গরু থাকতে বনের হিংস্র পশু বাঘ পেলো জাতীয় খেতাব।
১৯৮৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের কথা। সেসময় ঢাকা মিরপুর ১১ নম্বর একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরিতে যোগদান করেছিলাম। যোগদান করার দুইদিন পর আসলো শুক্রবার। শুক্রবারে মিল থাকে বন্ধ! বিকালবেলা মিলের অনেকেই অনেক স্থানে বেড়াতে বেরিয়ে গেছে। আমি অন্য কোথাও না গিয়ে, গেলাম চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করার টিকেট সংগ্রহ করে ঢুকলাম চিড়িয়াখানার ভেতরে। হরিণ দেখছি, জিরাফ দেখছি, সাপ দেখছি, ভাল্লুক দেখছি, উল্লুকও দেখছি! এরপর গেলাম চিতাবাঘের খাঁচার কাছে। দেখলাম চিতাবাঘ! শেষমেশ গেলাম রয়েল বেঙ্গল টাইগার নামের বাঘের খাঁচার কাছে। হলুদের রঙের মাঝে কালো ডোরাকাটা বাঘ! যখন বাঘের খাঁচার সামনে গেলাম, বাঘ তখন খাঁচার ভেতর এক জায়গায় একাকী শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। আমি দাঁড়িয়ে দেখছিলাম।
এমন সময় আমার সামনে দাঁড়িয়ে একজন ভদ্রলোক তাঁর ছোট শিশুটিকে তর্জনী উঁচিয়ে বললো, “ঐযে দেখ, আমাদের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার!” ভদ্রলোকের কথা শুনে একা একাই ভাবতে লাগলাম। আর নিজে নিজেকে প্রশ্ন করলাম, “আচ্ছা, আমাদের দেশে এতো এতো পশু থাকতে, বনের হিংস্র পশু বাঘকে জাতীয় খেতাব দেওয়া হলো কেন? বাঘের কাছ থেকে কি ঘুষ নেওয়া হয়েছিল? নাহয় এই বাঘকে কেন রাষ্ট্রীয় বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হলো? এসবের উত্তর কিছুতেই মেলাতে পারিনি! তবুও ভাবছি!
ভাবতে লাগলাম! যেই হিংস্র পশুর নাম শুনলে এমনিতেই গায়ে কাটা ধরে! মনের ভেতরে লাগে ভয়! যেই বাঘের সামনে কেউ কখনো যেতে পারে না। যদিও আচমকা কেউ কখনো বাঘের সামনে পড়ে, তাহলে তাঁর আর রক্ষা নেই! হয়তো আহত, নাহয় নিহত! যারা এজাতীয় বাঘকে সম্মান করে জাতীয় উপাধি বা খেতাব দিয়েছে, তাঁরাও যদি বাঘের সামনে কখনো যায়, তো রক্ষা নেই! আর এই জাতীয় বাঘ দিয়ে আমাদের দেশের জনগণের একটা টাকাও আয় রোজগার হচ্ছে বলে মনে হয় না! বরং এই বাঘ রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অনেক অনেক অর্থকড়ি ব্যয় হয়। সময়সময় এই বাঘের আক্রমণে বাঘ রক্ষাকারী বনবিভাগের অনেকের জীবননাশও হয়ে যায়। অনেকসময় বাঘ সুন্দরবনের গহীন জঙ্গল থেকে লোকালয়ে ঢুকে অনেক মানুষকে আক্রমণও করে। সময়সময় বাঘের উৎপাতে সুন্দরবন ঘেঁষা মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। অথচ এই হিংস্র পশু বাঘকে দেওয়া হলো বিশেষ সম্মাননায় জাতীয় খেতাব, ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’।
আমার মতে এই হিংস্র পশু বাঘকে জাতীয় উপাধি বা খেতাব না দিয়ে, গৃহপালিত পশু গরুকে দিলে মনে হয় ভালো হতো! কারণ, এই পশুটি পৃথিবী সৃষ্টিলগ্ন থেকে আমাদের জীবনের সাথে মিশে আছে। যে প্রাণীটি আমাদের সবচেয়ে কাছে থাকে এবং বেশি উপকার করে থাকে তার নাম হলো গরু। এ প্রাণী খুব শান্তশিষ্ট ও অত্যন্ত নিরীহ। বাঘের মতো হিংস্র নয়!
এই পশুটি নীরবে-নিবৃতে সবার উপকারই করে আসছে। তা এই পৃথিবী নামক গ্রহটির সব মানুষেই জানে। জানা যায় এই প্রানীটিও নাকি একসময় বন্যই ছিল। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে নিতান্ত প্রয়োজনের তাগিদেই গুরুকে কাছে টেনে এনেছে। আর তখন থেকেই গরু গৃহপালিত পশু হিসেবে আমাদের ভালোবাসা কেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই গৃহপালিত পশু গরু আমাদের অর্থনীতিতেও বিরাট ভূমিকা পালন করে আসছে।
পৃথিবীতে থাকা অন্যসব বন্য পশুর তুলনায় গরু সবচেয়ে উপকারী পশু। গরুর দুধ অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এই দুধ অনেক সময় মানবশিশুর মায়ের দুধের অভাব পূরণ করে। যেমন– ছোটবেলা কোনও শিশুর মা মারা গেলে সেই শিশুটি গরুর দুধ পান করেই বাঁচতে পারে। তাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী গুরুকে মাতৃরূপে পূজাও করে থাকে। গরুর দুধ থেকে দই, ছানা, মাখন, ঘি, পনির, ক্ষীর ও নানা রকম মিষ্টি তৈরি হয়। বড়বড় ডাক্তার বাবুরা বলে, স্বাস্থ্যের জন্য নাকি এগুলোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। গরুর মাংস একটি উপাদেয় ও বলকারক খাবার। আবার মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ঈদুল-আযহায় লক্ষ টাকা দিয়ে এই পশুটিকে বাজার থেকে কিনে নেয়। তারপর খুবই আদরযত্ন সহকারে মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের জন্য পশুটিকে কোরবানি করা হয়।
তা ছাড়া, গরুর গোবর একটি উত্তম সার। অনেকে আবার গোবর শুঁকিয়ে ঘুঁটে তৈরি করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। গরুর চামড়া দিয়ে জুতা, ব্যাগ, সুটকেস, বাক্স তৈরি হয়। শিং ও খুর দিয়ে শিরিষ আঠা তৈরি হয়। হাড় থেকে তৈরি হয় বোতাম ও চিরুনি। হাড়ের গুঁড়ো একটি উত্তম সার। ষাঁড় ও বলদ লাঙল, গাড়ি ইত্যাদি টানে। আগেকার সময় আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে পাবলিক পরিবহণ বলতে গুরুর গাড়িই ছিল। সেসব গরু গাড়ি দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মালামালও আনা-নেওয়া হতো। এখনো আমাদের দেশের ৬৮ হাজার গ্রামের মধ্যে অনেক গ্রামের কৃষকরা জমি ও মইয়ের জন্যে গরুর উপরই নির্ভরশীল। এখনো তাঁরা জমি চাষাবাদের জন্য গরু ছাড়া আর কিছুর কল্পনাই করতে পারে না। গরুর এতো অবদানের পরও গৃহপালিত এই পশু গরুকে জাতীয় উপাধি বা খেতাব না দিয়ে জাতীয় খেতাব দিলো বনের হিংস্র পশু বাঘকে। গরু নিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে নিজে নিজেই বলতে লাগলাম, হায়রে কপাল! গৃহপালিত পশু গরু থাকতে বনের হিংস্র পশু পেলো জাতীয় খেতাব! দুঃখ শুধু এখানেই থেকে গেল।
লেখা একান্ত অনুভূতি থেকে।
গরুর এতো অবদানের পরও গৃহপালিত এই পশু গরুকে জাতীয় উপাধি বা খেতাব না দিয়ে জাতীয় খেতাব দিলো বনের হিংস্র পশু বাঘকে। কথা একদম সত্য নিতাই বাবু। তবে গরুকে জাতীয় উপাধি দিলে বিপদও আছে।
কোনও বিপদই হতো না দাদা। শুধু ঈদুল-আযহায় এর দাম হয়তো দ্বিগুণ হতো। আর প্রতি কেজি মাংসের দাম হতো দেড়গুণ।
গৃহপালিত পশু গরু থাকতে বনের হিংস্র পশু পেলো জাতীয় খেতাব!
দুঃখ শুধু এখানেই থেকে গেল। সমবেদনা কবি নিতাই বাবু।
সমবেদনা জানানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। শুভকামনা রইল।
কথায় লজিক আছে দাদা।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় কবি রিয়া দিদি। শুভকামনা সবসময়।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার কে জাতীয় পশু আখ্যা দেয়ার কারণ হচ্ছে,
এই পশু শুধুমাত্র সুন্দরবনেই পাওয়া যায় যা পৃথিবীর আর কোথাও এই অনুপাতে নেই। ইলিশ মাছ জাতীয় মাছ হওয়ার কারণ হচ্ছে আমাদের নদীগুলোতে যত পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যায়,পৃথিবীর অন্য কোন দেশে অতটা পাওয়া যায়না।
বেঙ্গল টাইগার শুধু ভারত ও আমাদের বাংলাদেশেই যে আছে তা নয়! এজাতীয় বেঙ্গল টাইগার নেপাল,ভুটান,
মায়ানমার ও দক্ষিণ তিব্বতের কোন কোন অঞ্চলে এই প্রজাতির বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। বাঘের উপপ্রজাতিগুলির মধ্যে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যাই সর্বাধিক। ভারত সরকারেরজাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুসারে ভারতে বেঙ্গল টাইগারের বর্তমান সংখ্যা ১,৪১১। আমাদের বাংলাদেশ এর সংখ্যা মনে হয় ৪০০টি হতে পারে।
আর আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের কথা বলছে? এই মাছ ভারতের কিছু অংশেও পাওয়া যায়। পাওয়া যায় ভুটানের ঘেঁষা সমুদ্র অংশেও।
আয়তন এবং পরিসংখ্যানের দিক থেকে আমাদের দেশেই বেশি।
গরু থাকতে বনের হিংস্র পশু বাঘ পেলো জাতীয় খেতাব।ঠিকই তো আছে। এমন সাহসী পশূ আমাদের জাতীয় পশু হওয়া মানে আমাদের বীরত্বকেই পৃথিবীর কাছে তুলে ধরা।
বাঘকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। বাঘ সবসময়ই হিংস্র। বর্তমানের এই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বীরত্ব ক্রিকেট খেলার প্লেয়ারদেরও দেওয়া হয়েছে। আমাকে যদি এই টাইগার উপাধি কেউ দিতে চায়, আমি তা অনায়াসে প্রত্যাখ্যান করবো। কারণ, আমি মানুষ হয়ে বনের হিংস্র পশুর উপাধি গ্রহণ কতে পারি না, করবোও না! এটা আমার জন্য হবে লজ্জার ব্যাপার।
দুঃখকে শুধু বেঁধে রাখলে চলবে না মি. নিতাই বাবু। বলতে হবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
তা-ই করতে চাইছি শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। শুভকামনা থাকলো।
টাইগারই ঠিক আছে। ওর ভেতর একটা গর্জিয়াস ভাব আছে।
জাতীয় পাখি কি তবে মুরগিকে করা হবে?