তিলাত তিজান সম্পর্কে কাজিন বলতে গেলে একসাথে বড় হয়েছে। সমবয়সী, সব কিছু শেয়ার করে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আরো বেশি অন্তরঙ্গ ও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, স্কুল পেরিয়ে কলেজ জীবনেও। ওরা প্রায়ই প্লানচ্যাট করতো। একদিন প্লানচ্যাট করার সময় তিজান প্রশ্ন করলো তিলাতের হবুর নাম কি হবে। প্লানচ্যাট এ উত্তর এল শাওন। তিলাত পাত্তাই দিলোনা। দিন যায় কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হয় তিলাত।
শাওন বলে এক পাড়াতো ভাই ছিলো ধানমন্ডি ২৮ নম্বরে, ওর একটি এ্যলসিশিয়ান পাপ্পী ছিল রোজ বিকেলে সেটিকে নিয়ে ঘুরতে বেরুতো, এক্সসারসাইজ করাতো। তিলাতদের ব্যালকনি থেকে দেখা যেতো। মাঝে মাঝে ওরা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ওদের কসরৎ দেখতো এ পর্যন্তই। তারপর শাওন একদিন পাড়ি জমায় কানাডায় উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে।
একদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানে বই খুঁজছিলো তিলাত। কাকতালীয় ভাবে সেখানে দেখা হয়ে যায় শাওনের সাথে। এগিয়ে এসে চিনেছি এমন একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি করছো, কেমন আছো? কুশলাদি বিনিময়ের পর দোকানে দোকানে বই দেখার ফাঁকে ফাঁকে কথা হয়, কথায় কথায় শাওন বললো ও ওর সোফোমোর ইয়ারের ফাইনাল সেমিস্টার এক্সাম দিয়ে সামারে বেড়াতে এসেছে। তিলাত ও জানায় ঢাকা ভার্সিটিতে ফিনান্সে ফাস্ট সেমিস্টারে পড়ছে সে। শাওন কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারেনা ফোন নম্বর নিতেও ভুলে যায়। বাসে উঠতে উঠতে বললো কাল বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এসো। তিলাত ভালো নাচতে পারতো, বটমূলের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নেচেছে কয়েকবার। তিলাত শাওনের না বলা কথার মর্মোদ্ধারের চেষ্টা করে, বাকিটা তিজানের মতামতের উপর ছেড়ে দিলো। তিজান তো মহা খুশী প্লানচ্যাটের ভবিষৎ বানী ফলতে চলেছে। আইডিয়া তিজানেরই ছিলো তাই, আর যায় কোথা, বকবকানি আর তোড়ে জোড়ো তিলাতের কান ঝালা পালা করে তুললো, তোকে কিছু করতে হবেনা আমি সব ঠিক করে দিবো। তিজান আজও প্লানচ্যাটের বায়না ধরলো, অগত্যা তিলাত কে রাজি হতে হলো। এইবার তিজান প্রশ্ন করলো পহেলা বৈশাখে তিলাত কেমন সাজবে? কয়েকবার জিজ্ঞেস করলে উত্তর এলো ছড়ার আকারে…..
তা হলো…
অঙ্গ সাজিয়ো তব, বাসন্তি শাড়ীতে।
কপালে লাল তিলক, কাজল আঁখিতে।
শ্বেত শুভ্র বেলী, দিও খোঁপাতে।
রিনি ঝিনি সোনালী কাঁকনে, সাজিও তিলাতে।।
তিজান পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য দ্বিগুন উৎসাহে কাজে লেগে গেলো। পহেলা বৈশাখের আগের রাতে তিলাতদের বাসায় থেকে যায় তিজান। সকাল হতেই সাজানোর পর্বটা তিজান ঠিক করে দেয়। সেজে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই নিজেকে নতুন মানুষ মনে হয় তিলাতের। তিজান বলে দারুন ! আমি ছেলে হলে কারুর চোখ পড়তে দিতাম না। মার কাছ থেকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যাচ্ছি বলে দুজন একসাথে ঘর থেকে বের হয়। রবীন্দ্র সরোবরের কাছে আসতেই তিজান তিলাতকে বাই বলে চলে যায় পিয়ালের কাছে। ভয় শঙ্কা দূর হলোনা তিলাতের। কি শুনবে, কি বলবে, আসলেই দেখা হবে কি? রাজ্যের প্রশ্ন মাথায় ভীড় করে। এক সময় পৌছে যায় রমনার বটমূলে হাজার মানুষের ভীড়ে। এদিক ওদিক কোনদিকে খুঁজে না পেয়ে ড্রিংসের দোকান থেকে এক বোতল পানি কিনে ছায়ায় এসে দাঁড়ালো। কি প্রচন্ড গরম! বাদাম ওয়ালা এসে জিজ্ঞেস করলো বাদাম লইবেন আপা? আচ্ছা দাও বলে ৫ টাকার বাদাম কিনলো তিলাত।
অপেক্ষার সময় যেনো কাটেনা কি করবে ভেবে পাচ্ছিলনা। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে উঠে যাচ্ছিল পথে দেখা হয় তরু আপার সাথে ওর নাচের ইন্সট্রাকটর। কি খবর, কেমন আছো ? চল একটু চা খেয়ে আসি। সেই সকালে এসেছি পেটে কিছু পড়েনি। ফাস্ট ফুডের দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল শাওন। ফলো করলো শাওন। তরু আপা জিজ্ঞেস করলো নাচ কি ছেড়ে দিয়েছো? না, ঠিক সময় দিতে পারছিনা, পড়ার চাপ, টেস্ট, টিউটোরিয়াল সেরে সময় করে উঠতে পারিনা। তবে ইচ্ছা আছে চালিয়ে নেবার। তরু আপার কাছ থেকে বিদায় নেবে এমন সময় উদগ্রীব অপেক্ষার অবসান হলো।
শাওনও চাইলো দুজনার মধ্যে না ঢুকাই ভালো। তাই অপেক্ষা করেই ছিলো। বেরিয়ে আসতে আসতে বারোটার কাটা ছুঁই ছুঁই। তিলাত একটু অভিমানের সুরেই বললো এভাবে কেউ কাউকে আসতে বলে? এত মানুষের ভীড়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়? আমি আর একটু হলেই বাড়ি ফিরে যেতাম। শাওন আমতা আমতা করে সরি বললো,আমি কিন্তু খুঁজছিলাম, এতটুকু তপস্যা ভঙ্গ হয়নি। চল ওখানটায় বসি বড্ড তেষ্টা পেয়েছে। শাওন বললো কিছু নিয়ে আসি। তিলাত তাড়াতাড়ি পানির বোতলটা বের করে দেয় সাথে বাদামও। বাদাম খেতে খেতে কিছুক্ষণ গল্প করলো। এক সময় শাওন বললো, ক্ষিদে পেয়েছে, চলো, পান্তা ইলিশ খেয়ে আসি।
তিলাত বললো আচ্ছা চলো যাই, চারিদিকে কোলাহল গুঞ্জন। সবাই যেনো অন্যরকম অনুভূতিতে জেগে উঠেছে। বাংলার স্বপ্নে যেন মেতে উঠেছে। খাওয়া শেষ হতে না হতেই দমকা বাতাস সেই সাথে বৃষ্টি নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পথে পরিপাটি সাজ ভিজে চুপসে গেলো। তিলাত বিরক্ত ভরে বললো বৃষ্টি আসার আর সময় পেলো না। শাওন বললো বেশতো ভালো লাগছে, এই কয়দিন যা ভ্যাপসা গরম পড়েছে, গাছের পাতাগুলি চেনাই যাচ্ছিল না। অন্তত ধুয়ে পরিষ্কার হয়েছে। সব কিছু প্রাকৃতিক। বৃষ্টি ছাড়া কি সৃষ্টি হয়? তিলাত আঁচলে মুখ মুছতে যাবে, এসময় শাওন বললো দারুণ লাগছে, দাঁড়াও আজকের ক্ষণটা ফ্রেমে বন্দি করে রাখি। মেলার কোলাহল ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে আসলো। তিলাতকে বাড়ি পৌছে দিলো শাওন। পরের সপ্তাহেই শাওন কানাডায় ফিরে যায়।
এর পর দিন গোনা, ফেইসবুকে কথা হয়। নেটের বদান্যতায় কথা হয়, ছবি বিনিময় হয়। শাওন জানালো যে, আগামী স্প্রিং এ ওর ব্যাচেলর প্রোগ্রাম কমপ্লিট হবে। এরপর বাড়ি ফেরার পালা। সেবার দেখা হয়েছিলো বৈশাখে এবার দেখা হবে বর্ষাতে। এইবার বৃষ্টিতে ভিজবো নৌকায় চড়বো মনে থাকে যেনো। আগামী ফলে মাস্টার্স এ এডমিশন নেওয়ার আগেই মিস্টার আর মিসেস হওয়ার চিন্তা থাকলো। তুমি যে কিছুই বলছো না? তাহলে কি সব দায় আমার? একটা কিছুতো বলো। তিলাত বললো, আমি আর কি বলবো। আমি তোমার কথা ভাবতেই আনমনা হয়ে যাই। আমি তোমার আজকের মনটি খুঁজবো সারাজীবন গাছ তলা থেকে চাঁদ তলা পর্যন্ত যেখানেই থাকো না কেনো। সেটাই হবে আমার অভয়ারণ্য। বাইরে বৃষ্টি দমকা বাতাস জানালা দিয়ে ভেজা ঠান্ডা বাতাস ঘরে ঢুকছে। আকাশের চাঁদ একটু উঁকি দিয়েই গভীর আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আজ আমার লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু কি লিখবো কিছুই ঠিক করতে পারছিনা। নেটের লাইন ভালো না, ভিষণ স্লো। আজ আর কথা বলা হলো না। কিছুক্ষণ জানালায় দাড়িয়ে থাকে, বৃষ্টি ভেজা রাতের আকাশ দেখে। চাঁদের উঁকি ঝুঁকি দেখে মনে হয় চাঁদ যেনো কিছু বলতে চায়।
এরপর বিছানায় যায়, অনেক রাত তবুও ঘুম আসেনা। ভাবতে থাকে নানা কথা। প্রকৃতি কত বিচিত্র, বিচিত্র মন। স্যাটেলাইটের যুগ এখন বিচিত্র কত কি। ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে তিলাত। স্বপ্ন দেখে কবিতা লিখছে চাঁদকে নিয়ে। শুনবে শাওন কবিতাটি? কবিতাটি আমি তোমাকেই উৎসর্গ করলাম………..
অফলাইন ম্যাসেজ
আকাশের দোর খুলে চাঁদ হেসে বলে,
Hi মর্ত্য বাসীরা, আছো কি হালে।
উঁকি দিয়ে প্রতিদিন দেখি তোমাদের,
নদী নালা সয়লাব ঢেউ জোয়ারের।
মেঘেরা মাঝে মাঝে চোখে আটেঁ ঠুশি,
Then I got a dc।
রবি দার সাথে আছে বড় লেন দেন।
CPUর মতো তিনি নির্দেশনা দেন।
হামা দিয়ে এগোই পথ পাড়ি দেই,
Key board হাতড়াই surf করে যাই।
মাঝ রাতে সাধ হয় যদি পাই chance।
Log in হয়ে যায় যদি by chance।
ঝম ঝম বুষ্টি, বজ্রের হুঙ্কার,
অকেজো অসার Net Server।
সুবহে সাদেক্বের সময়, উতলা হয়ে যাই।
I ve to go good bye।
বর্ষার কালো মুখ ঢাকা ভারি নেকাবে।
আজ কথা না হলেও সহসাই হবে।
অচিরেই কাটবে মেঘ, don’t mind my dear।
Bye, and take care।
নাড়ীর বাঁধনে যুক্ত গাঁথাসুতো বিনে।
চাও যদি খুঁজে পাবে Recycle Bin এ।
আজকাল গল্প পরিবেশনা মানে পাঠকের দুঃখ কষ্ট বেদনা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সামনে তুলে আনা। জীবন পারিপার্শ্বিকতায় মানুষ নিজেই যেখানে নিত্যদিন হাবুডুবু খায়; সেখানে এন্টারটেইনমেন্টের নামে সেই-একই যাপিত জীবনের দুঃখের স্মৃতি যদি পঠিত পাঠেও পুনরায় ফিরে আসে; সেখানে থেকে বা সেই লিখা থেকে পাঠকের মন উঠে যেতে বাধ্য। প্রেক্ষিতে আমি-অন্তত ভারী ওজনদার লিখা-পড়া থেকে মন তুলে নিয়েছি। নিতে বাধ্য হয়েছি। ভালো লাগে না আর জীবনের একই পুনরাবৃত্তি পড়তে।
আপনার লিখা গল্প বোধ করি এই প্রথম পড়লাম। মিথ্যে হলে ক্ষমা প্রার্থী। হালকা প্রেমের গল্প হিসেবে ভালো লিখেছেন আপনি। ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় আপা।
সালাম আজাদ ভাই ঠিকই বলেছেন এটাই আমার একমাত্র গল্প।গল্পের আইডিয়া আমার আসে না এত চরিত্র চিত্রিত করা কঠিন।
আজাদ ভাইয়ের মন্তব্যটি পড়লাম। আমি ভিন্নমত পোষণ করতে পারলাম না। অভিনন্দন আপা।
ধন্যবাদ সাজিয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য
শুভকামনা রইল আপু

অফলাইন ম্যাসেজ দারুণ হয়েছে।
দারুণ শব্দের ধ্বনি মনে হয় প্রতিধ্বনি হয়,
আপনার এক শব্দের মন্তব্যে তেমনই লাগল, শুকরিয়া
শুভকামনা নিরবধি
তিলাত এবং শাওনের জন্য ভালবাসা।
ধন্যবাদ, অবশ্যই দিদি পড়বার জন্য শুকরিয়া
শুভকামনা নিরন্তর
জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা দিদি
অনলাইন প্রেম আর অফলাইন ম্যাসেজ গল্পটি কিন্তু বেশ হয়েছে।
ধন্যবাদ দাদা সুন্দর মন্তব্যের জন্য
অষ্টমীর শুভেচ্ছা
ভালোবাসা এমন একটি ব্যাপার যা একবার শুরু হলে প্রতিটি জিনিসই ভালো লাগতে থাকে।
ধন্যবাদ ভাইয়া তাই হবে, বিপরীত টাও মনে হয়
সেই অনুপাতে কাজ শুরুকরে
সুন্দর মন্তব্যের জন্য শুভকামনা অনাবিল