শাহাদাত হোসাইন এর সকল পোস্ট

শাহাদাত হোসাইন সম্পর্কে

তোমার আর আমার দূরত্ব রাস্তার এপার ওপার। তুমি দাড়িয়ে আছো আমার আশায় আমি অপেক্ষায় আছি যাবো কখন! একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ।শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিষীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ। বয়স: ২১ উচ্চতা: ৫.৬ ওজন: ৭০( উঠা-নামা করে) রক্তের গ্রুপ: (o+) পজেটিভ গায়ের রং: একেবারে সুন্দর অবিবাহিত।

এমন মমতার সত্তা দেখিনি আর পূর্বে


স্বার্থহীন ভালোবাসা

দৃশ্যপট:-(০৯)

আজ ৫ বছর পর দূর পরবাস সৌদি আরব থেকে বাড়ি ফিরার পালা।
বাড়িতে কাউকে না জানিয়েই ফিরছি মায়ের কোলে। আমার আসাটা শুধু আমার বন্ধু হাসান জানে।
হাসানকে অনেক আগেই বলে রেখেছি ও যেন গাড়ি নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষা করে আমার জন্য।

আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে একটি বিমানের টিকেট আর ৭ ঘন্টার ব্যবধানে আমি নিজ মাতৃভূমিতে পা রাখতে পারলাম।
সবকিছু ঠিকঠাক মতই হলো।
হাসানের সাথে আলিঙ্গন করে গাড়িতে উঠে নিজ গ্রামের দিকে রওয়ানা হলাম।
চোখ জুড়ানো সবুজ মাঠ-ঘাট দেখে মনের ভিতর এক শীতল শান্তি অনুভব করছি।
পরবাসে যখন ছিলাম,তখন ভাবতাম কবে দেশে যাবো? কবে ধারদেনা পরিশোধ করে নিজের নামে জায়গা কিনবো।
সেই জায়গাতে বাড়ি উঠবে। বাড়ির নাম হবে হোসাইন ভিলা।

৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ নিজের জায়গাতে নিজের নামে ভিলা দাঁড় করালাম।
কতই না কষ্ট প্রবাসে,ফজরের আযানের আওয়াজে একজন পরবাসীর ঘুম ভাঙ্গে।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাসতা না করেই কর্মস্হলে যেত হয়! দীর্ঘ ৮ ঘন্টার ডিউটি শেষে বাসায় এসে আবার খাবার রান্না করে খেতে হয়! খাওয়া দাওয়া শেষে বিছানায় শুয়ে একটু বিশ্রাম না নিয়েই আবার বাহিরে গিয়ে কাজের সন্ধান করি এই ভেবে যে,এ মাসে দেশে রেমিটেন্সের পরিমানটা একটু বেশি যায়।

বাবার ঔষুধের টাকা,বোনের পড়ালেখার খরচ,ছোট ভাইয়ের একটা মোবাইলের আবদার ইত্যাদি সবার খরচের টাকা যেন এ মাসে দিতে পারি।
পিছনের এসব স্মৃতিচারণ করতে করতে আমার নিজ গ্রামে চলে আসলাম।

গাড়ির ভিতর থেকেই আমি দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি,আমার মমতাময়ী মা বাড়ির সামনের গেইটে দাঁড়িয়ে আছে হয়তো কারো অপেক্ষায়!
আমি হাসানকে বললাম, গাড়িটা একেবারে আমার মায়ের সামনে নিয়েই দাঁড় করাবি,মা যেন আমাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।

হাসানের গাড়ি যতই সামনে অগ্রসর হচ্ছে আমার ভিতরে হার্টবির্ট ততই বাড়ছে।
এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।
গাড়িটা থামনোর পর আমার আম্মুর নজর হলো গাড়ির ভিতরে কে???
আমি নামতে দেখেই আমার মায়ের চোখের পানি আর কে ধরে রাখে?
দূর থেকেই দুই হাত বাড়িয়ে মা বলতেছে আমায়।
আমার বাবা চলে এসেছে,আমার বাবা চলে এসেছে।
ইমোশনালের আঘাত এতটাই যে, আমার মত কঠিন মানুষটার চোখের জল অটোমেটিক ঝরতে থাকলো!
মায়ের কপালে চুমু দিলাম,মা ও আমার কপালে চুমু দিয়ে বলতে লাগলো,আমার বাঁকা চাঁদ।

৪/৫ মিনিটের ভিতর ঐ স্হানে ২০/২৫ জনের উপস্হিতি,তাদের মাঝে কেউ কাঁদছে কেউ হাসছে।
মাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাতে বিভোর দুজন।
এ কান্না হলো খুশির কান্না।

অথচ এর চাইতে বেশি কেঁদেছিলাম যখন নিজ দেশ ও মায়ের বুক ছেড়ে পাড়ি জমাই যোজন-যোজন দূর পরবাসে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ ৫ মিনিটের কান্না! বিমানবন্দরে অবস্হানকৃত আশে পাশের সবাই মা ছেলের বিচ্ছেদের কান্না দেখছে।
পাশে দাঁড়ানো এক মধ্য বয়সী নারীর চোখে ও পানি আমাদের বিচ্ছেদ দেখে।

মাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতেই ঘরে উঠলাম।
এদিকে মা চলে গেল রান্নাঘরে,আমার সাথে করে নিয়ে আসা আমার লাগেজ গুলো খুলতে শুরু করলাম।

ধীরে ধীরে সবাই উপস্হিত,
ছোট ভাই বলতেছে
ভাইয়া আমার মোবাইল আনছো??

বড় বোন,
ভাই আমার বোরকা আর তোর দুলাভাইয়ের ল্যাপটপ এনেছিস?

আদরের ছোট ভাগনি,
মামা আমার কানের দুল কই???

হাজারো চাওয়া,হাজারো আবদার ব্যাগ খোলার আগেই।
একটি বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম,এতো ব্যস্ত আর বেদিক হলে হয়?
সবাই কিছু না কিছু পাবে।
নিরাশ কেউ হবেনা।

ঐদিকে আম্মু খাবারের জন্য ডাকতেছে!
আমি গিয়ে খাবারের টেবিলে বসলাম,অল্প সময়ের ভিতর মা অনেক কিছুই রান্না করলো।
আমি ভাত মুখে তুলি আর আম্মু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে এক নজরে!
আমার পেটের দিকে তাকায়। আবার আমার চোখের দিকে দেখে,আর ঝরঝর ঝুম বৃষ্টি ধারায় চোখ দিয়ে পানি ঝরায় আমার মা।

আর বলে কতদিন যেন না খেয়ে কাটিয়েছিলি আমার বাঁকাচাঁদ?
কত রাত যেন নির্ঘুম পার করেছিলি?

অথচ আমি ফোন দিলে ঠিকি বলেছিস,হ্যাঁ দুপুরের খাবার খেয়েছি!
যখন বলতি তখন আমার মন ছটফট করতো!

আমি জানি তুই তখন মিথ্যা বলতি।
না খেয়েই বলতি হ্যাঁ মা আমি খেয়েছি।

অাজ সকাল থেকেই তোর মায়ের মনটা ছোটফট করেছে,কারন খুজে পাইনি কেন এমন হচ্ছে আজ? অকারনে কখনই আমার ধড়ফড় করেনি কখনো!
এখন বুঝলাম।

অবশেষে আমি মাকে প্রশ্ন করলাম।
মা সবাই তো জিজ্ঞেস করলো কার জন্য কি এনেছি?তুমি তো কিছুই চাইলেনা মা?
মা আবারো কান্না করে বলতে লাগলো।
আমার ছেলে আমার বুকে চলে এসেছে!
আমার জন্য পৃথিবীর বুকে এর চাইতে বড় আর কি চাওয়া হতে পারে?

সবাই সবার আবদারকৃত জিনিস নিয়ে চলে গেলো। দিনশেষে আমার পাশে শুধু রয়ে গেল আমার মমতাময়ী মা!

পৃথিবীতে ১০০% খাঁটি স্বার্থহীন ভালবাসা মা ছাড়া আর কেউ করেনা।

স্বার্থছাড়া কেউ কাউকে ভালবাসেনা।
কিন্তুু মায়ের ভালবাসা স্বার্থহীন।
খাদহীন খাঁটি।
প্রবাসীদেরকে কখনো গালি দিবেন না। তাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করবেন না।তারাই হলো দেশের অর্থনীতির চাকা।
তাদের পাঠানো রেমিটেন্সের টাকায় দেশের উন্নতি হচ্ছে।
এ বহতা ব্লগের সকল সদস্যদের মধ্য হতে কারো না কারো ভাই,বাবা,চাচা,মামা পরবাসে জীবন পার করছে,নিজে কাঁঠফাটা রোদে পুড়ে নিজ পরিবারকে শীতল ছায়া প্রদান করছে।

একটি দৃশ্যপট

অনেক পুরাতন লিখা। আজ থেকে দেড় বছর আগে লিখেছিলাম। গল্পটিতে বেশ কিছু টাইপো ছিলো সংশোধন করে নিয়েছি।

এ গল্পের প্রধান চরিত্র একজন নারী, একজন মা!

মোঃ শাহাদাত হোসাইন।

স্মৃতিকাতরতায় কাটে পরবাসে আমার ঈদ আনন্দ


১১ আগষ্ট ভোর ৫ টা ৪৪।

আসসালামু আলাইকুম,
আজ আমাদের পরবাসে ঈদ তাই সবাইকে ঈদ মোবারক।

নিশ্চয় সবার জানতে ইচ্ছে করছে আমি কতটা খুশি, তাই ঈদগাহে ঈদের নামায শেষ করে বসে পরলাম মোবাইলের কি বোর্ড নিয়ে। ভাবছি কি লিখবো? অনেক আবেগপ্রবণ হওয়ার পর মন বললো, এতো ভাবাভাবির কি আছে বাঁকাচাঁদ? মন যা বলে তাই লিখে ফেল অভদ্র নগরের আনাড়ী লেখক। হয়তো সবার কাছে তোমার লিখা ভালো নাও লাগতে পারে হে লেখক।

সারাদিন যুদ্ধরত জীবন, কর্মস্থলে কাটে ব্যস্ত সময়। সকালের সূর্য পূর্ব দিগন্তে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যায়। সূর্যের এই ওঠা-ডোবা জানার সুযোগ কম পরবাসে।
পরবাসে অর্থ আছে, স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার কায়দা আছে, কিন্তু নেই আনন্দ, উল্লাসের নিশ্চয়তা। আমার দেশ সবুজ শ্যামলে বাংলাদেশ। সেই ভরাট যৌবনের রূপ দেখার সাধ আর মেটে কই দূর পরবাসে।

আমরা দেশে থেকে পরবাস বলতে বুঝি অনেক টাকা, সুখ,আরাম, ভোগ-বিলাসের জায়গা। সেখানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদু্ৎ, লোডশোডিং নেই, নেই যানজট। রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দেখার মত সুন্দর পরবাস, যেখানে অগোছালো জীবন নামক শব্দের পরিবর্তন হয়। ঠিক এই রকম চিন্তাই থাকে আমাদের বাঙালীদের মনে। তবে বর্তমানে এই ব্যাপারটা নতুনদের মনে এতো স্বপ্নের বেড়াজাল সৃষ্টি করে না।

পরবাস মানে কি?
জানতে হলে চলুন ঘুরে আসি দূরের পরবাস থেকে। অনেক টাকা রোজগার করার একটি প্ল্যাটফর্ম। যেখানে লাখ লাখ টাকা রোজগার করা যায়। রাজার হালে জীবন চলে আরো কত কি? কিন্তু হাজার মিথ্যাকে পিছনে ফেলে সত্য কি জানেন? কিভাবে কাটে তাদের ঈদ অথবা তাদের ঈদের আনন্দের মুহূর্তগুলি কি? বছরের পর বছর আপন পরিজনদের কাছ থেকে সুদূর শহরে দাবদগ্ধ গরম ও হাড়জমাট শীতের মধ্য অবর্ণনীয় পরিশ্রম করে যাই শুধু দেশের রক্তের বাঁধনে বন্দি আপনজনদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য। নিজের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় যৌবনকাল উৎসর্গ করে দেই আপনজনদের জন্য। দূর দেশে থেকেও মন পড়ে থাকে সেই মাতৃভূমিতে, যেখানে রয়েছে আমার জান্নাত আমার মা, আমার মাথার তাজ আমার বাবা, প্রবাহিত রক্তরসে বন্ধনে বন্দি আমার ভাই-বোন।

প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ে তাদের কথা। কোন সন তারিখে দুটা টাকা নিয়ে দেশে গিয়ে আপনজনদের মুখের হাসি দেখবো সেই অপেক্ষায় কাটে দিন মাস বছর। প্রতিটি সেকেন্ড কাটে ঘন্টার মত, প্রতিটি ঘন্টা কাটে দিনের মত আর প্রতিটি দিন কাটে যেন দীর্ঘ একেকটা সালের মত।

দিনের কাঠফাটা গরমে হাড়ভাঙা পরিশ্রম শেষে যখন রাতে নিজ বেডে ঘুমাতে যাই তখন অক্ষির পাতায় জীবন্ত হয়ে ভেসে উঠে আত্মীয়স্বজনের বিভিন্ন মায়ামুখ। কখন দেশে যাবো,বাবা মার চরণে লুটে পড়বো এই ভাবনায় একসময় ঘুমিয়ে পড়া আমার প্রতিদিনের রুটিন। এখানে জীবন মানে রাত দিনের নিরানন্দ চক্রের জাল। যেখানে হাসি-খুশির কোনো স্থান নেই। একই রকম কাজ আর একই রকমের নিয়মে ধরাবাঁধা জীবনচক্র যেন শেষ হয়েই হচ্ছেনা। এক ঘেঁয়েমী থেকে বের হওয়ার জন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখানে ঈদের দিনে কোন ছুটি থাকেনা বিভিন্ন কর্মস্থলে।

বাৎসরিক আনন্দ উৎসব ঈদ, দেশের মানুষ যতটা আনন্দ উপভোগ করে সেই পরিমাণে পরবাসে মনের কোনায় সামান্যতম আনন্দের দোলাও দিতে পারে না বাৎসরিক ঈদ। এখানে ঈদ, পহেলা বৈশাখ, মধুর মাস জৈষ্ঠ্য, বিজয়ের মাস জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী সব উৎসবের দিন অন্য সব প্রতিদিনের মতই। বরং এখানে ঈদ আনন্দ আসে বেদনার ক্ষত চিহ্নতে নতুন করে লবণের ছিটা দেয়ার জন্য। এই দিনগুলোতে মনের ভিতরের জমাট কষ্টগুলো আবার জীবিত হয়ে ফিরে আসে। এখানে ঈদ মানে চোখের পানি। ঈদ মানে বেদনার ক্ষত নতুন করে তাজা হয়ে জাগ্রত হওয়া।

দেশের আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধবরা জানতে চায় তোদের ঈদ কেমন কাটে? তোরা কি চাঁদরাতে বা তার আগে থেকেই ঈদের মার্কেট করতে যাস? ঈদের দিন ঘুরতে যাওয়া হয় দলবেঁধে? এইসব বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকে দেশের অনেক আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে।

তাই আমার ঈদ কেমন আনন্দে কাটে তার সামান্য ইংগিত দেয়ার চেষ্টা করছি। দূর পরবাসে ঈদটা একেক জনের জন্য একেকরকম। অল্প কিছু মানুষের কাছে এখানে ঈদ আনন্দের হলেও অধিকাংশ প্রবাসীর কাছে ঈদ মানেই স্মৃতিবিজড়িত কান্নার দিন। সারা বছরের জমিয়ে রাখা কান্নার বাঁধভাঙা স্রোত যেন ঈদের দিন আর কোনো বাঁধা মানতে চায় না। দু চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে বিরহের পবিত্র অশ্রু। বুকে চাপ পড়ে কষ্টের হিমালয়। কান্নার গতি যেন থামতেই চায় না। জোর করে থামাতে চাইলেও কি যেন এসে গলায় আঁটকে থাকে। খাবার খেতে বসলে লবণের কাজ করে দেয় চোখের পানি, ঝরে পড়ে ভাতের উপর। কোথায় চলে গেলো সেই ঈদ, যে ঈদে আম্মু আমার জন্য সেমাইয়ের পরিবর্তে তৈরি করতো ফিরনি।

কোথায় বাবা মা ভাই বোন? তারা কি নতুন জামা কাপড় কিনেছে? ফিরনি সেমাই রান্না করেছে? আজ ঈদের দিনে আমার শূন্যতা কি তারা অনুভব করছে? আমার অনুপস্থিতি তাদের কাছেও না জানি কত বেদনার। আম্মু মনে হয় ফিরনির কাপ হাতে নিয়ে আমাকে স্মরণ করে ঝুম বৃষ্টির মত চোখের পানি ফেলছে? এইসব ভাবতে ভাবতে ভেজা চোখেই ঈদের দিনটা শেষ হয় আমাদের। পরেরদিন থেকে আবার শুরু হয় হাড়ভাঙা পরিশ্রম। উদ্দেশ্য আমার একটাই নিজের কষ্টকে মাটিতে চাপা দিয়ে আত্মীয় স্বজনরা যেন একটু সুখের ছায়া পায়। বাবা যেন প্রতিমাসে শ্বাস কষ্টের ঔষধে খেতে পারে। আম্মু যেন চিন্তামুক্ত থাকে।

কয়েক বছর পর বাড়ীতে এসে যেন সবাইকে নিয়ে একটু সুখে থাকতে পারি। নিজের সুখ ত্যাগ করলাম স্বজনদের সুখের জন্য। এটাই প্রবাস, এটাই নিয়তি। এখানে ঈদের আগের দিনগুলোতে বাজার সদায় করার কোন ধুম পড়েনা। এখানে এদেশের মানুষদের কাছেই শুধু ঈদ আসে। আমাদের কাছে স্বাভাবিকভাবে নিজের অজান্তেই ঈদের তারিখটা আসে শুধু। যারা বাহিরে কাজ করে তাদের জন্য চাঁদ রাতে একটু বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। আর না ঘুমিয়ে সকালে ঈদের জামাতে নামাজ পড়তে হয়। এ ছাড়া অন্য কোনোভাবেই ঈদের লক্ষণ তাদের কাছে পরিলক্ষিত হয়না। নামায শেষে রুমে এসে ঘুমাব বলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কম্বল মুড়ি দিয়ে ভাবতে লাগলাম আগে একটু দেশে কথা বলে নেই। যেহেতু আজ আমার এখানে ঈদ।

মোবাইল হাতে তুলে নিয়ে যোগাযোগের জন্য কয়েকবার চেষ্টা করে লাইন পেলাম।
আসসালামু আলাইকুম। আম্মা কেমন আছো?
ওয়ালাইকুমুস সালাম ভালো আছি যাদু, তুমি কেমন আছো বাবা?
ভাল আছি আম্মা, তোমাদের দোয়াই খুব ভাল আছি।
ঈদে নতুন জামা কাপড় পরেছিস তো বাবা?
সেমাই খেয়েছিস তো?
না আম্মা, আমি তো সেমাই খাই না, তুমি জানোনা?
আরে হো … ভুলেই গিয়েছি, তো ফিরনি রান্না করেছো?
না মা, এতো ভেজাল কে করে?
এখন কি করছিস বাঁকা চাঁদ আমার?
বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে ঘুরতে যাবি না?
জ্বী আম্মা। এখন বন্ধু বান্ধবদের সাথেই আছি। ওরা অনেক কিছুই রান্না করেছে। আমার ভারি কণ্ঠ মায়ের আদালতে সব সত্য প্রকাশ পেয়ে যায়, তিনি বললেন কি হয়েছে বাবা তোমার? তোমার গলার আওয়াজ ভারি শোনাচ্ছে? বাঁকা চাঁদ, তোমার অনুপস্থিতি রোজ আমায় ভাবায়, সকাল থেকেই তোমার কথা ভাবছি। মানিক আমার যোজন-যোজন দূরে? যার জন্য ফিরনি বানানো হয়, সে তো ঘরে নেই।

আম্মু আজ আমার এখানে ঈদের দিন, আর তুমি কান্না করতেছো?
আম্মু বলে না বাবা, কাঁদছি না।
আম্মু তোমরা ঈদের জামা কাপড় কিনেছো?
হ্যাঁ, কিনেছি।
বাজার সদায় করতে কোন কমতি করোনি তো?
না বাবা… যা দরকার তার চাইতে একটু আধটু বেশিই কিনেছি।
তুমি চিন্তা করোনা।
ঠিক আছে মা, এখন রাখি আমি, বিকাল করে ফোন দেব। আমি একটু ঘুমাবো।
ঠিক আছে বাবা, তবে বিকালে কিন্তু অবশ্যই ফোন দিও।

মোবাইলটা রেখে কম্বলের ভিতরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে নিঃশব্দের চোরা কান্না কাঁদলাম কিছুক্ষণ। সারা বছরের জমানো কান্না আজকের দিনে ভীড় করেছে। আমি আজ কোথায় পড়ে আছি? এরকম ঈদের দিনে যদি দেশে থাকতে পারতাম, নামায পড়ে মাকে সালাম দিতাম, আম্মু কপালে চুমু খেয়ে বলতো আমার বাঁকা চাঁদ তুমি দীর্ঘজীবি হও, আর বাঁকা চাঁদ পুরো আকাশ জুড়ে একটিই। এভাবে তিনি আমার জন্য দোয়া করতেন। আহ্ আজ আমি পড়ে আছি অনেক দূরে।

এভাবেই পরবাসে একেকজনের কাছে একেক রকমভাবে ঈদ আসে নিরানন্দ হয়ে আবার চলেও যায়। কেও কেও শুধু ঈদের দিনটাই ছুটি পায়, আবার কেউ কেউ ঈদের দিনটিতেও ছুটি পায়না। আবার শুরু হয় সেই কাঠফাঁটা গরমে হাড়ভাঙা পরিশ্রম। দেশের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে যাবার দীর্ঘ অপেক্ষা আর নিয়তির ডিউটি।
প্রতিদিনের একই রকমের কাজ আর একই রকমের নিয়মে সময় পার করা। হাসি-খুশি আনন্দবিহীন জলসমুদ্রে ভাসমান জীবন। জীবন এখানে শুধু রাত দিনের নিরামিষে একটি ডাকাত চক্র। শুধু বাড়ীতে ফিরে যাওয়ার একটি প্রবল অপেক্ষা আছে বলেই হয়ত এখনো এই জীবনের প্রতি কিছুটা মোহ আছে।

তা না হলে এই জীবন আর জড়পর্দাথের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকতো না। এখানে পার্থক্য শুধু এতটুকুই দেশে গিয়ে প্রিয়জনের মুখ দেখার আশাটা অন্তরে পেরেক-কাঠের গাঁথুনী। আর এভাবেই কেটে যায় আমার এবং আমার রুম মেটদের ঈদ আনন্দ। তবুও আমরা হাসি, কারণ পরবাসে এসে আমরা ঝর্ণার মতো কান্নাকে ভিতরে লুকিয়ে কিভাবে হাসতে হয় সেই কৌশল শিখে গেছি। ঈদে সবার স্বপ্ন বাড়ী যায় না, যায় শুধু বেতন বোনাস।

যাই হোক আগামীকাল বাংলাদেশে তোমাদের ঈদ, তোমাদের ঈদ আনন্দ যেন প্রবাহিত ঝর্ণার পানির মত পবিত্র হয় সে আশা রাখছি বিধাতার কাছে। তাই সবাইকে অগ্রিম ঈদ মোবারক।

মুক্ত বাক, মুক্ত চেতনা, freedom of speech

বাক স্বাধীনতা, মুক্ত বাক
১৩ জুন ২০১৯ ঈসায়ী।

ব্লগ এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনি আপনার চিন্তা-চেতনা, মনের কথা, কবিতা, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি সব ধরনের কথা আমরা পাঠকদের সামনে মোবাইল, ল্যাপটপের কী বোর্ডের মাধ্যমে তুলে ধরি। ব্লগ হলো হাজারো গুণী লেখকদের একটি মিলন সেতু। আমরা ব্লগাররা ব্লগে লেখি, পাঠক ও অতিথিগণ সে সব গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল গুলো পড়ে সেখানে মন্তব্য করেন। এক কথায় বলা যায় ব্লগ একটি পাবলিক সাইট। হাজারো মানুষের হাজারো চিন্তা ও মন্তব্য বলার একটি জায়গা।
ব্লগে বাক স্বাধীনতা রয়েছে, বাক স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায়, এর কি অর্থ সে বিষয়ে আজ কথা বলার জন্য লিখছি।

বাক স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে শুরুতেই কিছু জেনে নেয়া যাক, আসলে মত প্রকাশ বা বাক স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায়?
যে কোন মতামত কি আমরা প্রকাশ করতে পারি বা করার সার্মথ্য রাখি? কিংবা বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্র কতটুকু? বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে শিক্ষিত অশিক্ষিত মানুষও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার রাখে গণতান্ত্রিক দেশে। তাদেরও স্বাধীনভাবে বলার অধিকার আছে। বাক স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তা ভাবনাকে বিষয়বস্তু বানিয়ে বিশ্লেষণ করলে সারমর্ম যা বেরিয়ে আসে তা হলো, জাতি স্বাধীনভাবে কোন বিষয়ের উপর তার মন্তব্য তার ইচ্ছা তার চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করবে স্বাধীনভাবে। এক কথায় স্বাধীন ডানা মেলে উড়ে যাওয়া পাখির মত।

তারপরেও আমাদের মস্তিস্কে হিউম্যান ব্রেইন বাই ডিফল্ট এক ধরনের চলমান প্রক্রিয়া বসানো আছে, যা আমাদেরকে সব সময় সব জায়গাতেই সব কথা বলার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে। সহজভাবে বলা যায়, প্রত্যেকটি মানুষের ভেতরেই বিবেক নামক একটি সত্তার উপস্থিতি রয়েছে যা মানুষের চাহিদা মোতাবেক যা খুশি তা বলার পরিস্থিতিকে বাধা প্রদান করে বা সিস্টেমকে কিছু সময়ের জন্য স্থির করে দেয়।

পৃথিবীর বুকে আমরা বিচরণ করছি, বিশুদ্ব অক্সিজেন গ্রহন করছি এসবি হচ্ছে উপরওয়ালার নিয়ামত। যদি তা না থাকে তাহলে কি হতো সেটা আমরা চোখ বন্ধ করে চিন্তা ভাবনা করলেই বুঝতে পাই, দেখতে পাই। ধরে নিন আমি ব্লগে এমন কিছু লিখলাম বা বললাম যার দ্বারা আমাদের দেশের মরহুম গ্রেট লিডার শেখ মুজিবর রহমান, দেশের প্রধানমন্ত্রী বা ওনার ছেলে এসব কথা বা লিখার দ্বারা আক্রান্ত হলেন বা মনে কষ্ট পেলেন। তারা কি ভারাক্রান্ত মন ও রাগ ক্ষোভ নিয়ে বসে থাকবে? নিশ্চই উত্তর দিবেন না, তারা আমাকে আইনের আওতায় আনবে, আমার বিরুদ্ধে চার্জ নিবে আন্তর্জাতিক আদালতে।

এখন ভাবুন দেশের সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলায় যদি আপনি আইনের আওতায় আনা হয়, আপনার উপর চার্জ নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের ৮৮% মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মত কথা বা মন্তব্যের শাস্তি কি?

বাংলাদেশ পেনাল কোড বা ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৮ ধারা অনুসারে ধর্মাবমাননার অপরাধ প্রমাণিত হলে অর্থদণ্ডসহ সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ধর্মাবমাননার তীব্রতার পরিপ্রেক্ষিতে এই দুই ধারায় বর্ণিত শাস্তির পরিমাণ হলো এই।

বাক স্বাধীনতা বলতে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার। আপনার আছে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার। আপনি বলবেন, আপনাকে বাধা প্রদান করার মত কেউ নেই, তবে বলার বা মন্তব্য করার একটি সীমানা পরিধি থাকে। আসলে বাক স্বাধীনতা হলো সর্বস্তরের মানুষের কথা বা মত বক্তৃতা-বিবৃতি ধারণা প্রকাশের একটি মৌলিক মানবিক অধিকার। মানুষ যা চিন্তা করে তা বাধাহীনভাবে বলতে পারার নামই বাক স্বাধীনতা। বাক স্বাধীনতার ও পরিধি-সীমানা রয়েছে।

আপনি কতটুকু বলবেন বা বলতে পারবেন। বাক স্বাধীনতার প্রাথমিক ধারণাটি মানবাধিকার সম্পর্কিত প্রাচীন নথিপত্রেও পাওয়া যায়। ১৯৪৮ সালে অান্তর্জাতিকভাবে এ অধিকারটি মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ( Universal Declaration of Human Right) আর্টিকেল-১৯ এর মাধ্যমে গৃহীত হয়, যা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি (International covenant on civil and political Right ICCPR) কর্তৃক স্বীকৃত। একবার নজর করলেই বুঝা যাবে ঐ অান্তর্জাতিক ঘোষণায় বাক স্বাধীনতার পরিধি ও সীমান্তপথ কতটুকু? বলার বা মতামতের ক্ষেত্রে কতটুক আপনার বলার অধিকার আছে। প্রত্যেকেরই কোনো রকম হস্তক্ষেপ এবং বাধা ছাড়াই যে কোন মত পোষণ এবং প্রকাশের অধিকার থাকবে যে কোন ধরণের তথ্য বা ধারনা চাওয়া, এবং তাতে অংশ নেয়ার অধিকার, তা তার পছন্দের যে কোন মিডিয়ার মাধ্যমে বা পাবলিক সাইড গুলিতে হতে পারে। যেমন: মৌখিক, লিখনি, মুদ্রণ, অংকন ইত্যাদি।

এ ঘোষণার ভিতরেই যে নিয়ন্ত্রণ বা নিষেধাজ্ঞার কথাও রয়েছে তা হলো (১) বিশেষ কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন (রাষ্টীয়, আঞ্চলিক, সামাজিক নেতৃত্ব এ সীমা নির্ধারণ করবে) (২) অন্যের অধিকার, খ্যাতি ও সম্মান সুরক্ষার ক্ষেত্রে (৩) জাতীয় নিরাপত্তার বিবেচনা (৪) নাগরিক সুশৃঙ্খলা সংরক্ষণ (৫) জনস্বাস্থ্য (৬) নীতিশাস্ত্র (ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি, কল্যাণকর সামাজিক রীতি-নীতি ইত্যাদি) সেখানে আরো উল্লেখ আছে যে, এই বাক স্বাধীনতার নামে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, পর্ণগ্রাফি, অসামাজিকতা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ধর্ম নিয়ে এমন কথা যার ভিত্তি নেই, ইত্যাদি অবাধ প্রচারের সুযোগ থাকবেনা। কারো প্রতি বা কোনো বিষয়ে ঘূণা প্রকাশের মাত্রারও সীমা অতিক্রম করা যাবে না। তাহলে বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যারা যখন যা খুশি তাই বলা, মত প্রকাশ করা বা প্রচার করা কিংবা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার সুযোগ কি আছে?? অবশ্যই উত্তর হবে না!

অথচ ইদানিং প্রায় লক্ষ্য করা যায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগে নানা রকম অশ্লীল ও আপত্তিজনক মন্তব্যও লেখা হচ্ছে মুক্ত চেতনার নামে। আসলে মুক্ত চেতনা কি কাউকে বা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য চেতনা? বরং মুক্ত চেতনা তো হওয়া উচিত যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, প্রতিবাদী হয়ে উঠা। তাহলে ধারাবাহিকভাবে ইসলাম, কোরআন, মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিরুদ্ধে বিষোদগারের হেতু কি?

আর যারা এ জাতীয় কাজে লিপ্ত তারা বেশিরভাগই অমুসলিম কিংবা অঘোষিত বা স্বঘোষিত নাস্তিক। তাহলে প্রশ্ন রাখা যায়, একজন অমুসলিম কুরআন, হাদীস, ইসলামের রীতি-নীতি, ইসলামিক জীবন-ব্যবস্থা, শিষ্টাচার,আইন কানুন সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞান আছে বা রাখে? যতটুকু জানে তা দিয়ে কি নানারকম বিদ্বেষপূর্ণ কথা বলতে পারে? তাহলে উপরে বলা মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণাটি ঠিক থাকলো? আমাদের দেশের পেনাল কোড বা ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৮ ধারা কোথায় টিকলো?

বর্তমান সময়ে মত প্রকাশ বা বাক স্বাধীনতা এমন একটি বহুল প্রচারিত টার্ম, যা মানুষকে স্বস্তিও দিতে পারে আবার বিড়ম্বনায়ও ফেলতে পারে। তথাকথিত মুক্ত চিন্তার লেখকের নাম দিয়ে, বিজ্ঞানমনস্ক লেখার দোহাই দিয়ে, বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যারা এসব করছে এরা আমাদের আশে পাশেই আছে। আমরা তাদেরকে বলি আহাম্মক, বলি ব্যাটার হুঁশ-বুদ্ধি নাই নাকি? কোথায় কি বলতে হয় তাও জানে না? এরা মনে যা আসে তাই বলে। কোনো রাখঢাক না করে বাছ-বিচার না করে বলে ফেলা মানুষদের আমরা বলি পাগল বা উন্মাদ।

কারণ বিবেক সত্তা তাদের ভিতরে নেই, এরা নিজেদেরকে সমাজের সামনে অনেক জ্ঞানী বলে উপস্থাপন করেন। একটি কথা শেষের দিকে না বললেই নয়, আপনি, আমি, আমরা সবাই বলার অধিকার রাখি সব জায়গাতেই। আপনার বলার অধিকার কেউ ছিনিয়ে নেয়নি। বলা বা মতামতের ক্ষেত্রে আমাদের ইসলাম অনেক গুরত্ব দিয়েছে আপনাকে। সন্দেহের বিষয়গুলো আলেম মাওলানা বা মুফতিদের থেকে জেনে সন্দেহ দূর করুন।

ব্লগে ইদানিং কালে কিছু ব্লগার শব্দ দিয়ে অন্যকে আঘাত করে, ধর্মকে অবমাননা করা করে, না জেনে না পড়ে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ কথা বলে! এটা মোটেও কাম্য নয়। এ সমস্ত ব্লগার রা যুক্তি তর্কে গ্রহণযোগ্যতা রাখে না। আপনাকে আমাকে বিড়ম্বনায় ফেলে গা ঢাকা দিয়ে চলে যায়। ফিরতি তর্কে এরা আপনার ধারে কাছেও ফিরে না। সত্যিকার ব্লগাররা গা ঢাকা দেয় না, তারা তর্ক করে সত্যকে জানতে চায়। শব্দনীড়কে এ নিয়ে কিছু বলার ছিলো বলে আজ বলছি। ব্লগের পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য আপনি তর্ক করুন, প্রশ্ন রাখুন। আপনার করা যত কঠিন প্রশ্নের উত্তর কেউ না কেউ দিবেই। সুতরাং কোন বিষয় সম্পর্কে না পড়ে না জেনে গালমন্দ করা বোকাদের কাজ। ধর্ম নিয়ে আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, ডিবেট করতে পারেন। আঘাত করতে পারবেন না। ব্লগ কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ের দিকে কড়া নজর না রাখে তাহলে ব্লগ তার লেখকদের হারাবে।

আমি তর্ক বা ডিবেট করাকে পছন্দ করি বলেই তর্ক করে যাই। তর্কে সত্য বেরিয়ে আসে। আমি শব্দনীড়ে রাগ করেই কয়েকদিন পোস্ট দেইনি। একজন ব্লগারের পোস্টে আমার করা মন্তব্য তর্কের জবাব এখনো পাইনি ! আমি জবাব চাই! যদি ফিরতি তর্ক মন্তব্য না পাই তাহলে ধরে নিবো আপনি হেরে গিয়েছেন আপনার যুক্তিতে। সুতরাং জবাব দিয়ে যান, তা না হয় স্বীকার করুন আপনি ভুলের বশে না জেনে বলে ফেলেছেন! বিদ্বেষ ছড়ানো কোন মন্তব্য করবেন না ব্লগে। ধন্যবাদ।

অতঃপর কোন এক অভিশপ্ত বিকেলে

আমার নিজস্ব কোন গগণ নেই,
যেখানে তুমি পূর্ণিমার সুধানিধি হয়ে দৃশ্যমান হবে।
নেই কোন সুন্দর ইরাবান,
যেথায় তোমায় স্বপ্নলোকের রানী বানাবো।
তবে পুরনো একটি ছনের গড়া,
আমার একটি ঘর আছে।
আছে -জলধারার নামে চোখের ভিতর,
ভালবাসার নোনাজলে ভরাট দুটি কর্ণিয়া।
ওতে কি হবে তোমার?
খুজে নিতে পারবে কি সেখান থেকে,
তোমার ভালবাসাটুকু অবসরে।

অথচ
তোমার শহরজুড়ে এখনো আমি,
তৃষ্ণাতুর কাতর হয়ে তোমায় খুজে বেড়াই।
ভেজালমুক্ত এক নীল আকাশের শহরে,
তোমার নামের ঐ নীল ঘুড়িটা উড়াই।

একুশ পেরিয়েও তোমার ঠিকানা পেলাম না,
অজস্র লেখা রজনী বিসর্জন দিয়ে চিরকুটের প্রাপক পেলাম না।

ধরে নিবো কি এ আমার ব্যর্থতা?

কতগুলো কবিতা গুমড়ে কেঁদে যাচ্ছে,
তোমার ঠিকানায় পৌছবে বলে।
কতগুলো চিরকুট আহাজারি করছে,
তোমাকে প্রাপকের পরিচয় দিতে চায় বলে।
কতগুলো শব্দ অভিমানের ছলে হারিয়ে গেছে,
তোমার প্রেমছোঁয়া না পাবার কষ্টে।
তবুও তুমি সে দূরেই পড়ে আছো!

থাকো।
তুমি সুখবিলাসে সে দূরেই সুখ করে যাও
আমি স্মৃতির বাক্সে কয়েদ করে রাখবো,
উপচে পড়া সে ঘেন্নার প্রতিচ্ছবি।
চিরকুটের পাতায় লিখে রাখবো,
অবহেলিত আহত প্রতিটি শব্দ।

অতঃপর
কোন এক অভিশপ্ত বিকেলে,
তোমার দ্বারস্থ হবো।
খুব আনন্দের সহিত আমার কষ্টগুলো,
তোমার হাতে সঁপে দিবো।
আমার স্মৃতির সমুদ্রতটে,
তোমাকে স্বাগতম জানাবো।
সেথা হতে তুমিও কেঁদে কেঁদে আমাকে বুঝ দিবে,
অবহেলার পর্দা উচিয়ে বলবে,
তোমাকে আর চেনা হলো না!

.
ছবি: নিজের তোলা।
তারিখ: পহেলা আষাঢ় ১৪২৬ বাংলা
স্থান: পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ভ্রমণ ২০১৪।

বুক পকেটে তাজা গোলাপ

বুক পকেটে তাজা গোলাপ,
হাতে বকুল ফুলের মালা,
দাঁড়িয়ে ছিলাম তোমার জন্য,
বিকাল অব্দি সন্ধ্যা বেলা।
বুকফাটা দুপুরে,কাঠফাটা গরমে,
এসেছিলাম আমি পায়ে হেটে,
তোমার একটু দেখা পাবো বলে।
হারাতে চেয়েছিলাম তোমার নীল চোখে,
হারিয়েছি আমি বেদনার সাগরে।
পথের বাঁকে সেই যে গুলমোহর গাছ,
আর নেই জানি অহংকারের দাবি নিয়ে।

ফিরে গেছে যত নামহীন পাখিরা,
তোমার না আসার অভিযোগ দিয়ে।
ভালবাসা বুঝি এমন-ই পাথর চাপা কষ্ট,
রেখে গেলে শুধু না আসার স্মরণ খানি।
অক্ষিদ্বয়ে ভিড় করে ক্লান্তিরা,
আবছা লাগে প্রতিশ্রুতির ছাপ।

বসন্ত শেষে আবার সন্ধ্যা হলে,
চাঁদের আলোয় ফিরবে কি আমার টানে?
পাতায় পাতায় আজ শুধুই কানাকানি,
দিন শেষে ফিরবেনা তুমি জানি।
সময়ের স্রোত হয়তো আমার বিপরীতে,
স্রোতের টান শেষ হলেই ,
সময় আমার অনুকূলে।
অপেক্ষা আমার পুরনো বন্ধু,
স্রোতের টান শেষ হবে বলে।

ছবি: ফেসবুক ছবিয়াল গ্রুপ থেকে সংগ্রহ।
২৫ শে মে, ২০১৯ রাত ১১:৪০

ওহে মেঠো পথের দুর্গেশনন্দিনী

চিরকুট: ১৩। তারিখ: পহেলা জোষ্ঠ ১৪২৬ বাংলা

প্রিয় সুন্দরী লম্বা নাক ওয়ালী।

পত্রের প্রারম্ভে জানাই জোষ্ঠের অলস বিকেলে পুষ্পরথে মধুমক্ষিকার দিক বিদিক শহরশে ছুটোছুটির ব্যস্ততম শুভেচ্ছা। বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমে অবস্থিত মাদ্রাজ নাভেল বেস স্টেশনে আমার জাহাজ নোঙর ফেলেছে কয়েকদিনের জন্য। মাদ্রাজের এই কোলাহলপূর্ণ নগরের মোড়ে ছোট্ট একটি টেবিলে বসে তোমায় লিখছি।

জানি খুব ভালো আছো। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। পর্যুদস্ত মেঘের ক্যানভাসে অনুপস্থিতি বিকেলের পড়ন্ত সোনালী রোদ্দুর আর পাখির আলাপন বেশ জমে উঠেছে এ নগরে খোলা আকাশে। আমি এখন তেইশের কোঠায় দাঁড়ানো তোমার অচেনা মায়াময় রূপের বাঁধনে আবদ্ধ বুক ভাঙা এক উম্মাদ যুবক। রঙ রূপ গন্ধ সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে আমি অনুভব করেছি তোমায়। আমি তোমার সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত বিমোহিত। শুনেছি ভালবাসা নাকি সবকিছুরই দাবীদার, সে দাবীর দোহাই রেখেই বলছি,আমার চিঠির জবাব দাও।

তোমার ঐ অবয়ব রূপ বৈশাখ মাসের পাকা ধান ক্ষেতে তপ্ত গরমে হা করা ফাটা মাটিতে এক পশলা বৃষ্টির প্রথম পরশ। তুমি ফোটা হয়ে বর্ষিত হও আমার হৃদয় হৃৎপিণ্ডের চাইতেও অনেক গভীরে। সমুদ্রে ভাসমান আমার কিস্তি, কুল কিনারাহীন, ঠিকানা বিহীন, সঠিক সময়ে যদি কিনারায় না পৌছায় তাহলে ডুবে বিনাশ হওয়ার আশংকায় আমি আতংকিত। কবে কেথায় কোন কিনারায় আমার কিস্তি ভিড়বে কেউ জানেনা ওই উপরওয়ালা মনিব ছাড়া। তোমার হৃদয়পটের দ্বীপপুঞ্জে আহবানের অপেক্ষায় আমার কিস্তি। সেথায় নোঙর ফেলতে চায়। তুমি সাড়া দাও, আমি উদ্ধার হই।

গোধূলির ধুয়াশার কক্ষপথে কল্পনার সত্যে অবলোকনে তুমিময় একটি সন্ধ্যের অবসান। ভয় মানুষের চোখে নয়,ভাবনায় আর মনে। মেয়েদের সন্দেহ প্রবণতা যেন জন্মগত, তাই তোমাকে বোঝাতে পারিনি তোমাকে ভুলতে পারবোনা। মেঠো পথের দুর্গেশনন্দিনী আমার প্রাণে অপলক চেয়ে মনের মাঝে সন্দেহের ঘুড়ির এলোমেলো উড়োউড়ি। বৃষ্টি আসলে মনে হয় আমি তোমার শূন্যতায় মৌনতা। এই জীবনের নবগঙ্গায় কাগজের নৌকোসম জীবন কিছুদূর গিয়েই ডুবে যায় স্রোতের ঘায়ে। এই শহরের নীলা আকাশে কত দৃশ্যের অবতারণা,সকালে একরকম বিকেলে আরেকরকম। তুমি স্বপ্নের মতো ইচ্ছে ছাড়াই দেখা দাও, ইচ্ছে হলেই চলে যাও।

প্রিয় সুপ্তিতা সন্ধ্যে হলে বড্ড একা হয়ে পড়ি রোজ, তোমার খুনঁশুটিতে আমি খুন হই প্রতিনিয়ত। জলকলস্কে ভেঙে যায় আমার স্বপ্নের দেয়াল, তোমার জন্য হাজারো রঙে গড়া আমার সব কাল্পনিক রোমান্টিক ছবিতা। তোমার আকাশ সমান মনের ঘরে আমার অনুভূতির আলো পৌছায় আর, সে আলো বড্ড ম্লান তোমার মনের মন্দিরে। পাঁজর পোড়া ঘ্রাণে তুমি আনন্দ পাও, আমারও ভালো লাগে বুঝি??

আঘাতের কষাঘাতে জন্মায় ভালবাসা। তোমাকে ভুলে থাকা যায় না এ শহরে। অধরা সুখ হাতড়ে বেড়ায় এই নগরের মোড়ে মোড়ে তুমি ধরা দিয়েও দাও না ধরা। মৃত্যশয্যায় ঘুমিয়ে থাকার অভ্যেস আমার আছে, যদি এই চিঠিটাই তোমায় লেখা শেষ চিঠি হয়। আমি কাছে এলেই হারায় আকর্ষণ, আর দূরে গেলে তুমিও রেখেছিলে আমার খোঁজখবর। দেখো ছেলেটা অনেকখানি বদলে গেছে, সেই আগের মত নেই। তোমায় ভালবাসি বিক্ষিপ্ত আত্মার ছলনাময় প্রলাপে দুর্বোধ্য তুমি, দুর্বোধ্যই থেকে যাবে। আমার মনে হয় তোমার অভিশাপের চেয়ে আমার দুরত্বটাই শ্রেয়। অতি যত্নে চোখের নিচে একটা জলের নদী বানিয়েছি, আমি সে জলে রোজ ভেসে যাই নৌকো হয়ে। ভালবাসা সে আলো লেগেছিলো তোমার চোখের আকর্ষণে। অনুভূতিগুলো শিশিরের মত ঝরে পড়ে আমার পুরনো টিনের চালে, ক্লান্ত নিমের গাঁ বেয়ে বেয়ে। অন্ধ কারাগার শিবিরে বন্দি যত আমার অভিমান,তোমার অভিমান আমার আকাশ সমান। আমার শূন্যতা হয়ত তোমাকেও কাঁদাবে, সে আমার মিথ্যে ভাবনা হলেও মোটেই যে সত্যি নয় তা হয়ত নয়। তোমার মন জয়ের যুদ্ধে আমি হয়ত পরাজিত নাবিক, জয়ের স্বাদ পেয়েছিলাম সামান্য। তোমার মায়াভরা রূপ ফাঁদে আমি পা দেয়ার অপেক্ষায়।

সে অপেক্ষার প্রহর যেন গভীর সমুদ্রে আরো গভীরে প্রবেশ করছে। না পাওয়ার যন্ত্রণা আমার হৃদয়ের মারাত্মক ফাঁদ মনে হয়। হয়তো তুমি বলবে এসব নিছক পাগলামি। তবে আমি জানি, তোমার নীরবতা আমার জন্য কেবল বিভ্রান্তিই হবে।

তোমার অভিযোগ লিখতে লিখতে আমি চিঠির শেষ প্রান্তে, মস্তিষ্কের আটক করা শব্দগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, চোখে ঘুমের ছাপ নিয়ে এখানেই আজ সমাপ্তি দিব ইচ্ছার বিরুদ্ধে, ভালো থেকো কল্পনার দুর্গেশনন্দিনী।

ইতি:
নিখোঁজ হয়ে যাওয়া চিরকুট লেখক।

ছবি : মাদ্রাজ ভ্রমণে ব্লগ।

প্রিয় চিঠিওয়ালী

চিরকুট : ১২। তারিখ:-২৪ বৈশাখ ১৪২৬ বাংলা।

প্রিয় চিঠিওয়ালী,
পত্রারম্ভে জানাই জ্যৈষ্ঠের ভর দুপুরে রুক্ষ প্রকৃতি নগরে ঘ্রাণ বিলানো পাকা কাঁঠালের হলুদ রঙ রোয়া শুভেচ্ছা।

কোলাহল ও ব্যস্তময় ঢাকা শহরের কর্ম ব্যস্ততাকে গা-ডাকা দিয়ে নির্জন কোন সমুদ্রতটে বসে তোমায় লিখছি। মাত্র দু দিন তোমায় নিয়ে একটা বাক্য লেখা হয়নি তাতেই মনে হচ্ছে এক যুগ ধরে তোমায় লিখা হয় না।
কেমন আছো নগরে কল্লোলিনী?
আমি ভালো আছি তবে নিখাদ একাকীত্বে চাপা পড়ে যাচ্ছে ভালবাসার কবিতাগুলো। এখনো কি একলা একা নিজের সাথে গল্প করো আবেশে? একাকী থাকতে থাকতে একা থাকার বদঅভ্যাসে আমিও অভ্যস্ত হতে শিখে গেছি। যদি মুখ ফসকে কেউ বলে দিত হঠাৎ আমি তোমাকে ভালবাসি, তবে সে ভালবাসা আমি ভালবাসা হিসেবে দেখিনে।

তোমায় অক্ষি পাতের অজুহাতে মনের ভুলে পথের মোড়ে মুখ ফিরিয়ে দাড়িয়ে থাকি, কেন বলতে পারো? তোমার অভিমান ভরা নয়নে আজ কদিন নয়নকূল হয়নি আমার। দেখিনি তোমার বিমুগ্ধ চাহুনী। ভালবাসা কখনো একদিন কারো প্রতি জমেনা। অপেক্ষার উপেক্ষিত নীরব আর্তচিৎকারের সাক্ষী আকাশ- বাতাশ, চন্দ্র-সূর্য,আলো-আঁধার, জোনাক-ঝিঁঝিঁ।

আমার চারিপাশ আঁধার ঘেরা পৃথিবী,তোমার পাশে আলোর মশাল। নীরব চিত্তে তোমায় ভালবেসে যাওয়া মানুষটা দেখতে আনস্মার্ট হলেও সাদা মনের। স্মার্ট মানে কি আমি বোধহয় জানিনা। অপরাজিত গল্পের ছন্নমতি ভাব কবিতার আড়ষ্টতা কাটেনি তোমার অভিযোগে। আমার অপূর্ণতার ষোলকলা পূর্ণ করে দিয়েই তুমি বিদায় নিলে।একাকীত্বে আমায় কি আজও তোমায় একটিবার মনে পড়েনি? তীক্ষ্ণগন্ধ অভিযোগের ঝুম বৃষ্টি ঝরে মনের স্তব্ধ উঠোনে, বিচ্ছিরি তারাদের সাথে জেগেছি বহুরাত একাকী,আমিও তোমার গল্প লিখি, দর্পহারী সে গল্পের পাঠক কেবলি আমি। গৌরীশৃঙ্গের মত তোমার মনের দুয়োরে আমার ভালবাসা পৌঁছেনি, পৌঁছেছে আমার দোষগুলো। মানুষ ত্রুটি বা ভুলের উর্ধ্বে নয়, তোমারও ভুল আছে। সংজ্ঞাহীন ভালবাসার ঝড়ে আমি আর আমার জাহাজ ধ্বংস হয়েছি বারবার।

আবার ফিরে আসি তোমার মনের মেঘ হয়ে। ক্লান্ত নিভু নিভু চোখে আজও রঙিন তোমায় হাসি ম্লান হয়নি। অকস্মাৎ হারিয়ে যাবো তোমায় না জানিয়ে কোন এক শেষ রাতে বা সন্ধ্যায়। অসময়ী অভিমানী মেঘ জমে মনে আর বৃষ্টি হয়ে নামে চোখে, সে বৃষ্টিতে আমার মনের তট ভিজে যায় আবেগ সাইক্লোনে। আমি গুম হয়ে যাবো গভীর ঘুমে কোন একদিন, কাউকে না জানিয়ে যে আমি চলে যাবো। আমার বক্ষপটে দুঃখ পুঁতে দিয়ে তুমি কোথায় নিখোঁজ সুখের খোঁজে? গভীর রাতে আমার মনের গহীন ঘরে বাজে শূন্যতার একতারা, সে একতারার শব্দশ্রোতা নির্বাক ছায়ার মত।

মিছেমিছি দোষ দিও আমায় জোনাকিরা, আমি তোমাদের সুখের সাথী হতে পারিনি। ইচ্ছে করে কবিতার খাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলি, ছিঁড়ে ফেলি চিরকুট, কেবল তুমি আছো বলেই পারিনে। আমায় একটু দেখ তোমার আড়চোখে যত্ন করে, এ পাগল তোমারে ভালোইবাসে। আমায় আবার তুমি চিনবে নতুন করে, কিন্তু হয়তো ততদিনে তুমি অনেক দেরি করেই ফেলবে।

সমুদ্রতটে অস্তমিত সূর্যকে সাক্ষী রেখে তোমায় বললাম ওহে প্রিয় ভালবাসি তোমায়। আজ আর নয়। প্রতিক্ষা ক্রমাগত বাড়ছেই, মন খারাপের দিনগুলো আমায় মুক্তি দিবে কবে? চিঠিওয়ালার চিঠিতে শব্দরা ঘুমে ঢুলে ঢুলে পড়ছে, তাই আর লেখা হলোনা। নতুন কোন জায়গায় নতুন করে আবার লিখার অপেক্ষায় প্রিয় মনোভবী। ভাবনার ওপারে ভালো থেকে ওহে মনোভবী সুশ্রী। আমায় নিয়ে ভাবনা ভেবে কোন লাভ নেই।

ইতি
তোমার অপ্রিয় মানব।

দূর পরবাসে রোযা মুখে নিয়ে তোমায় লিখছি মমতাময়ী মা

তারিখ: ০৩ রমযান ১৪৪০ হিজরি

প্রিয় মমতাময়ী মা

গ্রীষ্মের কাঠফাটা গরমে আমার কর্মব্যস্ততায় শরীর নিংড়ানো মুক্তঝরা ঘাম জড়ানো শুভেচ্ছা।

কেমন আছো রণাঙ্গনের জননী সাহসিনী। রমযানের তৃতীয় রোজা মুখে নিয়ে মাগরিবের ঠিক আগ মূহুর্তে সামান্য কিছু ইফতারী সামনে নিয়ে হাজার হাজার মাইল দূর প্রবাস সৌদি আরব থেকে তোমায় লিখছি।

দূর পরবাসে বসে জীবনে প্রথমবারের মতো তোমাকে চিঠি লিখছি। কেমন আছো জীবন যুদ্ধের জয়ী সংগ্রামী মা। আমি অালহামদুলিল্লাহ তোমার দোয়ার বদৌলতে অনেক ভালো আছি। আমার হৃদয়ের অলিগলিতে অসংখ্য অব্যক্ত অক্ষরগুলো প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে তোমার কাছে পৌঁছাবে বলে। কতগুলো বছর পার হয়ে গেল তোমাকে স্পর্শ করি না, তোমার ঐ মায়াভরা চাঁদ মুখ দেখিনা। রোযা রাখার অভ্যাসটা যদি তুমি না গড়ে দিতে, তাহলে হয়তো রোযার ফযিলত হতে বঞ্চিত হতাম। কোন ডাক্তারী পড়ালেখা ছাড়াই তুমি হলে পৃথিবীর একমাত্র জগত শীর্ষ ডাক্তার যার তুলনা হয়না। কিছুক্ষণ পরেই মাগরিবের আযান শুরু হবে,সামনে বাহারি রকমের ইফতার নিয়ে বসে আছি এমন মিথ্যা বাক্য বললেও চিঠির কথামালায় তুমি নিশ্চই সত্য উদঘাটন করবে তোমার পবিত্র চিত্তপটে বা অন্থঃকরণে, গুটি কয়েকটি খেজুর আর পানি দিয়ে আজ আমার রোযা খোলা হচ্ছে। কিন্তু এই ইফতারে আমি ঐ স্বাদ পাই না, যে স্বাদ তোমার নিজ হাতের বানানো আলুরচপে, বেগুনি, ছোলা বুট, নিমকি, ডালের বড়াতে আমি পেয়েছিলাম। হয়তো দুনিয়া থেকে পরলোক গমণের আগ সময় পর্যন্ত সে স্বাদ আমার মুখে লেগে থাকবে।

জানো আম্মা, আমার এই পরবাস দুনিয়াটা ভীষণ সুন্দর। তবুও কেন জানি এ সুন্দরের ভীড়ে তোমার অমন সুন্দর মুখ আমি খুজে পাই না। আমার এ পৃথিবীটা ধূসর লাগে তুমি নেই বলে। জীবনটা দুর্বিসহ মনে হয় তুমি দূরে বলে। তোমার কাছে আমার অনেক অনেক অভিযোগ,কেন এত আদর, স্নেহে বড় করলে আমায়। রোজ ইফতারের সময়ে আমি তোমাকে মনে করি, আর দু চোখের পানি আমার মুখের গাল বেয়ে পড়ে তোমার তরে। তুমিও নিশ্চই আমায় স্মরণ কর ইফতারের আগ মূর্হতে, আর চোখের পানি ফেল জায়নামাজের প্রার্থনায়। ভাগ্য বিধাতা যখন আমাকে তোমার থেকে যোজন যোজন দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন,তখন কেন তোমাকে নির্দয় পাষণ্ড করে সৃষ্টি করেননি। তাহলে অন্তত এ দূর পরবাসে ইফতারের আগ সময়ে আমার দূর পৃথিবীর কাচের দেয়ালের ওপাশে বসে আমার নিথর নিষ্প্রাণ আত্মাটা তোমার জন্য ডুকরে কেদে মরত না!

জান, আমার সব আছে, শুধু তোমার স্নেহটুকু নেই। উন্নত প্রযুক্তির দেশে এখন আর কেউ আমাকে খাইয়ে দেয় না। হাজার দিন হয়ে গেলো তোমার হাতের রান্না করা খাবার খাওয়া হয়না। তোমাকে ঘিরে সব ভালবাসারা হারিয়েছে স্মৃতির মণিকোঠায়। আমার নির্ঘুম রাত্রিগুলো কাটে অসহনীয় মন ব্যাথার ক্ষতবিক্ষত আঘাতে। কষ্টে ভেজা বালিশটা নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রতিটি প্রহরে। মমতাময়ী মা কী? মাতৃত্ব কী আমি বুঝেছিলাম সেদিন,যেদিন আমি তোমার ভালবাসার ছায়া হতে দূর হচ্ছিলাম। তোমার কি মনে আছে আম্মা বিমানবন্দরে আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারায় কেঁদেছিলাম বিদায়কালে, ঐ দিন সবাই আমাদেরকে দেখে ভিতরে ভিতরে তারাও কান্না করতেছিলো হয়তো। সেদিন আমি তোমাকে ছেড়ে যতই সামনে অগ্রসর হচ্ছিলাম,আমার বুকপট ততই ভারী হচ্ছিলো হৃদকম্পনে।

মনে হচ্ছিলো কেউ আমার বক্ষ বিদীর্ণ করে তার ভিতর তোমার সব মায়া ঢালাও করেছে, সেদিন আমার বুকটা অনেক ভারী মনে হচ্ছিলো, যে ভার সহ্য করা অনেক কষ্টকর ছিলো। আমার এই দু বছরের যাত্রাপথে আমি একটু একটু করে তোমাকে আবিস্কার করেছি দ্বিতীয়বারের মত। অবলোকন করেছি তোমার ভালবাসা, দূর পরবাসে এসে বুঝতে পেরেছি মা তুমি কি মানবী? তোমাকে ঐ উপরওয়ালা যে মাটি দিয়ে তোমাকে সৃষ্টি করেছে সে মাটি হয়তো আলাদা। তোমার ধৈর্য্য ক্ষমতা সীমাহীন। কত কষ্ট আর ত্যাগের মধ্য দিয়ে তুমি আমাকে বড় করেছিলে। তোমার কি মনে আছে আম্মা, আমার সেই নয় মাসের যাত্রাপথে আমি তোমাকে কতই না ব্যাথা দিয়েছি, আমার জন্মের পর থেকেই তুমি আনারস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলে ভয়ে, ভয়ের কারন জানতে গিয়ে শুনতে পারলাম আমি যখন ছয় মাসের গর্ভে ছিলাম, তখন তুমি অানারস খাওয়ার কারনে অনেক ব্যাথা অনুভব করেছিলে পেটে। সেই ভয়ে তুমি নাকি আজও আনারস খাও না। আমাদেরকে অবশ্য তুমি আনারস কেটে দিতে, নিজে খেতে না সেই ভয়ে। কতইনা যত্নে আগলে রেখেছিলে আমায় তা আজ অনুভব করি আমি।

মা তুমিহীনা আমি আমার বিবর্ণ পৃথিবীতে ভীষণ ক্লান্ত। কত বছর তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাই না। কতদিন প্রাণখুলে হাসি না,কতদিন চিৎকার করে কাঁদি না। তোমার মতো করে কেউ যে আমায় বোঝে না মা। আমার অভিমান গুলোকে সবাই অভিমান ভাবলেও তুমি কিন্তু আমার অভিমানের আড়ালে ভালবাসাটাই বোঝতে। আমার চোখের ভাষা কেবল তুমিই পড়তে পারতে এ ধরায়।আমি প্রতিদিনের প্রার্থনায় বিধাতার কাছে কেবল একটা আকুতি রাখি,আমার সবটুকু আয়ু দিয়ে তিনি যেন তোমায় দীর্ঘায়ু করেন ভালো রাখেন। আমার দীর্ঘ প্রতীক্ষার স্বপ্নরা একদিন বাড়ি ফিরবে। তোমার নীড়ে ফেরার আশায় পথ চেয়ে বসে আছি। আমি ফিরে আসতে চাই আমার সেই মমতার বন্ধনের আবদ্ধ করা স্নেহের নীড়ে।

মমতাময়ী তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই। সেই দিনটির জন্য সুস্থ দেহে অপেক্ষা করিও মা। এক জীবনের যাবতীয় অপরাধের জন্য ক্ষমা চাই মা। বিধাতার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার তুমি। অনেক ভালো থেকো। আমার জন্য শুধু এটুকু দোয়া করো, জীবনযুদ্ধে যেন আমি জয়ী হতে পারি। সব বাঁধা বিপদ উত্তাল ঢেউ অতিক্রম করে যেন তোমার আঁচলে মুখের ঘাম মুছতে পারি।

ইতি,
তোমার স্নেহের ছোট ছেলে।
শাহাদাত হোসাইন।

নোট:-চিরকুটটি গত হয়ে যাওয়া ৩য় রমযানে লিখেছিলাম। ৪ রমযান সেহরীর সময় জানতে পারি আমার প্রিয় মমতাময়ী মা চিরকুট বারবার পাঠ করে অঝোর ধারায় কেঁদেছেন। সকালে বিকাল শুধু চিরকুট পড়ে কাঁদে আর ঘন্টার পর ঘন্টা আমার সাথে কথা বলে। চিরকুটের প্রতিটি লাইনে লাইনে শব্দে শব্দে আমার সহোদর ভাইও কেঁদেছেন।

চিঠি কাব্য

খুব শখ জাগে
একটি চিরকুট লিখবো
লন্ঠনের মিষ্টি লাল আলোয়।

চিরকুটের আলাপন হবে দীর্ঘ,
প্রতিটি শব্দ হবে রহস্যাবৃত –
প্রাপক খুঁজে নিবে শব্দার্থ।

খুব যত্ন করে লিখবো সেই চিরকুট,
পরম যত্নে কুড়িয়ে নেয়া কিছু কথা,
চিরকুট পাঠে হবে তোমার মন ব্যাথা।

কয়েদ হবে তুমি চিরকুটে,
থেমে যাবে কোলাহল, থেমে যাবে বৃষ্টি!
কারাবদ্ধ শহরে পাবে না আর মুক্তি।

সেই চিঠিতে কিছু গোপন ব্যাথা থাকবে,
রক্ত শিরা-উপশিরা ভেদে হৃদপিণ্ডের গভীরে,
আরো গহীন থেকে কিছু কথা থাকবে।

যে চিরকুটে অস্পৃশ্য অবিনশ্বর রুহ কথা বলবে,
সেই রুহের কিছু আর্তনাদধ্বনি থাকবে।
যন্ত্রণায় ঝিমিয়ে পরা একটি অাধমরা কায়া,
চিরকুটে মুখ থুবড়ে বলবে স্বীয় কথা।

মুখোশের আড়াল থেকে বের হবে তুমি,
বিষাদময় বর্ণিল রাতে,
শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করবোনা আমি,
তোমার কলিজায় দাগ ফেলতে।

___________________________________
ছবি: ইন্টারনেট থেকে। তারিখ: ১২ আষাঢ় ১৪২৬ বাংলা।

এ শহরের বিলবোর্ডে আমার প্রেমের বিজ্ঞাপন

চিরকুট: ১৫। তারিখ ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৬ বাংলা
এই শহরের বিলবোর্ডে আমার প্রেমের বিজ্ঞাপন।

প্রিয় তিলোত্তমা।
জৈষ্ঠ্যের এ ঘুমন্ত গভীর রাত্রির শেষ প্রহরে সাদা রঙের হাসনাহেনা ফুলের ভাঁজে লুকিয়ে পড়া রাত্রিভর পবিত্র ঘ্রাণের শুভেচ্ছা নিও পত্রারম্ভে। কেমন আছো সে প্রশ্ন আজ আর তোমার আকাশে প্রজাপতি হয়ে করলাম না। আলহামদুলিল্লাহ আমি বেশ ভালো আছি। ব্যস্ত এ শহরে ব্যস্ততাকে তস্কর করে তোমাকে আর নিয়মিত লেখা হয় না।

এক জীবনক্ষুধা,
আমিও জীবন দেখেছি,দেখেছি জীবনের স্থবিরতা আর অস্থিরতা, নতুন ভাষা পেয়েছে বহু জীবনরা, আমি ছাড়া। পৃথিবী নামের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সমাজরূপি আদালতের কাছে প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ আমি। জানালার পাশে বসে তাকিয়ে থাকাটা এখন আর গুরত্ব পায়না আমার কাছে, কারণ জানালার ওপাশে যে এখন কেউ নেই। গতকাল চাঁদটা ছিল, আজ তো তাও নেই। এই শহরে অনেকদিন জোনাকিদের সাথে সাক্ষাত হয়নি। শপিংমলের চত্বরে ছোট গাছের ডালে ডালে কৃত্রিম টিপটিপ আলো জোনাকদের কথা মনে করিয়ে দেয়।

হে সমুদ্রবিলাসী,
তোমার মত আমিও সমুদ্র ভালবাসি। এক রাশি নীলচে সমুদ্রের তলদেশে কত কি রহস্য লুকিয়ে, আমি যে ওদের রহস্য ভেদ করতে পারিনা। সমুদ্র যেন বিশালত্বের মুগ্ধময়ী ছবি, ওর দিকে তাকালে মন ভালো হয়ে যায় আমার। রাতের শান্ত আঁধারে চেরি ফুল যেন এলোকেশের মত দুলছে। আমি আকাশে গাঁ বেয়ে নামা অাঁধারের মিছিল দেখছি।

সেই প্রিয়মানবী,
এই শহরের বিলবোর্ডে আমার নামে বিজ্ঞাপন তোমাকে খামছে ধরে না?
দূর থেকে আমি ঊষ্ণ নিঃশ্বাস ফেলছি তোমার ঘাড়ে, তুমি কি অনুভব করোনা। মিথ্যাবাদিতার রন্ধ্রে মিথ্যেবাদী চোখ এখনো স্বপ্ন দেখায়। নতুন ঘ্রাণের মাত্রা আর ঘেঁটেঘুঁটে খুজতে মন চাইনা। পুরনো ঘ্রাণের রেশ এখনো কাটেনি, আসলে আমি যেমন ভেবেছি তোমায়, তুমি আসলে তেমন নও।
অকারণে সবকিছু কি ভুলে যাওয়া যায়?

কবিতার ট্রামলাইন,
হঠাৎ কখনো তোমায় নিয়ে কোন কবিতার লাইন মনে হলে,পকেটের কাগজ কলম হয়ে যেও তুমি,আমি কবি হয়ে যাবো! আজও ব্যাথায় পতিত বুকে কেউ কেউ সুখ বিলাই তা যেন শুধু চোখের ক্ষুধা। বারবার ব্যর্থ হয়েছি তবে আমি হেরে যেতে চাইনা, আমি জিততেই চাই তোমার ব্যয়বহুল ট্রয় নগরীতে।
থাক সে ইচ্ছেগুলো গোপন……..

উমেদার ফুলের তোড়া,
প্রতীক্ষায় ঝুলে থাক সে, আমিও যে তোমার অপেক্ষা ভেবে বেশ ভালো লাগে। এই শহরের ভালবাসার মিছিলে আমার হাত ধরুক কেউ, কেউ হাসি হয়ে যাক আমার শুকনো ঠোঁটে। মন বলে খোঁজও প্রেম প্রস্তরে,নির্জনতার বুনোসুরে তুমিও পেয়ে যাবে প্রিয়মুখ। একদিন সুকোমল মাটির ঘ্রাণে আমি তুমি হেঁটে যাবো প্রিয় মেঠোপথ ধরে।
শোন এ প্রেম নিখাদ নির্ভেজাল করেছি আমি, তুমি জলঘোলা করোনা।

আমাকে প্রেমের গভীরে টেনে নিয়ে গেছে সুতোহীন কবিতা, সে কবিতার মায়ার জাল আমাকে বন্দি করে। মনের ঘরের ঝুলকালি গুলো ভেঙে ফেলবো কি দিয়ে? তুমি ছাড়া যে এ ঘরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে মাঝে মাঝে।

নিভন্ত অন্ধপ্রদীপ,
অন্ধ ঘরে জ্বালবো প্রদীপ, রাতগুলো এখন আর বিষণ্ন লাগে না। ভাগ্যিস কোন কলসে ধরে রাখেনি চোখের পানি, অশ্রুসিক্ত সে চোখের পানি দেখলে তুমিও কেঁদে ফেলতে। আমি জানি রিক্ত কবির বুকে নামে তপ্ত কবিতা, তবে পালকবিহীন বিহগের মত না। ব্যর্থতার সাইনবোর্ড থেকে আমার নামটা মুছে ফেলবো কোন একদিন। শোনো ওহে প্রিয় ইরা, ভালবাসা দরজা খুলে প্রবেশ করেনা, ভালবাসা বাতাসের মত ঢুকে পড়ে।

হে অসত্যালাপী,
জানি মাথার পিছনে ঝুলছে মৃত্যু নামক নোটিশটা, তবুও কত স্বপ্ন দেখা এই স্বপ্নের শহরে। সব ছাপিয়ে জন্ম-মৃত্যুর এ নির্মমতা আর আনন্দ আমাকে ভাবিয়ে যায়, এটা যে চিরন্তন সত্য। বিস্মৃতির আড়ালে থেকে যায় কত না বলা কথা, সে কথা তুমি মানবী জানতে চাওনি, ইশারায় বুঝতেও চাওনি। একদিন ঠিক ফিরে যেতেই হবে চিরস্থায়ী গন্তব্যে, যেখানে আর কোনদিন মৃত্যু হবেনা আমার। নিজেকে শুধরে নেবার যুদ্ধে, প্রতিনিয়ত জয়-পরাজয়ের লড়াই।

এ শহরের বিলবোর্ড
তোমার শহরের বিলবোর্ডে প্রেমের বিজ্ঞাপন আমার, সে বিলবোর্ড কি তোমার নজরে পড়েনা? চার পয়সা দামি এ চিরকুট লেখকের চিঠি তোমার মনের বিলবোর্ডে কবে জায়গা পাবে?

জমাট বাঁধা রক্ত দিয়ে তোমার নামে বিলবোর্ড করেছি রঙিন।
রগ কেটে সেলাই করেছি সে বিলবোর্ডের পোস্টার। তুমি চাইলে সেখানে বুক বিদীর্ণ করা ভালবাসার হৃৎপিণ্ড রাখবো। তোমার ভালবাসার বৃষ্টির অপেক্ষাতে আমার হৃদয়ের মরুভূমি।‌ আজ না হয় কিছু কথা থেমে থাক। তুমি যদি স্বপ্ন দেখতে পারো, তবে আমার দেখতে আপত্তি কোথায়? আমি না হয় কারো স্বপ্নবাজ হয়েই থেকে যাবো এই কোলাহলপূর্ণ অন্ধকার শহরে।

ভালো থেকে হৃদয় সমুদ্রের সমুদ্রবিলাসী।
ইতি
তোমার গোলাপ বাগানের কর্মচারী।

প্রিয় জ্যোতির্ময়ী অর্চিশা

চিরকুট: ১১ তারিখ: ২৩ বৈশাখ ১৪২৬ বাংলা।

প্রিয় জ্যোতির্ময়ী অর্চিশা,
পত্রের শুরুতে দূর দিগন্তে পাখা মেলানো শঙ্খ চিলের রোদ ছড়ানো হাসির প্লাবনে আমার শূন্য এপিটাফে জন্মানো খানিক তুচ্ছ আবেগ জমানো শুভেচ্ছা। উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল উত্তরের বঙ্গোপসাগরের উত্তাল মাঝ সমুদ্রে জাহাজের সম্মুখ পাণে বসে তোমায় লিখছি। জানি ভালো আছো,আর ভালো আছো বলেই হয়ত আমায় ভুলে গিয়েছো।

আমি রমযান মাসের রহমতে আমার সহ-নাবিকদের নিয়ে খুব ভালো আছি বলেই তোমায় লিখছি নিয়মভাঙা চিরকুটে। আমাকে না হোক,আমার কলমের চোয়ালের আবেগ মিশ্রিত চিরকুটের লিখা শব্দগুলো তো তুমি ঠিকই ভালোবাসো,আমি কেবলি সেসব চিরকুটের নামমাত্র প্রেরক। পুরো চিরকুট জুড়েই তো তোমার বসবাস।
আমি বুঝি, ভালবাসা পাওয়ার ভীষণ অযোগ্য?

তোমার ঠিকানায় প্রেরক হয়ে চিরকুট লিখাকে আমি ভালোবাসি, আর তুমি ভালোবাস চিরকুটের প্রাপক হতে, অন্তত একটা জায়গায় তো তুমি আমি এক। মেঘের নাচ দেখতে দেখতে আমার নিরাশায় বাঁধা ঘর হঠাৎ বাণের জলে ভেসে গেল। লাল, নীল, সাদা শূন্যতার কথা কাটাকাটি চলছে মনের সংলাপে, মন বলছে তোমায় ভালবাসি আর তুমি বলছো বাসিনা।

বিশাল সমুদ্রের হিম ঝরানো বাতাসের কাম্পিল্যে চুমু এঁকে দিয়ে যাচ্ছে তোমার মনের তস্করে দক্ষিণী জানালায়। অথচ তুমি নাকি অবগত নও, কিছুই নাকি বোঝ না। মনে মেঘ দানবের চমৎকার কিছু দৃশ্য মাধুরী অবলোকনে তোমার চোখের আবেদন বেশ মনে পড়ছে। মাতাল আমার মন মাঝে মাঝে বিগড়ে যায় তোমার ঐ চোখের মাদকচক্রে। নিজেকে ভয়ংকর রকমের বেয়াদব মনে হয়। এ সমুদ্রপথের অতন্দ্রিতা রাতের তারা বাতিতে বিদঘুটে নেশার ডায়রি তোমার চোখ যেন দূর থেকে আমায় ডাকছে। অস্মিতায়ী তুমি কি আজও খোঁজও পথের অন্তরালে আমার পায়ের স্পর্শ, কবে দেখা হবে দুজনার? কবে মেরামত হবে তোমার আমার পারাপারের সেতুবন্ধন। কানের অষ্টপদে হাত রেখে নির্লিপ্তে বলছি, ওগো প্রিয় ভালবাসি তোমায়। তুমি দেয়ালে কান পেতে দেখো শুনতে পাবে।

জানো প্রিয়, আজকাল ধরতে ইচ্ছে করে তোমার এলোকেশ, ইচ্ছে করছে কানের দুলের দোলাচাল দেখতে। দ্রোহের মায়াজালে নিস্তব্ধ শূন্যতার প্রতিশ্রুতিতে কেবলি তুমি। বুকের গহীন নিভৃতে তোমার দেয়া ক্ষত ঘুমায় যত্নে আর আমি একলা জেগে থাকি নীরব রাতে। আমি অন্ধকার,চারদিকে কত আলো সে আলো তোমার মনের রঙের বিছানা বিছিয়ে রেখেছে। ভাঙাচোরা মনের আবার গেরস্থালি তোমার মনের দরজার নির্বাক নিরুত্তর প্রহরী একদিন ঠিক চাকরীটা ছেড়ে দেবে অন্য কারো আগমনে। তোমার মাঝে কি আছে কি নেই সে আমি জানিনে, আমি জানি যে তোমার সলাজ মাদকতাময় হাসিটাই যথেষ্ট। নীলরঙা কাঁচের চুড়ি পড়ে আমার হৃদয়পটে তোমার বিচরণ ঝংকার শুনতে এ মন ব্যাকুল। তোমার হৃদয় রাজ্যে মনোনয়ন চাই যেখানে আমি ছাড়া আর কোনো প্রার্থী নাই । বাকি গল্পটা তুমি ছাড়া যে বড্ড অসম্পূর্ণ, সে গল্পের মাঝখানে অন্য কেউ আসুক তা আমি চাইনে।

গতকাল সমুদ্র রানীর অপরূপ রূপে মোহিত হয়েছি,তবে তুমি থাকলে হয়ত একটু গল্প হতো এক আঁখিপাতে, তোমায় মনে পড়েছিল খুব। আমি শুধু অবেলায় কুড়িয়ে পাওয়া একটু ভালবাসা চেয়েছিলাম তোমার প্রাণে, তুমি না দিয়ে উল্টো অভিযোগের পাহাড় জড়ো করেছো। স্মৃতির ঝাপসা আয়নায় তোমার মুখ নিয়ে বেঁচে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে। শর্ত ভঙ্গের সব কাব্য আঁধারের মায়ায় নিস্তব্ধ, তুমি ঝুরিঝুরি শব্দের মাল্য মালঞ্চ। কবিতার শব্দ কোঠরে তোমার অস্তিত্বের ঘ্রাণ পায় নীলপরী। রুদ্ধাক্ষত অহমিকার অহমে আমি পুড়ে ধ্বংস হয়েছি, ধ্বংস হয়েছে আমার অনুভূতির দেয়াল। তোমাকে ভালবাসাও যেন আমার মহাপাপ।

আজ আর নয়, তোমার জন্য আমি ভালবাসা ছাড়া কোন উপহার কিনতে পারিনি। আমার আবেগ জড়ানো ভালবাসার এ চিরকুট উপহার কেবলি তোমার জন্য রেখেছি। মস্তিস্কে বন্দি শব্দগুলো ধীরে ধীরে পলায়ন করছে গা ডাকা দিয়ে। তাই আজ এখানেই শেষ করছি, পরবর্তী চিরকুট অন্য কোন নতুন জায়গা হতে লিখার অপেক্ষায় থাকবো।

ভালো থেকো ভাবনার ওপারে অন্তনীড়ের মঞ্চের বিপরীত সহ শিল্পী।
ইতি –
তোমার চার পয়সার চিরকুটওয়ালা।

অনড় সন্ধ্যায় (০২)

অনড় সন্ধ্যায় ২

আমার লিখা প্রথম কবিতা। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন বিজ্ঞ পাঠকগণ। আমি বয়সে অনেক ছোট।

অনড় সন্ধ্যায় তোমার অপেক্ষায়,
তুমি নাকি ব্যস্ত নানা রঙ তামাশায়।
ইচ্ছেরা আজ হয়েছে তোমার অবহেলার স্বীকার,
ভুল মানবীর প্রেমে আমি ভেঙে গেছি বারবার।
তোমার ভালবাসায় আমি হতে চেয়েছি নিখোঁজ,
সে ভালবাসার কারনেই বারবার দিয়েছো দোষ।

দিনের পর দিন তোমার অবহেলায়,
আমার ভালবাসা পাড়ি জমায় নিকোটিনের ধোঁয়াশায়।
কয়েকটি রাত নির্ঘুম চোখের জলে বালিশ ভেজা আসমান,
সে চোখের জলস্রোতে তোমার কিস্তি ভাসমান।
আমি চোখের পানি ঝরাতে ব্যস্ত,
তুমি তোমার লীলা খেলায় লালায়িত।
ক্ষুদ্র সময়ের জীবনে কতটা হবে তুমি নষ্ট,
ওহে ছলনার মানবী কতটা দেবে আমায় কষ্ট।

তুমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করবে একদিন,
এক মৌসুম পর্বে কেঁদেছিলো সে প্রতিদিন।
তুমি যখন ফিরিয়ে আনতে চাইবে আমায়,
তখন আমি অনেক যোজন দূরে যাব চলে
তোমার নীড়ে প্রস্থান হবেনা বলে।
একাকীত্বের স্বাদ আস্বাদন করবে তুমি এখন,
যেমন আমি করেছিলাম,তোমার ব্যাথায় তখন।

বিষাদময় হবে সময় ঘড়ির কাটার মতন,
হৃৎপিণ্ড জ্বলবে তোমার কাঠ পোড়ার মতন।
পূর্বে তোমার সেই বলা বাক্য আমায়,কেন করছো নিছক অভিনয়?
এখন আমি কি বলবো তোমায়?
আক্ষেপ করো নাকি অভিনয়?

তারিখ: ১৯ শে মে ২০১৯।

প্রিয় নির্ঝরিণী

চিরকুট: ১০। তারিখ: ১৪ বৈশাখ ১৪২৬ বাংলা।

প্রিয় নির্ঝরিনী
পত্রের শুরুতে জানাই কুয়াশাচ্ছন্ন রোদ্দুরে অষ্ট পাপড়ি মেলে ফোটা উর্ধ্বমুখী রক্তবর্ণী কসমস ফুলের মাতাল করা সদ্য ঘ্রাণ বিলানো শুভেচ্ছা। ব্যস্তময় দিবার দিন ও রাত্রির সন্ধিক্ষণে সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যাওয়া সূর্যকে সাক্ষী রেখে তোমায় স্মরণ করছি। কেমন আছো আমার আকাশের ধ্রুবতারা? আমি খুব ক্লান্ত ও মনমরা। আমি আর আগের মত নেই, হয়ত অনেকটা বদলেছি। বদলে যাওয়ার কারণটা বুঝি কারো দেওয়া অভিমান। পথহারা বিষণ্নতায় প্রাগুক্ত স্মৃতিগুলো শার্টের পেছন থেকে টেনে ধরছে আমায়। আমার বৃদ্ধা আঙুলের মন্থর স্পর্শ তোমার অধরে ছড়াবে হাসির প্লাবণ, সে ইচ্ছে ভেঙে গেছে কাঁচের দণ্ডে। গল্পের শেষে সবাই ফাঁকিতে মত্ত, কেউ দাঁড়াবে না গল্পের শেষে। তাই তো গানটা ভীষণ গাইতে ইচ্ছে করছে …
“পৃথিবীতে কেউ ভালো তো বাসে না
এ পৃথিবী ভালবাসিতে জানেনা!'”…..

নিঃস্বার্থে ভালবাসা ছড়াতে জানে কেবলি ফুল, তাদের কোন অহংকার নেই বা কাউকে অবহেলা করার ইচ্ছে নেই। বরং কখনো কখনো এই পুষ্প কারো জন্য অবহেলায় শুকিয়ে যায় কখনো ধূলোয় লুটিয়ে পড়ে। আমার ভালবাসার গগণ খুঁড়ে দেখি তুমি নামক অনুভূতি ছাড়া কিছুই নেই। তবুও তুমি ভাবছো এ আমার মিথ্যেমুখ।

তুমি জানো না, কতটা ভালবাসলে তোমাকে হারানোর শংকায় কাটে বিনিদ্র রাত হিম তটিনী। হয়ত হৃদয় ভাঙার শব্দ দূষণে আমি দূষিত তোমার শহরে, তুমি স্মৃতির অনলে করে যাও দগ্ধ। তুমি বুঝবে সেদিন যেদিন আমার জন্য ভিজবে তোমার উৎসুক অক্ষি। শেষ সন্ধ্যা দ্বীপের হিম বাতাসে আমার জলে ভেজা চোখ খোঁজে তোমার অমলিন হাসি, জানো কি ভাল লাগে ওই সলাজ হাসির তুফান। তুমি কার আকাশে উড়াও ঘুড়ি আমার অগোচরে?

ওহে আমার ছায়ামানবী! তোমার নীল কথনের মাত্রারিক্ত দহনে আমি হয়েছি বড্ড নীল বিষাক্ত।

পত্রের জবাবের আশায় অপেক্ষা করেছি বহুদিবস। তুমি না ধরা দিলেও তোমার মুখ ভাসে আমার ধূসর পাণ্ডুলিপির পাতায় পাতায়। তোমার নামে লিখা হয় অসংখ্য চিরকুট। আমি তোমাকে নিয়ে লিখা কাগজের চিরকুটের শব্দগুলো যেন চুপিসারে গান গাই আমার কর্ণকুহরে। ছদ্মবেশী পাগল তোমাকে ভালবাসে বলেই আজও কাউকে ভালবাসেনি। শেষ প্রহরের ক্লান্ত প্রহরী আমি তোমার অপেক্ষায় এখনো থাকি, শুধু তোমাকে একটাবার দেখার জন্য। স্মৃতির উষ্ণ দ্বীপে তোমার হাতের আঙুলের ছাপ লেগে আছে আমার গালে। আজও খুঁজি সে স্পর্শ তোমার শূন্যতার আড়ালে। কুয়াশার ভীড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ হৃদয় নামের মহাসাগরের তীরে, সে সাগরের জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে আমি লণ্ডভণ্ড তোমার ঠুনকো আঘাতে।

নীল গল্পের ছেড়া পাতাতে তোমার আঁচড়ে গল্পটা রঙিন হয়েছিল, গল্পটা শুধু তোমার আমার। দাপিয়ে বেড়ানো প্রজাপতির মত তোমার কাছে বারংবার ছুটে আসি রোদ্দুরে তোমার শহর ছুঁতে। মনের গোপন বার্তা তোমার ঠিকানায় পৌছে ঠিক, তবে মনের ঠিকানায় তার বুঝি আজও কোন দিশে মিলেনি। নিরাশায় চলছে জীবনের নৌকা মাঝ সমুদ্রে, নৌকাটি আমার দিকশূন্য, সে তার ঠিকানা খুঁজে পেতে চায়, সে তোমাকে নিয়ে জয় করতে চায় বিশ্ব অহংকারকে।

লিখতে লিখতে পত্রের শেষ প্রান্তে আমি উপনীত, মাগরিবের আযান আমায় ডাকছে, সে আযানের ডাকে প্রার্থনারত অবস্থায় চোখের শীতল অশ্রু ঝরিয়ে মনিবের কাছে তোমাকে চাইবো। মনের অনেক কথাই এখনো বাকি, সেগুলো অন্য কোন দিন তোমায় শোনাবো।
ভালো থেকো ওহে আমার জীবনের চিরকুটের বিপরীত চরিত্র।

ইতি –
ভিনদেশী তারাদের বন্ধু।

প্রিয় অবেলা

চিরকুট: ০৯ তারিখ: ০৯ বৈশাখ ১৪২৬ বাংলা।

প্রিয় চিঠিওয়ালী অবেলা,
পত্তরের শুরুতে দ্বিপ্রহরে প্রাক্কালে শহরের রাস্তার পাশে মাথা নুইয়ে ঝুলে থাকা লাল টকটকে আনকোরা ডালিম ফুলের সৌন্দর্যবর্ধন মুগ্ধ শুভেচ্ছা। কর্মব্যস্ততার ক্লান্তির ছাপ মুছে মেঘনা নদীর কুল কুল প্রতিধ্বনি শুনতে শুনতে তোমায় লিখছি।

কেমন আছো অবেলা?
আল্লাহর অনুগ্রহতে আমি খুব ভালো আছি।
দিন কাল কেমন কাটছে তোমার?
আমার দিন কাল ভীষণ কর্মব্যস্ততায় কাটছে।
জানো তো এই শহরে একটা চাকরী পেয়ে গেছি। ইচ্ছে করছে স্বীয় গলায় তোমাকে অঞ্জন দত্তের সেই বিখ্যাত গানটা গেয়ে শোনাই।

চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো
এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা।
মাকে বলে দাও বিয়ে তুমি করছোনা।

স্বপ্ন চোখে তোমার আমার নীলরাঙা সংসার এ মিথ্যা শহরের বেড়াজালে। অনুরাগের ঘোর নিমগ্নতা এসে ভীড় জমাক তোমার শহরে। আমাকে তোমার অদৃশ্য যাদুটোনার মায়াজালে বেধেঁ ফেলা যেন বিধাতারই লীলা। মন ঘুড়ির সুতো দিয়ে তোমার আকাশে ঘুড়ি উড়াতে চেয়েছিলাম,কিন্তু তা আমি পারিনি। তোমার দেওয়া উপাধিতে ভূষিত হৃদয়ে, এক সমুদ্রজল সাইক্লোন আঘাত হানে মাঝরাতে।

চিঠিতে শব্দের এই পেরেক মারা গাথুনিতে তোমার বক্ষপানে নামতে চাই শ্রাবনের গাঁ ঝুমঝুম এক পশলা বৃষ্টি হয়ে। সে বৃষ্টিতে তুমি না ভেজো তোমার হৃদয়টা ভিজিয়ে নিও আমার পক্ষে। কপটনিদ্রা কাটিয়ে আবার জাগ্রত হয়েছি নতুন ভোরের দীপ্তকিরনে হাসবো বলে। তোমার তপ্ত বিরাগের সবুজ সমতল ভূমি জুড়ে আমার ভাল লাগা। তুমি আমার স্বপ্ন শহরের লাল টুকটুকে মেঘবউ।

তোমার অবুঝ মনের প্রশ্নগুলো ছিঁড়ে খায় আমার বুকের পাঁজর।
ত্রিতাপ দ্রিমদ্রিম করে আমি অনুভূতিহীন হই।
জলবর্ষী কোন শ্রাবন দিনে অশ্রু বিসর্জন করবো,যেন তুমি অনুভব করতে পারো আমি কাঁদছি। “উন্মীলিত চোখের আলোয় মরিচীকা বিভ্রমের উদ্দীপনে আমাকে গ্রাস করেছে তোমার সর্বনাশা অধর।”কলমের চোয়ালে থেমে যায় আমার শব্দকাব্যের স্পন্দন। কাব্যরসের প্রতিশব্দের কোলজুড়ে অনুরাগ বিছিয়ে আমার কাব্যিক হয়ে ওঠা তোমার অবদান নেহাত কম নয়।

শুকনো ফুলগুলো ঝরছে পথের চারপাশে,কখনো ইচ্ছে করে ফুলগুলোতে হাত ছোঁয়ায়। বিলাসিতার নীল সমুদ্রে ডুব দিতে যেওনা, নিঃশব্দে অনল শয্যায় গ্রাস হয়ে যাবে। নির্বিচারে তোমার আনিত অভিযোগগুলো তুলে রেখো আদালতে। অপরাধীর কাঠগড়ায় সেদিন যে ধারার রায়ে অামাকে শাস্তি দেয়া হবে,আমি সমরে স্বাগতম জানিয়ে মেনে নিবো রাঙাবতি। আলোর মশাল হাতে নিয়ে আমি লং মার্চ করবো তোমার ঠিকানায়।

তবে একদিন ঠিকি অশনি ঢলে ছিদ্র করবো তোমার মনের দোচালা। শহরের উত্তপ্ত পিচঢালা পথে আমি হেঁটেছি দূর থেকে বহুদূর, প্রতিটা কদমে তোমাকে মনে পড়ছিল। আমি আমার নগরীর প্রধান রক্ষী ফটক দুয়ার খুলে বসে আছি তোমার অপেক্ষায়। কবে আসবে তুমি রাঙাবতী? আমার চিঠিগুলো হোক এ ভালবাসার নীরব সাক্ষী। তোমার আমার মনের ফুট ওভার ব্রীজ নির্মাণাধীন।

আজ আর নয়,ব্যস্ততার দরুনে তোমাকে আর নিয়মিত চিঠি লেখা হবেনা। সময় পেলে মনের কথাগুলো ঠিক তোমার জন্য কলম দ্বারা বন্দি করবো ডায়রীতে।
ভালো থেকো প্রিয় রাঙাবতী অবেলা।

ইতি
তোমার নীল চিরকুটের অপেক্ষাপ্রহ
ছবি:-নেট থেকে সংগ্রহ।

প্রিয় নবকলিকা

প্রিয় নবকলিকা। চিরকুট: ০৮। তারিখ: ৭ বৈশাখ, ১৪২৬ বাংলা।

ওগো নবকলিকা,
এই মাতাল গ্রীষ্মপবনে হঠাৎ মেঘভাঙা শব্দের এই শহরের পথের ধারে ফুটে থাকা রক্তরঙা রক্তিম জবার কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির স্পর্শঘ্রাণ শুভেচ্ছা প্রারম্ভ কালে। ব্যস্তময় কোলাহলপূর্ণ নগরীর হিমশীতল করা কোন এক শাখীর আশ্রয়ে বসে লিখছি তোমায়। কেমন আছো নগুরে অশ্রুমতী?

আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো নেই, ভীষন ক্লান্তি আমার অলিকে।
এই শহরের কিছু মানুষ কঠিন স্বার্থপর, এদের কথা ও কাজের কোন মিল নেই।
কর্মস্থলের কিছু মানুষ আমাদেরকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে বেশ পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করে। বিশ্বাস আছে, একদিন অলীকটা ঠিকি পরিবর্তন হবে। তোমাকে নিয়ে আমার শত ভাবনার ঝংঝাল একদিন সত্য হবে। বর্ষার কোন একদিনে বকুল পুষ্পের মালা খোঁপাতে গুঁজে তুমি চলে এসো, আমার হৃদয়কে চুরি করে নিয়ে যাও। আমার বৃক্ষপটের প্রতি ইঞ্চিতে তোমার পদচারণ,তুমি বার্তা পাঠাও।

আমার দেহের শিরায় শিরায় কোথায় হয়নি বলো এখনো তোমার পদচারণ? এই অক্ষিদ্বয়ের উজ্জল ভাষাতে তুমি কি বোঝো না তোমাকে ভালবাসি। জানি আমার এ দুর্গন্ধময় আবেগ তোমার অসহনীয়, তুমি কি কখনো এই হৃদয়ে নেমে দেখেছো,
তোমার জন্য হৃদয় মোহনায় কত উত্তাল ঢেউ!
প্রেমিক প্রেমিকাদের আবেগ ঢালা ছবিগুলো দেখে নিজেকে বিষণ্ন কাকতাড়ুয়া মনে হয়। স্বপ্ন আমার সে তো একখানা ভাঙাচোরা আদি আয়না,সে আয়নায় শুধু তোমারই অবয়ব প্রতিবিম্ব। উন্মাদের মত বর্ষার কোন এক বিকেলে বৃষ্টিস্নান করেছিলাম তোমার সাথে কোনকালে, মনে পড়ে?

ভেজা দাঁড়কাক হয়েছিলাম তোমার অনুরাগ শ্রাবণে, তুমি সাবান হাতে নিয়ে আমার মুখখানি ছুঁয়ে দিতে চেয়েছিলে। তুমি আমার স্মৃতিমাখা হৃদয়ের অলিগলিতে। তোমার অপেক্ষা মাঝে মাঝে আমাকে বড্ড হতাশার ছোবল বসিয়ে দেয়, আমি আবার আশাহত হই। তুমি আমার পুষ্পকাননে ফুল কুড়াতে এলে, বকে দেবার মত কেউ নেই আজ।

তুমি আমার কাছে আসলে আমি অদ্ভুদ শিহরণে উদাসীন হয়ে পড়ি।
ওহে সুশ্রী, তুমি বাসা বাধো কার মনে?
কোন একদিন সফেদ শুভ্র প্রহরে সাদা কাফনে দেহ পেঁচিয়ে আমাকে সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে রেখে আসবে সবাই! সেদিন মনের দাফন কি দিয়ে চুকাবে তুমি? এই যে শোনো, তোমার কীর্তিকলাপ দেখে বড্ড হাসি পায়, আবার দুঃখ হয়। এই অগ্নিবিষাদ জড়ানো মগজে ভালো কিছু আর আসেনা। আমার স্বপ্ন অলীকে কিছু মানুষের লাথি, তবুও আমি চালিয়ে যাবো কলমের তারাবাতি। এই কথা গুলো কোন সন বা তারিখে তোমাদের ভালো লাগবেই।

এই তপ্ত শহরে সজীব দ্রুমের মত হাসি ফোটাবো প্রাণ হতে হৃদয়ে।
যদি উপর মনিব সহায় হোন।
মন জেলখানায় বন্দী কথাগুলোকে মুক্তি দিলাম চিরকুটে, আমাকেও একটু মুক্তি দাও, ভালবাসা দাও হে প্রিয়। বিশ্বাস আছে মনিবের উপর, উনি একটা ব্যবস্থা করেই দিবেন। ভালো থেকো আর আমার জন্য একটু দোয়া করিও প্রার্থনায়।

ইতি
তোমার গল্পের বালক
ছবি: আমার নিজস্ব মোবাইল দিয়ে তোলা।