আমার চিন্তা ভাবনা- ০৩

যখন টাইটানিক ডুবছিল তখন কাছাকাছি তিনটে জাহাজ ছিল। একটির নাম ছিল “স্যাম্পসন”। মাত্র সাত মাইল দুরে ছিল সেই জাহাজ। ওরা দেখতে পেয়েছিল টাইটানিকের বিপদ সংকেত, কিন্তু বেআইনি সীল মাছ ধরছিল তারা। পাছে ধরা পড়ে যায় তাই তারা উল্টোদিকে জাহাজের মুখ ঘুরিয়ে বহুদুরে চলে যায়। এই জাহাজটার কথা ভাবুন। দেখবেন আমাদের অনেকের সাথে মিল আছে এর। আমরা যাঁরা শুধু নিজেদের কথাই ভাবি। অন্যের জীবন কি এল কি গেল তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই আমাদের। তাঁরাই ছিলেন ঐ জাহাজটিতে।

দ্বিতীয় জাহাজটির নাম “ক্যালিফোর্নিয়ান”। মাত্র চোদ্দ মাইল দুরে ছিল টাইটানিকের থেকে সেই সময়। ঐ জাহাজের চারপাশে জমাট বরফ ছিল। ক্যাপ্টেন দেখেছিলেন টাইটানিকের বাঁচতে চাওয়ার আকুতি। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকুল ছিল না এবং ঘন অন্ধকার ছিল চারপাশ তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ঘুমোতে যাবেন। সকালে দেখবেন কিছু করা যায় কিনা। জাহাজটির অন্য সব ক্রিউএরা নিজেদের মনকে প্রবোধ দিয়েছিল এই বলে যে ব্যাপারটা এত গুরুতর নয়। এই জাহাজটাও আমাদের অনেকের মনের কথা বলে। আমাদের মধ্যে যারা মনে করেন একটা ঘটনার পর, যে ঠিক সেই মুহুর্তে আমাদের কিছুই করার নেই। পরিস্থিতি অনুকুল হলে ঝাঁপিয়ে পড়বো।

শেষ জাহাজটির নাম ছিল “কারপাথিয়ান্স”। এই জাহাজটি আসলে যাচ্ছিল উল্টোদিকে। ছিল প্রায় আটান্ন মাইল দুরে যখন ওরা রেডিওতে শুনতে পায় টাইটানিকের যাত্রীদের আর্ত চিৎকার। জাহাজের ক্যাপ্টেন হাঁটুমুড়ে বসে পড়েন ডেকের ওপর। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন যাতে তিনি সঠিক পথ দেখান তাঁদের। তারপর পুর্ণশক্তিতে বরফ ভেঙ্গে এগিয়ে চলেন টাইটানিকের দিকে। ঠিক এই জাহাজটির এই সিদ্ধান্তের জন্যেই টাইটানিকের সাতশো পাঁচজন যাত্রী প্রাণে বেঁচে যান।

মনে রাখা ভাল এক হাজার কারণ থাকবে আপনার কাছে দায়িত্ব এড়াবার কিন্তু তাঁরাই মানুষের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেবেন যাঁরা অন্যের বিপদের সময় কিছু না ভেবেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন। ইতিহাস হয়তো মনে রাখবেনা তাঁদের কিন্তু মানুষের মুখে মুখে গাওয়া “লোকগাথা”য় বন্দিত হবেন তাঁরাই যুগে যুগে।
দেশ যখন ডুবছে তখন ষোল কোটি মানুষ ঘুমোচ্ছে কার ভরসায়?

9 thoughts on “আমার চিন্তা ভাবনা- ০৩

  1. বর্ণিত ইতিহাসটি প্রায় কাছাকাছি জানা ছিলো। সেটার সাথে প্রশ্ন জুড়ে দেয়া যায় এটা কল্পনার বাইরে ছিলো। দেশ যখন ডুবছে তখন ষোল কোটি মানুষ ঘুমোচ্ছে কার ভরসায়?

    আমারটা আমি বলি; মানুষ এখন বোধকরি ভরসা করতে ভুলে গেছে। মানুষ জন শব্দটি বহুবচন থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে একবচন হয়ে গেছে। মানুষ এখন সাহসী। স্বনির্ভর। নিজের জন্যই বাঁচে। সার্ভাইভ করতেও শিখেছে। সাধারণ অসাধারণ মানুষ কেন সমাজচ্যুত !!

    এমন হতে পারে, অভাব স্বভাব বিত্ত বা বিত্তের অভাব মনুষ্যত্বহীনতায় মানুষ বিতৃষ্ণ।

  2. অন্যের বিপদে যারা এগিয়ে আসেন তাদেরকে আমি মানুষ বলি। আর বিপদের দর্শককে অমানুষ নয় প্রাণী বলি আমি।

  3. মানুষের জন্য মানুষ। সরকার যন্ত্র দেশের মানুষকে প্রজা ভাবলে, প্রজার ভাগ্য অন্ধকার। 

  4. টাইটানিকের ভাগ্য হবে এ জাতির। কিছু সেকেণ্ডারী হোমউওনাররা দর্শক থাকবেন।

  5. কিছুটা জানা ছিলো  এ ব্যাপারে,আজ পুরোপরি ভাবে জানলাম,সত্য কথা বলেছেন গল্পে।

  6. জাতির লাইফ জ্যাকেটও শতচ্ছিন্ন। বাঁচবে শুধু বাঁচার ভরসায়। 

  7. অকর্মন্য নেতৃত্ব জাতির জন্য অভিশাপ।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।