কোনো টার্ম নাই কারন কোরানে ধর্ষন নামের কোনো শব্দ নাই যেমন মিশর। মিশর এটাকে শারিরীক আঘাতের তালিকাভুক্ত করে। এমনকি বাংলাদেশ চায়নার মতো দেশে গত দশকে ধর্ষনের হিসাবটাও ঠিক মতো পাওয়া যেতো না। সৌদিআরবের ঘটনা আরো ভয়ঙ্কর

যাই হোক উদ্বাস্তু সমস্যার কারনে গত ৫ বছরে তাদের দেশে ধর্ষনের পরিমান ভয়াবহ পরিমানে বেড়েছে। এবং শাস্তি প্রদানের হার ১৩% যা অন্যান্য নরডিক দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন। এ নিয়ে এয়ামনেস্টি ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে তারা। আরো ভয়াবহ ব্যাপার হলো ২০১৩ সালে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এত কিছুর পরও প্রায় ৮০শতাংশ ধর্ষনের ঘটনাই রিপোর্টে করা হয় না।

সে হিসেবে বলা যেতে পারে প্রশাসনিক সততা স্বচ্ছতা ও পরিপূ্র্ন সংজ্ঞায়িতকরন এবং উন্নত সমাজ ব্যাবস্থার সাথে বর্বরতম জঙ্গী সভ্যতার অসততাই দায়ী সুইডেনের এমন উচ্চ পরিসংখ্যানের পিছে।

২) বাংলাদেশ ধর্ষনে ভারত থেকে পিছিয়ে।

২০১৯ সালে ধর্ষন পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ৪১ তম যেখানে সুইডেনের অবস্থান ৬। ভারতের অবস্থান হলো ৯১ তম। পরিংখ্যানে বলা হয় বাংলাদেশে ভারতের থেকে ৫ গুন বেশী ধর্ষন হয়। শুধু ধর্ষনই নয়, সার্বিক অপরাধচিত্র কতটা ভয়াবহ ভারতের তুলনায় সেটা এখানে ক্লিক করলেই বোঝা যাবে। তাই কেউ যদি বলে ভারতের থেকে বাংলাদেশে ধর্ষন কম হয়, তাহলে নিশ্চিত থাকুন সে একজন জ্ঞানপাপী মিথ্যুক বা অজ্ঞ। যে দেশে বাল্যবিবাহকে সুন্নত হিসেবে দেখা হয় এবং ইসলামী স্কলাররা শিশুধর্ষনের চর্চায় মত্ত তাদের কাছ থেকে সত্য কখনো জানবেন না।

চলবে……

পাপ শপাংকের সাতকাহন-১

এ্যারিস্টটলের মতে মানুষ কোনো পাপ কাজ করতে পারে না, সে যাই করে তার নিজের জন্যই করে। তখনকার গ্রীক দার্শনিকরা পাপকে আক্রাশিয়া নাম দিয়েছিলেন। প্লেটো এ্যারিস্ট টল যতই পাপের অস্তিত্ব অস্বীকার করুক না কেন, আকিনাস, দেকার্ত সবাই এই আক্রাশিয়ার অস্তিত্বের ওপর অগাধ বিশ্বাস রেখেছিলেন। কেউ কেউ নিজের বিবেকের বিপরীতে কিছু করাকেই পাপ বলতেন, কেউ কেউ খোদ বিবেকের উৎস এবং তার পঠন পাঠন নিয়েই প্রশ্ন তুলতেন।

তখন আমাদের ভার্সিটির গেটের সামনে বাঁচা বাবা নামের একটা রেস্টুরেন্ট ছিলো। রান্নায় তেমন বাহারী স্বাদ না থাকলেও হলের একই রকম খাবার থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমাদের একমাত্র উপায় ছিলো এই রেস্টুরেন্ট টি। কারো জন্মদিন, বা কোনো বান্ধবী প্রপোজ করেছে অথবা সেমিস্টার ফাইনালে টপ করলেই চল বাঁচা বাবা। পাশ করে বের হয়ে জবে ঢুকলাম, ওর বেশ কয়েকবছর পর কনভোকেশনের ডাক পেলাম। তখনও গিয়ে দেখলাম দিব্যি গম গম করছে বাঁচা বাবা। কনভোকেশনের বিশাল ভূড়িভোজের পরেও বাঁচা বাবাতে বসে চা বা পরোটার সাথে এক বাটি সব্জি এখনো স্মৃতির মানসপটে। যেসব ৯-১০ বছরের ছেলেগুলো কাজ করতো তারা তখন জোয়ান। আর যারা যুবক ছিলো, অনেকেই বিয়ে শাদী করেছে, রেস্টুরেন্টের পাশেই একটা ঘর করে সংসার জাকিয়ে বসেছে। ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে যখন দেশ জুড়ে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের আয়োজন চলছিলো, সেসময় রাঙ্গুনিয়ার সেই ছোট্ট রেস্টুরেন্ট টির ওপর বুলডোজার পড়ে। এরপর সেখানে রেস্টুরেন্ট টি দাড়াতে পারেনি। জানি না যারা ওই প্রতিষ্ঠান ঘিরে নিজের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছিলো, তারা এখন কেমন আছে।

তখন পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বুঝলাম, হঠাৎ করে দুর্নীতি যদি বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে প্রায় কয়েক কোটি সংগ্রামী মানুষ পথে বসে যাবে। যদিও একসময় মানুষ ঠিকই মানিয়ে নেয়, কিন্তু মানুষ না খেয়ে বেচে থাকতে পারে মাত্র তিনদিন। আর একটা ঘুনে ধরা সিস্টেম ঠিক হতে লাগে বছরের পর বছর। তখন আরো একটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেলো পাপ আসলে কি জিনিস? আসলেই কি এর অস্তিত্ব আছে?

এই যে এতগুলো সংগ্রামী মানুষ, তারা চুরি করছে না, হত্যা রাহাজানী ডাকাতি করছে না। তারা খুব সাধারন ভাবেই ব্যাবসা করছে সিস্টেমের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। কারন এটা তাদের জন্য সস্তা এবং তার চেয়ে বড় কথা সাধ্যের নাগালে। রাস্ট্র পারেনি বলেই তারা বেচে থাকার এরকম সৎ পথ বেছে নিয়েছে। এটা কিভাবে পাপ হতে পারে?

তাহলে পাপ বলে কি কিছু নেই? সেটা কিভাবে হয়? হত্যা খুন ধর্ষন এগুলো পাপ, তাই না?

মধ্যযুগের লেখক অগাস্টিনের মতে আমরা পাপ করি যখন কোনো কিছু করার সদিচ্ছা যদি দুর্বল হয়। প্রায় সমসাময়িক একিউনাস বিশ্বাস করতেন আমরা পাপ করতে পারি কারন আমাদের ইচ্ছাগুলো কল্পনা রং এ মেশাতে পারি এবং তাকে যুক্তি সংগত করতে পারি যাতে করে আমাদের মনে হয় এটাই ছিলো সর্বোত্তম যার ফলে নিজেকে বোঝাতে পারি যে আমি এটাই করতে চাই।

তার মানে পুরো ব্যাপারটাই নিজের স্বার্থে ভাবা বা নিজের জন্য করা। যখন মানুষ অপরের জন্য না ভেবে নিজের স্বার্থে কিছু করে তাহলেই কি পাপ হবে?মনে হয় না, যখন কারো কোনো ক্ষতি করে বা কোনো কিছু ক্ষতি হয় তাহলেই পাপ বলে ধরে নেয়া যায়, তাই না? কিন্তু যদি এমন হয় যে পরের ভালো করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি হয় তাহলে সেটাই বা কেমন বুদ্ধিমানের কথা?

তখন প্রশ্ন আসতে পারে কোনো কিছু বিচার করার অধিকারটা কার আছে? ঈশ্বর?

সেক্ষেত্রে পাপ ব্যাপারটাকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। নৈতিক মূল্যবোধ যেটা কিনা মানুষ সম্পূর্ন স্বাধিনভাবে বিচার করতে পারে এবং যার ফল সবার জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে, যদি তা নাও হয়, তাহলে ক্ষতি করবে না। একে নৈতিক পাপাচার বা দর্শনগত পাপ। ধর্মীয় পাপের ব্যাপারটা পুরোপুরি ঈশ্বর বা তার প্রদত্ত পথপ্রদর্শক বা ধর্মগ্রন্থে উল্লেখিত বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে নৈতিক পাপাচারের অনেক কিছু ধর্মীয় পাপাচারের লিস্টে থাকে না। এই যেমন দাসপ্রথা, শিশুকাম, বাল্যবিবাহ, লুট, ধর্মের নামে হত্যা ইত্যাদি।

ব্যাক্তিগতভাবে পাপের কনসেপ্টটা একটা হাস্যকর কৌতুক মনে হয়। একটা শিশুর সামনে আপনি দুটো মুস্টিবদ্ধ হাত ধরলে তাকে কিছু বলার আগেই সে একটা হাত বেছে নিয়ে তা খোলার চেস্টা করবে। সেটাতে কিছু না থাকলে আরেকটা হাত ধরে বসবে। আপনি যদি আবার আগের হাতটি মুস্টিবদ্ধ করেন সে আবার ওটা ধরবে। তখন তার কাছে ব্যাপারটা অভ্যাসগত খেলায় পরিনত হয়। যতক্ষন না টডলার পরিপক্ক হবে তার সামনে প্রতিদিন এই মুস্টিবদ্ধ হাত ধরুন, সে আনন্দের সাথেই খেলবে।

বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মানুষ এমনই। মানুষ এত বিশ্বাসী কেন এটা ভাবতে গিয়ে দেখলাম দর্শনের চাইতে এর সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারে নিউরোসায়েন্স বা এনাটমি। মানুষের মাথার ডানে ভেন্ট্রোলেটারাল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স অংশটির জন্য মানুষ বিশ্বাসী হয়। তাহলে ধর্মের উৎপত্তী এত পড়ে আসলো কেন? এর প্রধান কারন যখন নিয়েনডার্থালরা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াতো অর্থাৎ মানুষের বিবর্তন শুরু হয়নি, তখন তারা ছিলো বেশ ক্ষিপ্র এবং পঞ্চইন্দ্রিয় সমূহ খুব শক্তিশালী কারন তাদের মস্তিস্কের এই অংশগুলো বেশ বড় ছিলো। তারা খুব শিকারী ছিলো, এবং মাথার পেছনের দিকটা অপেক্ষাকৃত বড় হওয়ায় তারা বুদ্ধিমান ছিলো। তাদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স এতটা উন্নত না থাকায় তারা মৃত সৎকারের আচারেই সীমাবদ্ধ ছিলো। ঈশ্বরের কনসেপ্ট তাদের মধ্যে আসেনি। মানুষের ঐশ্বরিক ধারনা অনেক পরে আসে যখন নিয়েনডার্থালরা বিলুপ্ত হতে থাকে এবং মানুষ সমাজবদ্ধ হতে থাকে। সমৃদ্ধির ফলে তখন মৃত ব্যাক্তির সৎকারের সাথে সাথে আত্মা, মৃত্যুপরবর্তী জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করে।

আর ঠিক এমসয়টাতেই প্রচলন হয় সভ্যতার কুৎসিত দাসপ্রথা। বলা হয়ে থাকে বর্নবাদ, জাতিগত বিদ্বেষ থেকে শুরু করে হানিকারক বিষয় সমূহের উৎপত্তি ঠিক এখান থেকেই।

চলবে….

অগোছালো শোক

সেদিন সকালটা বেশ আলসে ছিলো। দেরী করে উঠে বাসি মুখেই ব্লগে আসি, কমেন্টের রিপ্লাইগুলো দেই। মোবাইলটা রাতে কোথায় ফেলে ঘুমিয়েছি মনে নেই। নতুন প্রজেক্ট নিয়ে এলোমেলো আরকি। বাথরুম চাপলে মোবাইল খুজতে গিয়ে দেখি অনেক গুলো ম্যাসেজ, কল। ফ্রেশ হয়েই জানতে পারলাম বাংলাদেশ সময় দুপুর দুটোয় মা মারা গেছেন। কিছুক্ষন স্তব্ধ, নিথর হয়ে বসেছিলাম। দিনটা স্পস্ট মনে আছে, জুলাইয়ের ২৬ তারিখ; তাপমাত্রা ২৮ হলেও উত্তর পুর্ব দিকে মৃদুমন্দ হাওয়ায় পরক্ষনেই শরীর জুড়িয়ে যায়, আকাশটা ছিলো নীল ক্যানভাস। জানালা বেয়ে হুড়মুড় করে বাতাস ঢুকে উড়িয়ে নেবার তোড়জোড়।

ডায়ালাইসিস নেবার পর মাসল ক্রাম্প সহ নানা রকম যন্ত্রনায় মা কাতরাতেন। একবার এমন হলো তার প্রেসার নেমে গেলো ৪০/৮০ যেখানে একজন মানুষের স্বাভাবিক প্রেসার থাকে ৮০/১২০। সবাই ভেবেছিলো বাঁচবে না। সেবার ঠিকই উতরে গেলেন হাসপাতালে। কিন্তু সেদিন ব্যাথা উঠতেই বাবাকে বলে নিজেই নীচে নামলেন, গাড়ীতে উঠলেন। হাসপাতালে গিয়ে যন্ত্রনা নিয়েই নার্সকে সব বললেন। নার্স ব্যাথানাশক ওষুধ সহ স্যালাইন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। কে জানতো এটাই তার শেষ ঘুম! শেষ ডায়ালাইসিস করাবার আগের দিন ঘন্টাখানেক কথা বললাম। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, হাসিনা-খালেদা নিয়ে তর্ক, আমার বিয়ের জন্য কেমন পাত্রী হওয়া উচিত এসব নিয়েই চললো কিছুক্ষন। আব্বার দাড়ি নিয়ে হাসাহাসি করলাম। বাবা পাশে বসে শুনছিলেন।

বোনের জামাই তার মৃত্যুসংবাদ ম্যাসেজ করেছিলাম। বাবা বোন কারো সাথেই ফোনে কথা হলো না, কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। লিসবনে ফোন দিয়ে টিকেটের খোঁজ নিয়ে জানলাম ১ সপ্তাহের মধ্যে ইকোনমি ক্লাসে কোনো টিকেট নেই, সব বিজনেস ক্লাস খালি। চাইলে যেতে পারি। স্টকহোমে ফোন দিতেই টিকেট পেয়ে গেলাম, বেশ সস্তাতেই। শর্ত একটা পরের দিন দুপুরের ফ্লাইট ধরতে হলে রাতেই স্টকহোমে যেতে হবে, এবং সেটা করতে হলে আমাকে সন্ধ্যার আগে লিসবন এয়ারপোর্টে পৌছাতে হবে। তাও অনেক ঝামেলা, ট্রানজিট হবে দুটো জায়গায়: জার্মানী ও তুর্কি।৩০ ঘন্টার জার্নি।

অনেক শখ ছিলো দেশে গিয়ে মা কে নিয়ে ভারত ঘুরে আসবো। সেভাবেই সব প্লান ছিলো। মা এর অপারেশনটা হলে রামপাল, রূপপুর গিয়ে ওখানকার পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখে আসবো। তার সাথে দিনাজপুরের যে অববাহিকায় ইউরোনিয়াম পাওয়া গিয়েছিলো, খনিজ মন্ত্রনালয়ের অফিসেও একটু ঘুরে আসবো ডিটেইল কিছু তথ্যের জন্য। কিন্তু এভাবে যে যেতে হবে বুঝতে পারিনি। যখন বাসায় পৌছালাম তখন ফরিদপুর, মুন্সিগন্জ, রংপুর, নারায়ন গন্জ থেকে আগত আত্মীয় স্বজন ফিরে যাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে আরেকবার কান্নাকাটির রোল শুরু হলো। তখন ছিলো আছরের সময়। কাকা বললেন ইমামতি করতে। ইসলামী তরিকা অনুযায়ী আমার ফরজ গোসল দরকার, নতুবা অজু হবে না। ফরজ গোসলও যে শেষ কবে করেছি খেয়াল নেই। মন থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে অনেক আগেই কিন্তূ এই পরিস্থিতিতে বিনা অজুতেই ইমামতি করতে হলো। মা এর কবর জিয়ারত বেশ সহী ভাবেই করলাম। কাকা ভেবেছিলেন আমি সব ভুলে গেছি হয়তো। কিন্তু আমার তেলাওয়াত শুনে বেশ অবাক হলেন। বললেন তার ছেলে হাফেজী পাশ করেছে কিছুদিন আগে। মৌলানাতে ভর্তি হয়েছে। পরীক্ষা সামনে বলে ফরিদপুর চলে গেছে। যাবার আগে মা এর জন্য কোরান খতম দিয়েছে। তার হাতে গড়া মাদ্রাসাটা ঘুরে দেখার আমন্ত্রন জানালো। যদিও তাকে বলেছিলাম দেশে আসলে একটা কম্পিউটার ল্যাব দেবো ওদের, কিন্তু সেটা নিয়ে আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে করলো না।

আম্মা মারা যাবার আগে কিছু কাজ দিয়ে গেছেন। প্রতি সন্ধ্যায় “রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বি ই্যানি ছগীরা” পড়তে হবে। বিয়ে করতে হবে, পছন্দ হোক বা না হোক, সংসারী এ বেলায় হতেই হবে।আমাকে দেশে ফিরতে বারন করেছেন আর আমি যেনো কোনো অপরাধবোধে না ভুগি।

ইসলাম নিয়ে লেখালেখির কারনে বাসায় নানা রকম লোকজন আসতো, বাইরে ভীড় করতো। তিনি অসুস্থ থাকা সত্বেও জঙ্গিদের নির্যাতন বেশ চরমেই ছিলো ধরা যায়। একবার বাসায় এক মহিলা এসে মাকে সরাসরি বলেন আমি যেনো লেখালেখি বন্ধ করি নতুবা তিনি পুলিশ কেস করবেন। তার পরের দিন ডায়ালাইসিস করাবার ডেট ছিলো। স্বভাবতই সেদিনটা ছিলো কস্টের। আম্মা তাকে সরাসরি বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আব্বাকে থানায় পাঠান। আব্বা থানায় গিয়ে ঐ মহিলার ব্যাপারে জিডি করতে চাইলে দারুস সালাম থানার ওসি তাকে শান্ত করেন। বললেন নেক্সট টাইম এমন করলে শুধু ফোন করলেই চলবে। সাধারন ডায়েরী করে চলে আসেন।

আব্বা যখন এ কথাগুলো বলছিলেন, বুকের ভেতর বড্ড শূন্যতা কাজ করছিলো। আম্মাকে বাড়ীর কাছেই কবর দেয়া হয়েছে। আব্বা আর এখান থেকে যাবেন না। বোনকে বললাম বোঝাতে, সে শুনলো না।

মামা তাবলীগ করেন প্রায় ১ যুগ ধরে। তিনি বললেন,”তুমি কি সত্যি তার জন্য মন থেকে দোয়া করবা না? তার আত্মা শান্তি পেতো।”

তার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থাকলাম। তার সাথে আমি অনেক কিছুই শেয়ার করি,”মামা, আমাদের আত্মার মধ্যে কি এমন গুন আছে যে মৃত্যুর পর তারা এমন উড়ে উড়ে বেড়াবে? আমাকে একটা কারন বলেন!”

সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। আমি বলতে থাকলাম,”পর্তুগীজ দার্শনিক ইউরি ডি কস্তা ক্যাথলিক পরিবারে জন্মালেও দর্শনের সংস্পর্শে এসে তিনিও এমন প্রশ্ন করলেন। আত্মা এমন কি জিনিস, যেটা আমাদের মৃত্যু হলে দেহ ছেড়ে উড়ে যাবে। সে একসময় রাব্বিনিক ইহুদী মতাদর্শে বিশ্বাস করা শুরু করেন যারা মনে করতেন মানুষের আত্মা বলে কিছু নেই। মানুষ মরে গেলে তার সত্বারও মৃত্যু হয় এবং সে তখন বেচে থাকে তার কর্মে, গুনে, মানুষের স্মৃতিতে। যদিও পরে তিনি সেই ইহুদী ধর্মও ত্যাগ করেন দর্শনের খাতিরে।”

মামা মাথার টুপি খুলে হাত বুলালেন,”কিন্তু এত দিনের বিশ্বাস, এক দুইজনের কথায় তো ভুল হতে পারে না।” আমি হাসলাম,”জরূরী নয় যে সবাই এক পথে চললে আপনাকেও সে পথে চলতে হবে। মা মারা গেছেন, সত্যি বলতে সে হারিয়ে গেছে। তার কাছে অনেক কিছু বলার ছিলো, সে অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলেন। সেগুলো আর বলা হবে না, শোনা হবে না। যেটা শিক্ষা হলো, যারা বেঁচে আছেন, তাদের প্রতি আমার কর্তব্যটুকু পরিপূর্নভাবে পালন করা, তাদের সেবা করা। ভালোবাসা মন থেকে। আমার শরীরটা মায়েরই দেহের একটা অংশ। ৯ মাস তার দেহের একটা অংশ ছিলাম, তারপর পৃথিবীর আলো দেখেছি, এত বড় হয়েছি। মা এর একটা অংশ আমার মধ্যেই এখনো বেঁচে আছে। যদি কোনো অনৈতিক বা অযৌক্তিক কাজ করি, তাহলে মাকেই অসম্মান করা হবে। এই যে এত মানুষের ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন, সবাইকেই অপমান করা হবে।”

মামা আর কিছু বললেন না। আমি বাসা থেকে বের হলাম। তিলোত্তমা ঢাকা শহর কিভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সেটা অনুধাবন করার চেস্টা করলাম। অট্টালিকার অরন্যে আমরা নিজেদেরকে শেকল বন্দী করে মৃত্যুকেই ডেকে আনছি এটা সবাই জানে, বুঝে, তবুও মানুষ সে কাজগুলো করেই চলেছে। দেশের মানুষ এমন গোয়াড় রকমের আত্মঘাতী কেন ঠিক বুঝে উঠতে পারি না।

অদ্ভুত দমবন্ধ পরিবেশ অস হ্য লাগতে শুরু করলো। মোবাইলটা বের করে নেক্সট ফ্লাইট ঘাটতে লাগলাম….।

নপুংশক জাতীর অহংকার: প্রসঙ্গ কিছু আলোচিত মন্তব্য

শ্রদ্ধেয় একজন ব্লগার পূর্ববর্তী এক পোস্টে তার মূল্যবান মন্তব্য করেছেন এবং তাতে আরেকজন ব্লগার সমর্থনও করেছেন। আমার কাছে মনে হলো এটা নিয়ে কিছু তথ্যবিভ্রাট সম্পর্কিত আলোচনার দাবী রাখে।

১৯৪৭, ৬৬, ৭১ পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে প্রচুর প্রচুর বাঙ্গালী হিন্দু মাইগ্রেশন নিয়েছে ভারতে। হিন্দুস্থান ভাবতে এরা পুলকিত হয়। প্রণামে আর ঈশ্বর কৃপায় মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে ফেলেন আর কি। বৃষ্টি হয় এখানে আর মাথায় ছাতা তুলে দেশে।

“দাঙ্গার ইতিহাস” লিখেছেন শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, রকমারীতে পাবেন। বইটি সংগ্রহে রাখার মতো। বেশ বস্তুনিষ্ঠ দলিল এজন্য বলবো যে ততকালীন পত্র পত্রিকা ও দস্তাবেজ ঘাটলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। কলকাতায় দাঙ্গা শুরু হয়েগেছে এবং সে খবরে বাংলাও বেশ গরম। ঈদুল ফিতরের নামাজের পর নোয়াখালীর পীর গোলাম সারোয়ার হুসেনী জনসমাবেশে হিন্দুদের ওপর সরাসরি আক্রমন করার নির্দেশ দেন নবী মোহাম্মদের ফিদায়ী অভিযান ও বানু কুরায়জার গনহত্যার রেফারেন্স টেনে। তখন তার নিজস্ব মিঞা বাহিনী ও এলাকার মুসলমান অনুসারীরা হিন্দুদের ওপর আক্রমন করে হাটের মধ্যে। শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা। পুরো দাঙ্গায় মৃত্যু হয় প্রায় ৫০০০০ হিন্দু এবং ধর্ষিতা হয় লক্ষাধিক নারী। কখনো কখনো নবী মোহাম্মদের সাফিয়া ধর্ষন অনুসরনে সেখানকার বনেদী ব্যাবসায়িক পরিবারের প্রধান কর্তা, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা করে যুবতী ও কিশোরী নারীদের ধর্ষন করা হতো গনিমতের মাল হিসেবে এবং তাদেরকে উপহার হিসেবে বন্টন করে দেয়া হতো। প্রতিবেশী হিসেবে থাকা মুসলমানেরা তাদের হিন্দু প্রতিবেশীদের ঘরে ঢুকে হত্যা ধর্ষন কিছুই বাদ রাখেনি। পরে যখন নোয়াখালী ছেড়ে রায়টের ভয়াবহতা কুমিল্লা চাঁদপুর ছড়িয়ে পড়ে তখন মুসলিম লীগের পান্ডারা তাতে যোগ দেয় এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম আক্রান্ত হয়।

ততকালীন মাংলার মূখ্যমন্ত্রী হোসেন সোহরাওয়ার্দী এটাকে তুচ্ছ সন্ত্রাসী ঘটনা বলে উড়িয়ে মুসলমান জঙ্গিদের আরও সুযোগ করে দেন সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গার স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করতে। যখন কেন্দ্রিয় সরকার থেকে প্রচন্ড চাপ আসতে থাকে এবং স্বয়ং গান্ধীজি স্বদ্যোগী হন তখন তিনি মেনে নেন। কতটা চশমখোর হলে এটা সম্ভব, চিন্তা করা যায়? এমনকি কাজী নজরুল ইসলামের টাকা মেরে খাওয়া আরেক জোচ্চর শেরে বাংলা ফজলুল হক বলে বসেন হিন্দু নারীদের ধর্ষন সম্পর্কে: হিন্দু নারীরা প্রাকৃতিক ভাবেই বেশী সুন্দরী।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজারে কম্যুনিস্ট ধরবার নামে এক হিন্দু বাসায় গিয়ে স্ত্রী কন্যাকে একি বিছানায় ধর্ষন করতে উদ্যোত হলে জয়দেবের বর্শায় খোচায় দুই ধর্ষক মুসলমান কনস্টেবল জায়গায় অক্কা পায় এবং শুরু হয় ৫০ এর রায়ট যা ছড়িয়ে পড়ে বরিশাল খুলনা পর্যন্ত। নাচোলের গনহত্যার নাম শুনে থাকবেন হয়তো। এরকম আপ্যায়নের কথার সাথে “হিন্দুস্থান ভাবতে এরা পুলকিত হয়।” এ কথাটি যায় না।

সত্যিকারের অত্যাচারিত কত জন সেটা বলা যাবে না। আমি তো অন্তত বিশ্বাস করি না। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা সব দেশেই আছে।

মন্তব্যে এ কথাটা তৎকালীন বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হোসেন সোহরাওয়ার্দী বললেও যখন গান্ধীজি এবং কেন্দ্রিয় সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী আকাশযোগে উপদ্রুত এলাকা পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে সেসব এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে নামসর্বস্ব তদন্তকমিটি গঠন করলেন। কিন্তু সেসব এলাকার জঙ্গি মুসলমানরা এক অদ্ভুত টেকনিক হাতে নিলো। তারা ধর্ষিতা ও গনিমতের মাল হিসেবে রেখে দেয়া নারীদের দ্রুত কাগজ কলমে টিপসই নিয়ে ধার্মান্তরীত করে বোরখা পড়াতে শুরু করলেন। যাতে করে স হসা না চেনা যায়। এবং যারা বেচে গেছেন তাদের কাছ থেকে মুসলিম লীগের জিহাদী ভাইয়েরা জিজিয়া করের নামে চাঁদা ওঠাতে লাগলেন। পরে যখন কেন্দ্রীয় সরকার স হ ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও অন্যান্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন রিপোর্ট দেয়া শুরু করলো তখন বাঙ্গালী জঙ্গি মুলসমানদের হত্যাকান্ডগুলো বানু কুরায়জার ওপর নবী মোহাম্মদের ফিদায়ী অভিযান বা আলির খাওয়াজিরী গনহত্যা বা বক্কর উমরের রিদ্দার যুদ্ধে অনুসৃত নৃশংস ও বর্বরতম পদ্ধতিগুলো অনুসরন করা হয়েছে যেসবের বর্ননা দেখলে আতকে উঠতেই হয় এবং শুধু শৈলেশের বই নয়, ১৯৬০ সালে লেখা মোকসেদের লেখা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নামের বইতেও সেটা উঠে এসেছে। এরপরও প্রচুর দাঙ্গা হয়েছে এবং সেসবে বাঙ্গালী জঙ্গি মুসলমানদের বর্বরতা পাকিস্থানীদের হার মানায়। আর ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সেই পাকিস্থানী মুসলিম ভাইয়েরাই ১৯৭১ সালে বাঙ্গালি মুসলমানদের একই রকম ফিদায়ী ধর্ম যুদ্ধ শুরু করে যার ফলাফল হয় রক্তাক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু যে জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফিদায়ী অভিযান, আমাদিয়া ইশতিশাদী, ইন ঘিমাসের মতো জিহাদী চেতনা সে দেশ কিভাবে সাম্প্রদায়িক না হয়ে থাকতে পারে?

কাগজে কাগজে যতই সেক্যুলারিজমের কথা বলা হোক না কেন; বর্তমানে ভারতের রাজনৈতিক পরিবেশ আপনিও ভালো জানেন। ভারত এখন আর অসাম্প্রদায়িক দেশ নয়। হিংসাত্মক অত্যাচার কতটা আর এর চেহারা কতটা ভয়াবহ তা কিন্তু বাংলাদেশের নব্য মাথামোটাদের ধারণায়ই আসবে না। বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে।

ভারতের কাগজে কলমে অসাম্প্রদায়িক হলেও তার কিছুটা ধরে রেখেছিলো বলেই আবুল কালাম আজাদ নামের মুসলিম বিজ্ঞানী প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছেন। সেখানে হিন্দু মুসলমান সবাই উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে। এটা ঠিক মোদীর থিওক্রেটিক চেহারার ভারত কখনোই কারো কাছে কাম্য নয় এবং সেজন্যই সেখানে এর জোরালো প্রতিবাদ হচ্ছে। বর্তমানে ভারত বিজ্ঞান স হ অন্যান্য বিষয়ে যতটা এগিয়েছে সেটা আপনি ভাবতে পারবেন না। আবার বাংলাদেশের যত মানুষ ভারতে অবৈধভাবে পাড়ি দেয়, শোনা যায় না কাশ্মীর বা অন্যান্য অঞ্চল থেকে মুসলমানরা নিগৃহিত হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। ভারতে মুসলমানরা যদি খারাপ হয়েই থাকবে তাহলে চলচ্চিত্র তারকা নুসরাত কিভাবে লোকসভায় আসন পায় এবং ধুমধাম করে শাদী করে। অথবা সালমান খান শাহরুখ খান? আপনি হয়তো বলবেন এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা তাহলে আসুন পরিসংখ্যান। অন্তত মানুষের মুখের গুজব ও মিথ্যা কথার জবাব পরিসংখ্যান ভিন্ন কিছু হতে পারে না
উইকির এই পেজ অনুসারে আপনি বাংলাদেশ থেকে কত হিন্দু, এমনকি মুসলমানরাও সেখানে যাচ্ছে। বারাকাত সাহেবের পরিসংখ্যান আপনাদের বিশ্বাস হবে না কারন উনি নিজে কিছু অন্যান্য দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকায় তার সবকিছুই এখন প্রশ্নবিদ্ধ কিন্তু উইকির ঐ পেজে বেশ কিছু একাডেমিক ও স্বাধীন পরিসংখ্যান আছে সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করতে যাওয়া হাস্যকর। যদিও বাঙ্গালী যেখানে এখনও বিশ্বাস করে চাঁদে নবী মোহাম্মদের দ্বিখন্ডনের দাগ আছে বা চাঁদে নাসা যাইনি কিন্তু সাঈদিকে দেখা গেছে, তাদের কাছে একাডেমিক গবেষনা মানেই নাপাকী জিনিস, তাই না?

আরেক জায়গায় বলা হয়েছে

আমার আশেপাশে মুসলিম যারা রয়েছেন, আমি দেখেছি তারা কখনও ভিন্ন দেশে ইমিগ্র্যান্ট হবার চিন্তাই করে না।

ইউরোপীয়ান মাইগ্রেশন কাউন্সেলিং এর তথ্যমতে ইউরোপে রেকর্ডসংখ্যক মুসলিমরা অভিবাসী হয়। এদের বেশীরভাগই যুদ্ধ বিদ্ধস্ত, দুর্ভিক্ষপীড়িত এবং নানা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে। সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হলো মাইগ্রেশন পলিসির তথ্যমতে লিবিয়া দুবাই হয়ে সাগর পথে পাড়ি দেয়া সবচেয়ে অবৈধ অভিবাসী হলো বাংলাদেশীরা। ইউরোপীয়ানরা এই পরিসংখ্যান এজন্য অবাক হন যে বাংলাদেশে নেই কোনো দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ বা কোনোকিছু। আবার আপনিও বলছেন এদেশে হিন্দু মুসলমান সবাই ভারতের থেকে অনেক ভালো।

আবার কমেন্টের সাথে সহমত জানিয়ে আরেক সহব্লগার যে কমেন্ট করেছেন, প্রোফাইল ঘেটে দেখলাম উনি অস্ট্রেলিয়া নিবাসী। তবে এটা ঠিক ব্যাক্তিগত জীবনে আমরা সবাই এমন কিছু ঘটনার মুখোমুখি হই যেটা কিনা আমাদের ভাবনার মানসপটে এবং চিন্তা চেতনায় প্রভাব ফেলে

গতকাল বাবাকে ফোন দিলাম দেশের পরিস্থিতি জানার জন্য উনি বললেন গুজব নাকি ইন্ডিয়ার ষড়যন্ত্র। আমি তার উত্তরে বললাম, গুজব সবচেয়ে বেশী হয় পুরান ঢাকায় এটা তুমি নিজেও জানো। এবং এসব অশিক্ষিত লোকজন কি ভারত থেকে টাকা খাইছে? এটা তোমার মনে হয়?

তখন সে একটু চিন্তা করে বললো, তুমি ঠিক বলছো। অশিক্ষিতদের দোষ দিয়ে হবে, শিক্ষিতরাও তো করতেছে। সবাই করতেছে। আমি বুঝি না দোষটা তো সব তো দেখি আমাদের। আমরা এমন হইলাম কেন?

বাবার এ প্রশ্নের উত্তর আমি জানি। কিন্তু তাকে দিতে মন চাচ্ছে না। উনি আবার আগামী বছর দ্বিতীয় হজ্ব করার স্বপ্ন দেখছেন।

শুভ ব্লগিং

নপুংসক জাতির অহংকার

ভারতীয়দের চোখে মুখে তাকানো দায়। তাদের প্রোফাইলগুলো থেকে ঠিকরে যেসব ছবি বেরুচ্ছে তা আমাকে কোনোভাবেই শান্তি দিচ্ছে না। ভারতীয়দের আমি আগাগোড়াই হিংসে করি যদিও এটা খারাপ অর্থে বোঝায় না। স্কুলে থাকতে অনুপ নামের একটা ছেলে ছিলো ক্লাসে। সত্যিকার অর্থে ফটোগ্রাফিক মেমোরী বলতে বোঝায় তার তাই ছিলো। তখন বাংলা ইংলিশ র‌্যাপিডে গল্প মুখস্থ করার চল ছিলো এবং দ্বিতীয় ও বার্ষিক পরীক্ষায় এসব গল্প লিখতে বলা হতো। আমি তো এমনি ছিলাম ১০ লাইনে গল্প শেষ করে দিতাম পুরো ৬ পাতার উপন্যাস। কিন্তু অনুপ যখন ক্লাশে দাড়িয়ে তোতাপাখির মতো দাড়ি কমা পুঙ্খানুপুঙ্খ ঠিক রেখে অনর্গল বলতো তখন হিংসে না করে উপায় কি! পরীক্ষার রেজাল্টের দিন যখন পিঠে ছালা বাঁধার চিন্তা করতাম বাসায় মাইরের যন্ত্রনা থেকে বাঁচবার জন্য তখন ছেলেটা পারফেক্ট স্কোর নিয়ে বুক ফুলিয়ে হাটতো। এরকম হিংসে করি ভারতীয়দের। তাই যত প্রোফাইল আছে সব ব্লক, ইমোর নম্বরও মুছতে শুরু করি যাতে বজ্জাত পোলাপানের হিস্টোরি দেখতে না হয়।

আজ তাদের মহা আনন্দের দিন যে চাঁদে অত্যাধুনিক রোবট পাঠিয়েছে এবং পৃথিবীর চতুর্থ দেশ হিসেবে তারা এই কাজটি করেছে। মঙ্গলের বুকে যখন চীন; ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবেধন এসা নিজেদের রোবটযান হুমড়ি খেয়ে ধ্বংস হয়, নাসা যেখানে তিনবারের চেষ্টায় সফল হয় সেখানে এই ব্যাটারা প্রথম চেষ্টাতেই সফল তাও সম্পূর্ণ নিজেদের প্রযুক্তিতে।

আপনি হয়তো মনে করতে পারেন আমি নিশ্চয়ই খারাপ মানুষ। নিজের ব্যাপারে আমি বারংবারই বলি যেহেতু আমার ওপর ওহী নাজিল হয় নাই, তাই আমি মহাপুরুষ হবো কোন দুঃখে! নইলে দেশের পত্রিকা থেকে শুরু করে ফেসবুক প্রোফাইলের প্রায় অশিক্ষিত শিক্ষিত সবাই পড়ে আছে প্রিয়া সাহার বদনাম আর মাদ্রাসায় নিজের সন্তান কিভাবে তাদের পুটু রক্ষা করবে সেটা নিয়ে গভীর গবেষনায় লিপ্ত।

এখন ফিরে আসি অনুপ প্রসঙ্গে। অনুপ বারংবার প্রথম হলেও দ্বিতীয় হতো রাজকুমার। তার ফটোগ্রাফিক মেমোরী হলেও অনর্গল বলতে গেলে তাকে দু তিনবার থামতে হতো। তার শ্বাসকষ্ট ছিলো না যে দম নিতে হবে। কারন সে ক্রিকেট ফুটবলে স্কুলের টিমে প্রথম সারিতেই থাকতো। তাই বলা যায় তার বুদ্ধিমত্তা অনুপের থেকে কিছুটা কম। আর তৃতীয় হতো আমাদের সবেধন মুসলমানের বাচ্চা মাহী ওরফে আমিনুল ইসলাম বেগ। যারা পত্র পত্রিকায় চোখ রাখেন তারা হয়তো এই নামটা শুনে থাকবেন।

তখন ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার কারনে ভারতের মর্দে মুমিনরা তাদের ঈমানী কাজ টিকিয়ে রাখতে দেশের সব মন্দির ভাঙ্গা শুরু করেছিলো। একদিন ছোট ফুপা বোয়ালমারী থেকে সকাল বেলা বাসায় আসলেন। আমি তো ছোট ফুপিকে দেখে বেজায় খুশী। ছোটফুপা রাতে আমাদের সাথে খাবার খেতে খেতে বললেন বোয়ালমারীর সব মন্দির ভাঙ্গা শেষ। এখন ফরিদপুরে কিছু বাকি আছে। তাই ফরিদপুরের ইমাম ও মাদ্রাসার নেতা সহ রাজনৈতিক নেতারা আশেপাশের অঞ্চল থেকে লোক ডেকে এনেছেন যাতে করে ফরিদপুরের মতো বিশাল এলাকার হিন্দুদের ঘর বাড়ী মাদ্রাসাগুলো ভাঙ্গা হয়। এটা শুনে আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। আমি তখন বললাম ওরা কি দোষ করছে? আকাম তো করছে ইন্ডিয়া। আমাকে ফুপা ধমক দিয়ে বললেন ঈমানী দায়িত্বে কখনো পিছুপা হতে নেই। যদিও বাবা পুলিশী ভায় দেখালেন। তখন ফুপা যেটা বললো আরও ভয়ংকর। তারা নাকি ফরিদপুরের ওসির বাসায় কথা বলে এসেছেন। তারা প্রোটেকশন দিবে।

সে যাত্রায় অনুপদের বাড়ী বেঁচে গেলেও তাদের এলাকার মন্দিরটি রক্ষা পায়নি। অনেকদিন সেটা খালি জায়গা হিসেবে থাকলেও ২০০৩-৪ এর দিকে সেখানে বিশাল একটা চক্ষু হাসপাতাল করেছে বাংলাদেশ সরকার। ভালো উদ্যোগ তাই না? কারন ঐ জমির মালিক সেই মন্দির ভাঙ্গার সময়ই ইন্ডিয়া ভেগেছে ভিটে বাড়ী না বিক্রি করেই। তার পরের বছর হিন্দু শিক্ষক কল্যান স্যার অসুস্থ থাকায় অনুপ রাজকুমারদের ইসলাম ধর্মের ক্লাশে আমাদের সাথেই বসে থাকতে হয়। এরকম মাঝে মধ্যেই হতো, কল্যান স্যার বড্ড ফাঁকিবাজ ছিলেন। তো নন্দাইলের ইউনুস ওরফে আমাদের ইসলাম শিক্ষার হুজুর হঠাৎ বইয়ের পড়া না ধরে ওয়াজ শুরু করলেন। নবী মোহাম্মদের গুন গান। সে কত ভালো মানুষ তাংফাং। যদি আমরা কয়েকজন মিলে খাতায় কাটাকুটি খেলছিলাম কিন্তু হঠাৎ ফার্স্ট বেঞ্চে অনুপ কি যেনো বলে বসলো এবং ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেলো। পাশের জনকে জিজ্ঞেস করলে বলে, “অনুপ কইছে ইয়া মোর দ্বীনের নবি, তোমার বস্তার মধ্যে কি!” এটা শুনে নিজেই সেই হাসিতে যোগ দিলাম। হুজুরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি পুরো কালো হয়ে গেছে। বেঞ্চে দুটি বাড়ি দিয়ে ক্লাশ শেষ করে চলে গেলেন।

এরপর পরের তিন দিন অনুপ ক্লাসে আসে নাই। বাবাকে এসে বাসায় বললে তিনি বললেন খবর নেবেন। বাবা খবর নিতে গিয়েছিলেন কিনা জানি না তবে পরের সপ্তাহে অনুপ আসলে সে প্রায় নিশ্চুপ ছিলো। কয়েকটা ক্লাস করেই চলে যায়। তাকে আর দেখিনি। অনেকদিন পর বাবাকে জিজ্ঞেস করলে বলে ওরা ইন্ডিয়া চলে গেছে। তবে অল্প কিছুদিনের জন্য।

সে অল্প কিছুদিন এখনো ফুরোয় নি।

বাংলাদেশের ১২৪এ ধারা অনুযায়ী প্রিয়া সাহা রাষ্টবিরোধী কাজ করেছেন কারণ তিনি এমন কিছু কথা এমন জায়গায় বলেছেন যেটা ওখানে বলা উচিত ছিলো না। তবে আমরা সকলেই জানি সেগুলো কতটা সত্য। বাংলাদেশে মোটেই অসাম্প্রদায়িক দেশ নয়। বিয়ের কাবিননামায় ৫ম অনুচ্ছেদ বাতিলের জন্য যেখানে আদালত বায়তুল মুকাররমের খতিবের কাছে মতামত জানতে চায়, যেখানে রাষ্টের মাথায় টুপি পড়ানো প্লেবয় স্বৈরাচারের মৃত্যুতে সবাই শোক প্রকাশ করে বা মদিনা সনদের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা আলোচনায় আনেন খোদ প্রধান মন্ত্রী সেটা রাষ্ট্র সংঘ হতে পারে না, গনতন্ত্র তো নই, একটা ভঙ্গুর থিওক্রেটিক রাষ্ট্রে পরিনত হয়।

আরও একটা মজার ব্যাপার যেখানে সুন্নতী কর্ম পালন হিসেবে মাদ্রাসার হুজুরগুলো শিশুদের ধর্ষন করে সেই ধর্ষন থেকে বাচতে সেই সুন্নতি কাজ এবং শিশুকামী অপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে শিশুদের লোহার ডাইপার (রূপকার্থে) পড়ানোর কথা প্রোফাইলে ভেসে উঠে শিক্ষিত অশিক্ষিত সবার স্ট্যাটাসে তখন ভারতীয়দের ইসরার চন্দ্রাভিযান দেখলে হিংসা কেন করবো না বলেন একটু?

উল্লেখ্য অনুপ ভারতে গিয়ে ইকোনমিক্সে পাশ করে সেখানকার কাস্টমসের ট্যাক্স অফিসার হিসেবে জয়েন করেছে এবং আমাদের আমিনুল ইসলাম বেগ ২০১৫ সাল থেকে জেল খানায় তার জঙ্গি কার্যক্রমের কারণে কারাভোগ করছে প্রায় বিনা বিচারে বা আইনী মার প্যাঁচে। আমিনুল ইসলাম বেগ নামে গুগল করলেই বেরিয়ে পড়বে আমাদিয়া ইশতিশাদী বা ফিদায়ী অভিযানের মতো ফরজে কিফায়া পালন করতে গিয়ে বেচারা কিভাবে জেলে পচছে!

আমাদের মতো ধর্ম প্রাণ নপুংসক বাঙ্গালীদের বরং সেটা নিয়েই আক্ষেপ করা উচিত!

হ্যাপী ব্লগিং।

আইসো গাঁজা টানি

একসময় এলুমিনিয়ামের বাজারমূল্য রূপার চেয়েও বেশী ছিলো। কোনো রাজকীয় অনুষ্ঠানে রাজা বা তার পরিবারের লোকজনদেরকে এলুমিনিয়ামের চামচ দেয়া হতো এবং অন্যান্য অতিথিদেরকে দেয়া হতো রূপার চামচ। তখন রাজার টাকশাল থেকে শুরু করে বনেদী ঘরের সুন্দরী রমনীর অলংকারে এই ধাতুটি শোভা পেতো। অথচ এই এলুমিনিয়াম পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী পাওয়া যায় এমন তিনটি মৌলিক পদার্থের একটি। শুধুমাত্র বক্সাইট থেকে এলুমিনিয়ামের আলাদা করা বেশ কষ্টসাধ্য ও ব্যায় বহুল হবার কারনেই তখন এমন অবস্থা ছিলো।

যদিও ইলেক্ট্রোলাইট পদ্ধতির অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে এলুমিনিয়ামের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন পরবর্তিতে বেশ সহজলভ্য হয়ে যায় তারপরও প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা ও জার্মানি তাদের এয়ারফোর্সের উন্নয়নের জন্য এলুমিনিয়ামের ব্যাবহার ব্যাপকভাবে শুরু করে। হালকা এবং ক্ষয়রোধী হবার কারনে বেশ প্রচলন ছিলো এখনো। যদিও বিমান তৈরীতে এলুমিনিয়ামের ব্যাবহার কমে গেছে তারপরও গেরস্থ ঘরের পাঁকা রাধুনীর কাছে এলুমিনিয়ামের পাত্রের কদর এতটুকু কমেনি।

মনে পড়ে গ্রামীন ফোনের সিআইসি প্রজেক্ট যখন চালু হয় তখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধীর গতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষদের জন্য সেবা দেয়াটা একটু দুস্কর ছিলো। বিশেষ করে খালবিল সংলগ্ন বা সপ্তাহে একবার হাটের সমাগম ঘটে এমন জায়গায় নেটওয়ার্ক নিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হতো। আবার এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্দিষ্ট কোনো দিনে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের গতি বাড়াবার জন্য টাওয়ারে অতিরিক্ত রিসোর্স বিনিয়োগ করা সেসময়ে কারো জন্যই সাশ্রয়ী ছিলো না। তখন প্রায় সবার হাতেই নোকিয়ার টিপ মোবাইল। টাচস্ক্রীনের মোবাইলের নামগন্ধটি নেই কোথাও। তখন সমাধান হিসেবে আমি ইয়াগী উডা এন্টেনার একটা মডেল বানিয়ে বললাম কাজ হতে পারে। লম্বা খুটির মাথায় লাগিয়ে কোএক্সিয়াল ক্যাবেল আর হোল্ডার দিয়ে নেটওয়ার্ক দুর্বলতার সাময়িক সমাধান হতে পারে। তখন এই এন্টেনাগুলো বিক্রী হতো ২০০ টাকার মতো। আমার নিজ হাতে যেটা বানিয়েছিলাম সেটার খরচ মাত্র ৭৫ টাকা। এর মধ্যে লোকাল বাসে করে বংশালের মার্কেটে যাওয়া আসাও ছিলো। ইয়াগী উডা এন্টেনা বানানোর প্রধান অনুষঙ্গই ছিলো এলুমিনিয়ামের পাইপ। এটা ২০০৭ এর দিকের কাহিনী হবে।

এমন না যে এগুলো বাজারে ছিলো না বা এগুলো সম্পর্কে মানুষ জানতো না। মানুষের প্রয়োজনই বাধ্য করে নতুন বিষয় নিয়ে ভাবতে এবং পন্থা বের করতে। এর পেছনের গুঢ় রহস্য একটা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। ধরা যাক মধ্যযুগে ইহুদী আর ইসলামের প্রভাবে এলকোহলের প্রচলন পুরো বন্ধ হয়ে গেলো। আল রাজী নিতান্ত ধার্মিক হয়ে এলকোহলের বিশুদ্ধ সংশ্লেষ প্রক্রিয়া বের না করতেন তাহলে কি হতো?

তার আগে জেনে নেই আসলে এলকোহলটা কি? আমরা যে সুমিস্ট ফল খাই তার মধ্যে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্লুকোজ থাকে। এই গ্লুকোজ যখন ঈস্টের সংশ্পর্শে আসে তখন একধরনের এনজাইম নিঃসৃত হয় এবং বিক্রিয়া করে ইথানলের সৃস্টি হয় এবং তার ওপর কার্বন ডাই অক্সাইডের ফেনার সৃষ্টি হয়। তাই কোনো পচনশীল আম বা ভাতের মাড়ে পঁচে গেলে তার ওপর ফেনার অস্তিত্ব থাকলেই বুঝতে হবে সেখানে ইথানলের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেটা যদি খান তাহলে নেশা ধরবে না কারন এলকোহলের পরিমান তাতে খুব কম পরিমানে আছে। এই ইথানলের পরিমান বাড়ালেই এটা বেশ ভালোমানের মদ হবে।
ইথানলের বেশ কিছু উপকারী গুন আছে। যখন এন্টিবায়োটিক ব্যাপারটার প্রচলন ছিলো না বা যুদ্ধের সময় এর অভাব দেখা যায় তখন ইথানলের প্রয়োজন পড়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ক্ষত সারাই এবং ডিসইনফেকশনে। এছাড়া ক্যামিস্ট্রির অনেক বিক্রিয়াতে এর অনুঘটক হিসেবে শুরু করে দ্রব্য, দ্রাব্য হিসেবে এর প্রচলন। আমাদের সভ্যতার বিকাশ বিশেষ করে রসায়ন ও চিকিৎসা শাস্ত্রে একটা অন্ধকার সময় এখনো বিরাজ করতো।

তবে নেশাজাতীয় দ্রব্য হিসেবে এ্যালকোহলের ক্ষতির কথা সর্বজনিবেদিত। কিছুদিন আগে গবেষনায় প্রকাশিত যেকোনো পরিমানের এলকোহলই শরীরে জন্য ক্ষতিকর। এবং ইউরোপীয়ানদের গড় আয়ু ঈর্ষনীয় হলেও এটা আরও বেশী হতো যদি তারা এলকোহলের আসক্ত না হতো। এই এ্যালকোহল আসক্তির কারনে তারা স্বাস্থ্য ও সামাজিক দিক দিয়ে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

সেক্ষেত্রে অনেক বড়াই করতে পারেন যেসব দেশে এ্যালকোহল নিষিদ্ধ তারা খুব বুঝি ভালো আছে। এটাও মিথ্যা। ২০১৪ সালের এক মেডিক্যাল সমীক্ষায় দেখা যায় যে পুরো বিশ্বে এমফিটামিনে আসক্ত হয়ে যতজন মানুষ ইমার্জেন্সিতে যায়, তার ত্রিশ ভাগ ঘটে সৌদী আরবে। ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানে মদ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হলেও সে দেশের জনসংখ্যার ২.৬ শতাংশ হেরোইন গাজা এমফিটামিন ম্যাথ স হ অনেক মারাত্মক ড্রাগে আসক্ত।

প্রশ্ন আসতে পারে মানুষকে কেনো নেশা করতে হয়। এটা কি জেনেটিক? প্রত্নতত্ববিদরা খুজে বের করেছেন আজ হতে প্রায় ৫০০০ থেকে ৬০০০ বছর আগে চীনারা এলকোহলের সংশ্লেষ করতে পারতো এবং বীয়ার জাতীয় পানীয় নিয়মিত পান করতো। তারও আগে ঈজিপশীয়ানরা, হিসাব করলে ১২০০০ বছর আগের ঘটনা, তারা তাদের শস্যাদী ঘরে তুলে বাড়তি অংশ গেজিয়ে মদসমতুল্য এলকোহল সমৃদ্ধ পানীয় পান করতো। যদিও তাতে এলকোহলের পরিমান বর্তমান সময়ের মতো এত বেশী ছিলো না, কিন্তু তা পান করেই টাল হয়ে থাকতো।

এলকোহল বেশ ক্যালোরী সমৃদ্ধ হওয়ায় এটার পুস্টিগুন আছে বৈকি। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের মধ্যে মেসোমোর্ফিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এদের দেহ ক্যালোরী থেকে গ্লুকোজ সংগ্রহ করে সরাসরি মেটাবোলিজমের কাজে ব্যায় করতে পারে। দেহের গঠনে বেশ শক্তিশালী, স্পার্টান এ্যাথলেট যাকে বলে। অনেক প্রাইমেট আছে যাদের মধ্যে উচ্চ ক্যালোরীর খাবার বেশ কাজে দেয়। উচ্চ মেটাবোলিক হার বজায় রাখতে এ্যালকোহলের বিকল্প আর কি হতে পারে। যদিও মানবদেহে এলকোহলের ক্রিয়া একটু বেশী বিনোদনমূলক, পুষ্টিগত দিকের থেকে একটু কমই বা চলে।

আজ হতে ১২ -১৩ হাজার বছর আগে যখন টিভি ইন্টারনেট ইলেক্ট্রিসিটি কিছুই ছিলো না। তখন গরীব শ্রান্ত কৃষক উদাসী মনে আকাশের তারাদের পানে তাকিয়ে পাত্রের গেজানো তাড়িতে চুমুক দিয়ে নিজের কষ্ট ভুলতো। অথবা নতুন বিয়ে বা নবান্নের আনন্দকে আরেকটু ভিন্ন মাত্রা দিতে সাময়িক উত্তেজনার লোভে একটু মদে চুমুক দিলে দুনিয়া তো উল্টে যাচ্ছে না তাই না!

হয়তো এসব কারনেই আমরা নিয়েনডারথাল থেকে আলাদা হতে পেরেছি, বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ হতে পেরেছি। নইলে বানর হয়ে দেখা যেতো ঐ গাছের শাখা প্রশাখায় ডিগবাজী খেতাম।

প্রয়োজন জিনিসটা এমনই একটা অনুষঙ্গ যেটা কিনা সভ্যতার মোড় ঘুরিয়েছে সবসময়ই। জেনোর ছাত্র লিউসিপিয়াসের দর্শনানুসারে কোনো কিছুই দৈব্যক্রমে ঘটে না কিন্তু সবকিছুই ঘটে কোনো কারনে এবং প্রয়োজনে। এ্যারিস্ট টল এই যৌক্তিক প্রয়োজনীয়তাকে একটু স্পস্টবোধক রূপ দিতে গিয়ে বললেন পারস্পরিক বিপরীতার্থক বক্তব্যের একটি সত্য হলে অপরটি অবশ্যই মিথ্যা হবে। এ থেকে ডিডোরাস ক্রোনাস চারটা ধাঁধাঁর জন্ম দেন।

যদিও এরিস্ট টল সে ধাঁধাঁগুলোকে বেশ ভালোভাবেই খন্ডান সাগরের যুদ্ধের উদাহরন টেনে, কিন্তু সব কথার মধ্যে একটা ব্যাপার খুজে পাওয়া যায় না সেটা হলো যদি ১২০০০ বছর আগে এলকোহলের ব্যাব হার না জানতাম বা এলুমিনিয়ামের সংশ্লেষ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতাম, তাহলে কি হতো?

আকাশে কি প্লেন উড়তো না? যুদ্ধাহতরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে গ্যাংগ্রীনে মারা যেতো? নতুবা কেউ না কেউ পরে সেটা আবিস্কার করতোই?

তার চেয়ে বড় কথা আবিস্কার তো হয়েই গেছে, এখন এটা ভেবেই বা লাভ কি?

ঠিক এ কারনেই কি আমরা জাতি হিসেবে কোনো কিছুর আবিস্কারক হতে পারছি না?

একটার সাথে একটা খুব সূক্ষ্ম সংযোগ আছে বৈকি!

বিটকেলে নৈতিকতাবোধ ও আমাদের গর্ব

সক্রেটিসের আবির্ভাবের সাথে সাথেই পশ্চিমা সাহিত্য এবং আধুনিক দর্শনের আমুল পরিবর্তন সাধিত হয়। যদিও সেটা সক্রেটিসের মৃত্যুর পর টের পেতে শুরু করে। হেলিনিস্টিক শতককে বলা হয় গ্রীকদের জন্য স্বর্নসময়। এসময় সক্রেটিস, প্লেটো ও এ্যারিস্টটলের কাজগুলো আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে এবং তার পথ ধরে আর্কিমিডিস টলেমি ত্বরান্বিত করেন গ্রীক দর্শন ও ধর্ম চেতনা, মধ্য আফ্রিকা থেকে পারস্য এমনকি হিমালয়ের পাদদেশ, হিন্দুকুশ অতিক্রম করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

তখন গ্রীক সমাজে দাসপ্রথা বেশ প্রচলিত এবং সাধারন ব্যাপার ছিলো। সমাজের উচুশ্রেনী সবসময় নিজেদেরকে একটু আলাদা করে চলতেন। প্লেটো তার রিপাবলিক ও ল বইতে একটি আদর্শ রাস্ট্রের ধারনা দিয়েছিলেন। যদিও এ যুগে এই আদর্শ রাস্ট্রের ধারনা শুনলে সবাই তেড়ে আসবে কিন্তু প্লেটোর এই ধারনা তখনকার সমসময়িক সময়ে বেশ প্রভাব ফেলে এবং এ্যারিস্ট টল এর সমূহ সমালোচনাও করেন। প্লেটোর আদর্শ রাস্ট্রে দু শ্রেনীর মানুষ থাকবে যার মধ্যে একদল শাসক আরেকদল হবে শোষিত। শাসক দল আবার দু ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে পড়বে অভিভাবক বা তত্বাবধায়ক শ্রেনী এবং পরবর্তী ভাগ হবে তাদের সাহায্যকারী। প্লেটোর মতে বিয়ে হচ্ছে প্রকৃতি ও মানুষের শত্রূ যা শুধু সভ্যতার ধ্বংস ডেকে আনে। যেহেতু রাস্ট্র পরিচালনা করার অধিকার একমাত্র অভিভাবক বা তত্বাবধায়ক শ্রেনীর সেহেতু তাদের মধ্যে যারা বীর তারা সবচেয়ে সুন্দরী ও উর্বরা নারীদের মাধ্যমে তাদের সন্তানের জন্ম দেবে। এখানে কোনো সন্তান জানবে না তার পিতা কে, কোনো পিতা জানবে না তার সন্তান কে। এই গ্রুপের মধ্যে যে সবচেয়ে দুর্বল এবং অযোগ্য তার ভাগ্যে পড়বে কোনো কুশ্রী, দুর্বল নারী। তাদের সন্তানও হবে দুর্বল, বিকলাঙ্গ অথবা অযোগ্য শ্রেনীর। যারা একবারেই বিকলাঙ্গ তাদেরকে আলাদা করে সতর্ক ও মানবিক উপায়ে ছেটে ফেলতে হবে। এর ফলে যিনি শাসক হবেন তার ধন সম্পদ নিয়ে লোভের মাত্রা কমবে। যেহেতু তার সন্তান কে তা তিনি জানেন না সেহেতু তার জন্য সম্পদের পাহাড় বা প্রশাসনে তার জন্য স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি করার সুযোগ থাকবে না। তাই রাস্ট্রপরিচালনায় তিনি নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচারের আশ্রয় নিতে পারবেন। আর যেহেতু সন্তান জানবে না যে তার পিতা কতটা ক্ষমতাধর বা উচুপদে আসীন সেহেতু তাকেও নিজেকে তৈরী করতে হবে আরও উচু পদের জন্য। তাকে দেয়া হবে দার্শনিক জ্ঞান যাতে করে সে নিজেকে দর্শনের আধ্যাত্মবাদের গুরু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।

যদিও প্লেটো সাথে সাথে এও বলে গেছেন এরকম আদর্শ রাস্ট্র একমাত্র স্বর্গেই সম্ভব, পৃথিবীতে সম্ভব নয়, কিন্তু জন্মগতশ্রেষ্ঠত্ব ব্যাপারটা এখনও মানুষ তার অজান্তেই বহন করে। প্লেটোর এই আদর্শ রাস্ট্রের ধারনা নিষ্ঠুর, বর্বর এবং যত যাই বলি না কেন, আজ আমরা যে গনতান্ত্রিক পরিবার তন্ত্রে বসবাস করছি সেখানে সরকারী বা বিরোধী দলীয় পার্টির প্রধানেরা প্লেটোর এই জন্মগত ধারায় বিশ্বাসী হয়েই চলছে। কিছু দিন আগে ভারতে নির্বাচন হয়ে গেলো এবং সমালোচিত, নিন্দিত একইসাথে নন্দিত মোদী ফের নির্বাচিত হলেন এবং ভারতে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির যুগ আরও দীর্ঘস্থায়ী এবং পাকাপোক্ত হতে শুরু করলো। সেই সাথে কংগ্রেসের ভরাডুবি হলেও রাহুল গান্ধীর অযোগ্যতাকে কেও পাত্তাই দিলো না। বরংচ পার্টি হেরে যাক, পরিবারততন্ত্র বেচে থাকুক। যদিও বিজেপিতে এই পরিবার তন্ত্র নেই, তবে ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলো।

পরিবারতন্ত্র বা জন্মসূত্রে শাসক হওয়ার ব্যাপারটা সৌদী আরবেও দেখা যায়। আমাদের দেশের প্রধান বিরোধী দলে তো রীতিমত আয়োজন করে সবাই পূজো করে।

প্লেটোর ছাত্র এ্যারিস্ট টল বিয়ে ও রাজনীতি নিয়ে তার বিপরীত আদর্শের চিন্তাভাবনা বেশ সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে “পুরুষ মাত্রই রাজনৈতিক প্রানী”। এর অর্থ হলো মানুষ জন্মগত ভাবে রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে বেড়ে ওঠে। সামাজিক জীব হবার কারনে গোষ্ঠীর বাইরে বেড়ে ওঠার কথা চিন্তা করা যায় না বলেই গোষ্ঠীর উচিত প্রতিটি মানুষকে তার স হজাত উপায়ে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দেয়া। যদিও এ্যারিস্ট টল একটি রাস্ট্রের সরকার কি কি রূপ নিতে পারে তার একটা সরলীকৃত সংজ্ঞা দিয়ে গেছেন কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও তার এই সংজ্ঞা আমাদের সামনে খুব সহজেই ধরা দেয়। যদি একজন শাসক সবার কথা চিন্তা করে রাস্ট্র শাসন করেন তাহলে সেটা হবে রাজতন্ত্র আর যদি সে শাসক নিজের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে শাসন করেন তাহলে সেটা হবে স্বৈরতন্ত্র। যদি শাসকশ্রেনী সমাজের একটি নির্দিষ্টশ্রেনীর হয় এবং সবার স্বার্থে শাসন করে তাহলে সেটা হয় অভিজাততন্ত্র আর যদি সেই নির্দিষ্ট শ্রেনীর শাসক নিজেদের কথা চিন্তা করে তাহলে সেটা হবে গোস্ঠী শাসনতন্ত্র। আর সংখ্যাগরীষ্ঠতার ভিত্তিতে শাসক নির্বাচিত হয়ে সবার স্বার্থে কাজ করে তাহলে সেটা হবে রাস্ট্র শাসনব্যাবস্থা বা পলিটি। আর যদি সংখ্যাগরীষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়ে নিজেদের স্বার্থে কাজ করার অর্থ হলো গনতন্ত্র। এ্যারিস্টটলের মতে সর্বোত্তম রাস্ট্রব্যাবস্থা হলো রাজতন্ত্র যার পরেই লাইনে আছে অভিজাততন্ত্র। যেহেতু বেশীরভাগ ক্ষেত্রে রাজতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্র একসময় একনায়কতন্ত্র ও গোষ্ঠিশাসনতন্ত্রে পরিনত হয়, সে হিসেবে সবচেয়ে নিরাপদ ও ভালো অবস্থা হলো পলিটি বা রাস্ট্রশাসনব্যাবস্থা।

সে সূত্রে এ্যারিস্টটল প্লেটোর অস্থায়ী বিয়ে বা জন্মসূত্রে গোষ্ঠীর অংশ হওয়াটার বিরোধীতা করেন। তিনি পরিবারকে রাস্ট্রের অংশ হিসেবে দেখেন এবং প্রতিটা পরিবারের বিকাশ রাস্ট্রের অগ্রগতীর ধারক বলে মনে করেন। সে সূত্রে পুরো রাস্ট্রটাই হবে সকল পরিবারের রাস্ট্র যেখানে প্লেটোর রাস্ট্র হবার কথা এক পরিবার রাস্ট্র।

আসলে বিয়ে, রাস্ট্র, রাজনীতি নিয়ে এসব কথা এজন্যই বললাম আজ পত্রিকায় একটা খবর চোখে আসলো। ভগ্নীপতি তার স্ত্রীর বড় ভাইকে ফোন করে বললেন যে তার বোনের আত্মচিৎকার শুনতে। এই বলে তাকে বেদম প্রহার করতে লাগলেন। এরকম প্রহার এই প্রথম ছিলো না। বাবার মৃত্যুর পর ছোটবোনকে কোনো মতে মানুষ করে পরে তাকে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় যৌতুক দেয়া হয় ৩ লাখ টাকা ন গদ। কিন্তু যার সাথে বিয়ে দেয়া হয় তার দাবী ছিলো আরও বেশী। সে ঘরে এক পুত্র সন্তানের জন্মও হয়। তারপরও যৌতুকের বাকি টাকার জন্য এরকম বেদম প্রহার দিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এরকম ঘটনা আজই প্রথম নয়, আবহমান কাল থেকেই চলছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব প্রহারে অংশ নেন শ্বাশুড়ী ননদ এমনকি শ্বশুড় সাহেবও। প্রাচীন আব্রাহামিক ধর্মের নিয়মানুসারে আপনাকে মেয়েকে অর্থ দিয়ে বিয়ে করতে হবে এবং তার বাকী জীবনের ভরনপোষনের দায়িত্ব নিয়ে হবে। তার বদলে একজন স্ত্রী তার সতীত্ব ও গর্ভ পুরোটাই স্বামীর জন্য বরাদ্দ রাখবেন। এর অন্যথা হলে ব্যাভিচার স হ নানা শাস্তির ব্যাবস্থা আছে। যদিও আব্রাহামিক ধর্মের সর্বেশষ সংস্করন ইসলামের প্রসার এ অঞ্চলে ব্যাপক প্রসার ঘটলেও একটি মেয়ের পিতাকে অর্থ দিয়ে তাকে বিয়ে করার চল তেমন একটা দেখা যায় না। তবে নারীর সতীত্ব ও গর্ভের অধিকারের বেলায় এ অঞ্চলের মানুষের তারা কড়ায় গন্ডায় ওসুল করে ছাড়ে। সেখানে ধর্মের কড়া নিয়ম কানুন যেগুলো কিনা ক্ষেত্রবিশেষে জীবনসংহারী সেগুলো পালনেও কেও পিছপা হয় না।

এক্ষেত্রে আরো যে ব্যাপারটা আশ্চর্য লাগে আমাদের দেশে গনতন্ত্রের নামে অলিগার্কি বা গোষ্ঠীশাসনতন্ত্রের সুবাদে নারী দ্বারা সুদীর্ঘ সময় দেশ পরিচালিত হলেও নারীরা আজও অবহেলিত।

এই পারস্পরিক দ্বন্ধপূর্ন ব্যাপারগুলো আমাকে বেশ আগ্রহী গড়ে তোলে এই ভেবে যে আমাদের স্বজাতীর নৈতিকতাবোধ বানর বা শিয়ালের ডায়াস্পরার সাথে মেলে কিনা! যখন কোনো বাঙ্গালী বিদেশের মাটিতে নিজেদের সংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে বড় কথা বলে, তখন আমার বড্ড হাসি পায়।

এটা কি আমার দোষ? আমি আসলেই জানতে ইচ্ছুক।

চেরনোবিল: এইচবিও টিভি সিরিজ

প্রথম প্রথম ল্যাব করতে গিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট পড়লো ইউরেনিয়াম, আর্মেসিয়াম সহ বেশ কিছু তেজস্ক্রিয় পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা নিরূপনের জন্য। সারাজীবন শুধু ইউরেনিয়াম, এটমিক বোমার নামই শুনে গেছি কিন্তু কখনো ইউরেনিয়াম নিয়ে নাড়াচাড়া করবো সেটা ভাবিনি। এরপর আরেকটা পড়লো ঘরের কোনায় লুকিয়ে থাকা তেজস্ক্রিয় পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা নিরূপনের জন্য একটা সিস্টেম বানানো। তখন এটমেল এভিআর ৩২ এর চল ছিলো, বাজারে রাসবেরীর সিস্টেম সবে আসতে শুরু করেছে। এরপর আরেকটা এ্যাসাইনমেন্ট এলো যে রেডিয়েশন ব্লক করার সিস্টেম এবং তাদের কার্যকরীতা। লেড মানে প্লামবাম থেকে শুরু করে এলউমিনিয়াম গ্রাফাইট, মোটা পুরু কংক্রীটের স্লাব সবই ছিলো সেই বিকিরন টেস্টে। সে এক লম্বা তেজস্ক্রিয় টাইপের ইতিহাস। যদিও প্রফেসর সুপারভাইজার গন আমাদের আশ্বস্ত করতেন যে আসলে আমাদেরকে পিউর ইউরেনিয়ামের সংস্পর্শে নেয়া হবে না। এমন কিছু ধাতব পদার্থ যাদের ওপর ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয় বিকিরন ফেলা হয়েছে সেসব দিয়ে এই প্রজেক্ট গুলো করানো হবে।

সে যাকগে, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কখনো যদি মেল্ট ডাউন বা দুর্ঘটনা ঘটে তখন সবচে বিপদজ্জনক যে জিনিসটা হয় তেজস্ক্রিয়তার ছড়াছড়ি। এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সবাই যেটা জানি না কোরিয়ামের ভয়াবহতা। নিউক্লিয়ার রড যখন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে চেইনরিএকশন ঘটে তাকে ঘিরে থাকা কন্ট্রোলড মডারেটর আর কিছু করতে পারে না। প্রচন্ড তাপে, এই মোটামুটি ২৭০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে (১০০ ডিগ্রিতে পানি বাস্পীভূত হয়, ইস্পাতের গলনাংক ১৫১০ ডিগ্রী), মডারেটর ধরে রাখতে পারে না। সেখানে প্রচন্ড তাপে ইউরেনিয়াম ফুয়েল রড গলতে শুরু করে এবং আশেপাশের সবকিছু গলিয়ে লাভাতে পরিনত করে। পানির সংস্পর্শে এসে বোরিক এসিড, ইন্ডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, সিজিয়াম আয়োডাইড এবং পরে জিরকোনিয়াম ডাইঅক্সাইডের সৃষ্টি করে। পানির সংস্পর্শে প্রচুর বাস্পের সৃষ্টি করে এবং সেই বাস্পে এসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে আর তখন শুরু হয় তুষার পাত। দুর্ঘটনাস্থল হতে ১৫০-২০০ কিলোমিটার দূরে জানালার শার্সিতে যে ধূলো লেগে আছে তাতে পাবেন তেজস্ক্রিয় আয়োডিন ১৩১ এর আইসোটোপ। সেই কোরিয়াম ঠান্ডা করতে সারা সোভিয়েত ইউনিয়নের যত বোরন ছিলো অথবা হিট এক্সচেন্জারের জন্য যত লিকুইড নাইট্রোজেনের মজুত সব এক অর্ডারে চেরনোবিলে জড়ো করা হয়েছিলো। সুইডেনের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের মিটারে আয়োডিন ১৩১ এর আইসোটোপ ধরা দিচ্ছিলো। তখনও সারা বিশ্ব জানতে পারে চেরনোবিলের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে দুর্ঘটনা হয়েছে। সাদা তুলোর পেজার মতো পড়তে থাকা তুষারপাত মানুষ ভুল ভেবে যদি চোখে মুখে লাগায়, অথচ এটাই তেজস্ক্রিয়তা তখন কি কেউ ভেবে দেখেছে তার কি হবে?

সুন্দর একটা পয়েন্ট! তেজস্ক্রিয়তা আসলে ব্যাপারটা কি? মানুষ যখন তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে আসে তখন আমাদের কংকালের হাড়ের ক্যালসিয়াম খুব দ্রুত তেজস্ক্রিয় বা আয়োনাইজড হয়ে যায় এবং সেগুলো বিকিরন করা শুরু করা। ফলে শরীরে রক্তে থাকা হিমোগ্লোবিন বা রেড সেলের অক্সিজেন স হজেই নস্ট হয়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ও হিলিং ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কোষের ডিএনএ গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মিউটেটেড হওয়া শুরু করলে হাড় থেকে মাংস গুলো খসে পড়ার যোগাড় হয়। বড় ভয়ংকর সে মৃত্যু। তবে আপনাকে সে পরিমান রেডিয়েশনের শিকার হতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে বছরে আপনি বছরে সর্বমোট মাত্র ৩ রয়েন্টজেন্ট রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসতে পারেন। আপনি যদি নিউক্লিয়ার ফ্যাক্টরীতে কাজ করেন তাহলে বছরে ৫ এর বেশী না। এখন আপনি যদি হেজমেট স্যুট পড়ে রিএক্টরের সামনে নাচানাচি করেন, তাহলে আপনার মৃত্যু হয়তো তার পরের দিন সকালে লিখিত হবে। চেরনোবিল রিএ্যাক্টরে যখন মেল্ট ডাউন হয় তখন দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে ১৫০০০ রয়েন্টজেন্ট এবং কেন্দ্রে প্রায় ১ মিলিয়ন রয়েন্টজেন্ট ছিলো।

এইচবিও চেরনোবিলের ওপর অসাধারন সিরিজ তৈরী করেছে। প্রথম দুটো এপিসোডে এমনও দৃশ্য আছে যখন রেডিয়েশনের মেঘ লোকালয়ের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে তখন তার নীচে ছোট ছোট শিশুরা পনিটেইল বেধে স্কুলে খেলা করছে। কিশোরীরা গরম থেকে রক্ষা পাবার জন্য আইসক্রীমে কামড় দিচ্ছে। উঠতি বয়সী যুবকেরা স্কুল ফাঁকি দিয়ে বাস্কেটবল কোর্টে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছে। সবচেয়ে দুঃখজনক দৃশ্য ছিলো যখন রেডিয়েশনে আক্রান্ত সবাইকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তখন প্রিয় পোষা কুকুরটি সে গাড়ীর পিছে দৌড়াচ্ছে। কুকুরটির শরীরের অর্ধেক পশম নেই, রক্ত ঝরছে। তার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। সে তার মালিকের গাড়ীর পিছু নিয়েছে।

এখানেই শেষ নয়, সরকার পক্ষ নিজেদের এহেন ব্যার্থতাকে ঢেকে রাখবার জন্য যে অসুস্থ অস্বীকার ও ঘটনা ধামাচাপা দেবার প্রবনতা সেটা খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। যেসব কয়লা শ্রমিকদের রিএ্যাক্টরের নীচে থাকা পানি সরানোর জন্য পাম্প ও হিট এক্সচেন্জার বসানোর কাজে নিয়োজিত করা হয়, তাদের ছিলো না কোনো হেজমেট। ওপরে ইউরেনিয়াম অক্সাইডের কোর গলছে, মিলিয়ন মিলিয়ন রয়েন্টজেন্ট পরিমান তেজস্ক্রিয়তা নির্গমন হচ্ছে আর নীচ দিয়ে পুরো উলঙ্গ অবস্থায় সূড়ঙ্গ গড়ছে। যদিও জানে না এই আত্মঘাতী কাজের জন্য তাদের কোনো ক্ষতিপূরন দেয়া হবে কিনা কিন্তু তারা এটা করছে এই গলিত কোরিয়াম যদি পানির সাথে গিয়ে থার্মোনিউক্লিয়ার ব্লাসট ঘটায় অথবা পার্শ্ববর্তী নদীর পানিতে মেশে তাহলে ৫০ লক্ষ মানুষের খাবারের সুপেয় জলের উৎস বহু বছরের জন্য তেজস্ক্রিয় হয়ে থাকবে।

সমালোচনা করা যায় গর্বাচেভের আদলে যিনি অভিনয় করছেন। ছোটবেলায় গর্ভাচেভের ভারী কিউট পার্সোনালিটির সাথে এ চরিত্রটা তেমন যায় না। কিন্তু তাতে এক অথর্ব দুর্নীতিগ্রস্থ ও অযোগ্য সরকারের ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তুলতে এতটুকু কার্পন্য নেই কারো অভিনয়ে বা শুদ্ধ বয়ানে।

কি যেনো মসৃন কালো পাথরের মতো ছিলো! বেশ উৎসাহভরেই দমকল কর্মী সেটা হাতে নিলো। পাশের সহকর্মী বলে উঠলো,”ওটা গ্রাফাইট, ফেলে দে!” একটু সন্দেহ দেখা দিলো, হাত থেকে ফেলে দিলো,”কংক্রিটও হতে পারে!” কিন্তু তার মিনিট কয়েকের মধ্যে তার হাত ঝলসে গেলো। আসলে ওটা গ্রাফাইট ছিলো, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে তেজস্ক্রিয়তম পদার্থটি সে হাতে নিয়ে নিজের ওপর পৈশাচিক মৃত্যুকেই যেনো ডেকে এনেছিলো। রক্তাক্ত, কষ্টকর, যন্ত্রনাকাতর মৃত্যুর চাইতেও ভয়াবহ ছিলো এক অথর্ব স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের চরম ব্যার্থতার রূঢ় শিকার!

আমরাও কিছু দিন পর নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করছি। চেরনোবিলের আরবিএমকে নিউক্লিয়ার রিএক্টর থেকে হাজার গুন নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী ও যুগোপোগী এই রিএ্যাক্টর। যদি দক্ষ হাতে চালানো যায়, আমাদের আর পিছে ফিরে তাকাতে হবে। ভুল হলেও এরকম ক্ষতি হবার সম্ভবনা নেই। তারপরও আমাদের হয়তো তখন একটা করে আয়োডিন ট্যাবলেটের কৌটা সাথে করে ঘুরতে হবে। তার আগে এই সিরিজটা একটা ভালো শিক্ষা হতে পারে।

অবশ্য আমরা মনে সান্তনা পাবার জন্য ফুকুশিমা দুর্ঘটনার দিকে তাকাতে পারি যেখানে তেজস্ক্রীয়তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে আনা গেছে যদিও দুর্ঘটনাস্থলে এখনো ভয়াব হ মাত্রা তেজস্ক্রিয়তা বিদ্যমান। সেই পুরো প্লান্ট স্ক্রাপ করার জন্য ৪০ বছরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যের শুধু প্লান করার জন্য হাতে ৫ বছর রাখা হয়েছিলো। কিন্তু ৮ বছর পর রোবট দিয়ে এখন ধারনা পাওয়া যাচ্ছে চেরনোবিলের ফুকুশিমার রিএ্যাক্টর পুরোপুরি ধ্বসে যায়নি এবং কোরিয়াম এখনো রিএ্যাক্টরের ওপরের দিকেই আছে। পুরোপুরি রোবট নিয়ন্ত্রিত উদ্বার কাজ করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে তবে সেই টেকনোলজি এখনো কারো হাতে আসেনি। তাই বলে গবেষনা থেমে নেই। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ভূমিকম্প রিখটার স্কেলের ৬-৭ ঠেকাবার জন্য সিভিল ইন্জিনিয়াররা পন্থা বের করতে পারলেও ৮ এর ওপর বা ৯ হলে তার কোনো পন্থা কারো জানা নেই। হতে পারে প্রকৃতির একটা ধাক্কা তাই বলে এটা আশীর্বাদ ধরা যায় এ জন্য যে এর ফলে টেকনোলজিক্যাল যে উন্নয়ন ঘটবে তা কাজে লাগানো যাবে গ্রহান্তরী অভিযান বা আরো বড় কোনো কাজে।

বিজ্ঞান আসলেই উত্তর দেয়, বলা হয়নি যে সবকিছু স হজে মিলবে। প্রকৃতির গুপ্তধন আরাধ্য বলেই মানুষের এগিয়ে যাওয়া।

“জয় চেরনোবগ”

ইউরোপের অনেক রেস্টুরেন্টের বারে ফানবোর্ডে লেখা থাকে “ড্রিংক বিয়ার সেভ ওয়াটার”। এই লেখাটা প্রথমবার দেখে বেশ হাসি আসলেও বারটেন্ডার যখন বললো আফ্রিকার অনেক দেশে বিশুদ্ধ পানির দাম বীয়ারের চেয়ে বেশী, তখন হতাশা পেয়ে বসে। যেকোনো পরিমানের এলকোহলই হোক, যকৃত কিডনির জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সেসব দেশে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য হলেও সবাইকে বীয়ার পান করে বাঁচতে হবে। তারা কৈশোর থেকেই এলকাহলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আমরা যেখানে কেটো ডায়েটের নামে একটা বীয়ার পান করলে ৭ টা পাউরুটির সমান কিলোক্যালোরী গ্রহন করবো এই ভয়ে তার ধারে কাছে যাই না, সেখানে কালো দরিদ্র মানুষগুলো নিজের জীবন বাচাতে বীয়ার তথা এলকোহলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।

একটা সময় মনে হতো আর কতটা ক্ষতি হলে মনে হবে অনেক হয়েছে, এখন আমাদের থামা উচিত। সমাজ থেকে সকল কলুষিত চিন্তা ভাবনা, অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। শুনেছি বিশ্বের ৮০ টি শহরে যুবক যুবতীরা মিছিল করে রাস্তা বন্ধ করছে শুধু একটা দাবী নিয়ে, পৃথিবীর জলবায়ু রক্ষা করতে হবে। অথচ নেতাদের কথাবার্তা শুনলে ছোটবেলার আজব একটা চিন্তার কথা মনে পড়ে যায়।

তখন বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই লম্বা ছুটিতে নানু বাসা চলে যেতাম। সকাল বেলা উঠেই সুবর্ন বাসে উঠে ঢাকার দিকে যাত্রা করা, দৌলতদিয়ার ঘাটে লঞ্চ ধরা, পদ্মার থৈ থৈ ঢেউয়ে ভয় লাগলেও একটা রোমাঞ্চ অনুভব করতাম নানু বাড়ি যাচ্ছি। আমি আবার সাতার জানতাম না। পদ্মার প্রমত্তা ঢেউ আমার মনে ভয় জাগাতো, ভাবতাম এটাই বুঝি শেষ যাত্রা আমার। কিন্তু দেখো! তারপরও দিব্যি বেচে আছি। পদ্মা এখন দেখতে কুমার নদীর মতো মজা কোনো খাল। সে যাই হোউক, ঢাকায় এলে নানুকে দেখতাম বিশাল একটা এলুমিনিয়ামের ট্রেতে চালের খুঁত বাছতেন। মামারা ছিলো যৌথ পরিবার, তার ওপর দু তিনজন বিয়ে করে সবাই একসাথেই থাকতো, সে এক বিশাল হুলস্থুল ব্যাপার স্যাপার। নানু কাজের মেয়েদের নিয়ে দিনের একটা বড় অংশ কাটাতেন চাল বাছতে বাছতে। ছুটির সময় সব কাজিনরা এলে বাসা পুরো গরম হয়ে যেতো। নানু সব পিচকি পাচকাদের ধরে চাল বাছতে বসিয়ে দিতেন আর আমরা স্বানন্দে পুরো ড্রাম ভরে দিতাম।

চাল বাছতে বাছতে মনে হতো এই যে একটা দুটো তিনটি খুত বেছে নিলাম এতে কি চালের পরিমান কমবে? এত গুলো চালের মধ্যে দুটো চাল নিলেও তাতে কোনো পার্থক্য হবে না। এমনকি আরো দুটি, আরো দুটি, প্রগমনিক ধারায় চলতে থাকলেও সে চাল ফুরোবে না। নানুকে বুঝিয়ে না বলতে পারলেও তিনি ঠিকই বুঝে নিয়ে একটা লাইন বললেন,”কোন সে ব্যাপারী গুনতে পারে এক থাল সুপারী?” রাতের বেলা আকাশের তারা গুনতে গিয়েও একই সমস্যায় পড়লাম। ঠিক যেখান থেকে তারা গুনতে শুরু করেছি, আমি সেখানেই আটকে থাকি। কোথা থেকে কোন তারা কোথা দিয়ে উকি দিচ্ছে, বোঝা মুস্কিল। তারা গোনাটা একটা গোলক ধাঁধাঁ। তবু আমার দুঃসাহস থামেনি। জ্ঞান অর্জন করলাম, বুঝতে শিখলাম কিভাবে অসংখ্য জিনিসকে মাপতে হয়, তাকে কাজে লাগাতে হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্ব নেতারা নাছোড়বান্দা। তারা ছোটবেলার সেই চাল গোনার হিসাবেই পড়ে আছে। মনে করে এতটুকু কার্বন নিঃসরনে কিছু হবে না। হলেও প্রকৃতি ঠিকই সামলে নেবে। অথবা যদি হয়ও তাহলে সেটা অবশ্যম্ভাবী। ঠেকানো যাবে না। তারা যেনো ছোটবেলার সেই ভ্রান্ত দর্শনে আটকে আছে।

স্লাভিক গড চেরনোবগ ছিলেন একজন অপদেবতা। সে অভিশাপ দেবার পয়মন্ত ছিলো, হাস্যজ্বল উৎসবে মৃত্যুর ছায়া ডেকে এনে বিষাদের বন্যা বইয়ে দিতে তার মুন্সিয়ানা তুলনাহীন। ওডিনের গুংনীরের মতো তার ছিলো কাঠের তৈরী বিশাল হাতল ওয়ালা হাতুড়ী। উৎসর্গের গরুর মাথায় এক আঘাতে ফাটিয়ে হত্যার প্রিয় অস্ত্র ছিলো সেই হাতূড়ি, যেনো তরমুজের মতো ফেটে চূরমার। আমাদের নেতারা হলো সেই চেরনোবগের ছায়া। তাদের কলমের খোঁচা গ্রীমনিরের গুংনীড়।

আমরা সেই উৎসর্গের গরু, বলা যায় বলির পাঠা। যদিও প্রহেলিকার জগতে বাস আমরা নিজেদেরকে মহান হুবালের বিশ্বাস ধারন করা সাহসী ছায়াসঙ্গী ভাবতে ভালোবাসি অথচ এ সবই মায়া, মিথ্যা। আমাদের বিশ্বাসের মোহরে তারা বেঁচে থাকে, ঈশ্বর হয়ে আমাদের ভাগ্য নিয়ে হাস্যকর খেলা খেলে।

আমাদের দরকার ছিলো একজন প্রমেথিউস অথবা ফ্রান্সের আধুনা “ভলতেয়ার” পল সাঁত্রে, যারা আমাদের চোখের পর্দা সরিয়ে ইউটোপিয়ার জগতকে ভেঙ্গে দেবেন! যদিও ভয় হয়, আমাদের বিপ্লব হাতছাড়া হয়ে মধ্যযুগীয় হুবালের হন্তারক ডাকাতের অনুসারীদের হাতে না চলে যায়! আজ তাই ইরান, আফগানিস্তান, সিরিয়ার লাখোকোটি মানুষ নীরবে কাঁদছে, সে কস্ট গুলো আসলেই কাউকে স্পর্শ করে না, না হুবাল, না আজুরা মেহতা, না ওডিন অথবা আখেনাতেনের সেই আদি পরাক্রমশালী “আতেন”!

হ্যাপী ব্লগিং!!