ডেশটিনেশন রামাল্লা, পশ্চিম তীর, প্যালেষ্টাইনঃ
পশ্চিম তীরে ঢুকার ইসরায়লী চেক পয়েন্ট।
এই সেই নটরিয়াস দেয়াল যা নিরাপত্তার অজুহাতে ইসরাইল নির্মাণ করেছে।
আজকের সময়টা রাখা ছিল প্যালেষ্টাইনের জন্যে। দু’এক জায়গায় বিছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও সফরটা ছিল নিরাপদ ও ঘটনাবহুল। গুছিয়ে লিখলে দশপর্বেও শেষ হবেনা। তাছাড়া উত্তপ্ত হয়ে উঠছে জেরুজালেমের বাতাস। আমি যেখানে আছি সেখান হতে আধা মাইল দূরে ঘটেছে ঘটনাটা। বোধহয় রোববার রাতে ইসরায়েলি বুলডজার গুড়িয়ে দিয়েছে প্যালেষ্টাইনিদের ১০০’র মত বাড়ি। ওদের ভাষ্য বাড়িগুলো নিরাপত্তা দেয়ালের খুব কাছে হওয়ায় ইসরায়েলের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তা হুমকি স্বরূপ। কোন পূর্বনোটিশ ছাড়া ১০০ পরিবারকে পথে বসিয়েছে। ফুঁসছে গোটা প্যালেষ্টাইন। রামাল্লায় গিয়ে তার উত্তাপ কিছুটা হলেও অনুভব করেছি।
আগামীকাল বিক্ষোভ করবে গোটা প্যালেষ্টাইন। পূর্ব জেরুজালেম হতে ঢুকার মূল ফটক দামাস্কাস গেইট বন্ধ করে দিবে সৈন্যরা। মারাত্মক কিছু না হলে তার স্থায়ীত্ব হতে পারে ৩/৪ ঘণ্টা। আর রক্তারক্তি হলে তা বাঁক নেবে বিপদজনক পথে। স্বভাবতই কয়েক ঘণ্টার জন্যে আগামীকাল বন্দী হয়ে পরবো হোটেলে। কারণ দামাস্কাস গেইট হচ্ছে পূর্ব জেরুজালেম হতে বের হওয়ার অন্যতম পথ। দিনের প্ল্যান চেঞ্জ করতে হবে ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যে রেখে। হোটেল রিসিপসনিষ্টের মতে, এমনটাই প্যালেষ্টাইন ইসরায়েলের সম্পর্ক। দুদিন ভাল তো তৃতীয়দিন খারাপ। টেইক ইট অর লীভ ইট!
চেয়ারাম্যান ও প্রেসিডেন্ট আরাফাতের অফিস কক্ষ। এখানে বসেই মোকাবেলা করতেন ইসরায়েলীদের অল-আউট আক্রমণ।
চেয়ারম্যান আরাফাতের রান্নাঘর। একাধারে ৩৪ মাস ইসরায়েলী অবরোধের সময় এটাই ছিল তার মূল আশ্রয়স্থল।
এখানেই ঘুমিয়ে আছেন প্যালেষ্টাইনিদের প্রাণপ্রিয় পুরুষ ইয়াসির আরাফাত।
রামাল্লাহ শহরের কেন্দ্রে।
প্যালেষ্টাইনের রাজধানী রামাল্লায় পৌঁছে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে দেখা করার অনুরোধ পাঠাই। অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে তার সেক্রেটারী জানাল, বাংলাদেশ হতে আসা একজনের সাথে প্রেসিডেন্ট দেখা করতে খুবই উৎসুক, কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণ তিনি এখন সময় সময় দিতে পারবেন না। দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন চাইলে পরের সপ্তাহে এমন একটা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করিয়ে দিতে পারেন। ধন্যবাদ দিয়ে জানালাম একসপ্তাহ পর আমি আর এখানে থাকবোনা। চেয়ারম্যান আরাফাতের কবরের সাথে দেখা প্রশাসন ভবনের প্রবেশের মুখে। দুজন সৈনিক পাহারা দিচ্ছে ২৪/৭। দেখলাম আরাফাতের অফিস, যেখানে বসে একনাগাড়ে ৩৪ মাস ইসরায়েলিদের অবরোধ মোকাবেলা করেছেন।
ঐতিহাসিক শহর জেরিকো।
১০,০০০ বছর বয়সের এই শহরই আজকের বিশ্বের সবচাইতে পুরানো শহর।
রামাল্লাহ হতে বেরিয়ে পরবর্তী ষ্টপেজ ছিল জেরকো নামের একটা ঐতিহাসিক শহর। বলা হয় সী-লেভেল হতে পৃথিবীর সবচাইতে নীচুতে অবস্থিত এই শহরের বয়স ১০,০০০ বছরের উপর।
ছোট এই জায়গাটাতেই জন্ম হয়েছিল যীশু খ্রীষ্টের।
খ্রীষ্ট ধর্মের জনক যিশু খৃষ্টের জন্মস্থান বেথলেহেম ছিল আজকের শেষ ষ্টপেজ।
প্রতিটা শহর ভ্রমণের সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ঘটনা। লুকানো আছে প্যালেষ্টাইনিদের লম্বা দীর্ঘশ্বাস। নিজ দেশে শরনার্থী হওয়ার চাপা ক্ষোভ ফুঁসে উঠে অনেক কথাই প্রকাশ করেছিলেন আমার ট্যুর গাইড আবু আল নাসের। ৪৭ বছর বয়স্ক প্যালেষ্টানিয়ান, যিনি একসাথে জেল খেটেছেন ইসরায়েলি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইসহাক রবিনের খুনির সাথ, বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন নিজেদের অসহায়ত্বের কথা। নিয়ে গিয়েছিলেন আপন বাসস্থান পশ্চিমতীরের এক রিফিউজ্যি ক্যাম্পে। এসব কথা পূর্ব জেরুজালিমে বসে লেখা নিরাপদ না, পরিচিত অপরিচিত অনেকেই লিখতে মানা করে দিয়েছেন।
বাড়ির ফিরে এর উপর বিস্তারিত লিখার ইচ্ছা।
ঘুমিয়ে আছেন প্যালেষ্টাইনিদের প্রাণপ্রিয় পুরুষ ইয়াসির আরাফাত। স্যাল্যূট স্যার।
ডিটেইলে পড়লাম পোস্ট। সত্যই অভিভুত হলাম।
পোস্ট এবং কন্টেন্ট সাজানো অসাধারণ হয়েছে।
অপেক্ষা করছিলাম আপনার পরবর্তী পোস্টের। পেয়ে গেলাম। চলুক ভাই।
যতটা সম্ভব আপনার ভ্রমণের সাথে ইতিহাস ঐতিহ্যও জানতে পারছি ওয়াচডগ ভাই।
ছোট এই জায়গাটাতেই জন্ম হয়েছিল যীশু খ্রীষ্টের। অপূর্ব। সার্থক হলাম পড়ে।
আগের ৩টি পর্ব পড়েছি। আমার কাছে দারুণ লাগছে আপনার ভ্রমণ বৃত্তান্ত।
আপনার লেখাটা বেশ সুন্দর হয়েছে।অনেক কিছু জানা হলো।
ইয়াসির আরাফাতকে আল্লাহ বেহেশত নসিব করুক।আমীণ।
অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে লিখেছেন। প্যালেষ্টাইন একটি মুসলিম দেশ ছিলো,ইহুদীরা জোরপূর্বক দখল করছে, আন্তর্জাতিক সংস্হা এদিকে বোবার ভূমিকা পালন করছে।
খুব ছোট বেলা থেকেই বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও তেহেরান ও ডয়েচে ভেলে জার্মানের বাংলা অনুষ্ঠান শুনতাম বাবা ও দাদার সাথে। প্রতিদিন শুনতে শুনতে একটা নেশার মত হয়ে গিয়েছিল। সকালের অংশটা মিস হতো না কোনদিন। বিশেষ করে বিবিসি। বাবা বাড়িতে না থাকলে, দাদা থাকতো। তার সাথেই শুনতাম। যেদিন দু'জনেই না থাকতো, সেদিন নিজেই শুনতাম।
সেখান থেকেই শুনছি ইসরায়েলিদের কাছে ফিলিস্তিনিরা নির্যাতিত হয়ে আসছে। ফিলিস্তিনিদের সবকিছু দখল করে নিচ্ছে ইহুদিরা। পশ্চিমারা নানা রকম আশ্বাস আর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। ফলাফল ০, -০, -১০০%।
তেমন করে শুনতাম কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তান ও ইন্ডিয়ার টানাটানি।
এ দুইটা ট্রাজেডি এখনও চলছে। ছোট থেকেই জমা হচ্ছে আমার ক্ষোভ, এত অত্যাচার-অনাচার হচ্ছে। কিন্তু সারা পৃথিবী কি করছে। আগে খুব ভাবতাম আর এখন শুধু অপেক্ষা করছি, কবে শেষ হবে। কবে ফিলিস্তিনিরা তাদের দেশ নিজেদের করে ফিরে পাবে। কবে কাশ্মির আলাদা একটা স্বাধীন দেশ হবে। তাতে থাকবে না ইন্ডিয়া-পাকিস্তান-চীনের কোন হস্তক্ষেপ।
আপনার এই লেখা পড়ে আমার সেই ছোটবেলার ক্ষোভ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।