প্রিয় জ্যোতির্ময়ী অর্চিশা

চিরকুট: ১১ তারিখ: ২৩ বৈশাখ ১৪২৬ বাংলা।

প্রিয় জ্যোতির্ময়ী অর্চিশা,
পত্রের শুরুতে দূর দিগন্তে পাখা মেলানো শঙ্খ চিলের রোদ ছড়ানো হাসির প্লাবনে আমার শূন্য এপিটাফে জন্মানো খানিক তুচ্ছ আবেগ জমানো শুভেচ্ছা। উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল উত্তরের বঙ্গোপসাগরের উত্তাল মাঝ সমুদ্রে জাহাজের সম্মুখ পাণে বসে তোমায় লিখছি। জানি ভালো আছো,আর ভালো আছো বলেই হয়ত আমায় ভুলে গিয়েছো।

আমি রমযান মাসের রহমতে আমার সহ-নাবিকদের নিয়ে খুব ভালো আছি বলেই তোমায় লিখছি নিয়মভাঙা চিরকুটে। আমাকে না হোক,আমার কলমের চোয়ালের আবেগ মিশ্রিত চিরকুটের লিখা শব্দগুলো তো তুমি ঠিকই ভালোবাসো,আমি কেবলি সেসব চিরকুটের নামমাত্র প্রেরক। পুরো চিরকুট জুড়েই তো তোমার বসবাস।
আমি বুঝি, ভালবাসা পাওয়ার ভীষণ অযোগ্য?

তোমার ঠিকানায় প্রেরক হয়ে চিরকুট লিখাকে আমি ভালোবাসি, আর তুমি ভালোবাস চিরকুটের প্রাপক হতে, অন্তত একটা জায়গায় তো তুমি আমি এক। মেঘের নাচ দেখতে দেখতে আমার নিরাশায় বাঁধা ঘর হঠাৎ বাণের জলে ভেসে গেল। লাল, নীল, সাদা শূন্যতার কথা কাটাকাটি চলছে মনের সংলাপে, মন বলছে তোমায় ভালবাসি আর তুমি বলছো বাসিনা।

বিশাল সমুদ্রের হিম ঝরানো বাতাসের কাম্পিল্যে চুমু এঁকে দিয়ে যাচ্ছে তোমার মনের তস্করে দক্ষিণী জানালায়। অথচ তুমি নাকি অবগত নও, কিছুই নাকি বোঝ না। মনে মেঘ দানবের চমৎকার কিছু দৃশ্য মাধুরী অবলোকনে তোমার চোখের আবেদন বেশ মনে পড়ছে। মাতাল আমার মন মাঝে মাঝে বিগড়ে যায় তোমার ঐ চোখের মাদকচক্রে। নিজেকে ভয়ংকর রকমের বেয়াদব মনে হয়। এ সমুদ্রপথের অতন্দ্রিতা রাতের তারা বাতিতে বিদঘুটে নেশার ডায়রি তোমার চোখ যেন দূর থেকে আমায় ডাকছে। অস্মিতায়ী তুমি কি আজও খোঁজও পথের অন্তরালে আমার পায়ের স্পর্শ, কবে দেখা হবে দুজনার? কবে মেরামত হবে তোমার আমার পারাপারের সেতুবন্ধন। কানের অষ্টপদে হাত রেখে নির্লিপ্তে বলছি, ওগো প্রিয় ভালবাসি তোমায়। তুমি দেয়ালে কান পেতে দেখো শুনতে পাবে।

জানো প্রিয়, আজকাল ধরতে ইচ্ছে করে তোমার এলোকেশ, ইচ্ছে করছে কানের দুলের দোলাচাল দেখতে। দ্রোহের মায়াজালে নিস্তব্ধ শূন্যতার প্রতিশ্রুতিতে কেবলি তুমি। বুকের গহীন নিভৃতে তোমার দেয়া ক্ষত ঘুমায় যত্নে আর আমি একলা জেগে থাকি নীরব রাতে। আমি অন্ধকার,চারদিকে কত আলো সে আলো তোমার মনের রঙের বিছানা বিছিয়ে রেখেছে। ভাঙাচোরা মনের আবার গেরস্থালি তোমার মনের দরজার নির্বাক নিরুত্তর প্রহরী একদিন ঠিক চাকরীটা ছেড়ে দেবে অন্য কারো আগমনে। তোমার মাঝে কি আছে কি নেই সে আমি জানিনে, আমি জানি যে তোমার সলাজ মাদকতাময় হাসিটাই যথেষ্ট। নীলরঙা কাঁচের চুড়ি পড়ে আমার হৃদয়পটে তোমার বিচরণ ঝংকার শুনতে এ মন ব্যাকুল। তোমার হৃদয় রাজ্যে মনোনয়ন চাই যেখানে আমি ছাড়া আর কোনো প্রার্থী নাই । বাকি গল্পটা তুমি ছাড়া যে বড্ড অসম্পূর্ণ, সে গল্পের মাঝখানে অন্য কেউ আসুক তা আমি চাইনে।

গতকাল সমুদ্র রানীর অপরূপ রূপে মোহিত হয়েছি,তবে তুমি থাকলে হয়ত একটু গল্প হতো এক আঁখিপাতে, তোমায় মনে পড়েছিল খুব। আমি শুধু অবেলায় কুড়িয়ে পাওয়া একটু ভালবাসা চেয়েছিলাম তোমার প্রাণে, তুমি না দিয়ে উল্টো অভিযোগের পাহাড় জড়ো করেছো। স্মৃতির ঝাপসা আয়নায় তোমার মুখ নিয়ে বেঁচে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে। শর্ত ভঙ্গের সব কাব্য আঁধারের মায়ায় নিস্তব্ধ, তুমি ঝুরিঝুরি শব্দের মাল্য মালঞ্চ। কবিতার শব্দ কোঠরে তোমার অস্তিত্বের ঘ্রাণ পায় নীলপরী। রুদ্ধাক্ষত অহমিকার অহমে আমি পুড়ে ধ্বংস হয়েছি, ধ্বংস হয়েছে আমার অনুভূতির দেয়াল। তোমাকে ভালবাসাও যেন আমার মহাপাপ।

আজ আর নয়, তোমার জন্য আমি ভালবাসা ছাড়া কোন উপহার কিনতে পারিনি। আমার আবেগ জড়ানো ভালবাসার এ চিরকুট উপহার কেবলি তোমার জন্য রেখেছি। মস্তিস্কে বন্দি শব্দগুলো ধীরে ধীরে পলায়ন করছে গা ডাকা দিয়ে। তাই আজ এখানেই শেষ করছি, পরবর্তী চিরকুট অন্য কোন নতুন জায়গা হতে লিখার অপেক্ষায় থাকবো।

ভালো থেকো ভাবনার ওপারে অন্তনীড়ের মঞ্চের বিপরীত সহ শিল্পী।
ইতি –
তোমার চার পয়সার চিরকুটওয়ালা।

শাহাদাত হোসাইন সম্পর্কে

তোমার আর আমার দূরত্ব রাস্তার এপার ওপার। তুমি দাড়িয়ে আছো আমার আশায় আমি অপেক্ষায় আছি যাবো কখন! একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ।শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিষীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ। বয়স: ২১ উচ্চতা: ৫.৬ ওজন: ৭০( উঠা-নামা করে) রক্তের গ্রুপ: (o+) পজেটিভ গায়ের রং: একেবারে সুন্দর অবিবাহিত।

21 thoughts on “প্রিয় জ্যোতির্ময়ী অর্চিশা

  1. আজকের লিখায় অসাধারণ ভাবে বেশ কিছু জায়গায় ভীষণ হৃদয়কাড়া মনে হয়েছে। গুড লাক এ্যাণ্ড কংগ্রাচলেশন মি. শাহাদাত হোসাইন। ক্যারি অন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. ধন্যবাদ মাননীয় ব্লগ মোডারেটর। ভালবাসা নিরন্তর।

  2. "স্মৃতির ঝাপসা আয়নায় তোমার মুখ নিয়ে বেঁচে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে। শর্ত ভঙ্গের সব কাব্য আঁধারের মায়ায় নিস্তব্ধ, তুমি ঝুরিঝুরি শব্দের মাল্য মালঞ্চ। কবিতার শব্দ কোঠরে তোমার অস্তিত্বের ঘ্রাণ পায় নীলপরী। রুদ্ধাক্ষত অহমিকার অহমে আমি পুড়ে ধ্বংস হয়েছি, ধ্বংস হয়েছে আমার অনুভূতির দেয়াল। "

     

    কী দারুণ কাব্যিক অনুভব ।মুগ্ধ হতেই হয়। শুভকামনা ।      

    1. ধন্যভাদ ও শুভেচ্ছা জানিবেন প্রিয় শ্রদ্ধেয় মেম,আপনার মন্তব্য আর্শীবাদ স্বরূপ আমার জন্য।

  3. আজকের চিরকূট অনেক বেশী অনবদ্য। ভাষা আর উপস্থাপন রীতি মুগ্ধ করার মতো। :)

    1. ধন্যবাদ প্রিয় দিদি,ভালবাসা জানিবেন। 

  4. ভিন্ন ভিন্ন যার নামে উৎসর্গ করে লিখছেন, নামগুলি আমার ভীষণ পছন্দ হচ্ছে শাহাদাত হোসাইন ভাই। দারুণ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার সুমন ভাই। আপনাদের এমন সুন্দর সুন্দর মন্তব্য,পেয়ে লিখার আগ্রহ আরো দিগুন হয়।

  5. ফিদা হয়ে গেলাম শাহাদাত ভাই। ভালোবাসা্ রইলো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. ধন্যবাদ সৌমিত্র। ভালবাসা নিরন্ত, শুভেচ্ছা জানিবা। কলকতায় একদিন দেখা হবে আশা রাখছি। 

  6. আজকের চিরকূট একবারেই অসাধারণ হয়েছে ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. ধন্যবাদ জানিবেন,চিরকুট মনযোগ দিয়ে পুরোটা পড়েছেন জেনে খুশী হলাম। 

  7. আচানক গভীর এক সৌন্দর্যে ডুবে যেতে যেতে ভেসে উঠলাম।

    1. জেনে খুশী হলাম,আমি চেয়েছিলাম ডুবিয়েই রাখতে,আপনি ডুবে যেতে যেতে ভেসে উঠেছেন,কপাল খারাপ আমার,সামনে এমন কিছুই লিখতে হবে যেন ডুবেই থাকেন। 

  8. জ্যোতির্ময়ী অর্চিশা শব্দদুটি প্রায় সমার্থক হলেও আপনার অনুভূতি সুন্দর এসেছে। :)

    1. বিজ্ঞ পাঠক আপনি,তাই ধরে ফেলেছেন। আশা রাখছি আগামীতে এভাবেই ধরবেন। ভালবাসা নিরন্তর।

  9. দীর্ঘ চিঠি বেশ গভীর মন ডুবিয়ে পড়ে শেষ করলাম। প্রতিটি লাইন ২ বার করে পড়লাম। শুভকামনা রইলো শাহাদাত হোসাইন ভাই।

    1. ধন্যবাদ প্রিয় আদেল পারভেজ,মন্তব্য পড়ে প্রীতি হলাম। ভালবাসা নিরন্তর। 

  10. উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল উত্তরের বঙ্গোপসাগরের উত্তাল মাঝ সমুদ্রে জাহাজের সম্মুখ পাণে বসে তোমায় লিখছি। 

     

    যাকে  উদ্দেশ্য করে লিখেছেন সে কি পড়েছে ? 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।