পূর্ব জেরুজালেম। আল আকসা মসজিদ। পর্ব-১।
প্রচণ্ড গরম থাকায় মধ্যদিনে আর ঘরের বাইর হইনি। লাঞ্চ খাবার পর চোখ এমনিতেই ঢুলু ঢুলু করছিল। ভেতর হতে ঘুম বার বার তাগাদা দিচ্ছিল। গেল দুই রাত ভাল ঘুম হয়নি ঘন ঘন সময় ও স্থান বদলের কারণে। তাতে ছক আঁকা ভ্রমণ পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে বার বার। সুখনিদ্রায় যাওয়ার আগে মনে হল একটু হেঁটে আসা উচিৎ। বিগ এন্ড ফ্যাট লাঞ্চ গলা পর্যন্ত উঠে নিজের অস্তিত্বের কথা জানান দিচ্ছিল সগৌরবে। গ্রীলড চিকেন সাথে তন্দুরে ভাজা প্যালেষ্টানিয়ান রুটি। স্বাদে গন্ধে এক কথায় অতুলনীয়।
হোটেল কাউন্টারে পরিচয় ইয়াসিনের সাথে। জন্ম প্যলাষ্টাইনে হলেও বড় হয়েছে ইংল্যান্ডে। ছেলে-মেয়ে সহ স্যাটলড রামাল্লায়। তার কাছে নির্দেশনা নিয়ে রওয়ানা দিলাম মসজিদে আল আকসার দিকে।
পায়ে হাঁটার দশ মিনিটের পথ। আঁকা বাঁকা এবং উঁচু নিচু। ব্যস্ত ও গিঞ্জি প্যালেষ্টানিয়ান মার্কেটের বুকে চিড়ে চলে যাওয়া এ রাস্তায় কিছুক্ষণ হাঁটলে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যাবে এদের জীবনের উপর। সন্দেহ নেই এদের জীবন অন্যরকম। কিন্তু মানুষ হিসাবে ওরা আমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষ। হাসিখুশি উচ্ছল। হাঁটার পথে কাউকে সালাম দিলে খুশিতে গদ গদ হয়ে জানতে চায় মুসলমান কিনা। ইসরায়েলিদের মত এদেরও মূল পরিচয় এখন ধর্ম। ধর্মের প্রভাব সবকিছুতে। কথায়, কাজে, পোশাকে এবং ব্যবহারে। মার্কেটে টুরিস্টদের ঢল। সাদা, কালো, বাদামি, মিনি স্কার্ট পরিহিতা ইসরায়েলি যুবতীদের পাশেই হাঁটছে আপাদমস্তক হিজাবে ঢাকা প্যালেষ্টানিয়ান তরুণী। দেখলে মনে হবে জীবন নিয়ে ওদের কোন অভিযোগ অথবা আক্ষেপ নেই। কিন্তু কিছুক্ষণ কথা বললেই বেরিয়ে আসে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস। এবং এ শ্বাসের সাথেই মিশে থাকে তাদের না বলা কথা।
কম করে হলেও দশটা বাঁক নিয়ে হয় খুবই সরু ও ঘিঞ্জি এ রাস্তায়। প্রতিটা বাঁক নেয়ার আগে কাউকে না কাউকে জিজ্ঞেস করে নিলাম পথ হারানোর ভয়ে। তরুণরা দোকানে পশরা সাজিয়ে অপেক্ষা করছে ক্রেতার। পাশেই হুঁকা হাতে তামাক টানছে বৃদ্ধের দল। অনেককেই সালাম দিলাম। দুয়েকজন ডেকে কাছে বসাল। খুঁটিয়ে জানতে চাইল কোথা হতে এবং কেন এসেছি। মার্কিন পরিচয় এখানে মূল্যহীন। বরং বাংলাদেশের কথা শুনলে জানতে চায় অনেক কিছু।
আড্ডা জমিয়ে তোলা সম্ভব হয়নি সময়ের কারণে। সময়ের সাথে আমার লড়াই চলছে গত দুদিন ধরে।
একটা জিনিষ খুব ভাল লাগলো জেরুজালেমের এ অংশে। ছেলে বুড়ো হতে শুরু করে প্যালেষ্টাইনিদের প্রায় সবাই ইংরেজি জানে। কম্যুনিকেশনে অসুবিধা হয়না।
আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকার প্রথম গেইটেই আটকে দিল ইসরায়েলি পুলিশ। জানালো বন্ধ হয়ে গেছে! জানানোর ভাষাটা ছিল খুবই কর্কশ। এই প্রথমবার অনুভব করলাম হলিল্যান্ডের সবকিছুই ছবির হলি নয়।
মন খারাপ করে ফিরে এলাম। উলটো রাস্তায় কারও সাথে কথা বললাম না। মনে মনে অংক কষে টাইট মেনুতে নতুন করে ঢুকাতে চাইলাম ফিরে আসার প্লান।
হোটেল কাউন্টারে ইয়াসিনকে খুলে বলতেই সে হেসে দিল। জানালো ওটা ছিল নামাজের ব্রেইক। চাইলে এখুনি আবার ফিরে যেতে পারি। শরীর আর চলছিল না। নতুন করে বাইরে বের হওয়ার আগে একটু ঘুমিয়ে নেয়া দরকার। কোন রকমে রুমের দরজা খুলে লুটিয়ে পরলাম বিছানায়।
এই পর্যন্ত পড়লাম ভাই। সম্ভব হলে প্রতিদিন দুটি করে পর্বের সাথে ভিডিও দিন।
ভ্রমণ পোস্ট আমার সব চাইতে প্রিয়। এখনও ভ্রমণের ঈঙ্গিতে ঘরে থাকি না। চলুক।
এই সিরিজটি পড়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলাম।
সুন্দর পোস্ট। পাঠ সঙ্গী হতে চাই।
ভ্রমণ পর্বের দ্বিতীয় পাঠে সরাসরি চলে এসেছি। ধন্যবাদ আপনাকে। প্রথম পর্বে যাচ্ছি।
আল আকসা মসজিদে প্রবেশ (যদি করে থাকেন) অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করবেন প্লিজ।
ভালো লেগেছে, শেষ পর্যন্ত পাবেন আমায়। প্যালেস্টিন জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে ইসরাইয়েলী হায়েনারা। এদের কুকর্মের ফল দুনিয়াতেই পাবে তারা। আপনার পোস্ট থেকেই জানতে পারবে পাঠক, ইসলাম ধর্মের পোশাক আর তাদের পোশাক পরিধানে কি পার্থক্য রয়েছে।
সহজ সরল সুন্দর ভাষায় উপস্থাপন করেছেন।
এটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।
শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।