ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় পর্ব

ভালবাসা শুধু ভালবাসা
দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় পর্ব

সিঁদুর দিয়ে কেনা ভালবাসা
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

“সিঁদুর দিয়ে আমি তোমার ভালবাসা কিনে নিলাম নন্দিনী। আজ থেকে তুমি আমার। যুগ যুগ ধরে আমি তোমারই থাকবো। তোমাকে কেউ আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।” — কিশোর সোহাগভরা কণ্ঠে বলে। নন্দিনীর সিঁথি সিঁদুর দিয়ে রাঙিয়ে দেয় কিশোর। মন্দিরের পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করে দুটো হাত এক করে দেয়। মালা বদল হয়ে গেল। উভয়ে পুরোহিতকে প্রণাম করে।

আনুষ্ঠানিক বিয়ে ওদের হয় নি। তাই বলে হৃদয়ের আবেদন ব্যর্থ হবার নয়। এরপর সবাই যখন জানবে ওরা ভালবাসা করে মন্দিরে বিয়ে করেছে- ওদের মা-বাবা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, আত্মীয়স্বজন, পাড়ার জ্ঞাতি কুটুম্বজন সবাই কি এদের বিয়ে মেনে নেবে….???

নন্দিনীর বাবা স্থানীয় থানায় এফআইআর করলেন- তাঁর অষ্টাদশ বর্ষীয়া নন্দিনী নিরুদ্দেশ। স্থানীয় পুলিশ কর্তব্য পরায়ণে তত্পর হয়ে উঠেন। যেমন করেই হোক তারা খুঁজে বের করবেন নন্দিনীকে। উপযুক্ত তদন্ত করে অপহরণকারীকে উপযুক্ত শাস্তি দেবেন- তারা কথা দিয়েছেন নন্দিনীর বাবাকে।

দিন যায় রাত আসে। রাত কেটে ভোর হয়ে আসে। নতুন সূর্য ওঠে। অজয়ের ঘাটে ঘাটে তরী এসে ঠেকে। দিনের শেষে মাঝি ঘরে যায়। এমনি করে কেটে যায় পুরো একটি মাস। নন্দিনীর কোন হদিশ পায় না পুলিশ।

অজয় নদীর বাঁকে শাল পলাশের বন। দূরে আদিবাসী পাড়ায় মাদল বাজছে। রাতের আঁধারে নবদম্পতি কিশোর ও নন্দিনী সকলের চোখে ধূলো দিয়ে মহুল বনে পেতেছে ভালবাসার খেলাঘর। রাতে পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে। বাঁশির সুরে মাদল বাজে। নাচ গানের আসর জমে ওঠে। হাড়িয়া আর চোলাই মদ খেয়ে আদিবাসী মহিলা পুরুষ যখন মাতাল হয়ে চোখে সর্ষে ফুল দেখে, তখন কিশোর আর নন্দিনী একে অপরকে গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরে আর গুন গুন করে গেয়ে ওঠে – এই রাত যেন না শেষ হয়।

আদিবাসী রমণীরা সবাই ওদের দুজনকে সম্মান করে। ওরা বলে তারা নাকি জীবন্ত বন-দেবতা, ও বনবিবি। সবাই তাদের উদ্দেশ্যে মানত করে। পাঁঠা বলি দেয়। তারপর আবার পূজার নামে আনন্দের ধূম পড়ে যায় সারা আদিবাসী পাড়ায়।

এমনি ভাবেই দিনগুলো তাদের ভালোই কাটছিল আদিবাসী জঙ্গল মহলে। এই কয়দিনে আদিবাসী পুরুষ রমণীদের সবাই তাদের আপন হয়ে উঠেছে। ভাবতে অবাক লাগে –কত সহজ সরল এদের মন। এরা সকলকেই বিশ্বাস করে। আর এই ভুলের খেসারত দিতে হয় ওদের যুগ যুগ ধরে।

জোতদার জমিদার মহাজনরা ওদের ঠকাচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে ওদের জমি। চুরি করছে ওদের খেতের ফসল। পাঁচ টাকা ধার নিলে মহাজনরা মিছামিছি দশ টাকা লিখে রাখে। অথচ ওরা সরল বিশ্বাসে মহাজনের সমস্ত দেনা শোধ করে। জোতদার, জমিদারদের আজও ওরা প্রণাম করে, পায়ের ধূলো মাথায় নেয়।

যুগ পাল্টাচ্ছে। প্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে দেশ। কিন্তু এদের জীবন অন্ধকারময় জঙ্গলেই পড়ে আছে। এর নাম দেশ শাসন নয়, শাসনের নামে এদের শোষণ করা হচ্ছে। শোষিত জনগণ মুখ বুজে সব সইতে পারে।

কিশোর আর নন্দিনী আদিবাসীপাড়ায় স্কুল খুলে দিয়েছে। আদিবাসীদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ওরা বিনা পয়সার পড়ায়। বিনা পয়সায় ওদের দান করে বই, খাতা, স্লেট পেনসিল ইত্যাদি। ওদের পোশাক কিনে দেয়। রাতে অবৈতনিক বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে আদিবাসী পুরুষ মহিলা একসাথে লেখাপড়া শেখে। নন্দিনী আদিবাসী পাড়ায় খুলেছে একটা সেলাই স্কুল। সব আদিবাসী রমণীরাই এখানে সেলাই শিখতে আসে।

তারপর হঠাৎ একদিন জঙ্গল মহল তোলপাড় করে ছুটে আসে একটা সাদা ট্যাক্সি। ট্যাক্সি থেকে বন্দুক হাতে নেমে আসে নন্দিনীর বাবা। দূর থেকে কিশোরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। আর সেই গুলিতেই কিশোরের দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

নন্দিনী কিশোরের নিষ্প্রাণ দেহটার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বলে- এ তুমি কি করলে বাবা। তুমি নিজের হাতে আমার সিঁথির সিঁদুর মুছে দিলে। আজ থেকে একমাস আগে আমরা মন্দিরে গিয়ে মালা বদল করেছিলাম।

পিছনেই তীব্রগতিতে ছুটে আসে পুলিশের ভ্যান। নন্দিনীর বাবার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয় পুলিশ অফিসার। বলে –“আইনকে কেন আপনি নিজের হাতে তুলে নিলেন। কিশোরকে হত্যা করার অপরাধে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হলো।”

বন-দেবতার মৃত্যুতে আদিবাসীরা আজ সবাই শোক প্রকাশ করবে। বাঁশের বাঁশি আজ আর বাজবে না। মাদলে আজ আর কাঠি পড়বে না। হাড়িয়া আর চোলাই মদ খাওয়া আজ নিষিদ্ধ। পাড়ার সবাই মিলে লাশটাকে অজয়ের শ্মশান ঘাটে নিয়ে গিয়ে জ্বালিয়ে দিল। নন্দিনী শ্মশানে জ্বলন্ত চিতার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

4 thoughts on “ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় পর্ব

  1. বর্তমান এবং চলমান আপনার অণুগল্পে দুটি কন্টেন্ট আমার দৃষ্টি কেড়েছে। প্রথমটি হচ্ছে গল্পের প্রাধান্য এবং ব্যবহৃত ছবি। দুটোর ককটেল; গল্পের থিমকে সম্ভবত দূর্বল বা সিরিয়াসনেসের অভাব ঘটাচ্ছে। প্রাসঙ্গিক একটি ছবিই যথেষ্ঠ ছিলো বলে মনে করি মি. লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।

    ধন্যবাদ।

  2. গল্পটি পড়লাম কবি ভাণ্ডারী দা। ভালোবাসার গল্প বিরহে গিয়ে ঠেকলো।

  3. ভালো পরিসমাপ্তি। তবে গল্পের যে দৃশ্য কল্পনায় ভাসছিলো, ছবির ব্যবহার গল্পের রেশ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। 

  4. অজয়ের শ্মশান ঘাট। প্যাথেটিক গল্প। প্রিয় কবি দা আপনার পোস্টে ছবির সংখ্যা কমিয়ে দিন। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।