ছন্দ হিন্দোল এর সকল পোস্ট

রাতের প্রহর

অস্তাচলে কৃষ্ণ রেখা
জানায় রাতের গড়ি।
খেয়া পারে ব্যস্ত যাত্রীরা
গুটায়ে পসার পাত তাড়ি।

প্রহরে প্রহরে গড়ছে পট
জানা অজানার পটে।
ক’জনই বা খবর রাখে
সৃষ্টির কোথায় কি ঘটে।

আকাশ সাজে বাহারি সাজে
বসায় চাঁদের ঘাট।
মনের মুকুরের লালিত স্বপ্ন
বসায় সওদার হাট।

কেউবা সাজায় সুখের বাসর
সানাইয়ের সুরে।
কেউবা নিরবেই ঝরে যায়
বিউগলের সুরে।

কেউবা জানায় আগমনী বাতা
কান্নার রোলে।
কেউবা পায় অশনি সংকেত
হুঙ্কারের বোলে।

প্রহর গড়ায়, নিকাশ নিরব
থম থমে চারিধার।
অশরীরা ও যেনো সেই হুজুগে …
ছেয়ে যায় পারাবার।

রাতের প্রহর কাটেনা তখন
হৃদয় ভাঙার জোয়ার।
ভাটির টানে কোথায় হারাবে
নিলিপ্ত হাহাকার।

২৫ শের প্রাতে

Sha

পদ্মা নিয়ে গুণীজনেরা
গুন গান করেছেন কত পদ্যে।
সর্বনাশা কৃতীনাশার কত গল্প
ফুটিয়ে তুলেছেন গল্পে।

কত বিরহ কত বেদনা কত অশ্রু
মিশেছে এই জলে।
কত প্রেম কত সুর কত গান
জন্ম নিয়েছে পলে পলে।

বানভাসিরা ভারী করেছে পাড়
ছেড়েছে দীর্ঘ শ্বাস।
বাস্তু ভিটা সব হারিয়ে
ছুটেচলা উদ্ধোশ্বাস।

ভাবতো বসে কূলের নাগাল
কি করে বাগে আনবে।
স্বপ্ন দেখালো পিতা পাখির মত
উপর দিয়ে ই পারাপার হবে।

পিতা পুত্রীর মিলিত স্বপ্নে
খুললো দখিন দুয়ার।
সব বাঁধা উপড়ে ফেললে তুমি
জয় হাসিনা র সরকার।

সাহসিকতার বিজয় গাঁথা
জবাব প্রতি হিংসার।
গৌরব আর সষমতার প্রতীক
স্বাধীন বাংলা র।

পদ্মার বুকে যেনো ফুটেছে শত পদ্ম
নয়নাভিরাম রাতে।
এপার ওপারের মিলনমেলা
রচিত হল ২৫শের প্রাতে।

কোভিড ১৯

images

কোভিডের উচ্ছাস
বিশ্ব বাসির নাভিশ্বাস।
ভয় আর ত্রাস করাল গ্রাস
দীগ্বি জয়ীরাও আজ হচ্ছে লাশ।

সাফ সাফাই কারসাজ
মাস্কের মারকাজ।
কোয়ারান্টাইনের আবাস
পক্ষকালের কারাবাস।

লক ডাউনের সারকাস
নিম্ন বিত্তের দীঘ শ্বাস।
ত্রাণের মারপ্যচে
জীবন রূদ্ধ শ্বাস।

আই সি ইউর কেবিনে
রোগীদের হাস ফাস
অক্সিজেনের অভাবে
বন্ধ নিশ্বাস।

নিকট জনের রোণাজারি
মানবতার আহাজারি।
কেউ নেই কাছে
সবার উদ্ধশ্বাস।

জীবনের সাতপাক
ফিরে গেলে খালি হাত।
পরপারে যাত্রীর রূদ্ধ পথ
কঠিন কেয়ামত।

সৃষ্ট করোনার যত
বহুরূপী অভিলাষ।
স্রষ্টার অসীম ক্ষমতা
ফেরাতে পরবাস।

করোনাকে নয় ভয়
চেতনায় বিশ্বাস।
এপার মিলবে দয়া
ওপারে বিলাবে আশ্বাস।

স্মরণে

আজও শ্রাবনের আকাশ কাঁঁদে,
ঢাকে শোকের ছায়ায়।
তোমার স্মরণে কাঁদে বাংলা
আছো প্রাণের মায়ায়।
ভুলি নাই তোমাকে
ভুলবোনা কোনোদিন।
বাংলার আকাশে জ্বলবে
জ্বল জ্বলে চিরদিন।
যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী বহমান
ততোদিন রবে কীতি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।

আমার দেশ

আমার দেশের মাটির বুকে
মনটা আমার গাঁথা
দেশকে নিয়ে সকল সময়
ঘামাই শুধু মাথা।’’
সভা সেমিনারর করছি কত
বলছি উন্নযনের কথা
তারপরেও বাড়ছে কেনো
গরীব দুঃখির ব্যাথা।”
“অভাব অনটন বেকার জীবন
যেথায় শিকলে বাধা
উচ্চাভিলাশ আর দুর্নীতিতে
লাগছে গোলক ধাঁধাঁ। ”
“লোভ হিংসা আর রেষারেষি
বাড়ছে নানা বেশে
সুস্হ মানুষ ফিরছে লাশ
কোন অজ্ঞানতার বশে।”
“দেশটাকে আজ ঢেলে সাজাবো
মেধা শ্রম সাথে
তাইতো ছেলেরা বুক পেতেছিলো
রক্ত ঝরা পথে।”

ভালবাসা

দখিনা বাতাসে পাতা ঝরা সুরে,
বসন্ত দোলা দেয় কোকিলের সুরে।
কুহুতানে দোলা লাগে ফাগুনি বাতাসে,
শুকতারা উকি দেয় মনেরি আকাশে।
ছাদে উঠে তারা গুলি গোনে বসে বসে,
আনমনা হয়ে মেঘে মেঘে ভাসে।
মুঠো ফোনে গুন গুন অবিরাম দিবসে,
বইগুলি কভারে ঢাকা পড়ে পাশে।
রাত কাটে ফেস বুকে না হয় এস এম এস এ,
নির্ঘুম সকালে, ধরে হতাশে।
চেতনাগুলি হারিয়ে যায় স্মৃতির পাহাড়ে।
বিবেকটা জমে যায় অস্তিত্বের তুষারে।

ভাষা আন্দোলন

সদ্য প্রাপ্ত স্বাধীনতা দু’শ বছর পর ইংরেজ দাসত্বের জিঞ্জির থেকে।
দুর্বল পেয়ে পাক শাসক গোষ্ঠি ফের বসতে থাকে জেঁকে।
রাষ্ট্র ভাষা উর্দু হবে জানিয়ে দেয় সরকার।
সংখ্যা গুরু আমরা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা হবে জবাব এক কথার।
অস্ত্রের মুখে রুখতে চাইল মায়ের বুলিকে।

শপথ নিল যে করেই হোক রাখবে ধরে বর্ণমালার তুলিকে।
বায়ান্ন সালেই বপিত হল ভাষা আন্দোলনের বীজ।
কত জন শহীদ হল রঞ্জিত হল রাস্তার কালো পীচ।
স্বৈরাচার শাসকের রক্ত চক্ষুকে এড়িয়ে।

সান্ধ্য আইন উপেক্ষা করে ছাত্ররা এসেছিল ঘর ছেড়ে বেরিয়ে।
গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছে সালাম, বরকত, রফিকের বুক।
তবুও স্তব্দ করতে পারেনি ভাষা আন্দোলনের মুখ।
সরবে নিরবে জ্বলছিলো আগুন বাংলা ভাষার তরে।

সংঘর্ষের রূপ নিল একাত্তরের পঁচিশে মার্চের পরে।
কাঁধে তুলে নিল অস্ত্র, ছুটলো মায়ের কোল খালি করে।
সাধ্য কি কারো, ঢুকাতে পারে দামাল ছেলেকে ঘরে।
বীর বিক্রমে করল লড়াই পাক সেনাদের বিরুদ্ধে।

অবশেষে তিরিশ লাখ শহীদের বিনিময়ে জয়ী হল স্বাধীনতা যুদ্ধে।
জাতি পেলো গৌরবময় পতাকা সবুজের মধ্যে আঁকা রক্ত লাল সূর্য্য।
১৬ই ডিসেম্বর উদিত হলো বাংলায় কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার সোনালী সূর্য্য।

২১শে ফেব্রুয়ারী অবিস্মরণীয় মহান অমর শহীদ দিবস।
স্বীকৃতি পেলো বিশ্বে, একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস।

বসন্ত জেগেছে

বসন্ত দোলায় দুলছে কানন
পাতা ঝরা ঝংকারে।
ডালে ডালে মঞ্জুরিত
গাছ সেজেছে অলঙ্কারে।
হীম বুড়ী চুপটি করে
উবে গেল হীম ঘরে।
দক্ষিনা হাওয়া ছড়িয়ে হাসি
রং ছড়ালো সাজ ঘরে।
মৌমাছিরা মৌ বনে
মহুর্মহু হানছে বাণ।
তির তিরিয়ে উড়ছে প্রজাপতি
নাচ্ছে উড়িয়ে বাহারী নিশান।
ঘুম ভাঙ্গাতে গাইছে অলি
কলির কানে দিলহারা।
কুহু কুহু কোকিলেরা
দোসর খোজে মাতোয়ারা।
দিকে দিকে সবুজেরা
কিশলয়ে সেজেছে।
সাজ সাজ রবে
বসন্ত জেগেছে।

শীতের দাপট

শীত রাজা দলছে বন প্রচন্ড দাপটে।
হিমেল হাওয়া যায় যে চুমি পাতার ললাটে।
মায়াবী আবীরে সাজলো গাছ রঙ্গিন মুকুটে।
বিষন্নতায় আছড়ে পড়ে দৃষ্টির কপাটে ।
স্ফটিকের বাসর সাজে মানসপটে।

বিজয়

মা, মাটি আর মানুষের প্রাণান্ত যখন পাষান বুটের চাপে।
সাহসী ছেলেরা সইতে পারেনি দিয়েছিল প্রাণ সঁপে।
সন্তান হারা মায়ের আহাজারী,
এতিমের কান্না গগন বিদারী।
রক্তের কালিতে লিখে দিলে বিজয়ের নাম, লাল সবুজের ছোপে।

তৃষিত প্রাণ

তেষ্টা নাকি তৃষিত ছাড়া কেউ বোঝেনা।
কষ্ট ছাড়া কেষ্ট নাকি কভু মেলেনা।
বৃষ্টি ছাড়া চাতকের তৃষ্ণা মেটেনা।
কোকিলের পা কভু নাকি মাটিতে পড়েনা।
শিশির জমা এক ফোটা জল তৃষিত প্রাণের বাসনা।

হেমন্ত

স্বগ থেকে খসে পড়া হিম বুড়ী
হিমেল পরশ বুলিয়ে দেয় সবুজ গালিচায়।
পাহাড় গীরি কন্দর স্নাত হয়
সিক্ত হয় তরু লতা বাগ বাগিচায়।

শান্ত হয় উত্তাল সাগর নদী
হিমের আবেশে।
তারা ভরা জোছনা ঝরা
ভরা প্রকৃতি অফুরন্ত আমেজে।

অতিথি পাখিদের গুঞ্জরনে
টুটে নিশীথের সুপ্তি।
হাওর বাওর বিলে কল কাকলীতে মুখরিত
সকাল সন্ধ্যা ব্যাপ্তি।

নতুন ফসলের মৌ মৌ গন্ধে
ভরে উঠে গ্রাম।
গোলা ভরা ধানে সুখের স্বপনে
ভরে উঠে প্রাণ।

নবান্নের উৎসবে নতুন রসে
স্বাদে ভরপুর হেমন্ত।
নতুন কুটুমে টুক টুকে আঁচলে
জেগে আছে অনন্ত।

চাষাবাদে নারী

সবুজ শ্যামলে ঘেরা আমাদের গ্রাম, সাজানো সযতন।
শিল্পীর তুলিতে ছোঁয়া, যেনো ছবির মতন।
ফসলেরা মাঠে মাঠে বাতাসে কুর্নিশ।
চাষীদের মন ফসলের আশায় কাটে অহর্নিশ।

প্রকৃতির ধকল কাটিয়ে যখন আঙ্গিনা ভরে উঠে ফসলে
কিষাণ কিষাণীর মন সততই দোলে।
কোপানো, নিড়ানো, মাড়াই, বাছাইয়ে
বীজ সংরক্ষণ, গোলাজাত, প্রক্রিয়াজাতে।

পুরুষের পাশাপাশি অনন্তকাল,
নারীরাও দিচ্ছে যোগান সকাল বিকাল।
লাঙ্গলের জোয়ালে, ঘানির সারিতেও,
যেখানে প্রয়োজন দিয়েছে শ্রম নারীরাও।

হাঁস, মুরগি পশু পালনে,
হাতের ছোয়া আছে ডিম, দুধ, মাংস উৎপাদনে।
মাছ চাষে, ফুল চাষে, চা বাগানেও,
নারীর হাত কর্মী হিসাবে আছে সেখানেও।

এ সব করেনি নারী স্বীকৃতির আশায়।
বলি কবির ভাষায়…
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর।
অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।