[একটা সময় ছিলো- শ্রেফ একটা ছবি দেখেই গল্প লিখতে পারতাম। শব্দের সাথে শব্দ আপনাতেই পাশাপাশি এসে নিজেদের জায়গা করে নিতো। এখন লেখালেখি চলছে কেবল সাংবাদিকতার প্রয়োজনে। গল্পরা হারিয়েছে একজন মফঃস্বল সাংবাদিকের প্রতিদিনের প্রতিবেদনের আড়ালে।
যাই হোক, পোষ্টের সাথের ছবিটি আমার একজন ফেসবুক বন্ধুর। এই ছবিটি দেখেই কয়েক বছর আগে ‘চোর এবং নাকফুল’ নামের অণুগল্পটি লিখেছিলাম। আবারও শেয়ার করছি… ]
_______________
অন্ধকারের ও কী নিজস্ব কোনো আলো থাকে? কেন জানতে চাইছি?
বলছি, একটু পরেই।
এক লোড শেডিং এর রাত। মফঃস্বল শহরের ছোট্ট একটা প্ল্যাটফর্ম। শেষ ট্রেন দাঁড়ানো। অল্প কিছু যাত্রী ওয়েটিং রুমে। এদের বেশীরভাগই বরযাত্রী। মশার আক্রমন থেকে নিজেদের বাঁচাতে ব্যস্ত সবাই। বিরক্ত, বিব্রত আর ঘরে ফেরায় উন্মুখ।
ওয়েটিং রুম ছাড়িয়ে কালো ধাতব বিবর্ণ বয়স্ক ট্রেনটির অবয়ব অন্ধকারেও কিভাবে যেন চোখে পড়ে। এজন্যই বলছিলাম অন্ধকারেরও বুঝি নিজস্ব কোনো আলো থাকে। ব্রডগেজ দু’সারি লাইনের ওপারে একটা প্রাচীন চাম্বল গাছ। ওটার পিছনে চোরের মতো লুকানো আমি। নির্নিমেষ চেয়ে আছি ওয়েটিং রুমের খোলা দরোজার দিকে।
এক প্রবাসী ভদ্রলোকের হাত ধরে যখন স্টেশনের মূল গেট দিয়ে সুস্মিতা হেঁটে আসলো, বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না – স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। এত দূর থেকেও দেখলাম ওর বিষণ্ন নাকফুল নির্নিমেষ চেয়ে আছে আমার পানে… দীর্ঘক্ষণ আমি জগত সংসারের সকল আলোআঁধারি ভেদ করে দেখতেই লাগলাম!
রাতের ট্রেনের দীর্ঘ হুইসেল বিষাদের সুরভি মেখে মেখে, বাতাসে ভেসে ভেসে আরও বিষণ্ণ করে তুলেছিলো সে রাতের কুহকী প্রহর! সেই থেকে বিষণ্নতার প্ল্যাটফর্মের একমাত্র স্টেশনমাস্টার এই আমি!
অনেক কিছুই করার ছিলো আমার। ছিলো অনেক কিছুই দেবার। ছিলো না কেবল কারও কাছ থেকে কিছুই চাওয়া-পাওয়ার অধিকার। কারণ ঐ যে আগেই বলেছি, চোরের মতো ছিলাম। লুকোনো স্বভাব নিয়ে এক জীবনে সেভাবে কখনোই সামনে আসতে পারলাম না আমি!
সেই থেকে এক চোরের অনুভবে-কল্পনায় একটি নাকফুল, নৈশব্দের প্রহর গোনা ভালোলাগায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে আজও বিষণ্নতায় ছুঁয়ে যাওয়া একটি রংগীন চাদর! যার বর্ণে বর্ণে লুকোনো এক বিচ্ছিন্ন অতীত.. যা ক্রমশঃ শীতের নরম রোদের মায়াবী কোমল আদর হয়ে অন্তর্চক্ষু বুজিয়ে দিয়ে যায়!
সেই থেকে শূন্যতায় ডুবে আছি আমি
যার বুক জুড়ে
শুধু তুমিই
শুধু তুমি!
‘পিরিতি আরতি পিরিতি সারথি, পিরিতি গলার মালা রে…।’
আহ হারে পিরিতি! বিষম পিরিতি
কতটা ভালোবাসি – বলাই হলো না তাকে।।
___________________________
#চোর_এবং_নাকফুল_মামুনের_অণুগল্প।
বিষণ্নতার প্ল্যাটফর্মের একমাত্র স্টেশনমাস্টার এই আমি! সুন্দর লিখেছেন মি. মামুন।
ধন্যবাদ প্রিয় ভাইয়া।
বাস্তবেও আমি হাজারও যাত্রীদের ভিতরে একাকী এক স্টেশন মাস্টার। ভালো থাকুন সবাইকে নিয়ে।

সুন্দর।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার কাছে গল্পের চেয়ে গল্পের ছবির নাক ফুলের অধিকারিণী কে বেশী সুন্দর মনে হয়েছে। অসাধারণ সুন্দর..!
ভালো থাকুন সবসম।
সেই থেকে শূন্যতায় ডুবে আছি আমি
যার বুক জুড়ে
শুধু তুমিই
শুধু তুমি!
শূণ্যতা একজন গল্পকারকে অনেক কিছুই দেয়।
গল্পটি পড়ার শুভেচ্ছা রইলো। ভালো থাকুন।

সুন্দর প্রিয় গল্প দা।
ধন্যবাদ প্রিয় রিয়া দিদি। নিরন্তর শুভেচ্ছা.. ভালো লাগায় ডুবে থাকুন সবাইকে নিয়ে। ভালো থাকুন।

পড়লাম। ভালোবাসা মহ. আল মামুন ভাই।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ প্রিয় কবি দাদা। আপনাদের জন্যও শুভেচ্ছা…

একটা সময় ছিলো- শ্রেফ একটা ছবি দেখেই গল্প লিখতে পারতাম। এই গল্পটাও একটা ছবি দেখেই লিখেছেন। একজন লেখক মূলত কল্পনা থেকেই লিখেন, একটা সাবজেক্ট বা অবজেক্ট থাকে বেছে নিতে হয়।
কেবলমাত্র একটা নাক ও নাকফুল দেখে আপনার এই গল্প লেখায় আমি মুগ্ধ, আপনার নিজস্ব অনুভূতিগুলো তুলে ধরেছেন গল্পে।
খুব ভালো লেগেছে।
অসাধারণ বললেন প্রিয় জাহিদ অনিক।
লেখালেখির শুরুর সময়ে আমি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলাম। আমার সপ্তাহের ছয় দিন সূর্য দেখতে পারতাম না আমি। সকাল থেকে রাত টানা কারখানার ভিতরে। আর সপ্তাহের বাকী দিনটি ঘুমে। এই সময়ে লেখার জন্য বাস্তবে কারখানার ভিতরের চরিত্রগুলি ছাড়া জগত সংসারে আর কিছু দেখার-বুঝার-অনুভবের কিছু ছিল না আমার। আর প্রকৃতিগত ভাবেই আমি এক চরম অসামাজিক ব্যক্তি।
এজন্য কল্পনায় অনেক কিছু এনে লিখতে হতো আমাকে। এব্যাপারে ছবি (যে কোনও) আমার শব্দদেরকে আপনাতেই টেনে এনে পাশাপাশি দাঁড়া করিয়ে দিতো।
ভালো থেকো ভাই কাছের মানুষদেরকে নিয়ে। শুভেচ্ছা…